বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সন্ধ্যা ৭:৪৪
Home / খোলা জানালা / বিজয়ের মাস ডিসেম্বর (০৪)

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর (০৪)

Elias Moshud_komashisha-02ইলিয়াস মশহুদ ::

আজ ৪ ডিসেম্বর। ১৯৭১’র এদিন থেকেই শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বাত্মক যুদ্ধ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালী বীর সেনারা মরণপণ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সাথে ভারতীয় মিত্র বাহিনী। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী চারদিক দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করতে থাকে। পায়ের তলার মাটি সরে যেতে থাকে পাকিস্তানি হানাদারদের। আগের দিন ভারতে আক্রমণ চালিয়ে বিপদে পড়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। এ আক্রমণের মাধ্যমে তারা চেষ্টা করেছিল মুক্তিযুদ্ধের গতি ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দিতে। বিশ্ববাসীকে বোঝাতে চেয়েছিল এটা ভারতীয় আগ্রাসণ আর ভারতের আগ্রাসণ থেকে বাঁচতে তারা এই আক্রমণ পরিচালনা করেছে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকরা নিজেরাই তাদের পাতানো ফাঁদে ফেঁসে যায়। তাদের এই অলীক গল্প বিশ্বের কেউ আমলে নেয়নি। রাতে দেয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বেতার ভাষণে বাংলাদেশের প্রতি তার সমর্থন স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। পূর্ব পাকিস্তান আর দখলে রাখা যাবে না এবং মুক্তিবাহিনী যে ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে, সেটা পাকিস্তানিরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিল। রণাঙ্গনে ক্রমেই পরাস্ত হচ্ছিল পাক বাহিনী। এই বাস্তবতা সামনে রেখে পাকিস্তানিরা আরেক যুদ্ধে মেতে উঠে। সেই যুদ্ধ স্নায়ুযুদ্ধ। আন্তর্জাতিক এই স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয় জাতিসংঘে। পাকিস্তান চেয়েছিল এই যুদ্ধকে পাক-ভারত যুদ্ধ হিশেবে দেখিয়ে নিজেদের সুবিধা হাতিয়ে নিতে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজে লাগিয়ে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। যুদ্ধ থামাতে পারলে মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রগতি রোধ করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রসঙ্গ তখন দুর্বল হয়ে পড়বে। একাত্তরের এই দিনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তানের অনুরোধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উপস্থাপন করে। প্রস্তাবে দাবি করা হয়- এ মুহূর্তে ভারত ও পাকিস্তানকে নিজ নিজ সীমান্তের ভেতর সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন এই প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। বৈঠকের পর বৈঠক হলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদে পাস হতে পারেনি। তখনও কিন্তু পাকিস্তান তার অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছিল।

এমনই অস্থির সময়ে ভারতে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার পড়ে যায় চরম উৎকণ্ঠায়। একাত্তরের এই দিনে তারা ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে লিখিত এক পত্রে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য অনুরোধ করে। এ চিঠিতে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দিয়ে বলা হয়- ‘উভয় দেশের এই ভয়াবহ বিপদে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ আপনাদের সঙ্গে রয়েছে। আমাদের আন্তরিক আশা, আমাদের যৌথ প্রতিরোধে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের হীন পরিকল্পনা ও জঘন্য চক্রান্ত ব্যর্থ হতে বাধ্য। আমরা সফল হবই।’
অপরপক্ষে এদিন দুপুরে এক বেতার ভাষণে ইয়াহিয়া খান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনী শত্রুকে কেবল আমাদের ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত করবে না, শত্রুর ভূখণ্ডে গিয়েও তাদের নির্মূল করবে।’ কথাগুলো ছিল তার শুধুই আস্ফালন। রণাঙ্গনে তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ক্রমেই পিছু হটছে। তেজদ্বীপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা দখলদার মুক্ত করছে দেশের বিভিন্ন এলাকা। পাকিস্তানি সামরিক ঘাঁটিগুলোতে অবিরাম গোলাবর্ষণ করছে। পালানোর পথ খুঁজছে পাকিস্তানি হানাদাররা। এদিন যৌথবাহিনীর তিনটি ডিভিশন যশোর, পঞ্চগড় ও চুয়াডাঙ্গা দিয়ে ঢাকা অভিমুখে এগোতে থাকে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাংলার দামাল মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণপণ লড়াই করতে থাকেন। দখলদার মুক্ত হয় বিভিন্ন এলাকা। এদিন দখলদার মুক্ত হয় দিনরাজপুরের ফুলবাড়ী, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধার ফুলছড়ি, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া, দামুড়হুদা, জীবননগর, বকশীগঞ্জ, লক্ষীপুরসহ আরও কিছু এলাকা।

তথ্য সহায়তা. উইকিপিডিয়া, বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই।

লেখক : বার্তা সম্পাদক, কমাশিসা

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

বিকৃত যৌনতায় দিশেহারা জাতি: সমাধান কোন পথে?

শাইখ মিজানুর রাহমান আজহারী: বাংলাদেশে প্রায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ধর্ষণ হচ্ছে। নারীকে বিবস্ত্র করা ...