বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ২:৪৪
Home / প্রতিদিন / মুসলিম বিশ্বের প্রাকৃতিক সম্পদ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সীমাহীন

মুসলিম বিশ্বের প্রাকৃতিক সম্পদ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সীমাহীন

pytheya-hajj-10ড. আহমদ আবদুল কাদের : বর্তমান মুসলিম বিশ্ব অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে আছে। কৃষি, শিল্প এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতেও মুসলিম দেশগুলোর অবস্থান খুবই দুর্বল। অন্য দিকে, অমুসলিম বিশ্ব আজ সর্বক্ষেত্রেই এগিয়ে আছে। মুসলিম বিশ্বে এ নিয়ে অনেকটাই হতাশাই লক্ষ করা যায়। কারো কারো মনে প্রচণ্ড হীনম্মন্যতাও বিরাজ করছে। কিন্তু আমরা যদি মুসলিম বিশ্বের সম্পদ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দিকে লক্ষ করি, তা হলে হতাশার কোনো কারণ নেই। বরং মুসলিম বিশ্ব যদি ইসলামি মূল্যবোধের ভিত্তিতে জেগে ওঠে, যদি তাদের মধ্যে নতুন এক সভ্যতা বিনির্মাণের প্রেরণা সৃষ্টি হয় তাহলে তাদের জাগরণ ও অগ্রগতি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা যদি আমাদের অবস্থার পরিবর্তন করতে পারি তাহলে আমাদের উত্থান কেউ রুখতে পারবে না। নিম্নে আমরা মুসলিম বিশে^র সম্পদ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার প্রধান প্রধান দিকগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করব।

প্রাকৃতিক সম্পদ
প্রাকৃতিক সম্পদে মুসলিম বিশ্ব খুবই সমৃদ্ধ। প্রাকৃতিক সম্পদের দিক দিয়ে পৃথিবীর প্রথম ১০টি দেশের মধ্যে মুসলিম বিশ্বের তিনটি দেশ রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে সৌদি আরব (বিশ্বের তৃতীয়), ইরান (পঞ্চম) ও ইরাক (নবম)।

