শনিবার, ১২ই অক্টোবর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১২:০৫
Home / অনুসন্ধান / হাদিসের আলোকে সমকামিতার ভয়াবহতা!

হাদিসের আলোকে সমকামিতার ভয়াবহতা!

আবুল হুসাইন আলেগাজী

হাদীছের আলোকে কওমে লূতের কাজ
(ভয়াবহতা, বিধান ও বাঁচার উপায়)

কোরআন মজীদে কওমে লূতের পুরুষদের #নষ্টামির কথা এলেও একটি হাদীছে তা নারীদের মাঝেও থাকার কথা আলোচিত হয়েছে। যৌনতা বিশেষজ্ঞদের মতে নারীরাও সমকামী হয়। ইংরেজীতে পুরুষ সমকামীকে গেয়িষ্ট বলা হলেও নারী সমকামীকে বলা হয় লেসবিয়ান। তাছাড়া দেখা গেছে, ময়মনসিংহের ডাক্তার তসলিমা নাসরিনের মত বাংলাদেশের অন্যসব নারী নাস্তিকেরাও সমকামিতার পক্ষে সোচ্চার। ২০১৫ সালে নিহত নাস্তিক অভিজিত রায়ের মুসলিম নামধারী স্ত্রী ভারতের সুপ্রিমকোর্টের সমকামিতা বিষয়ক সাম্প্রতিক রায়ে ভারত সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে।

অন্যদিকে ইন্টারনেট ভিত্তিক চলমান পর্ণগ্রাফীর ভয়াল আগ্রাসনে সমকামিতা ও অজাচার তথা ইনসেস্টের মত নোংরা কাজও সারা দুনিয়ায় বেড়ে যাচ্ছে। #পর্ণগ্রাফীলাভজনক ব্যবসা হওয়ায় এর সাথে জড়িত লোকজন ব্যবসার সুবিধার্তে #নোংরামিরনিত্যনতুন পাশবিক ও নিষ্ঠুর কৌশল আবিষ্কার করে চলেছে। অর্থের লোভে কিছু পুরুষ ও নারী এসব নোংরা মুভি তৈরিতে নিজেদের বিলিয়ে দিচ্ছে। দুর্বল চিত্তের মানুষেরা এসব দেখে প্রভাবিত হচ্ছে। সম্প্রতি কলকাতার #আনন্দবাজার পত্রিকার প্রচারিত এক প্রতিবেদন মতে ভারতের এক যুবক পর্ণগ্রাফী দেখে নিজের মাকে ধর্ষণ করেছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে সকল অভিভাবকের উচিত, তরুণ ছেলে-মেয়েদের হাতে স্মার্টফোন না দেওয়া এবং তাদেরকে অতিরিক্ত স্বাধীনতা না দেওয়া। নতুবা পর্ণগ্রাফী দেখে যেকোনো সময় তারা দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।
এবার কওমে লূতের নারী সমকামীদের ব্যাপারে বর্ণিত একটি হাদীছ দেখি।
عن أبى صخرة جامع بن شداد مرسلا أن النبى صلى الله عليه وسلم قال : « كان اللواط فى قوم لوط فى النساء قبل أن يكون فى الرجال بأربعين سنة ». أخرجه ابن عساكر (50/320) ، والبيهقى فى شعب الإيمان (4/375 ، رقم 5459) .
অর্থঃ হযরত জামে বিন শাদ্দাদ বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “পুরুষের মাঝে সঙ্ঘটিত হওয়ার চল্লিশ বছর আগেই কওমে লূতের নারীদের মাঝে সমকামিতা দেখা দিয়েছিল।” [বাইহাকীর শুয়াবুল ঈমান (৫৪৫৯) ও ইবনে আসাকিরের তারীখে দিমাশক (৫০/৩২০)]।

