কমাশিসা ডেস্ক :: সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে বাতিলের দুঃসাহস না দেখাতে সরকার ও আদালতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরাম, রাজনৈতিক ও বুদ্ধিজীকি মহল। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এ আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের দুঃসাহস দেখাবেন না
—-শীর্ষ উলামায়ে কেরাম
বিবৃতিতে শীর্ষ উলামায়ে কেরাম বলেন, সরকার ও প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা ইসলাম বিরোধী বাতিল চক্র ধারাবাহিকভাবে ইসলাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করেই চলেছে। বিশ্বের বুকে সর্বাধিক সম্প্রীতির দেশ আমাদের প্রিয় ভূমিকে তারা অস্থিতিশীল করতে ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ধ্বংস করতে চায়। ইতিহাস সাক্ষী, এ অশুভ শক্তি যখনই সুযোগ পেয়েছে তখনই ইসলাম, ঈমান ও মুসলমানদের উপর আঘাত হেনেছে। সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দেয়ার আবেদন করে হাইকোর্টে দায়ের করা রিট অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
তারা বলেন- “রাষ্ট্র যার যার ধর্ম সবার, ধর্ম যার যার উৎসব সবার” শ্লোগান দিয়ে ইসলাম প্রিয় জনতার অন্তর থেকে ঈমান মুছে ফেলার চেষ্টায়রত ইসলাম বিরোধী এ অশুভ চক্রটি “রাষ্ট্রের কোন ধর্ম থাকতে নেই” বলে অসার যুক্তি দেখিয়ে সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি ও ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। ৯৫ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ মুসলিম দেশের সংবিধান থেকে ইসলামের নাম-নিশানা মুছে দেয়ার চক্রান্ত কোন দিন শুভ হবে না। তারা কি দেশে ব্যাপক অরাজকতা সৃষ্টি করে জঙ্গি তৎপরতা আবিস্কার করে দেশ, মুসলিম উম্মাহ ও সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়? আমরা রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান, মহামান্য আদালত ও সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দেয়ার দুঃসাহস দেখাবেন না। দীর্ঘ ২৮ বছর পর রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দেয়ার রিট বাতিল করার পরিবর্তে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে অগ্রসর হলে ইসলাম প্রিয় জনতা ইমানী দায়িত্বেই তা রুখে দিতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবে।
বিবৃতিদাতারা হলেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি শাইখ আবদুল মোমিন, শীর্ষ আলেমেদ্বীন রাবেতা আলম আল-ইসলামীর স্থায়ী সদস্য ও সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, মাওঃ মোহাম্মাদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের আমির মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী, খেলাফত আন্দোলনের প্রধান আমিরে শরীয়ত হাফেজ মাওলানা আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী হজুর, মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী, ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী প্রমুখ।
সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করার চেষ্টা করা হলে সারাদেশে প্রতিরোধের দাবানল জ্বলবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে হেফাজত নেতারা শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটি সরকারের প্রতি এ হুশিয়ারী উচ্চারণ করে।
বিবৃতিতে হেফাজত নেতারা বলেন, রাষ্ট্রের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, সংখ্যা-গরিষ্ঠ জনগণের চেতনা, ধর্মীয় মূল্যবোধ, সামাজিক স্থিতিশীলতা ও বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ব্যাপারে দায়িত্ব জ্ঞানহীন, গণবিচ্ছিন্ন একটি অশুভ চক্র সবসময় স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে এদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি ও অশান্তির বীজ বপন করতে চায়। তারা যখনই সুযোগ পেয়েছে ইসলাম ও মুসলমানদের বুকে ছোবল মারার চেষ্টা করেছে। সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করার জন্য এই অশুভ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়। অনুকূল পরিবেশ পেলেই এরা ফনা তুলে। বিষধর সাপতুল্য এই চক্রটি ঝোপ বুঝে কোপ মারার জন্য মাঝে মাঝে সরকার এবং বিচার বিভাগের ঘাড়ে সওয়ার হতে চায়।
তারা বলেন, ৯২ শতাংশেরও বেশি মুসলমান অধ্যুষিত বিশ্বের দি্বতীয় বৃহৎ মুসলিম দেশের সংবিধান থেকে ইসলামের নাম-নিশানা মুছে দিয়ে এরা এক ঢিলে দুই পাখি মারার পাঁয়তারা করছে। তারা একদিকে সাম্রাজ্যবাদ মোড়ল প্রভুদের খুশি করতে চায়, অন্যদিকে সারাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির চক্রান্ত বাস্তবায়নে আদাজল খেয়ে নেমেছে। এরূপ কোনো ষড়যন্ত্র হলে এবং সরকার কিংবা বিচারবিভাগ তাদের কাছে মাথা নত করলে সর্বস্তরের মুসলমান রাজপথে নেমে আসবে; গোটা দেশে প্রতিরোধের দাবানল জ্বলে উঠবে।
হেফাজত নেতারা বলেন, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলছি, সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দেবার আবেদন করে হাইকোর্টে দায়ের করা রিটটি সংশ্লিষ্ঠদের অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। মহামান্য আদালতের প্রতি আমাদের আবেদন থাকবে, জনস্বার্থ, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় চেতনা, সর্বোপরি সাম্প্রদািয়ক সম্প্রীতি বজায় রাখার স্বার্থে এ ধরনের বিতর্কিত বিষয়ে দায়েরকৃত রিট খারিজ করে দেয়া হোক। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এটি আদৌ কোনো রাজনীতির বিষয় নয়।