নিম্নে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ সম্পর্কে একটা ধারণা দেয়া হলো-
তেল : তেলের প্রমাণিত রিজার্ভের ক্ষেত্রে বিশে^র প্রথম ১০টি দেশের মধ্যে সাতটিই মুসলিম দেশ। সেগুলো হচ্ছে- সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, কুয়েত, আরব আমিরাত, লিবিয়া ও নাইজেরিয়া। তেল রফতানিকারক দেশের সংস্থা ওপেকভুক্ত ১২টি দেশে তেল রয়েছে ৮১ শতাংশ। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেই রয়েছে ৬৬ শতাংশ। কাজেই মুসলিম বিশ্ব তেল সম্পদে সর্বাধিক সমৃদ্ধ। আর পৃথিবীর বর্তমান অর্থব্যবস্থা অনেকটাই তেলনির্ভর।
গ্যাস : গ্যাস মজুদের দিক দিয়ে বিশ্বের প্রথম ১০টি দেশের মধ্যে ছয়টিই মুসলিম দেশ। গ্যাস মজুদে বিশ্বের প্রথম ২১ দেশের মধ্যে ১৪টি মুসলিম দেশ। এর মধ্যে ইরান, কাতার, তুর্কমিনিস্তান, সৌদি আরব, নাইজেরিয়া, আলজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, আরব আমিরাত, কাজাখস্তান, কুয়েত, মিসর ও লিবিয়া যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, সপ্তম, নবম, ১১তম, ১৩তম, ১৪তম, ১৬তম, ১৭তম, ১৮তম, ২০তম ও ২১তম। কাজেই গ্যাসের দিক থেকেও মুসলিম দেশের অবস্থা খুবই সমৃদ্ধ।
কয়লা : কয়লা মজুদে শীর্ষ ৩০টি দেশের মধ্যে ৯টি মুসলিম দেশ- কাজাখস্তান (অষ্টম,) ইন্দোনেশিয়া (১৪তম), বসনিয়া-হারজেগোভিনা (১৭তম), পাকিস্তান (২০তম), তুরস্ক (২১তম), উজবেকিস্তান (২২তম, ইরান (২৭তম), কিরগিজস্তান (২৯তম) ও আলবেনিয়া (৩০তম)। কাজেই কয়লার দিক থেকেও মুসলিম বিশ্ব সমৃদ্ধ।
অন্যান্য খনিজ সম্পদ : তেল, গ্যাস ও কয়লা (যা প্রধানত জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয়) ছাড়াও অন্যান্য খনিজ সম্পদেও মুসলিম বিশ্ব সমৃদ্ধ। যেমন-
স্বর্ণ : স্বর্ণ মজুদে পৃথিবীর ৪০টি দেশের মধ্যে ৯টি মুসলিম দেশ- তুরস্ক (১২তম), সৌদি আরব (১৭তম), লেবানন (১৯তম), কাজাখস্তান (২৩তম), আলজেরিয়া (২৫তম), লিবিয়া (৩১তম), ইরাক (৩৭তম), কুয়েত (৩৯তম) ও ইন্দোনেশিয়া (৪০তম)।
রৌপ্য : শীর্ষ রৌপ্য উৎপাদনকারক ২০টি দেশের মধ্যে চারটি মুসলিম দেশ- কাজাখস্তান (১২তম), মরক্কো (১৬তম), তুরস্ক (১৭তম), ইন্দোনেশিয়া (১৮তম)।
ইউরেনিয়াম : ইউরেনিয়াম রিজার্ভে শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে দু’টি মুসলিম দেশ- কাজাখস্তান দ্বিতীয় ও নাইজার পঞ্চম। শীর্ষ ইউরেনিয়াম উৎপাদনকারী ছয়টি দেশের মধ্যে মুসলিম দেশ দু’টি- কাজাখস্তান (প্রথম) ও নাইজার (চতুর্থ)।
তামা : তামা উৎপাদনে প্রথম ১০টি দেশের মধ্যে মাত্র একটি হচ্ছে মুসলিম- গাম্বিয়া (অষ্টম)।
বক্সাইট : বক্সাইট উৎপাদনে ১৪টি দেশের মধ্যে মুসলিম দেশ তিনটি- গিনি, কাজাখস্তান ও ইন্দোনেশিয়া। এর মধ্যে চতুর্থ গিনি।
টিন : টিন উৎপাদনকারী ১৫টি দেশের মধ্যে তিনটি মুসলিম দেশ- ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও নাইজেরিয়া। এর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া বিশে^র দ্বিতীয়, চীনের পরে।
জিঙ্ক বা দস্তা : জিঙ্ক উৎপাদনে প্রথম ৪২ দেশের মধ্যে সাতটি মুসলিম দেশ- কাজাখস্তান (সপ্তম), ইরান (১৪তম), মরক্কো (১৬তম), তুরস্ক (১৭তম), সৌদি আরব (৩৪তম), কসোভো (৩৭তম) ও বসনিয়া-হারজেগোভিনা (৩৮তম)।
ম্যাঙ্গানিজ : ম্যাঙ্গানিজ উৎপাদনে ২৩টি দেশের মধ্যে চারটি মুসলিম দেশ- কাজাখস্তান (ষষ্ঠ), ইরান (১২তম), মিসর (১৯তম), মালয়েশিয়া (২২তম)।
ফসফেট : ২২টি ফসফেট উৎপাদনকারক দেশের মধ্যে ১০টি মুসলিম দেশ- আলজেরিয়া (দ্বিতীয়), মিসর (সপ্তম), ইরাক (নবম), জর্ডান (১১তম), কাজাখস্তান (১২তম), মরক্কো ও পশ্চিম সাহারা (১৪তম), সৌদি আরব (১৭তম), সেনেগাল (১৮তম), সিরিয়া (২০তম) ও তিউনেশিয়া (২২তম)।  কাজেই এটি স্পষ্ট যে, খনিজ সম্পদে মুসলিম বিশে^র অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কৃষি উৎপাদন : সামগ্রিক বিবেচনায় কৃষি উৎপাদনে পৃথিবীর শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে এখন পর্যন্ত মুসলিম দেশ একটি- তুরস্ক (দশম)।
বিভিন্ন প্রকার কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে মুসলিম দেশের অবস্থান নিম্নে তুলে ধরা হলো :
ক. দানা জাতীয় খাদ্য : ধান বা চাল ইন্দোনেশিয়া (তৃতীয়), বাংলাদেশ (পঞ্চম) বার্লি : তুরস্ক (পঞ্চম), জোয়ার : নাইজার (দ্বিতীয়), বারকিনা ফাসাও (পঞ্চম), সরগাম : নাইজেরিয়া (তৃতীয়)।
খ. শাকসবজি জাতীয় উৎপাদন :
রসুন : মিসর (চতুর্থ), ইরান (পঞ্চম); সিম : ইন্দোনেশিয়া (দ্বিতীয়), তুরস্ক (চতুর্থ); মটরকলাই : পাকিস্তান (তৃতীয়), তুরস্ক (চতুর্থ); ডাল : পাকিস্তান (দ্বিতীয়); বেগুন : ইরান (তৃতীয়), মিসর (চতুর্থ), তুরস্ক (পঞ্চম); স্পিনেজ : তুরস্ক (চতুর্থ), ইন্দোনেশিয়া (পঞ্চম); গাজর : উজবেকিস্তান (চতুর্থ); শসা : তুরস্ক (দ্বিতীয়), ইরান (তৃতীয়); শালগম : উজবেকিস্তান (দ্বিতীয়); টমেটো : তুরস্ক (চতুর্থ), মিসর (পঞ্চম); আদা : নাইজেরিয়া (চতুর্থ) এবং কুমড়া বা লাউ : ইরান (চতুর্থ)।
গ. ফল-ফলাদি
খোবানী : তুরস্ক (প্রথম), ইরান (দ্বিতীয়), উজবেকিস্তান (তৃতীয়), আলজেরিয়া (চতুর্থ); জলপাই : তুরস্ক (চতুর্থ), মরক্কো (পঞ্চম)।