আরেকটি দুর্বল হাদীছে কেয়ামতের আগে দুনিয়াতে সমকামিতার বিস্তার ঘটার কথা বর্ণিত হয়েছে।
عن واثلة وأنس رضي الله عنهما ، أن النبى صلى الله عليه وسلم قال : « لا تذهب الدنيا حتى يستغنى النساء بالنساء والرجال بالرجال والسحاق زنا النساء فيما بينهن ». أخرجه الخطيب (9/29) ، وابن عساكر (10/119) .
অর্থঃ হযরত আনাস ও ওয়াছেলা –رضي الله عنهما- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নারীদের পরস্পরে যৌনতা ও পরুষদের পরস্পরে যৌনতার বিস্তার না ঘটার আগে দুনিয়া ধ্বংস (কেয়ামত) হবে না। আর সিহাক (যৌন উত্তেজনায় পারস্পরিক জড়াজড়ি) হলো নারীদের পারস্পরিক জেনা।” [খতীবের তারীখে বাগদাগ (৯/২৯) ও ইবনে আসাকিরের তারীখে দিমাশক (১০/১১৯)]।
عن ابنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنه ، قال : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيهِ وسَلَّم : « لا تقوم الساعة حتى يرضخ رءوس أقوام بكواكب من السماء باستحلالهم عمل قوم لوط ». أخرجه الديلمى (5/88 ، رقم 7547) .
অর্থঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস –رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কওমে লূতের কাজ বৈধ করার ফলে আকাশের গ্রহের সাথে কিছু লোকের মাথা টক্কর না খাওয়ার (আসমানী আজাব নামার) আগে কেয়ামত সঙ্ঘটিত হবে না ।” [দাইলামী (৭৫৪৭)]।

প্রিয় নবীজি ছঃ এর আরেকটি হাদীছে মুসলমানদের মাঝেও কওমে লূতের কর্মের আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে।
عن جابر رضى الله عنه ، أن النبى صلى الله عليه وسلم قال : « إن أخوف ما أخاف على أمتي عمل قوم لوط ». أخرجه الترمذى (4/58 ، رقم 1457) وقال : حسن غريب . وابن ماجه (2/856 رقم 2563) ، وأحمد (3/382 ، رقم 15133).
অর্থঃ হযরত জাবের –رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমার উম্মতে কওমে লূতের কাজ দেখা দিবে বলে খুবই আশঙ্কা হচ্ছে আমার।” [সুনানে তিরমিযী (১৪৫৭), সুনানে ইবনে মাজা (২৫৬৩) ও মুসনদে আহমদ (১৫১৩৩)]।

হ্যা! বর্তমান আরবদেশের #নাস্তিক ও #সেক্যুলার মুসলিমরা সমকামিতার পক্ষে বাঙ্গালী নাস্তিকদের চেয়ে আরো বেশী সোচ্চার। এমনকি ফ্রান্সে আলজেরিয়া বংশদ্ভূত সমকামী ইমামও রয়েছে। ইউরোপের সেক্যুলার মুসলিম কমিউনিটিতে সমকামীদের জন্য মসজিদও (মসজিদে জেরার) রয়েছে। বস্তুত ইসলামকে তারা খেল-তামাশার বস্তুতে পরিণত করেছে। বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের আবাসিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাতেও সমকামী ছাত্র-শিক্ষকের সন্ধান পাওয়া যাওয়ার কথা এখন সংবাদপত্রেও আসছে। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠান পরিচালকদের সতর্ক থাকা উচিত এবং আবাসিক ব্যবস্থপনায় ত্রুটি থাকলে তা দূর করা জরুরী। মনে রাখবেন, শিষ্টের লালন ও দুষ্টের দমনে আপনার মাঝে যদি ঝুঁকি নেওয়ার সামান্য সাহসও না থাকে, তাহলে জান্নাতের মত নেয়ামত আপনার জন্য হারাম। জান্নাতে ভীরু ও কাপুরুষদের কোনো জায়গা নেই। জান্নাতে যেতে হলে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য কমবেশী ঝুঁকি নিতে হয়; সুবিধাবাদী হলে চলবে না।
সমকামীদের প্রকারভেদ

