(পঞ্চম পর্ব) মাদরাসার শিক্ষার সাথে যাদের সরাসরি কোন সংযোগ নেই এবং এ শিক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে বাস্তবে কোন অভিজ্ঞতাও যাদের নেই তাদের পক্ষ হতে মাদরাসা শিক্ষার উন্নতিকল্পে প্রায় অযাচিতভাবে প্রস্তাব করা হয় যে , মাদরাসার পাঠ্যসূচীতে বিজ্ঞান , প্রযুক্তি, প্রকৌশল প্রভৃতি বিদ্যার সংযোজন করা চাই। যেন মাদরাসা শিক্ষা প্রাপ্ত আলেম সমাজ ধর্মীয় জ্ঞানের পাশাপাশি বাহ্যিক জ্ঞান- বিজ্ঞানেও যথেষ্ট প্রাজ্ঞ ও পারদর্শী হয়ে কর্ম জীবনে পদার্পন করতে পারে। এ প্রস্তাব যতই আন্তরিকতা ও সদভিপ্রায়ে দেয়া হোক না কেন কিন্তু প্রস্তাবটি স্থুল ও অগভীর চিন্তা প্রসূত এবং মাদরাসার শিক্ষার মহান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে অজ্ঞতারই পরিচায়ক। বস্তুতঃ মাদরাসার শিক্ষার মহান অভিপ্রেত হল– পবিত্র কুরআন- সুন্নাহ ও এতদঃ সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলীতে অজেয় যোগ্যতা সম্পন্ন আলেম তৈরী করা। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য যে প্রচুর সময় , একাগ্রতা ও অধ্যবসায় প্রয়োজন তারপরে একই সাথে আবার বিজ্ঞ চিকিৎসক,প্রকৌশলী কিম্বা অর্থনীতিবিদ হবার ভাবনা অনেকটা আকাশ কুসুম কল্পনারই নামান্তর।
এ মহাসত্য কথাটি এমনিতে প্রত্যেক যুগের জন্যই প্রযোজ্য ও এর বাস্তবতা সহজবোধ্য। তারপরও বর্তমান যুগে যাকে শিক্ষা বিশেষীকরণের যুগ বলেও অভিহিত করা হয় এ যুগ তার বাস্তবতা আরো দিবাকরের ন্যায় অধিক স্পষ্ট। আজ কেউ যদি চিকিৎসাবিদ্যাকে নিজ গবেষণার বিষয়বস্তু হিসাবে মনোনয়ন করে নেয় এবং এ বিষয়ে পাণ্ডিত্যও অর্জন করে তবে কোন বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তিতো এ প্রশ্ন করে না যে, কেন এ ব্যক্তি ডাক্তার হবার পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ার হল না ? বা কেউ যদি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তি হয় কোন বিবেকবান মানুষতো বলে বসে না কেন সে মেডিক্যাল সাইন্স পড়ল না? অনুরূপ কোন বিজ্ঞান প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যদি সব মেধা শুধু বিজ্ঞান চর্চায় ব্যয় করা হয় তবে কেউ প্রশ্ন করবে না এ প্রতিষ্ঠানে কাব্য- সাহিত্য বা বাণিজ্যিক বিষয়গুলো শিক্ষা দানের ব্যবস্থা নেই কেন? কোন কমার্স কলেজ সম্পর্কে কখনো অভিযোগ উঠেনা যে , এ কলেজ থেকে প্রকৌশলী বের হয় না কেন? কোন ল কলেজের জন্য এ প্রস্তাব দিতে কখনো শুনা যায় নি যে, এখানে জ্যোতির্বিদ্যাও শিক্ষা দেওয়া হোক। প্রশ্ন হল যদি কোন দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইসলামি বিষয়গুলোতে প্রাজ্ঞ ও পারদর্শী লোক সৃষ্টি করার জন্য পুরোপুরি প্রচেষ্টা ও শ্রম ব্যায় করা হয় এবং সেখান থেকে কোন চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ বের না হয় তবে এর জন্য এত উদ্বেগ- উৎকন্ঠা, এত আফসোস বা হা হুতাশ কেন ? তবে কি তাফসির, ফেকাহ, হাদিস ইত্যাদি এমন বিষয় যার পঠন পাঠনের জন্য বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্র হওয়া উচিত নয় ? যা থেকে এ সব বিদ্যা চর্চা ও শিক্ষা বিস্তার করে তবে তার অজ্ঞতা ও মূর্খতার জন্য হতাশা ও দুঃখ প্রকাশ ছাড়া আর কি-বা করা যেতে পারে ? কিন্তু যারা এসব বিষয়ের যৎসামান্য গুরুত্ব কিঞ্চিৎ প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করেন তাদের জন্য এ মহা বাস্তব কথাটি উপলব্ধি করতে আদৌ বিলম্ব হবে না যে , আলেম সমাজ থেকে বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী গড়ার আব্দার কত স্থুল, অযথার্থ ও বাস্তবায়ন অযোগ্য প্রস্তাব।
মূল : আল্লামা তকি উসমানি
ভাষান্তর : কাজী মোহাম্মদ হানিফ
শাইখুল হাদিস, জামিয়া আরাবিয়া মারকাজুল উলুম, কাঁচপুর, নারায়ণগঞ্জ