পিয়ার : তুরস্ক (পঞ্চম); আম : ইন্দোনেশিয়া (চতুর্থ), পাকিস্তান (পঞ্চম)।

নারকেল : ইন্দোনেশিয়া (প্রথম)।

আখ : পাকিস্তান (পঞ্চম)।

ডুমুর : তুরস্ক (প্রথম), মিসর (দ্বিতীয়), আলজেরিয়া (তৃতীয়), মরক্কো (চতুর্থ), ইরান (পঞ্চম)।

আপেল : তুরস্ক (তৃতীয়)।

আনারস : ইন্দোনেশিয়া (পঞ্চম)।

মিষ্টি আলু : নাইজেরিয়া (তৃতীয়), ইন্দোনেশিয়া (চতুর্থ)।

স্ট্রবেরি : তুরস্ক (দ্বিতীয়), মিসর (চতুর্থ)।

খেজুর : মিসর (প্রথম), ইরান (দ্বিতীয়), সৌদি আরব (তৃতীয়), আলজেরিয়া (চতুর্থ), ইরাক (পঞ্চম)।

চেরি : তুরস্ক (প্রথম), ইরান (তৃতীয়)।

পিয়ারা : ইন্দোনেশিয়া (পঞ্চম)।

তরমুজ : তুরস্ক (দ্বিতীয়), ইরান (তৃতীয়), মিসর (পঞ্চম)।

ডালিম : ইরান (দ্বিতীয়), তুরস্ক (তৃতীয়), তিউনেশিয়া (পঞ্চম)।

কাঠাল : বাংলাদেশ (দ্বিতীয়), ইন্দোনেশিয়া (চতুর্থ)।
ঘ. দুধ
মহিষের দুধ : পাকিস্তান (দ্বিতীয়), মিসর (চতুর্থ)।

ছাগদুধ : বাংলাদেশ (দ্বিতীয়), সুদান (তৃতীয়), পাকিস্তান (চতুর্থ)।

ভেড়ার দুধ : তুরস্ক (দ্বিতীয়), সিরিয়া (চতুর্থ)।

উটের দুধ : সোমালিয়া (প্রথম), নাইজার (পঞ্চম)।
ঙ. পানীয়
কফি : ইন্দোনেশিয়া (তৃতীয়)।
চ. গোশত
ভেড়ার গোশত : সুদান (চতুর্থ), তুরস্ক (পঞ্চম)।

ছাগলের গোশত পাকিস্তান (তৃতীয়), নাইজেরিয়া (চতুর্থ), বাংলাদেশ (পঞ্চম)।

হাঁস : মালয়েশিয়া (তৃতীয়)।
ছ. মসলা
দারুচিনি : ইন্দোনেশিয়া (প্রথম)।

জাফরান : ইরান (প্রথম)।

ভ্যানিলা : ইন্দোনেশিয়া (প্রথম)।
জ. আঁশজাতীয় পণ্য
তুলা : পাকিস্তান (চতুর্থ)।

পাট : বাংলাদেশ (দ্বিতীয়), উজবেকিস্তান (চতুর্থ)।

রাবার : ইন্দোনেশিয়া (দ্বিতীয়), মালয়েশিয়া (তৃতীয়), নাইজেরিয়া (নবম)।

রেশম : উজবেকিস্তান (তৃতীয়), ইরান (পঞ্চম)।

পশম : ইরান (পঞ্চম)।
ঝ. অন্যান্য
কোকোয়া : ইন্দোনেশিয়া (তৃতীয়), নাইজেরিয়া (চতুর্থ)। মধু : তুরস্ক (দ্বিতীয়)।
ঞ. মৎস্য (ফাও, ২০১৩)
মৎস্য : ইন্দোনেশিয়া (দ্বিতীয়)।

