শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৪:৪৬
Home / কুরআন / ‘কুরআনকে প্রতিহত করতে গিয়ে দেখতে পাই এটি অনেক শক্তিশালী’

‘কুরআনকে প্রতিহত করতে গিয়ে দেখতে পাই এটি অনেক শক্তিশালী’

অ্যালিসন স্টিভেনস: আমি অ্যালিসন স্টিভেনস। আমার বয়স বর্তমানে ৫১ বছর। আমি ৪৭ বছর বয়সে ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছি। আমি ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেছি কিন্তু আমার বাবা-মা ছিলের আইরিশ স্কটিশ।

আমার বাবা একটি বহুজাতিক তেল কোম্পানিকে চাকরি করতেন। এই কারণে তার সঙ্গে আমাদেরও বিভিন্ন জায়গা স্থানান্তরিত হতে হতো। সত্যিকার অর্থে আমাদের কোথাও কোনো নির্দিষ্ট শিকড় নেই এবং আমরা শেষ পর্যন্ত ৭০-এর দশকের শুরুর দিকে স্কটল্যান্ডে চলে যাই।

ক্রিসমাসের সময়ে স্কুল আর চার্চে যাওয়া ছাড়া বাড়িতে কোন ধর্মীয় শিক্ষাদীক্ষার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। আমার মাধ্যমিক শিক্ষার অধিকাংশই স্কটল্যান্ডে কেটেছে এবং সেখানে আবার ধর্মীয় শিক্ষার পাঠ ছিল বাধ্যতামূলক। আমাদের অধিকাংশই ছিল ধর্মনিরপেক্ষ এবং আমরা কখনো ধর্মের কোন প্রয়োজন অনুভব করতাম না। এ কারণে এসব কিছুতে আমরা সবাই অত্যন্ত বিরক্ত ছিলাম। ক্রিসমাসের সময় চার্চ পরিষেবায় আমরা কোনো আনন্দ উপভোগ করতাম না।

ধর্মপরায়ণ মানুষের জন্য আমার সম্মানবোধ সবসময়ই ছিল যদিও আমার জন্য এটার প্রয়োজন ছিল না। আমার বিশেষ কোনো আকাঙ্ক্ষা বোধ ছিল না। সত্যি বলতে আমি ধর্মকে অনেক সমস্যার কারণ বলে মনে করতাম।

আমি ধর্মে বিশ্বাসী ছিলাম না

আমি নিজেকে নাস্তিক ভাবতাম। আমি নিরানব্বই শতাংশেরও বেশি নাস্তিক ছিলাম। কিন্তু আমার ভিতর ক্ষুদ্র একটি অংশটি ছিল; যেটি সম্পূর্ণরূপে আমাকে নাস্তিক হতে দেয়নি। ওটা ছিল আমার ভিতরের পুরো সৌন্দর্য।

আমার হাসপাতালে এমন কিছু লোক নিয়োগ করা হয়েছিল যারা ছিলেন একনিষ্ঠ ধর্মপ্রচারক খ্রিস্টান এবং প্রকৃতপক্ষে তারা আমাকে সম্পূর্ণরূপে ধর্মের দিকে চালিত করেছিল।

আমি এমন পর্যায়ে গিয়েছিলাম যেখানে আসলে আমি ইচ্ছাকৃতভাবে লিখেছিলাম যে আমি অধর্মীয় সমাধি চাইতাম। কিন্তু প্রত্যেক দিন যখন আমি হাসপাতালে যেতাম, তখন তারা অন্যান্য অবিশ্বাসীদের মতো বাইবেল খোলে সেখান থেকে কিছু অংশ আমাকে দিয়ে পাঠ করাত এবং তা অব্যাহতভাবে চলতে লাগল।

এটি আমার কাছে অত্যন্ত বিরক্তের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই অনেকটা বিরক্ত হয়েই আমি অনেক বই কিনে নিয়ে আসি। আমি কোরআন, তওরাত, দালাই লামার ৩৬৫টি বাক্যের বই কিনলাম।

এরপর থেকে আমি তাদের সামনে বইগুলো পড়তাম এবং তারা এটা দেখার পর বলেছিল, ‘ওয়েল, মনে হচ্ছে আপনি এখন ধর্মের প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে ওঠেছেন।’

তাদের উপর আমার অত্যন্ত রাগ ছিল কারণ তারা ইউনিটিকে বিভক্ত করছিল এবং অনেক সমস্যার সৃষ্টি করেছিল।

এবং কয়েক দিনের মধ্যেই তারা আমাকে বইগুলো সরিয়ে ফেলতে বলেন এবং তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা ধর্ম সম্পর্কে আমাদের কারো সঙ্গে আর কথা বলবেন না।

কুরআনের শক্তি

আমি বইগুলো বাড়িতে নিয়ে গিয়ে যাই এবং খুব দ্রুত তা এক নজর পড়ে ফেলি এবং এতে নির্দিষ্ট কিছু অনুভব করিনি। কিন্তু তখনো আমার কুরআন পড়া হয়নি। তাই ভাবলাম, ‘ঠিক আছে, এটিও একবার পড়ে দেখি।’