ছহীহ মুসলিমে বর্ণিত (হাদীছ নম্বর ২৬৫৭) একটি হাদীছ শরীফে স্ত্রী-বান্দী ব্যতীত অন্যান্য নারীদের দিকে খারাপ নজরে তাকানো, যৌন তাড়না থেকে তাদেরকে স্পর্শ করা ও তাদের কথা শোনা এবং এ উদ্দেশ্যে পা দ্বারা কোথাও যাওয়াকে জেনা (অর্থাৎ, লঘু জেনা) বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অনুরুপ সমকামিতা বিষয়ক নীচের হাদীছটির বক্তব্যও একই।
عن أبى سعيد رضى الله عنه ، قال : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيهِ وسَلَّم : « سيكون فى آخر الزمان أقوام يقال لهم اللوطية على ثلاثة أصناف ، فصنف ينظرون ويتكلمون وصنف يصافحون ويعانقون وصنف يعملون ذلك العمل ، فلعنة الله عليهم إلا أن يتوبوا فمن تاب تاب الله عليه ». أخرجه الديلمى (2/315 ، رقم 3425) .
অর্থঃ হযরত আবু সাঈদ –رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আখেরী জামানায় লূতী (আধুনিক আরবী মিছলী) নামের কিছু লোক দেখা দিবে। এরা তিন ধরণের হবে। এক ধরণের লোক হবে, যারা (সুদর্শন ছেলেদের দিকে) তাকাবে ও গল্প করবে। আরেক ধরণের লোক হবে, যারা করমর্দন ও কোলাকুলি করবে। আরেক ধরণের লোক হবে যারা ওই কাজটা করবে। তো তাদের সকলের উপর আল্লাহর লানত। তবে তাওবা করলে ভিন্ন কথা। আর যে তাওবার করবে, আল্লাহ তার তাওবা কবূল করবেন।” [দাইলামী (৩৪২৫)]।

সমকামীরা অভিশপ্ত

সমকামিতা জেনার চেয়েও মারাত্মক একটি কবীরা গুনাহ। এ কাজে যারা জড়িত তারা সকলে অভিশপ্ত। এ ব্যাপারে প্রিয় নবীজি ছঃ এর ঘোষণা হলোঃ
عن عمرِو بنِ أبي عمرٍو رضى الله عنه قال : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيهِ وسَلَّم : « ملعونٌ من عمِلَ عمَلَ قومِ لوطٍ ». أخرجه الترمذى (رقم 1481).
অর্থঃ হযরত আমর বিন আবু আমর –رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে কওমে লূতের কাজ করেছে, সে অভিশপ্ত।” [সুনানে তিরমিযী (১৪৮১)]।

عن أبى هريرة رضى الله عنه ، أن النبى صلى الله عليه وسلم قال : « ملعون من أتى امرأة فى دبرها ». أخرجه أبو داود (2/249 ، رقم 2162) ، وأحمد (2/444 ، رقم 9731).
অর্থঃ হযরত আবু হুরাইরা –رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে কোনো স্ত্রীর পায়ুপথে যৌনকর্ম করেছে, সে অভিশপ্ত।” [সুনানে আবু দাউদ (২১৬২) ও মুসনদে আহমদ (৯৭৩১)]।

