খুনী বাশারকে বাঁচাতে রাশিয়া ইরান ইরাক হিজবুল্লাহ ঐক্যবদ্ধ !
নিরীহ সিরিয়ানদের রক্তে ভাসছে মরুভুমি। আইএস জঙ্গীদের আয়োজনে সিরিয়া হয়েছে আরেক জাহান্নাম !
আমেরিকা ও ইউরোপ সাদ্দাম-গাদ্দাফী অপারেশনে হাঁটুগেড়ে বসে মুর্হুমুহ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সমাধান করতে পারে? কিন্তি খুনী বাশার বহাল তবীয়তে ! আমেরিকা ও পশ্চিমাদের দ্বিমুখী নীতির ফসলই হলো আইএস দুর্যোগ !
মধ্যপ্রাচ্য ডেস্ক: সিরিয়ায় রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার জের ধরে তুরস্কের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের ঘোষণা দিয়েছে মস্কো। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার চার দিনের মাথায় গতকাল শনিবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অবরোধ আরোপের সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করেন।
এ ছাড়া ভূমধ্যসাগর দিয়ে সিরিয়ার উপকূল অভিমুখে একটি যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর পাশাপাশি দেশটিতে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে রাশিয়া।
এদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান গতকাল বলেছেন, রুশ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার ঘটনায় তিনি ‘ব্যথিত’। পশ্চিমাঞ্চলীয় বালিকশেহির শহরে এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘এটি না ঘটলেই ভালো হতো। তবে এটা ঘটে গেছে। আমি আশা করি, ভবিষ্যতে আর এমনটি ঘটবে না।’ এর আগে এরদোয়ান এ ঘটনার জন্য ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছিলেন। খবর বিবিসির।
খবরে বলা হয়, ‘মস্কোভা’ যুদ্ধজাহাজের দূরপাল্লার বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটসহ (আইএস) প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরোধীদের বিরুদ্ধে রুশ বিমান হামলায় অংশগ্রহণকারী যুদ্ধবিমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
এ ছাড়া যুদ্ধবিমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত বৃহস্পতিবার সিরিয়ায় অত্যাধুনিক এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র পাঠায় রাশিয়া। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো মোতায়েন করা হয় সেখানকার হেইমিম বিমানঘাঁটিতে। তুরস্ক সীমান্ত থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে এই ঘাঁটির অবস্থান। বাশারবিরোধীদের ওপর হামলা চালাতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে রাশিয়ার যুদ্ধবিমান এই বিমানঘাঁটি ব্যবহার করছে।
গত মঙ্গলবার তুরস্কের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সিরিয়ার ভেতর রুশ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার ঘটনায় তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে প্রবল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। দুই পক্ষের মধ্যে চরম বাগ্যুদ্ধ চলছে।
এর আগে গত শুক্রবার টেলিভিশন ভাষণে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ‘আগুন নিয়ে না খেলার জন্য’ রাশিয়াকে সতর্ক করে দেন। সিরিয়ায় চলা রুশ অভিযানকে কেন্দ্র করে এ কথা বলেন তিনি। একই দিন তুর্কি নাগরিকদের জন্য ভিসামুক্ত সুবিধা আগামী ১ জানুয়ারি থেকে স্থগিতের ঘোষণা দেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তিনি বলেন, তুরস্ক কোনো কোনো বিষয়ে গ্রহণযোগ্যতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। রুশ বিমান ভূপাতিত করার ঘটনা তুরস্কের জাতীয় ও আঞ্চলিক স্বার্থ ভীষণভাবে ক্ষুণ্ন করতে পারে বলে তিনি সতর্ক করে দেন।
ভিসামুক্ত ভ্রমণসুবিধা স্থগিত রাখার ওই ঘোষণার আগে পুতিন নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বলে তাঁর দেশের নাগরিকদের তুরস্ক ভ্রমণের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তুরস্কে যাওয়া বিদেশি পর্যটকদের এককভাবে সবচেয়ে বড় অংশ রাশিয়ার। গত বছর তুরস্ক ভ্রমণ করেন ৩০ লাখেরও বেশি রুশ পর্যটক। সে কারণে রাশিয়ার এই মনোভাব দেশটির পর্যটনশিল্পকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
দুই দেশের সম্পর্কে এমন তীব্র টানাপোড়েন চলার মধ্যে প্রেসিডেন্ট পুতিন তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে কোনো কথা বলার আগে তাঁর যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার ঘটনায় তুরস্কের ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু এরদোয়ান তা প্রত্যাখ্যান করেন। তবে তিনি প্যারিসে শুরু হতে যাওয়া বিশ্ব জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনের অধিবেশনের পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আর এ জন্য ক্রেমলিনের কাছে সময় চেয়ে ইতিমধ্যেই চিঠি পাঠিয়েছে আঙ্কারা।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ভূমিকা থাকলেও দাপ্তরিকভাবে দেশটিতে নিজেদের সেনা অবস্থানের কথা এখনো স্বীকার করেনি ইরান। তবে সংঘর্ষ শুরুর আগেই বিদ্রোহ দমাতে দেশটিতে কয়েকশ’ ইরানি সদস্যের উপস্থিতির খবর পাওয়া যায়। ইরানি গণমাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী, গত তিন বছরে সিরিয়ায় দেশটির ১৮ জন রেভলিউশনারি গার্ডের সদস্য নিহত হয়েছেন। কিন্তু গত সপ্তাহে চার সদস্য নিহত হওয়া এবং বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সরকারি বাহিনীর প্রভাব বিস্তারের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ বাড়াচ্ছে ইরান।
