বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১০:৪৪
Home / খোলা জানালা / যৌনশিক্ষা ও আমাদের করণীয় (পর্ব- ৭)

যৌনশিক্ষা ও আমাদের করণীয় (পর্ব- ৭)

আমরা আগে নারী নির্যাতন আর ধর্ষণের জন্য ভারতের দিকে বাঁকা চোখে তাকাতাম। এখন তো আমাদের নিজ দেশের সার্বিক পরিস্থিতির দিকে তাকাতেই লজ্জা করে। আগে ভাবতে হবে আমাদের নিজেদের নিয়ে। ভারতের দিকে চোখ তোলে তাকাবার আগে নিজেদের দিকে একশ একবার ফিরে তাকানো দরকার। অন্যের অবস্থা বিশ্লেষণের আগে নিজেদের সংশোধন করা অতীব জরুরি বলে মনে করি।

ivtigingখতিব তাজুল ইসলাম::

আগে যার নাম ছিলো ইজ্জতহানী বা যৌন হয়রানী, এখন সেটার আধুনিক নাম ইভটিজিং!  আগে যাকে বলা হতো ব্যাভিচারিণী, এখন তাকে বলা হয় যৌনকর্মী। এভাবে যৌন হয়রানীকে যৌনশিল্পে নিয়ে আসা হচ্ছে কিনা- ভাবনার বিষয়। নারীর ইজ্জত লুণ্ঠনকে যদি যৌনকর্ম বলে চালানো হয়, তখন উঠতি বয়সি স্কুলগামি মেয়েদের যারা বিরক্ত করে, রাস্তাঘাটে লাঞ্চিত-অপমাণিত করে, তাকে ইভটিজিংগের নামে হালকা করে নতুন যৌনশিল্পে রূপান্তরীত করা হচ্ছে, নতুন শিল্প নামে যৌনশিল্প আবিস্কার করা হচ্ছে- এতে অবাক হওয়ার কি আছে?

দুঃখের বিষয় হলো, উলঙ্গদেশ বলে যাদের আমরা তিরস্কার করি, তাদের একটি দেশে স্কুলগামি কোনো মেয়েকে যৌনহয়রানী করার মতো দুঃসাহস কেউ দেখাতে পারে না। রাস্তায় টেনে হিঁচড়ে লাঞ্চিত, অপমাণিত করার মতো বুকের পাঠা সেখানে কার আছে? ছুরিকাঘাত, ওড়না জামা খুলে ফেলা, অপহরণ করে ইচ্ছামতো ধর্ষণ করে রাস্তার পাশে, খালে-বিলে বা মাঠে ফেলে রেখে পলায়ন করার কথা কেউ কল্পনাই করতে পারে না। কিন্তু যাকে বলি আমরা ৯৫% মুসলমানের দেশ! মসজিদ মাদরাসার দেশ! পীর-বুযূর্গ, ওলী-আওলিয়ার দেশ, সাড়ে পনের কোটি মুসলমানের দেশ; সে দেশ কিনা আজ যিনা-ব্যাভিচার আর যৌন-হয়রানীতে ভাসছে। যৌনশিল্পের নামে বেহায়া বেলেল্লাপনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ঘরে কাঁদছে অসহায় নারী, বাইরে কাঁদছে স্কুলগামি ছাত্রী। কখনো গলা কেটে, হাত পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়। এসিড দিয়ে মুখ ঝলসে দেয়া হয়। অপহরণ করে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণপর হত্যা করে নালা-নর্দমা, মাঠে-ঘাটে ফেলে রাখা হয় কিন্তু প্রতিকারের কেউ নেই। দেখারও কেউ নেই। আইন-আদালত সবই আছে কিন্তু কিছুই  কাজ করছে না ঠিকমতো। প্রতিদিন শোনা যায়, স্কুল-কলেজগামি কোনো মেয়ে কোথাও না কোথাও নির্যাতিত হচ্ছে। ধর্ষিতা হচ্ছে। এসব কারা করছে? কেন করছে? না, নিজ দেশের উঠতি বয়সি তরুণ যুবকরাই এসব অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। সমাজ-রাষ্ট্রের ভাষায়- এরা নাকি বখাটে! বখাটে এখন জাতীয় ইস্যু। রাষ্ট্র যখন বিরোধীদের খুনের নেশায় মেতেছে আইন-আদালত পুলিশ-প্রসাশন হাতে নিয়ে, তখন তারা ইনসাফ করবে কিভাবে? দেশের যুবকদের ১২টা বেজেছে কিন্তু রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রকদের এদিকে তাকাবার এতটুকু সময়-সুযোগ কই?

চাকরি নেই, ব্যবসা নেই, নেই কর্মসংস্থান। দেশের কয়েক লক্ষ তরুণ যুবক চাকরির অভাবে আজ মাতাল হয়ে ঘুরছে। জড়িয়ে পড়ছে নানান অনৈতিক কর্মকাণ্ডে। অসৎ পথে ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেককে আবার ব্যবাহার করা হচ্ছে লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্য হিসেবে। এই লাঠিয়ালরা এখন মদ, নারী, বিকৃত যৌনকামনায় কাতরাচ্ছে। এরা দিনরাত মাদকের ঘোর নেশায় বুঁদ থাকে। ভারতীয় স্টার জলসাসহ যৌন সুঁড়সুুঁড়িমূলক চ্যানেলগুলো গোটা সমাজকে উচ্ছৃংখল বানাচ্ছে, সেদিকে রাষ্ট্রযন্ত্রের কোনো নজর নেই। তারা আছে দেশের কোন টিভি চ্যানেল তাদের বিরোদ্ধে নিউজ করলো, কোন পত্রিকা বিপক্ষে লিখলো এসব নিয়ে ব্যস্ত। আতঙ্ক আর ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের মাধ্যমে কি রাষ্ট্রকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে পারবে? না, কখনো নয়। দুই রিএকশ্যান থেকে একটি হবে; হয়তো তারা বোধশক্তি হারিয়ে ফেলে চেতনা ও মেরুদণ্ডহীন জাতিতে পরিণত হবে অথবা গণবিস্ফুরণ্মোখ হবে, আর এ দুটোই খারাপ।