عن ابنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنه ، قال : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيهِ وسَلَّم : « لعن الله من والى غير مواليه لعن الله من غيَّر تخوم الأرض لعن الله من كَمَّهَ أعمى عن الطريق ولعن الله من لعن والديه ولعن الله من ذبح لغير الله ولعن الله من وقع على بهيمة ولعن الله من عمل عمل قوم لوط ولعن الله من عمل عمل قوم لوط ولعن الله من عمل عمل قوم لوط ». أخرجه أحمد (1/108 ، رقم 855) ، والحاكم (4/396 ، رقم 8052) ، وقال : صحيح الإسناد . والبيهقى فى الكبرى (8/231 ، رقم 16794) .
অর্থঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস -رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে তার নিজের অভিভাবককে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করলো, আল্লাহ তাকে অভিশপ্ত করুন। আর যে জমিনের কোনো নিদর্শন (পাহাড়/টিলা ও নদী/খাল ইত্যাদি) নষ্ট করলো, তাকেও আল্লাহ অভিশপ্ত করুন। আর যে কোনো অন্ধকে পথ দেখালো না, তাকেও আল্লাহ অভিশপ্ত করুন। আর যে তার পিতা-মাতাকে অভিশাপ দিলো, তাকেও আল্লাহ অভিশপ্ত করুন। আর যে কোনো পশুর সাথে সঙ্গম করলো, তাকেও আল্লাহ অভিশপ্ত করুন। আর যে লূত সম্প্রদায়ের কাজ (সমকামিতা) করলো, তাকেও আল্লাহ অভিশপ্ত করুন (শেষের এ বাক্যটি তিনি তিনবার উচ্চারণ করেছেন)।” [মুসনদে আহমদ (৮৫৫), বাইহাকীর সুনানে কোবরা (১৬৭৯৪) ও মুস্তাদরকে হাকেম (৮০৫২)]।

সমকামিতার শাস্তি

কওমে লূতের উপর পাথর বৃষ্টি বর্ষণ ও তাদের আবাসকে ধ্বংস পূর্বক মহান রবের তাদেরকে হত্যা করা থেকে প্রমাণিত হয়, সমকামিতার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। আমাদের নবীও ছঃ বিভিন্ন হাদীছে এ কাজের শাস্তি মৃত্যুদন্ড বলে উল্লেখ করেছেন। নবীজি ছঃ এর আমলে কোনো সমকামী ধরা না পড়লেও হযরত আবু বকর ও হযরত আবদুল্লাহ বিন জুবাইরের শাসনামলে তাঁরা সমকামীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন মর্মে তথ্য পাওয়া যায়। বিস্তারিত জানতে আল্লামা আজুরীর ‘যম্মুল লিওয়াত’ শীর্ষক বইটি পড়া যায়। এবার এ প্রসঙ্গে বর্ণিত কয়েকটি হাদীছ দেখি।
عن ابنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنه ، قال : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيهِ وسَلَّم : « من وجدْتموهُ يعملُ عملَ قومِ لوطٍ فاقتُلوا الفاعلَ والمفعولَ بهِ ». أخرجه أبو داود (4/158 ، رقم 4462) ، والترمذى (4/57 ، رقم 1456) ، وابن ماجه (2/856 ، رقم 2561) ، والحاكم (4/395 ، رقم 8047) وقال : صحيح الإسناد.
অর্থঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস –رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কাউকে যদি কওমে লূতের কাজ করতে দেখ, তাহলে ফায়েল ও মফউলে বিহী (যে করেছে ও যার সাথে করা হয়েছে) উভয়জন হত্যা করবে।” [সুনানে আবু দাউদ (৪৪৬২), সুনানে তিরমিযী (১৪৫৬), সুনানে ইবনে মাজা (২৫৬১) ও মুস্তাদরকে হাকেম (৮০৪৭) প্রভৃতি]।

عن أبى هريرة رضى الله عنه ، أن النبى صلى الله عليه وسلم قال : « من عمل عمل قوم لوط فارجموا الفاعل والمفعول به ». أخرجه الحاكم (4/395 ، رقم 8048) .
অর্থঃ হযরত আবু হুরাইরা –رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কাউকে যদি কওমে লূতের কাজ করতে দেখ, তাহলে ফায়েল ও মফউলে বিহী (যে করেছে ও যার সাথে করা হয়েছে) উভয়জন হত্যা করবে।” [মুস্তাদরকে হাকেম (৮০৪৮)]।

মাসয়ালাঃ উভয়কে হত্যা করার এ বিধান তখনই প্রযোজ্য, যখন উভয়ে স্বেচ্ছায় এ কাজে লিপ্ত হয়। যদি কাউকে জোরপূর্বক বলৎকার করা হয়, তাহলে ভিকটিমের উপর মৃত্যুদন্ড কার্যকর হবে না।

