রবিবার, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ দুপুর ১২:৩৯
Home / খুৎবা / মসজিদে হারামের খুৎবা : ইসলামে সামাজিক নিরাপত্তা

মসজিদে হারামের খুৎবা : ইসলামে সামাজিক নিরাপত্তা

Sayekh Khaled Makkaইসলামী শরিয়তের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য এবং দ্বীনের অন্যতম উদ্দেশ্য সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এটি আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে এক বড় নেয়ামত, আল্লাহ যার উপমা দিয়েছেন কুরআনে।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا قَرْيَةً كَانَتْ آمِنَةً مُّطْمَئِنَّةً يَأْتِيهَا رِزْقُهَا رَغَدًا مِّن كُلِّ مَكَانٍ فَكَفَرَتْ بِأَنْعُمِ اللَّهِ فَأَذَاقَهَا اللَّهُ لِبَاسَ الْجُوعِ وَالْخَوْفِ بِمَا كَانُوا يَصْنَعُونَ

“আল্লাহ দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন একটি জনপদের,যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত,তথায় প্রত্যেক জায়গা থেকে আসত প্রচুর জীবনোপকরণ। অতঃপর তারা আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল। তখন আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের কারণে স্বাদ আস্বাদন করালেন,ক্ষুধা ও ভীতির।” (সুরা আন-নাহল : ১১২)।

এটি রব নির্ধারিত একটি দায়িত্ব। মানবতার বিকাশ ও সভ্যতা নির্মাণের অন্যতম নিয়ামক। এ কারণেই আল্লাহ তা’আলা জীবিকার নেয়ামতের পাশাপাশি নিরাপত্তা প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। এ দুইয়ের মাধ্যমে তিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন।আর এই দুইটি আল্লাহ তা’আলার ইবাদতের অন্নতম উপকরণ।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

فَلْيَعْبُدُوا رَبَّ هَٰذَا الْبَيْتِ،الَّذِي أَطْعَمَهُم مِّن جُوعٍ وَآمَنَهُم مِّنْ خَوْفٍ

“অতএব তারা যেন এবাদত করে এই ঘরের পালনকর্তার যিনি তাদেরকে ক্ষুধায় আহার দিয়েছেন এবং যুদ্ধভীতি থেকে তাদেরকে নিরাপদ করেছেন।” (সূরা কুরাইশ : ৩-৪)।

আল্লাহ তা’আলার অনেক বড় নেয়ামত ও উজ্জ্বলতম অনুগ্রহ জাতির প্রতিটি সদস্যের সকাল-সন্ধ্যায় এবং আবাসে-প্রবাসে প্রশান্তি ও নিশ্চিন্ত থাকার অনুভূতি। আপন রবের ইবাদতে সক্ষমতা এবং মানসিক, পারিবারিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা উপভোগ করতে পারা। কোনো ভয় নেই; নেই কোনো উদ্বেগ। কোনো বিভক্তি নেই; নেই কোনো হানাহানি।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا جَعَلْنَا حَرَمًا آمِنًا وَيُتَخَطَّفُ النَّاسُ مِنْ حَوْلِهِمْ ۚ أَفَبِالْبَاطِلِ يُؤْمِنُونَ وَبِنِعْمَةِ اللَّهِ يَكْفُرُونَ

“তারা কি দেখে না যে,আমি একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল করেছি। অথচ এর চতুপার্শ্বে যারা আছে,তাদের উপর আক্রমণ করা হয়। তবে কি তারা মিথ্যায়ই বিশ্বাস করবে এবং আল্লাহর নেয়ামত অস্বীকার করবে?”(সূরা আনকাবুত : ৬৭)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমাজে নিরাপত্তার অনুভূতিকে সৌভাগ্য ও পরিতুষ্টির উপাদান হিসেবে গণ্য করছেন। তিনি বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি নিজ আবাসে নিরাপদ সকালে উপনীত হয়, তার দেহ থাকে সুস্থ আর কাছে থাকে সেদিনের খাদ্য, তবে তার জন্য যেন পুরো দুনিয়া সমবেত করা হয়েছে।’ (তিরমিযী)।

শান্তি ও সুখময় জীবনের জন্য; সৌভাগ্য, সদাচার ও উন্নতি-প্রগতির জন্য সমাজের নিরাপত্তা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এ কারণেই কুরআন ও সুন্নাতে সামাজিক নিরাপত্তার গুরুত্ব ও আগ্রহ বিষয়ে একের পর এক বক্তব্য উঠে এসেছে। যাতে সর্বোতভাবে সমাজে প্রশান্তি ও স্থিতিশীলতার নেয়ামতে ধন্য হয়। আল্লাহ তা’আলার শরিয়ত বাস্তবায়ন করতে পারে। কল্যাণ বাস্তবায়নের অভিপ্রায়ে ধরণীকে অনুগত ও আবাদ করতে পারে। আর তা সম্ভব হয় না সৎ ও তাকওয়ার কাজে পরস্পর সহযোগিতা করা ছাড়া। নিরাপদ সমাজ নির্মাণের এক মহান ভিত্তি এটি।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا جَعَلْنَا حَرَمًا آمِنًا وَيُتَخَطَّفُ النَّاسُ مِنْ حَوْلِهِمْ ۚ أَفَبِالْبَاطِلِ يُؤْمِنُونَ وَبِنِعْمَةِ اللَّهِ يَكْفُرُونَ

“তারা কি দেখে না যে, আমি একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল করেছি। অথচ এর চতুপার্শ্বে যারা আছে, তাদের উপর আক্রমণ করা হয়। তবে কি তারা মিথ্যায়ই বিশ্বাস করবে এবং আল্লাহর নেয়ামত অস্বীকার করবে?”(সূরা মায়িদা : ২)।

সমাজে নিরাপত্তার অন্যতম ভিত্তি হলো, ভ্রাতৃত্বের দৃঢ় স্তম্ভ গড়ে তোলা, যা সমাজের সদস্যের মধ্যে মজবুত বন্ধন রচনা করবে। তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে সম্প্রীতি, অন্যকে অগ্রাধিকার দান, পরস্পর সহযোগিতা ও একে অন্যের হিতকামিতার মনোভাব। ছড়াবে মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে সদাচারের বিবিধ চিত্র। সামাজিক সহযোগিতা, এতিম, বিধবা ও দরিদ্রদের রক্ষণাবেক্ষণের উপমা। সক্রিয় থাকবে বিপদগ্রস্ত ও অভাবীদের মুখে হাসি ফোটানোর প্রচেষ্টা। তাদের ঋণ পরিশোধ, অবকাশ প্রদান ও দোষ ঢেকে রাখার চেতনা। এসবই নিরাপদ সমাজের উপাদান।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ

“মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই।”(সূরা হুজুরাত : ১০)

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন, ‘আর ঈমানদার পুরুষ ও নারী একে অপরের সহায়ক।’ (সূরা তাওবা : ৭১)।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই ব্যাপারে বলেন, ‘ইসলামের দিক থেকে শ্রেষ্ঠ মুসলিম সেই, যার হাত ও মুখের কষ্টদায়ক আচরণ থেকে অপর মুসলিম নিরাপদ থাকে।’ (তাবারানি)।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, ‘সেই প্রকৃত মুমিন যার কাছে অন্য মুমিন তাদের রক্ত ও সম্পদে নিরাপত্তা বোধ করে।’ (তিরমিযী)।

অন্য হাদিসে বলেন, “আল্লাহর কাছে প্রিয়তর মানুষ সেই, যে মানুষের জন্য অধিকতর কল্যাণপ্রসূ। আল্লাহর কাছে প্রিয়তম আমল হলো, অন্য মুসলিমের হৃদয়ের মাঝে আনন্দ সঞ্চার করা, তার কষ্ট লাঘব, ঋণ পরিশোধ এবং ক্ষুধা দূর করা।” (তাবারানি)।

স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও সদাচার শুধু মুসলিমদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়, বরং আমাদের মাঝে যে অন্য ধর্মাবলম্বী বাস করে। ইহুদি, খ্রিস্টান, চুক্তিকারী ও নিরাপত্তা গ্রহণকারী সবারই প্রতিশ্রুত অধিকার এটি। ইসলাম তাদের সবার জন্যই নিরাপত্তা, জান-মাল ও স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তা দিয়েছে। তাদের সঙ্গে সততা, সাম্য, উদারতা ও কোমলতার নির্দেশ দিয়েছে।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

لَّا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَلَمْ يُخْرِجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ أَن تَبَرُّوهُمْ وَتُقْسِطُوا إِلَيْهِمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ

“ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা মুমতাহানা : ৮)।

ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর এক ইহুদি প্রতিবেশী ছিলেন। খাদ্য ও উপহার প্রদানে তাকে দিয়েই শুরু করতেন ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি সর্বদা এ ব্যাপারে নির্দেশও দিতেন। এটি ইসলামের উজ্জ্বলতম সৌন্দর্যের নিদর্শন। ইসলামকে যারা সন্ত্রাসের কালিমালিপ্ত করতে চায় তারা যেন এসব লক্ষ করে।

খাতিব : শাইখ খালেদ মুহাম্মাদ আল গামেদী

স্থান : মাসজিদুল হারাম,মাক্কাতুল মুকাররামা

তারিখ : ১ এপ্রিল ২০১৬

 

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

Khutbatul Eid ul fitr- English Part

By: Khatib Tajul Islam   Asalamualaikum Warahmatulahi Wabarakatu,   May peace and blessings be upon ...