মুহতামিম, শিক্ষা সচিবগণ বহির্বিশ্ব সফর করুন। প্রয়োজনে বিভাগীয় দায়িত্বশীলগণও দেশের নামি-দামি প্রতিষ্ঠানগুলো ভিজিট করে অভিজ্ঞতাকে যাচাই করুন।
খতিব তাজুল ইসলাম::
আমাদের কওমি মাদারাসায় বন্ধ্যাত্মতা কেবল সিলেবাসে নয়, সবদিক দিয়ে যেন একটা অসংলগ্নতা পেয়ে বসেছে। আমরা দেখি উলামা-মাশায়েখ, পীর-বুযুর্গগণ দেশ-বিদেশ সফর করেন। সৌদিআরব, আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন তো হর হামেশা যাচ্ছেন। কেন যান আর কেন আসেন? শুধু অর্থ। টাকা লাগবে তাই সফর। ইন্ডিয়া-পাকিস্তান আর বাংলাদেশের উলামাদের কথা বলেন, সবার একই অবস্থা। টাকার পিছনে ঘুর ঘুর করছেন। জ্ঞানের জন্য নিজের দহলিজের বাহিরে যেতে তারা নারাজ। তাদের কাছে যে কুরআন শরিফ আর বোখারি শরিফের কপি আছে! ব্যস, তামাম জগতের জ্ঞান ভাণ্ডার নিয়ে যেন তারা পকেটে করে ঘুরছেন!!
আমাদের মানসিকতার অবশ্যই পরিবর্তন দরকার। যারা ‘সুদূর চীন হলেও জ্ঞান অন্বেষণে যাও’ এই কথার প্রচার করেন, তারাতো হাতের নাগালের এই দেশগুলোতে গিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের খোঁজ-খবর নিতে রাজি না।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার চেয়ে অন্যান্য দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা খুব উন্নত ও কার্যকর। তাই নিজেদের কমজুরিকে না ঢেকে কমজুরি দূরিকরণের পথে পা বাড়ানোই বুদ্ধিমানের কাজ। আরবের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে মতবিনিময় করে আমাদের নাহু, ছরফসহ আরবি ভাষার ক্ষেত্রে যে দুর্বলতা আছে, তা দূর করার চেষ্টা করি।
উন্নত সাইন্স টেকনোলজির জন্য ইউরোপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে ভাল যোগাযোগ রাখা যেতে পারে। আমি কি চাই এবং আমার করণীয় কি- তা ঠিক করে কাজে নামতে হবে। হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। আর না পরলেও এটাতো করা যায় যে, বাংলাদেশের ভেতর গুরুত্বপুর্ণে এবং উল্লেখ্যযোগ্য যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোর সাথে একে অন্যের যোগাযোগ ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করতে পারি।
ইসলামের সোনালী যুগে বাগদাদে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন আসতো জ্ঞান আহরণের জন্য। এমন সুযোগ ছিলো মুসলিম দেশ স্পেনেও। ইউরোপীয়রা এসে জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে নিজ দেশে ফিরে গিয়ে গবেষণার কাজ এগিয়ে নিয়েছেন। আজ তারা কোথায় আর আমরা কোথায়? তাদের সমাজে এখনো চলমান সেই রীতি কিন্তু আমরা অচল স্থবির হয়ে আছি।
খুব সাধারণ বিষয় হল, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যে ক’টি দূতাবাস বাংলাদেশে আছে, তাদের সাথে মতবিনিময় করার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন ক’জন মুহতামিম আর নাজিম সাহেব এদেশে আছেন? নাই। কারণ, চলনসই আরবিতেই কথা বলার মত যোগ্যতাই যে তারা রাখেন না, সেখানেিইংরেজি বা অন্য কোনো ভাষায় কথা বলার অনুরোধ করলে অবস্থা তখন বেগতিক হয়ে যাবে।
সোজা কথা, মুহতামিম, নাজিম, মুহাদ্দিসসহ বিভাগীয় দায়িত্বশীলগণ শিক্ষা সফর করবেন। বিশ্বের প্রসিদ্ধ দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের সাথে শিক্ষা বিষয়ক বৈঠক করবেন। কারণ, প্রতিটি বসরান্তে শিক্ষার মান যাচাই করতে হবে। যে শিক্ষা চালু আছে তা কতটুকু এফেক্টিভ, এটা ভেবে দেখতে হবে।
জাফলং আর শ্রীমঙ্গলের চা বাগানে ছাত্রদের ঘুরিয়ে নিয়ে আসলে শিক্ষা সফর তামিল হয়ে যায় না। শিক্ষা সফরের জন্য আলাদা ম্যানু, আলাদা ভ্যানু থাকা জরুরি। একটি শিক্ষা সফরকে স্বার্থক করে তুলতে হলে সংশ্লিষ্ট সকলকে অনেক প্রস্তুতি নিতে হয়। যা আমরা দেশ-বিদেশ সফর করে বুঝতে পেরেছি। শিক্ষা সফরের আসল উদ্দেশ্য কি এবং কেমন হওয়া চাই, শিক্ষা সফরের উপর বিস্তারিত আলাদা একটি প্রবন্ধ অন্য সময় লেখার ইচ্ছা খাকল। কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় এখানে তা আর উল্লেখ করলাম না।
লেখক: খতিব ও গবেষক।