عن ابنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنه ، قال : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيهِ وسَلَّم : « اقتلوا الفاعل والمفعول به فى عمل قوم لوط والبهيمة والواقع على البهيمة ، ومن وقع على ذات محرم فاقتلوه ». أخرجه أحمد (1/300 ، رقم 2727) ، وعبد الرزاق (7/364 ، رقم 13492) ، والطبرانى (11/226 ، رقم 11569) ، والديلمى (1/109 ، رقم 366) .
অর্থঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস –رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কাউকে যদি কওমে লূতের কাজ করতে দেখ, তাহলে উভয়জন হত্যা করবে। অনুরূপ কেউ যদি কোনো পশুর সাথে যৌনতায় লিপ্ত হয়, তাহলে পশুটিসহ তাকে হত্যা করবে। অনুরূপ কেউ তার মাহরিমের সাথে যৌনতায় লিপ্ত হলে তাকেও হত্যা করবে।” [মুসনদে আহমদ (২৭২৭), মুছন্নফে আবদুর রজ্জাক (১৩৪৯২), মুজমে তবরানী কবীর (১১৫৬৯) ও দাইলামী (৩৬৬)]।

মাসয়ালাঃ ইসলামে পাঁচ ধরণের যৌন অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। যথাঃ
এক. বিবাহিতের জেনা/ব্যভিচার।
দুই. বিবাহিত ও অবিবাহিত যে কোনো পুরুষের কোনো নারীকে ধর্ষণ।
তিন. মাহরিমের সাথে জেনা। এ ক্ষেত্রে কেউ ধর্ষিতা হলে তার মৃত্যুদন্ডের বিধান না এলেও যে নারী স্বেচ্ছায় কাউকে এ সুযোগ দিবে, তার শাস্তিও মৃত্যুদন্ড।
চার. সমকামিতা। এ ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারী উভয় সমকামীর শাস্তির বিধান একই।
পাঁচ. পশুর সাথে যৌনতা। তবে মানব জানোয়ারের ধর্ষণের শিকার পশুটিকে হত্যার নির্দেশের রহস্য হলো, পশুটির পেটে মানবদেহ সদৃশ বিকৃত বাচ্চার জন্মলাভ বন্ধ করা।

#বাঁচার উপায়

সমকামিতা থেকে নিজে বাঁচার ও অন্যকে বাঁচানোর কিছু নির্দেশনা পাওয়া যায় হাদীছ শরীফে। যেমনঃ
عن عمرو بن شعيب عن أبيه عن جده رضى الله عنه ، عن النبي صلي الله عليه وسلم قال : « مروا أولادكم بالصّلاة وهم أبناء سبع سنين، واضربوهم عليها وهم أبناء عشر سنين، وفرِّقوا بينهم في المضاجع ». أخرجه أبو داود (1/133 ، رقم 495) ، وأحمد (2/180 ، رقم 6689) ، والحاكم (1/311 ، رقم 708) ، والبيهقى فى الكبرى (2/229 ، رقم 3052) ، وابن أبى شيبة (1/304 ، رقم 3482) ، وأبو نعيم فى الحلية (10/26).
অর্থঃ হযরত আমর বিন শুয়াইব তাঁর পিতা হয়ে তাঁর দাদা (আবদুল্লাহ বিন আমর)–رضي الله عنه- থেকে বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সাত বছরে পদার্পন করলে শিশুদেরকে নামাজের আদেশ করবে এবং দশবছরে পদার্পনের পর নামাজ না পড়লে তাদেরকে পিটাবে। আর তাদের মধ্যকার বিছানা আলাদা করে দিবে।” [সুনানে আবু দাউদ (৪৯৫), মুসনদে আহমদ (৬৬৮৯), সুনানে বাইহাকী কোবরা (৩০৫২), মুছন্নফে ইবনে আবী শায়বা (৩৪৮২), মুস্তাদরকে হাকেম (৮০৪৭) ও হিলয়াতুল আউলিয়া (১০/২৬)]।