বিবৃতিদাতারা হলেন, হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও নায়েবে আমির মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী।
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দেয়ার প্রতিক্রিয়া হবে ভয়াবহ
—মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী
বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকবে না বলে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রচারিত খবরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী।
তিনি বলেন, স্পর্শকাতর এ বিষয়ে আবেগতাড়িত সিদ্ধান্ত গ্রহণ উচিৎ হবে কি না, তা গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে দেখা উচিৎ। রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে জনগণের মধ্যে সৃষ্ট মতানৈক্যের ফলে অতীতে এসব বিষয়ে পরিবর্তন সাধিত হয়। কারণ, মতের এই বিভাজন এবং উদ্বেলিত বিভাকে অবলম্বন করেই আমাদের জাতিসত্ত্বার জাগরণ ও তাৎপর্য। বিভিন্ন জাতীয় প্রশ্নে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গীর যেমন প্রতিক্রিয়া আছে, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের ক্ষেত্রে সেই প্রতিক্রিয়া আরো প্রবল। তাই এই বিষয়টিকে হালকা করে দেখা কিছুতেই উচিৎ হবে না। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতি মাওলানা নেজামী এসব কথা বলেন।
ঐক্যজোট চেয়ারম্যান বলেন, ৭২-এর সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা সমাজতন্ত্র সংযোজনের ফলে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং স্বাধীনতার প্রকৃত চেতনার প্রতিফলন যেমন হয়নি, তেমনি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের চিন্তা-চেতনার রুপায়ণ ও অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি ঘটেনি। কেননা, এদেশের মানুষের জীবনধারা প্রমাণ করেছে, তারা ধর্ম নিরপেক্ষ নয়। এই বাস্তব ও সত্য কথাটা ভুলে বুদ্ধিবৃত্তির সিন্ডিকেট করে সূদূরপ্রসারী অভিপ্রায়ে বাংলাদেশের আদর্শিক মূল শিকর কেটে ফেলে ধর্মনিরপেক্ষতা রাজনৈতিক ও সমাজতন্ত্র অর্থনৈতিক দর্শন হিসেবে জোর করে সংবিধানে প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়।
আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, সংবিধান একটি দেশের রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চিন্তা-চেতনা ঈমান-আক্বিদার রুপায়ণ। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি। তাই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চিন্তা-চেতনার রূপায়ণ ও অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি হিসেবেই গণতান্ত্রিক দায় হিসেবে এবং এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্রের প্রতিফলন ঘটিয়ে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংযোজন করা হয়। তাছাড়া জনগণের অনুভুতির কথা বিবেচনা করে অনেক ধর্মীয় মূল্যবোধকেও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মধ্যে আনা হয়। কেননা, পৃথিবীর সব দেশেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক চেতনাকে গুরুত্ব দেয়া হয়। এটাই গণতন্ত্রের কথা । তাই মুসলিম জনসংখ্যা অধ্যুষিত বাংলাদেশের সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দেয়ার চিন্তা-ভাবনা অনভিপ্রেত।
তিনি বলেন, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অনেক দেশে ইসলাম রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে স্বীকৃত। আলজেরিয়া, বাহরাইন, ব্রুনেই,কমোরস, মিসর, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ,মরক্কো, ওমান, কাতার সোমালিয়া তিউনিসিয়ায় ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম। ইন্দোনেশিয়ায় ইসলাম ছাড়াও অন্য কয়েকটি ধর্মকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ইউরোপের অধিকাংশ দেশেই খৃস্টধর্ম রাষ্ট্র হিসিবে স্বীকৃত। পোল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইতালি ও স্পেনে প্রধান ধর্ম রোমান ক্যাথলিক। ডেনমার্ক, জার্মানী, সুইডেন ও ফিনল্যান্ডে লথেরান ধর্ম প্রাধান্য পায়। আর্জেন্টিনা, কোস্টারিকা, মাল্টা, মোনাকো ও সুইজারল্যান্ডের কিছু ক্যন্টন ও ভাটিকান সিটির রাষ্ট্রধর্ম রোমান ক্যাথলিক। সাইপ্রাস ও গ্রিসে ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অ্যান্ডোরা, ডোমিনিকান রিপালিক, এল সালভেদর, প্যারাগুয়ে, পেরু, পর্তুগাল ও স্লোভাকিয়ার সংবিধানে ক্যাথলিক ধর্মকে বিশেষভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। আর্মেনিয়ায় অ্যাপোস্টলিক চার্চ রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃত। ইহুদী ধর্মই ইসরাইলের চালিতা শক্তি। বিশ্বের একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র নেপাল।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হলে সংখ্যালঘুদের নিজ নিজ রাষ্ট্র সৃষ্টির আশংকা অমূলক। তাহলে তো রাষ্ট্রধর্মগ্রহণকারী দেশগুলোতে সংখ্যালঘুদের পৃথক রাষ্ট্র সৃষ্টির আন্দোলন শুরু হতো।