সামদ্রিক মৎস্য : ইন্দোনেশিয়া (দ্বিতীয়), মিসর (দশম)।
রফতানি বাণিজ্য
রফতানি বাণিজ্যে প্রথম ৫০টি দেশের মধ্যে মুসলিম দেশ হচ্ছে ১২টি। এগুলো হচ্ছেÑ আরব আমিরাত (১৪তম), সৌদি আরব (১৫তম), মালয়েশিয়া (২৪তম), ইন্দোনেশিয়া (২৬তম), তুরস্ক (২৭তম), কাতার (৩৩তম), কুয়েত (৩৪তম), ইরান (৩৮তম), ইরাক (৩৯তম), নাইজেরিয়া (৪০তম), কাজাখস্তান (৪১তম) ও আলজেরিয়া (৫০তম)।
জিডিপি হিসাবে মুসলিম দেশ
জিডিপি হিসাবে বিশে^র প্রথম ষাটটি দেশের মধ্যে মুসলিম দেশ পনেরোটিÑ ইন্দোনেশিয়া (১৬তম), তুরস্ক (১৮তম), সৌদি আরব (১৯তম), নাইজেরিয়া (২২তম), ইরান (২৮তম), আরব আমিরাত (৩০তম), মালয়েশিয়া (৩৫তম), মিসর (৩৮তম), পাকিস্তান (৪৫তম), ইরাক (৪৭তম), কাজাখস্তান (৪৯তম), আলজেরিয়া (৪৯তম), কাতার (৫০তম), বাংলাদেশ (৫৬তম) ও কুয়েত (৫৭তম)।
মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে মুসলিম দেশগুলোর অবস্থান (২০১৪, বিশ^ব্যাংক)
ক. উচ্চ আয়ের দেশ (মাথাপিছু আয় ($১২,৭৩৬ বা বেশি): উচ্চ আয়ের দেশ মোট ৬৩টি, এর মধ্যে মুসলিম দেশ মোট সাতটি। সেগুলো হচ্ছে : কাতার (পঞ্চম), কুয়েত (১০ম), আরব আমিরাত (২২তম), ব্রুনাই (২৮তম), সৌদি আরব (৩৪তম), বাহরাইন (৪০তম) ও ওমান (৪৬তম)।