মাসয়ালাঃ
১. অনেকে আদরবশত সন্তানদেরকে নামাজের আদেশ করে না। ইসলামে এমন আদর পরিত্যাজ্য। দশবছরে পদার্পনের পর ছেলে-মেয়ে উভয় শিশুকে নামাজের জন্য বাধ্য করতে হবে। না করলে বুঝা যাবে, আপনি দুর্বল মুমিন।
২. সাত বছরে পদার্পনের পর ছেলে-মেয়েদের বিছানা পৃথক করে দিতে হবে। পৃথক বিছানায় মেয়ে অথবা ছেলেদের একই রুমে রাখা গেলেও ছেলে-মেয়েকে একই রুমে রাখা যাবে না। প্রসঙ্গত, আমি এক সুদানী দীনদার মানুষকে স্বচক্ষে দেখেছি, তিনি তার চার ছেলের জন্য একটি কক্ষের চারকোণে চারটি খাট বসিয়েছেন। এখন যদি কেউ বলেন, আমারতো ঘর ছোট এবং রুমের অভাব। এখন আমি এ নির্দেশ কিভাবে মানবো? উত্তর হলো, দীনদার ও রুচিশীল মানুষ হলে আপনার উচিত ছিল, বিয়ে ও বাচ্চা জন্ম দেবার আগে ঘরের চিন্তা করা। এখন যতদ্রুত পারেন নবীজি ছঃ এর নির্দেশ পালনের চেষ্টা করুন।
৩. হাদীছের এ নির্দেশ সহোদর ছেলে-মেয়েদের ক্ষেত্রে যতটুকু না প্রযোজ্য, তার চেয়ে বেশী প্রযোজ্য ঘরের বাইরের ছেলে-মেয়েদের ক্ষেত্রে। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, মুমিনদের অনেকেই বিষয়টাকে গুরুত্ব দেন না। অথচ নবীজি ছঃ এর নির্দেশ কোনো বেহুদা কথা নয়। তিনি মানব শিশুদের যৌন তাড়নার কথা জেনেই এমন নির্দেশ দিয়েছেন। এ নির্দেশ না মানার কারণে কত ছেলে-মেয়ে বেহায়া ও নষ্ট হবার সুযোগ পাচ্ছে, তার হিসাব একামাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।
৪. সাত বছরে পদার্পনকারী না বালেগ ছেলে-মেয়েকে পিতা-মাতার সাথে এক রুমে বা এক বিছানায় রাখা উচিত নয়। তবে পিতার অনুপস্থিতিতে শুধুমাত্র মায়ের সাথে রাখা যায়। তাও বালেগ হবার পূর্ব পর্যন্ত।

উল্লেখ্য, স্বামী ও স্ত্রী ছাড়া অন্য লোকদের একই কাপড়ের (কম্বল-কাঁথা ও শাল-ছাদর ইত্যাদি) নীচে থাকতে কঠোর ভাবে নিষেধ এসেছে বিভিন্ন হাদীছ শরীফে। নীচে তা থেকে কয়েকটি হাদীছ উল্লেখ করা হলোঃ
عن عبد الرحمن بن أبي سعيد الخدري ، عن أبيه أبي سعيد ، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : « لاَ يَتظُرُ الرجُلُ إِلَى عَوْرَةِ الرَّجُلِ ، وَلاَ اَلْمَرْأَةُ إِلَى عَورَةِ الْمَرْأَةِ ، وَلاَ يُفْضِي الرجُلُ إِلَى الرُّجُلِ فِي ثَوْب وَاحِد ، ولاَ تُفْضِي اَلْمَرْأَةُ إِلَى ألْمَرْأَةِ فِي الثوْبِ الْوَاحِد». أخرجه مسلم (1/266 ، رقم 338) ، وأبو داود (4/41 ، رقم 4018) ، والترمذى (5/109 ، رقم 2793) وقال : حسن غريب صحيح .
অর্থঃ হযরত আবু সাঈদ –رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “পুরুষ পুরুষের সতর ও নারী নারীর সতরের দিকে তাকাবে না। আর পুরুষ পুরুষের সাথে একই কাপড়ে নীচে থাকবে না। অনুরুপ নারীও নারীর সাথে একই কাপড়ের নীচে থাকবে না।” [ছহীহ মুসলিম (৩৩৮), সুনানে আবু দাউদ (৪০১৮) ও সুনানে তিরমিযী (২৭৯৩)]।