আমি কুরআন খুলে এটি পড়তে শুরু করেছিলাম এবং এটি ছিল বেশ আবেগমাখা। আমার মানসিক আঘাতটি ছিল বেশ গভীর, এমনকি এটি এখনো অত্যন্ত গভীর।

যাইহোক, আমি কুরআনের শব্দগুলো পড়ছি আর ভাবছিলাম, ‘হ্যাঁ, আমি যা আশা করেছি এটি তা নয়! এবং আমি আরো একটু পড়ি এবং চিন্তা করলাম:

‘আমি যা পড়ছি তা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।’

তাই আমি বইটি বন্ধ করে দিলাম এবং ভাবলাম: ‘ঠিক আছে, আরেকটু পড়া যাক। কিন্তু আমি এটা পড়া বন্ধ করতে পারিনি।

তাই কয়েকদিন পরে আমি শুরু থেকে এটি পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এটা শুধুই বিস্ময়কর ছিল। এটা ছিল অত্যন্ত মৃদু কিন্তু খুবই গভীর। এটা ছিল খুব শক্তিশালী এবং আমি নিদারুণভাবে এটি অনুধাবন করার চেষ্টা করি এবং পড়া অব্যাহত রাখি।

আমি যতই এটি পড়ছিলাম, তা তত বেশিই আগ্রহী হচ্ছিলাম। এটা সত্যিই একটি আলোকবর্তিকার মতো ছিল; যা আমাকে আলোকিত করেছিল।

কুরআনের অনুবাদের সঠিকতা নিশ্চিতকরণ

আমি যা পড়েছি তা বিশ্বাস না করতে নিদারুণভাবে চেষ্টা করেছি, তা প্রতিহত করার চেষ্টা করেছি এবং এক সময়ে আমি কোরআন বন্ধ করে দেই এবং মনে মনে বলতে থাকি, ‘আমি আর কখনো এটি পড়তেছি না’, কিন্তু আমি আমার নিজের কথা রাখতে পারি নি।

তাই ফের কয়েকটি অধ্যায় পড়ার পরে আমি চিন্তা করলাম: ‘হয়তো আমার অনুবাদে ভুল রয়েছে।’

সন্দেহ দূর করতে আমি একটি মসজিদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি যেখানে থাকি সেখান থেকে অনেক দূরের একটি মসজিদকে বেছে নেই, কারণ আমি চাইনি যে কেউ আমাকে দেখুক।

একটি স্কার্ফ পরে আমি মসজিদে গিয়েছিলাম। যাইহোক, মসজিদের ইমামকে বিষয়টি বলার পর তিনি আমাকে নিশ্চিত করেন যে, আমি যা পড়ছি তা কেবল অনুবাদগুলোর সবচেয়ে সুন্দর অনুবাদই নয়, বরং এটি অত্যন্ত যথাযথ।

আমার মনে আছে, আমি তাকে বলেছিলাম, ‘আপনি কি আমাকে ধর্মান্তরিত করার পরিকল্পনা করছেন?’

আমি বলেছিলাম, ‘ওহ, অবশ্যই না। আমি শুধু বইটি সম্পর্কে জানতে এসেছি।’ যাইহোক, এরমধ্যে গভীর কিছু একটা ছিল যেটা খুব নাটকীয়ভাবে আমাকে পরিবর্তিত করে দেয়।

সেদিন আমি বাড়ি ফেরার পথে বারবার ইমানের কথা মনে করতে থাকি। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘এটি একটি বিশেষ দিন’ এবং আমি তাকে বলেছিলাম, ‘হ্যাঁ, আমি জানি এটি একটি বিশেষ দিন।’

সেই দিনটি ছিল হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্মদিন। তাই কিভাবে এটাকে উপেক্ষা করা যায়!

এর কয়েকদিন পরে আমি আমার কাজে চলে যাই এবং আমি একজন মুসলিম সহকর্মীর দেখা পাই, যিনি নিজেও একজন ডাক্তার এবং সে মনে করেছিল আমি তাকে রোগীর সম্পর্কে ভয়ঙ্কর কিছু বলতে যাচ্ছি এবং বিষয়টি যখন আমি তাকে বলেছিলাম, তখন সে বেশ বড় একটা আঘাত পেয়েছিল কারণ আমি বলেছিলাম: ‘আমি জানি না কি করতে হবে।’ তারপর তিনি আমাকে আস্তে আস্তে পথ দেখিয়েছিলেন।

এর কয়েক সপ্তাহ পরে আমি কালেমা শাহাদা পাঠ করি। আমি সম্পূর্ণভাবে নিজের ইচ্ছায় এটি গ্রহণ করি। আমি আমার অন্তরে এটা অনুভব করেছি যে, এটাই সঠিক।

অ্যাবাউট ইসলাম অবলম্বনে

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

তথ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইলেন চলচ্চিত্রকর্মীরা!

কমাশিসা ডেস্ক:: তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর পদত্যাগ দাবি করেছে চলচ্চিত্রকর্মীদের সমন্বিত সংগঠন ‘চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ ...