অনলাইন ডেস্ক :: পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ বরণের নামে বিভিন্ন জীবজন্তুর মূর্তি নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা, মুখে উল্কি আঁকা এবং নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণসহ সকল অনৈসলামিকতা ও বিজাতীয় সংস্কৃতি থেকে দূরে থাকার জন্য মুসলিম জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।
সোমবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, বর্ষবরণের নামে মূলত মুসলমানদের ঈমান-আকিদাবিরোধী ভিনদেশি হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতির প্রসার ঘটানোর চেষ্টা চলছে। নতুন বছরের প্রথম দিন বাঘ-ভাল্লুক, সাপ, বিচ্ছু, কুমির ও বিভিন্ন দেব-দেবীর বড় বড় মূর্তি, ছবি ও মুখোশ নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে যে র্যালি বের করা হয়, এখানে কার কাছে নতুন বছরের মঙ্গল ও কল্যাণ কামনা করা হচ্ছে? বিবৃতিতে বলা হয়, ইসলামের বিশ্বাস মতে, কোনো জীবজন্তু, বন্যপ্রাণী ও দেব-দেবীর মূর্তির কাছে কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করলে ঈমান থাকবে না। মুসলমানদের বিশ্বাস মতে, ভালো-মন্দ, মঙ্গল-অমঙ্গল সবকিছুই আল্লাহর হুকুমেই সংঘটিত হয়ে থাকে। মুসলমানকে কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করতে হবে একমাত্র আল্লাহর কাছেই। সুতরাং মুসলমানদের জন্য মঙ্গল শোভাযাত্রার সংস্কৃতি চর্চা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
বিবৃতিতে বলা হয়, বর্ষবরণের উৎসবের নামে নারী-পুরুষ পরস্পরের মুখে উল্কি আঁকা, জীবজন্তুর মুখোশ পরা, নারীরা লালপাড়ের সাদা শাড়ি পরিধান করে কপালে শাখা-সিঁদুর লাগিয়ে সম্মিলিত উলুধ্বনি দেওয়া, এগুলোর সবই হিন্দু ধর্মীয় রীতি। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ এসব পালন করতে পারে। কিন্তু মুসলমানদের জন্য এসব পালনের কোনোই সুযোগ নেই। তা ছাড়া পান্তা-ইলিশের নামে যে সংস্কৃতির চর্চা এখন চলে থাকে, তাও আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কোনো অংশ নয়, বরং এটা গ্রাম-বাংলার খেটে খাওয়া কোটি কোটি মানুষের দারিদ্র্যতার সাথে উপহাস ছাড়া আর কিছু নয়। জাতীয় সংস্কৃতি ও আনন্দ হতে হবে, যেটা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সামাজিক রীতি ও নীতি-আদর্শকে ফুটিয়ে তোলে এবং যে আনন্দে প্রায় সকলেই শরিক হতে পারে। হেফাজত নেতৃবৃন্দ প্রশ্ন রেখে বলেন, বাঘ-ভাল্লুক ও সাপ-বিচ্চুর মঙ্গল শোভাযাত্রা কার প্রতিনিধিত্ব করছে এবং পান্তা-ইলিশে দেশের কত ভাগ মানুষ শরিক হওয়ার সক্ষমতা রাখে?
বিবৃতিতে হেফাজত নেতৃবৃন্দ গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পয়লা বৈশাখের নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠানে নারী সমাজের ওপর সংঘবদ্ধ যৌন-নির্যাতনের ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, নারী-পুরুষের অবাধ চলাচলের বহুমুখী ক্ষতিকর দিক রয়েছে। শুধু গত বছর নয়, এর আগেও বহুবার বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে নারী নির্যাতন ও নারীদের সম্ভ্রমহানির মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। তাই মা-বোনদের প্রতি আহ্বান জানাব, তারা যেন বর্ষবরণের নামে ইসলামবিরোধী বিজাতীয় এসব অনুষ্ঠানে শরিক হওয়া থেকে বিরত থাকেন। ঈমান-আকীদার প্রশ্ন ছাড়াও এসব অনুষ্ঠানে নারীদের মর্যাদা ও নিরাপত্তাগত নানা ক্ষতিকর আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, মানুষের চেহারা ও বেশ দেখে বুঝার উপায় নেই যে, কার ভেতরে কোন চিন্তা কাজ করছে। এ কারণেই ইসলাম অনাত্মীয় নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ অনুমোদন করে না এবং নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই পর্দার বিধান জারি করেছে।
হেফাজত নেতৃবৃন্দ বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার নামে দেশে দৃশ্যত শিক্ষা, সংস্কৃতি ও আদর্শিকভাবে জাতিকে ধর্মহীন করার উদ্যোগই চলছে। বর্তমানে স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে ইসলামী শিক্ষাকে সংকুচিত করা হয়েছে। সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানসহ সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পৌত্তলিক কালচার, বেহায়াপনা ও নগ্নপনা এখন রীতি হয়ে ওঠছে। ঘরে, বাইরে, রাস্তায়, মার্কেটে, জনমাগমে, টেলিভিশন, সিনেমায় সর্বত্রই এখন ভোগ-বিলাসিতা ও যৌন উদ্দীপক আচরণের ছড়াছড়ি। কথায় কথায় উলামা-মাশায়েখ, ইসলামী শিক্ষা এবং দাড়ি-টুপী ও হিজাবধারীদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার, কটূক্তি, অপবাদ ও হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। এসবের কুফল যে কতটা ভয়াবহ হয়ে দেখা দিতে পারে, গত বছরের পহেলা বৈশাখের ঘটনায় আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে।
বিবৃতিতে হেফাজত শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ঈমান-আকীদাবিরোধী শিরকী এসব প্রথা বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তারা বলেন, একদিকে ধর্মহীনতার চর্চা এবং অন্যদিকে ইসলাম ও আলেম সমাজের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও কটূক্তি সমান্তরালভাবে চলছে। জাতি হিসেবে মূলত আমাদের কোন দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, তা প্রত্যেকেরই গভীরভাবে ভাবা দরকার।