সিরাজী এম আর মোস্তাক ::
ঘরে ঘরে চাকরি দেবার প্রতিশ্রুতিতে ক্ষমতায় এসে অসহায়, ভুখা-নাঙ্গা ও সর্বোচ্চ শিক্ষিত বেকার যুবকদের আন্দোলনে সাড়া না দিয়ে বরং পুলিশ নামক ভয়ানক অস্ত্র দ্বারা হামলা করা কতোটা অমানবিক, সরকার সে বোধটুকু হারিয়ে ফেলেছে। সরকার যে আচরণ করেছে, তা সম্পুর্ণরূপে মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল হয়েছে। বহু নিরীহ ছাত্রকে আটক করেছে, নির্মম আঘাতসহ জঘন্যভাবে লান্থিত করেছে। অথচ বেকার যুবকদের দাবি আহামরি কিছু নয়, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা মাত্র ৩৫ বছর করা। এ দাবি সম্পুর্ণ যৌক্তিক ও বিধিসম্মত।
মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদদেরকে রাজাকার সাব্যস্ত করে তথাকথিত দুই লাখ ভারতীয় রাজাকারদেরকে সরকার মুক্তিযোদ্ধা কোটার নামে রাষ্ট্রের সকল সুযোগ-সুবিধা অবৈধভাবে প্রদান করায় এ আন্দোলন আবশ্যক হয়েছে। সরকার তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান-সন্ততি এমনকি নাতি-নাতনিদেরকেও অবৈধভাবে চাকরিতে প্রবেশের বয়সবৃদ্ধিসহ বঞ্চণা কোটা প্রদান করেছে।
গত ২০০৯ সাল থেকে এ বৈষম্য ব্যাপকভাবে অব্যাহত রেখেছে। ইতিমধ্যে দেশের সকল চাকরি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি এবং অন্যান্য সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধাতে শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধা কোটানীতি পরিপালিত হয়েছে। তাতে নীতি গৃহীত হয়েছে যে, ‘৭৫ এর পর এযাবতকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি বা চাকুরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে শতকরা ৩০ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পরিপালনে যতটুকু ভঙ্গ বা ঘাটতি হয়েছে, তা সম্পুর্ণ পুরণ করা।’ এতে প্রায় বিশ লাখ উচ্চ শিক্ষিত যুবক আজ বেকারত্বের বোঝা বহন করে চলেছে। এর সাধারণ প্রমাণ হচ্ছে, শাহবাগে সাধারণ বেকারদের ওপর হামলায় শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধা কোটা সুবিধাভোগী পুলিশদেরকেই ব্যবহার করা হয়েছে। তারা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় সাধারণ বেকারদের ওপর অতি নিষ্ঠুর আচরণ করেছে। সরকারের উচিত, অবৈধ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসুবিধা বাতিল করে সাধারণ বেকারদের দাবিতে সাড়া দেয়া।
সরকার বেকারদের দাবিতে সাড়া না দিলে তা বুমেরাং হবে। এক একজন বেকার যুবক বঙ্গবন্ধুর ন্যায় ক্ষীপ্র ও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে। তারা সরকারের মুক্তিযুদ্ধ ব্যবসা ধ্বংস করে দিবে। ন্যাক্কারজনক হামলার প্রতিশোধ সরকারকে পাকিস্তানী হানাদারদের পরিণতি ভোগ করাবে।
এ্যাডভোকেট, ঢাকা।