অবশ্য আইএএফের হিসাব অনুযায়ী উচ্চ আয়ের দেশ ১০টির মধ্যে চারটি মুসলিম দেশ। সেগুলো হচ্ছে : কাতার (প্রথম), ২. ব্রুনাই (তৃতীয়), কুয়েত (পঞ্চম) ও আরব আমিরাত (সপ্তম)।
খ. উচ্চ-মধ্য আয়ের (মাথাপিছু আয় ৪,১২৫ ডলারের বেশি ১২,৭৩৬ ডলারের কম) দেশ : উচ্চ-মধ্য আয়ের দেশ হচ্ছে মোট ৫২টি, তন্মধ্যে ১৪টি মুসলিম দেশ। দেশগুলো হচ্ছে- কাজাখস্তান (দ্বিতীয়), মালয়েশিয়া (তৃতীয়), তুরস্ক (ষষ্ঠ), তুর্কমেনিস্তান (১৪তম), লিবিয়া (১৫তম), আজারবাইজান (১৯তম), মালদ্বীপ (২২তম), ইরান (২৭তম), ইরাক (৩০তম), আলজেরিয়া (৩৯তম), জর্ডান (৪২তম), বসনিয়া-হারজেগোবিনা (৪৪তম), আলবেনিয়া (৪৭তম) ও তিউনেশিয়া (৫১তম)।
নিম্ন মধ্য আয়ের (১,০৪৫ ডলারের বেশি কিন্তু ৪১২৫ ডলারের কম) দেশ : নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ ৫১টি। তন্মধ্যে মুসলিম দেশ ১৯টি। দেশগুলো হচ্ছে- কসোভো (দ্বিতীয়), ইন্দোনেশিয়া (সপ্তম), মিসর (১৩তম), ফিলিস্তিন (১৮তম), মরক্কো (১৯তম), নাইজেরিয়া (২০তম), উজবেকিস্তান (২৮তম), সিরিয়া (৩১তম), জাম্বিয়া (৩৪তম), সুদান (৩৫তম), পাকিস্তান (৪১তম) ইয়েমেন (৪২তম), মৌরিতানিয়া (৪৭তম), কিরগিজস্তান (৪৮তম), বাংলাদেশ (৪৯তম), তাজিকিস্তান (৫০তম), সেনেগাল (৫১তম) ও জিবুতি (৫২তম)।
নিম্ন আয়ের দেশ (১০৪৫ মার্কিন ডলার বা এর চেয়ে কম)
বর্তমান বিশে^র ৩১টি নিম্ন আয়ের দেশের মধ্যে মুসলিম দেশ হচ্ছে ১১টি। সেগুলো হচ্ছে- আফগানিস্তান, বারকিনা ফাসাও, চাদ, কমোরুস, গাম্বিয়া, গিনি, গিনি বিসাও, মালি, নাইজার, সিয়েরা লিওন ও সোমালিয়া।
ওপরের সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান থেকে এটা স্পষ্ট যে, বর্তমানে সামগ্রিক বিবেচনায় মুসলিম দেশগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল। তবে মুসলিম বিশ্বে প্রাকৃতিক সম্পদ প্রচুর এবং এর অর্থনীতি খুবই সম্ভাবনাময়। সে সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য বিপুল সম্পদকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো দরকার। আর এর জন্য প্রয়োজন দেশে দেশে ইসলামের প্রতি অনুগত ও দক্ষ সরকার। প্রয়োজন শিক্ষার ব্যাপক প্রসার। ১৭০ কোটি মুসলমানকে উন্নত কারিগরি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষায় সমৃদ্ধ করতে পারি আর সাথে সাথে উন্নত নৈতিক মানে গড়ে তুলতে পারি তাহলে অবস্থার অবশ্যই পরিবর্তন ঘটবে।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, মুসলিম দেশগুলোর বেশির ভাগেই সত্যিকার জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার নেই। মুসলিম দেশের নির্বাচনব্যবস্থাও দুর্বল ও ভঙ্গুর। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরনো গোত্রীয় ও বংশীয় ব্যবস্থা এখনো চালু আছে। তদুপরি বিভিন্ন মুসলিম দেশে জনগণের চিন্তাচেতনাবিরোধী সরকারি নীতিপলিসি সমাজে সঙ্ঘাতের জন্ম দিচ্ছে। ফলে বিনষ্ট হচ্ছে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা। সুশাসনের অভাব ও সর্বগ্রাসী দুর্নীতিও অন্যতম প্রধান সমস্যা। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাও স্বাধীন মুসলিম দেশের উপযোগী নয়।
বিজ্ঞান ও ইসলামের সমন্বয়ে এখানকার শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি- ঔপনিবেশিক যুগের শিক্ষার ঐতিহ্যই আমরা বহন করে চলছি। অথচ মুসলিম বিশ্বের উন্নতি-অগ্রগতির জন্য সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা অপরিহার্য। উন্নয়নের অনুকূল নীতিপলিসিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত। তাই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য এসব সমস্যার সমাধান অপরিহার্য।
মোটকথা, মুসলিম দেশগুলোতে সম্পদের অভাব নেই। অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও প্রচুর। জনগণও এসব কাজে লাগুক তা চায়। এমতাবস্থায় যদি সুশাসন, জনপ্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈকি ব্যবস্থা ও স্থিতিশীলতা এবং উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা ও উন্নতির অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা যায় তাহলে মুসলিম বিশে^র অর্থনৈতিক চেহারা অবশ্যই পাল্টে যাবে। সাথে সাথে যদি মুসলিম ঐক্যকে সুদৃঢ় করা এবং উম্মাহভিত্তিক একটি সাধারণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো এবং পরস্পর সহযোগিতামূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হয় তাহলে মুসলিম বিশ্ব আবারো তার সোনালি অতীত ফিরে পাবে ইনশাআল্লাহ। আমরা সেদিনেরই অপেক্ষায়।

সৌজন্যে : দৈনিক নয়াদিগন্ত

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...