عن ابنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنه ، قال : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيهِ وسَلَّم : « لاَ يًبَاشِرُ الرَّجُلُ الرَّجُلَ ، وَلاَ الْمَرْأَةُ الْمَرْأَةَ ». أخرجه أحمد (1/304 ، رقم 2774) ، و الطبرانى فى الكبير (11/278 ، رقم 11728) ، والحاكم (4/320 ، رقم 7777) وقال : صحيح على شرط البخارى .
অর্থঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস –رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “পুরুষ পুরুষের সাথে ও নারী নারীর সাথে লাগালাগি করে শয়ন করবে না।” [মুসনদে আহমদ (২৭৭৪), মুজমে তবরানী কবীর (১১৭২৮) ও মুস্তাদরকে হাকেম (৭৭৭৭)]।

عن جابر رضى الله عنه ، قال : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيهِ وسَلَّم : « لا يباشر الرجل الرجل فى الثوب الواحد ولا تباشر المرأة المرأة فى الثوب الواحد ». أخرجه أحمد (3/356 ، رقم 14879) .
অর্থঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস –رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “পুরুষ পুরুষের সাথে একই কাপড়ের নীচে ও নারী নারীর সাথে একই কাপড়ের নীচে শয়ন করবে না।” [মুসনদে আহমদ (১৪৮৭৯)]।

عَنْ أَبِي مُوسَى الأَشْعَرِيِّ رضى الله عنه ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: « لا تُبَاشِرُ الْمَرْأَةُ الْمَرْأَةَ إِلا وهُمَا زَانِيَتَانِ، وَلا يُبَاشِرُ الرَّجُلُ الرَّجُلَ إِلا وهُمَا زَانِيَانِ ». أخرجه الطبرانى فى الأوسط (4/266 ، رقم 4157) ، قال الهيثمى : فيه على بن سعيد الرازى ، وفيه لين ، وبقية رجاله ثقات . والديلمى (5/161 ، رقم 7820) .
অর্থঃ হযরত আবু মূসা –رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “পরস্পরে লাগালাগি করে শয়নকারী নারীদ্বয় জেনাকারী। অনুরুপ পরস্পরে লাগালাগি করে শয়নকারী পুরুষদ্বয়ও জেনাকারী।” [মুজমে তবরানী আওসাত (৪১৫৭) ও দাইলামী (৭৮২০)]।

শেষ কথা

একটি হাদীছে দাড়িবিহীন ছেলেদের দিকে তীক্ষ্মনজরে তাকানো থেকে নিষেধ এসেছে।
عن أبي هريرة رضي الله عنه ، قال : نهي رسول الله صلي الله عليه وسلم « أن يحد الرجل النظر إلى الغلام الأمرد »». أخرجه ابن الجوزى فى تلبيس إبليس .
অর্থঃ হযরত আবু হুরাইরা –رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়িবিহীন ছেলেদের দিকে তীক্ষ্মনজরে তাকানো থেকে নিষেধ করেছেন।” [হাদীছটি আল্লামা ইবনুল জওযী তাঁর প্রসিদ্ধ ‘তালবীসু ইবলীস’ নামক কিতাবে তার নিজের সনদসহ এনেছেন]।

মহান রব আমাদেরকে প্রিয় নবীজি ছঃ এর পথনির্দেশ মত জীবন যাপন করার তৌফীক দান করুন।
(পরবর্তী পোস্ট ‘স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের আলোকে কওমে লূতের কাজ’ শিরোণামে ইনশা-আল্লাহ)
আবুল হুসাইন আলেগাজী
সদর লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...