ধনীর দুলালী, মন্ত্রী আমলা-চামচাদের সন্তানরা বিদেশে পড়ছে। মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তদের সন্তানরা আজ বিপদের মুখোমুখী। গরীবের মেয়ে হলে তো আর কথাই নেই। তাকে হয় ইজ্জত হারাতে হবে নতুবা তাদের ছুঁড়া এসিডে ঝলসে যেতে হবে; বাঁচার একমাত্র উপায় আত্মহত্যা। তাই এখন শহর, গ্রামাঞ্চলের মেয়েরা প্রায়ই অতিষ্ট হয়ে আত্মহত্যা করে।

গেল বছর দেখলাম, ঢাকা ইডেন কলেজের এক মেয়েকে কলেজ গেইটে সকলের সামনে সন্ত্রাসীরা এসিড ও গুলি মেরে নৃশংসভাবে হত্যা করল। প্রতিনিয়ত  ফেসবুক ইউটিউবে ভাসছে যুবতীদের ইজ্জতহানীর করুণ কাহিনী। পুলিশ প্রধান পরিস্কার ভাষায় বলে দিলো- তারা কেবল শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের নিরাপত্তা বিধান ছাড়া আর কারো নিরাপত্তা দিতে অপারগ। মনে হচ্ছে পুরো দেশ ও জাতিকে নিয়ে জুয়া খেলা শুরু হয়েছে।

আমরা আগে নারী নির্যাতন আর ধর্ষণের জন্য ভারতের দিকে বাঁকা চোখে তাকাতাম। এখন তো আমাদের নিজ দেশের সার্বিক পরিস্থিতির দিকে তাকাতেই লজ্জা করে। আগে ভাবতে হবে আমাদের নিজেদের নিয়ে। ভারতের দিকে চোখ তোলে তাকাবার আগে নিজেদের দিকে একশ একবার ফিরে তাকানো দরকার। অন্যের অবস্থা বিশ্লেষণের আগে নিজেদের সংশোধন করা অতীব জরুরি বলে মনে করি।
ভারতে এখন প্রতি একজন নারীর জন্য তিনজন পুরুষ। হিন্দুরা ভ্রুণ হত্যায় শ্রেষ্ঠ। ভ্রুণটা মেয়ে হলে তো আর রেহাই নেই। আল্টাসনোগ্রাফির মাধ্যমে আগাম জেনে নিয়ে হিন্দুরা মেয়ে ভ্রুণকে হত্যা করে। যে কারণে সামাজিক বিপর্যয়ের মুখোমুখী ভারত এখন। তাদের এসব অবস্থা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় আইয়ামে জাহিলিয়াতের কথা। সেকালের মূর্খ আরব আর বর্তমানের গোড়া হিন্দুদের মাঝে কোনো ফারাক খুঁজে পাওয়া যায় না।

ভারতে পুরুষ যখন কোনো যুবতী নারী দেখে, তখন তার মনে কামনার আগুন উৎলে উঠে। আর উঠবে না কেনো? তাদের দেশে যে নারীর তুলনায় পুরুষের সংখ্যা বেশি। যে জাতি লিঙ্গ পুঁজা করে। রাম লক্ষণ গণেশের কু-কাজ আর ধর্ষণ না হলে পুঁজো জমেনা । উলঙ্গ নারীর সুঢৌল স্ফীতি বুক বানিয়ে উদাম খোলা বেদিতে উপাসনা যারা করে তাদের কথা যত কম বলা যায় ততই ভাল। 

কিন্তু বাংলাদেশের মুসলমানেদর মাঝে ভারতের মত এই ব্যাধি কেন ছড়ালো- ভেবে পাইনা? আসলে অপসংস্কৃতি, ড্রাগ, মদ, কু-অভ্যাসই বাংলাদেশের যুবক এবং ধনীর দুলালীদের জীবন ধংসের একটা বিশেষ কারণ বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।

এই অভিশাপ ও দুর্বিপাক থেকে বের হতে হলে রাষ্ট্র এবং সচেতন মহলকে এগিয়ে আসতে হবে। নারীর ক্ষমতায়ন করেও যদি আজ নারী তথা মায়ের জাতির এই দুরাবস্থা? অপসংস্কৃতির অপতৎপরতায় লিপ্ত যেসব টিভি চ্যানেল- তাদের লাগাম টেনে ধরতে হবে। ড্রাগ ও মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পুলিশকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে হবে। যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের জন্য সরকারকে সর্বাত্মকভাবে কাজ করে যেতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্টা না হওয়া পর্যন্ত কোনো ঔষধই কাজে আসবে না, তাই আইন-আদালতকে বিতর্কের উর্ধে রাখতে হবে। নিপীড়িত, নিগৃহীত মজলুম মানুষের পাশে দলমত নির্বিশেষে সকলকে এগিয়ে আসার আহব্বান জানাই।

লেখক : খতিব ও গবেষক।

আরও পড়ুন- যৌনশিক্ষা ও আমাদের করণীয় (পর্ব- ৬)

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...