রাশিয়ার বিমান হামলার সাহায্য নিয়ে সম্প্রতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারে বেশ কিছু বড় ধরনের সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাহিনী। আর এসব অভিযানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ এলাকা পুনর্দখল করতে সক্ষম হয়েছে সরকারি বাহিনী। ধারণা করা হচ্ছে, এই অভিযানে সরাসরি ভূমিকা রাখছে ইরানও।
সিরিয়ায় অংশগ্রহণ বাড়াচ্ছে ইরান
সিরীয় যুদ্ধে ইরানের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির আরেকটি নিদর্শন_ ইরানি শীর্ষ সেনা কমান্ডার মেজর জেনারেল কাশেম সোলাইমানির দেশটিতে অবস্থানের খবর। সম্প্রতি সিরিয়ায় তোলা তার কিছু ছবি প্রকাশ পেয়েছে। গত বছর থেকে ইরানি রেভলিউশনারি গার্ডের বহির্বিশ্ব শাখা ‘কুদস বাহিনী’র কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করছেন সোলাইমানি। এর আগে, আইএসবিরোধী যুদ্ধে ইরাক সরকারকে সহযোগিতার দায়িত্বে নিযুক্ত থাকলেও বর্তমানে তিনি সিরিয়ায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে নিহত চার শীর্ষ সেনা কর্মকর্তার মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হোসেইন হামেদানি। সম্প্রতি কিছু সংখ্যক ইরানি কর্মকর্তা হামেদানির মৃত্যুর ‘প্রতিশোধ’ নেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর সিরিয়ায় তাদের অবস্থান ও শক্তি বৃদ্ধির ধারণা আরো দৃঢ় হয়। ওই কর্মকর্তারা জানান, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদকে রক্ষায় তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল_ দেশটিতে ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স’ (এনডিএফ) নামে আধা সামরিক বাহিনী গঠন। ইরানি আধা সামরিক বাহিনী ‘বাসজি’র কমান্ডার-ইন-চিফ মোহাম্মাদ রেজা নাগভি জানান, এনডিএফের জন্য তহবিল সংগ্রহ করাই ছিল সদ্য প্রয়াত জেনারেল হামেদানির স্বপ্ন। তাছাড়া তিনি সিরিয়ার প্রয়োজনে ১ লাখ ৩০ হাজার সদস্যের মিলিশিয়া বাহিনীও প্রস্তুত রেখেছিলেন।
২০১৪ সালের মধ্যে ৭০ হাজার সিরীয়কে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ১২৮টি ব্যাটালিয়নের এনডিএফ বাহিনী গঠন করে দেয় ইরান। ওই বছর মে মাসে জেনারেল হামেদানি এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ইরানি রেভলিউশনারি গার্ডের কমান্ডার-ইন-চিফ মোহাম্মাদ আলী জাফারির কাছ থেকে সম্প্রতি পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এনডিএফের বর্তমান যোদ্ধা এক লাখ।
সিরিয়ার যুদ্ধে অংশ নিতে বর্তমানে ঠিক কত সংখ্যক ইরানি দেশটিতে অবস্থান করছে, তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে যুদ্ধে ইরানি নাগরিকের মৃত্যুর খবর থেকে তাদের উপস্থিতির পরিমাণ ধারণা করা হয়। ২০১৫ সালের জুন মাসে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইরনা থেকে জানা গেছে, গত চার বছরে অন্তত ৪০০ ‘স্বেচ্ছাসেবী যোদ্ধা’ নিহত হয়েছে। তারা সবাই হয় ইরানি, নয়তো ইরানে আশ্রয় গ্রহণকারী আফগান নাগরিক। বিশ্লেষকদের ধারণা, স্বেচ্ছাসেবী যোদ্ধা নিহতদের সংখ্যা প্রকাশের মাধ্যমে ইরান হয়তো তাদের সেনা অবস্থানের বিষয়টি আড়াল করতে চাইছে। একই কারণে, সিরিয়ায় নিহত রেভলিউশনারি গার্ডের সদস্যদের ‘অবসরপ্রাপ্ত’ বা ‘সাবেক’ বলে প্রকাশ করা হচ্ছে।
এত সাবধানতার পরও কিছু ইরানি রাজনীতিবিদের বক্তব্যের মাধ্যমে প্রায়ই জানা যাচ্ছে তাদের সিরিয়া-সংশ্লিষ্টতার খবর। কিছুদিন আগে ইরানি পার্লামেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা ও বৈদিশিক নীতি কমিটির চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন বোরোজার্দি দামেস্কে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সিরিয়ায় সেনা পাঠানোর জন্য প্রস্তুত আছে ইরান। দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ যদি অনুরোধ করেন, তবেই অভিযান শুরু করবে ইরান।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সিরীয় যুদ্ধে আসাদ বাহিনীর ক্রমশ ব্যর্থতা এবং ইরাক ও সিরিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) বাহিনীর উত্থানের ফলে এই লড়াইয়ে অংশগ্রহণে বাধ্য হয় ইরান। কেননা, মধ্যপ্রাচ্যে লেবানন, সিরিয়া ও ইরাককে নিয়ে একটি শিয়াপন্থী অক্ষশক্তি গড়ে তোলার ইচ্ছা আছে ইরানের। আইএসের উত্থানে তা প্রায় হাতছাড়া হতে বসেছিল। এই অঞ্চলে ইরানবিরোধীদের শঙ্কা, পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে পরমাণু চুক্তির ফলে কূটনৈতিক এবং আর্থিকভাবে আরো শক্তিশালী হয়েছে দেশটি। আর তাই এখন নিজের বলয় জোরদারে মন দিচ্ছে ইরান। সংবাদসূত্র : বিবিসি