নাম বায়তুর রউফ মসজিদ। সেটির অবস্থান রাজধানীর দক্ষিণখান থানার ফায়েদাবাদে। আবদুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে পূর্ব দিকে গিয়ে রেললাইন পেরিয়ে মসজিদটির অবস্থান। এর স্থাপত্যের বিশেষ দিক হলো, এর বায়ু চলাচলব্যবস্থা ও আলোর চমৎকার বিচ্ছুরণ মসজিদের পরিবেশকে দেয় ভিন্ন মাত্রা। ৭৫৪ বর্গমিটারের মসজিদটির বিশেষত্ব হলো, এখানকার মসজিদের পরিচিত চিত্র ডোম বা মিনার নেই। চতুর্দিকে আটটি পিলারের ওপর এটি তৈরি। এর নকশার বিশেষত্ব হলো, কিবলার দিকে ১৩ ডিগ্রি কোনাকুনি করা একটি থাম। আলো প্রবেশের জন্য চারদিকে রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। সুলতানি আমলের মসজিদের অনুপ্রেরণায় তৈরি হয়েছে এর স্থাপত্য।
সেখানকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘সরকারি চাকরির সুবাদে দেশের অনেক এলাকায় মসজিদ দেখেছি। অনেক ঐতিহাসিক মসজিদও দেখেছি। কিন্তু বায়তুর রউফ মসজিদ অনেক আলাদা। প্রাকৃতিক পরিবেশের বিষয়গুলো অনেক চমৎকারভাবে কাজে লাগানো হয়েছে। অনেক আলো-বাতাস রয়েছে। শীত বা গরমে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব বোঝা যায় না মসজিদের ভেতর।’
মসজিদের স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম মসজিদটির বিশেষত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মসজিদটি তৈরি হয়েছে একটু ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। প্রচলিত মসজিদগুলোর ধরন থেকে আলাদা। আর মসজিদটি নির্মিত হয়েছে স্থানীয় ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে, অংশগ্রহণমূলক ধারণা থেকে। খরচও এসেছে সবার কাছ থেকে। পরিবেশবান্ধব এবং আলো-বাতাসের বিষয়টি মাথায় রেখে এর ডিজাইন করেছি। ইতিহাস, সংস্কৃতি, আবহাওয়াসহ নানা বিষয় মাথায় রেখে এর নির্মাণ করা হয়েছে। আর ব্যবহৃত সব উপকরণই স্থানীয়।’
তরুণ এ স্থপতি এবার আগা খান স্থাপত্য এ পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মনে করেন, আগা খান স্থাপত্য পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পাওয়া একজন স্থপতির জন্য নিঃসন্দেহে গর্বের বিষয়। এর আগেও ২০০৪ সালে এ পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ১৯৯৫ সালে স্নাতক এ স্থপতি অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যকাজে অবদান রেখেছেন। আরেক স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরীর সঙ্গে যুগ্মভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতাস্তম্ভ ও স্বাধীনতা জাদুঘরের নকশা করেছেন মেরিনা। ২০১৫ সাল থেকে নিজস্ব স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান মেরিনা তাবাসসুম আর্কিটেক্টস (এমটিএ) পরিচালনা করছেন তিনি।
মেরিনা মনে করেন, ‘আমাদের পরিবেশ ও বসবাসের ক্ষেত্রগুলো নিয়ে স্থপতিদের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হতে হয়। আমাদের শহর ও বসতিগুলোর উন্নয়নে যুক্ত করতে হবে সবাইকে। সে কারণে নতুন স্থপতিদের সঠিক পথে পরিচালনা ও পথনির্দেশনা দেওয়া জরুরি।’
বায়তুর রউফ মসজিদ স্থাপত্যের বিশেষত্ব
পরিচিত চিত্র গম্বুজ বা মিনার নেই। চতুর্দিকে আটটি পিলারের ওপর এটি তৈরি।
কিবলার দিকে ১৩ ডিগ্রি কোনাকুনি করা একটি থাম। আলো প্রবেশের জন্য চারদিকে রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। সুলতানি আমলের মসজিদের অনুপ্রেরণায় তৈরি হয়েছে এর স্থাপত্য।
মসজিদের ভেতর শীত বা গরমে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব বোঝা যায় না
সৌজন্যে : প্রথম আলো