অভিজ্ঞ এই মানসিক এবং মাদক নেশাজনিত সমস্যার বিশেষজ্ঞ পরামর্শদাতা ড. তাজুল ইসলামের মতে, তরুণদের জঙ্গিবাদ থেকে দূরে রাখতে হলে পরিবার থেকেই কাজ শুরু করতে হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি গার্জিয়ানদের এ কথাই বলি যে, আপনার ছেলের মধ্যে ভালনারেবিলিটি আছে, তারুণ্যের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে এবং আশেপাশে এমন কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী আছে যারা প্রলোভন দেখাবে এবং আপনার সন্তানকে নিয়ে যাবে৷ কিন্তু গুড প্যারেন্টিং থাকলে স্বার্থান্বেষী মহলও ক্ষতি করতে পারবেনা৷ সন্তানের সঙ্গে যদি বাবা-মায়ের অনেক বেশি দূরত্ব থাকে, সন্তানের মনোজগতের পরিবর্তন যদি তারা খেয়াল করতে না পারেন, তাহলে গর্ত দিয়ে তো সাপ ঢুকেই যাবে৷”
গর্তের সাপ’ থেকে সন্তানদের দূরে রাখতে হলে স্নেহপরায়ণ এবং বন্ধুবৎসল বাবা-মাকে সতর্ক তো হতে হবেই, পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকেও সক্রিয় থেকে সহায়কের ভূমিকা পালন করতে হবে৷
দেশে বেশির ভাগ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েই খেলার মাঠ নেই, সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার বিশেষ কোনো আয়োজন নেই, ‘খেলাঘর’, ‘কচিকাচার মেলা’-র মতো সংগঠনগুলোও যে প্রায় বিলুপ্তির পথে এসবও তরুণ প্রজন্মের একাংশের জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকতে সহায়তা করছে বলে মনে করেন ড. তাজুল ইসলাম৷ এ বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘‘তথ্য-প্রযুক্তির যুগে ইন্টারনেটের ব্যবহার এত বেশি বেড়েছে যে খেলাধুলা, গান-বাজনা থেকে শুরু করে সোস্যালাইজেশনের অনেক বিষয় থেকেই একেবারে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছি আমাদের সন্তানদের৷ আমরা আসলে আমাদের সন্তানদের জীবনটাকে ছোট করে ফেলছি৷ এই ছোট জীবন থেকে বড় কিছু হওয়ার সুযোগ নেই৷”
সাক্ষাৎকারে নতুন প্রজন্মকে জঙ্গিবাদ থেকে দূরে রাখার উপায় হিসেবে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক তাজুল ইসলাম৷ তবে তাঁর মতে, সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন উঠতি বয়সিদের প্রতি পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সমাজের প্রতিটি স্তরে বিশেষ মনোযোগ এবং যত্ন৷ ড. তাজুল ইসলামের ভাষায়, ‘‘স্কুল, কলেজ, পরিবার এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানকে আবার উজ্জীবিত করতে হবে৷ সবকিছু ঠিকভাবে কাজ করলেই কেবল শিশু, কিশোর, তরুণদের সার্বজনীন মানবিক বিকাশটা সম্ভব৷”
সৌজন্যে : ডয়েচে ভেলে