বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৯:২০
Home / ইতিহাস ঐতিহ্য / প্রসঙ্গ: জিহাদ রাষ্ট্রের দায়িত্ব এবং…

প্রসঙ্গ: জিহাদ রাষ্ট্রের দায়িত্ব এবং…

আব্দুল্লাহ মায়মুন ::
তিনি ফরীদ উদ্দিন মাসউদ সাহেবের কয়েকদিনের ছাত্র, তাই ভেতরে তার প্রতি ভালবাসা লালন করেন, সবার সামনে তা আবার প্রকাশ করেন না, কিন্তু সুযোগ পেলে প্রকাশ করতে দেরী করেন না।
একবার তার সাথে আমার আলাপ হয়, তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র ছাড়া জিহাদ করা জায়েয নেই’। মানুষটি খুব চালাক, তাই কথাটি সরাসরি না বলে অন্যের হাওয়ালা দিয়ে বলেন।
জবাবে আমি কুরআন-সুন্নাহ থেকে দলীল পেশ করলাম। তিনি এগুলোকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবীদের সাথে নির্ধারিত বলে উড়িয়ে দেন। ফেকহের কিতাবের হাওয়ালা দিলে বলেন, এগুলো রাষ্ট্রপ্রধানের জন্যে নির্ধারিত।
পড়লাম চরম বেকায়দায়।
তখন হঠাৎ মাথায় আসলো আর বললাম, সায়্যিদ আহমদ শহীদ রাহ. যখন জিহাদ শুরু করেন, তখন ভারতে মুঘল শাসনামল ছিলো, দিল্লীতে তখন মুঘল সম্রাট ছিলেন, এদিকে উসমানি খেলাফতও তখন বিদ্যমান। তিনি তো এই রাষ্ট্রদ্বয়ের অনুমতি ছাড়াই নিজে নিজে মুজাহিদ বাহিনী গড়ে জিহাদ শুরু করেন, তাঁর জিহাদ সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী?
বেচারা এতে আটকে গেলেন, এ বিষয়ে আর সামনে এগুতে পারলেন না। অন্য বিষয়ে আলোচনার চাকা ঘুরালেন, কিন্তু আলোচনার বাগডোর হাতে নিতে পারেন নি, একপর্যায়ে উঠে চলে গেলেন। পরবর্তীতে আর কোনোদিন এ নিয়ে আমার সামনে আলোচনা করেন নি।
তো যাই হোক, বর্তমান সময়ের একটি আলোচিত বিষয় হচ্ছে- ‘রাষ্ট্র ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের উদ্যোগে জিহাদ করা বৈধ নয়’।
এ বিষয়টি বিগত কয়েক বছরধরে আলোচনায় স্থান পেয়েছে, অথচ রাশিয়াবিরোধী আফগানে যখন জিহাদ শুরু হয়েছিল, তখন সে জিহাদ ছিলো মূলত কয়েকটি সংগঠন দ্বারা পরিচালিত জিহাদ। এ সংগঠনগুলোর উল্লেখযোগ্য নেতা ছিলেন আব্দুর রাব্বির রাসুল সাইয়াফ, গুলবুদ্দীন হেকমতিয়ার, বুরহানুদ্দীন রব্বানি, মাওলানা ইউনুস খালিস রাহ., মওলভি জালালুদ্দীন হক্কানি হাফিযাহুল্লাহ, শায়খ সিবগাতুল্লাহ মুজাদ্দেদি প্রমুখ। তখন সমগ্র মুসলিমবিশ্বের উলামায়ে কেরাম এ জিহাদকে জিহাদ হিসেবেই স্বীকৃতি দিয়েছিলেন, জান-মাল নিয়ে তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার জন্যে আহবান জানিয়ে ছিলেন। অনেকে আবার সরেজমিনে জিহাদ ভূমি দেখে আসেন। ওই জিহাদের সূত্র প্রথমে আফগান কম্যুনিস্ট শাসকের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছিলো, পরে রাশিয়া এই কম্যুনিস্ট সরকারের সহযোগিতায় এগিয়ে এলে এটা রুশবিরোধী জিহাদে রূপ নেয়। তখন কিন্তু কেউ এ ফতোয়া দেয় নি, যে, শাসকের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরা জায়েয নেই। রাষ্ট্র ছাড়া জিহাদ বৈধ নয়।
.
প্রিয় পাঠক, আপনার মনে কি একটিবারও প্রশ্ন জাগে না? তখন জালিম-মুরতাদ শাসকের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরা জায়েয হলেও বর্তমানে কেনো তা হারাম? তখন সংগঠন বা ব্যক্তি প্রচেষ্টায় জিহাদ জায়েয হলেও বর্তমানে কেনো তা না জায়েয?
.
জবাব একেবারে সহজ তখন ওই জিহাদের মধ্যে আমেরিকার স্বার্থ নিহিত ছিলো, যদিও আমেরিকা মুজাহিদদের বিনামূল্যে কখনো সাহায্য করে নি, কিন্তু যেহেতু আমেরিকাও চেয়েছিলো সভিয়েট ইউনিয়নের পতন হোক আর সে কাজ আমেরিকার রক্ত-অস্ত্র খরচ করা ব্যতীত মুজাহিদদের দ্বারা হয়ে যাচ্ছে, তাই আমেরিকাও সে জিহাদকে সমর্থন দিয়েছিলো, যেভাবে বর্তমানে সিরিয়ায় আসাদবিরোধী কয়েকটি বিদ্রোহীগ্রুপকে আমেরিকা সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। আমেরিকা যেহেতু রাশিয়াবিরোধী জিহাদে নীরব ছিলো, তাই আমেরিকার দালাল শাসকরা এবং ওই দালাল শাসকের গৃহপালিত আলখেল্লাধারী দরবারি আলেমরাও সে জিহাদকে জিহাদ বলেই স্বীকৃতি দেয়, কিন্তু এখন যখন এ জিহাদের মধ্যে আমেরিকার স্বার্থ নেই, বরং প্রকৃত মুজাহিদদের প্রথম এবং প্রধান টার্গেট স্বয়ং আমেরিকা, তাই আমেরিকার দালাল শাসক এবং তাদের গৃহপালিত আলখেল্লাধারী শায়খরা আমেরিকার স্বার্থেই বলছেন, বর্তমানে এগুলো জিহাদ নয়, সন্ত্রাস। এরা মুজাহিদ নয়, জঙ্গি-সন্ত্রাসী। রাষ্ট্র ছাড়া জিহাদ বৈধ নয়।
বাহ চমৎকার তো!
অনেকে আবার ‘ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ’ শিরোনামে বই লিখেছেন, (আল্লাহ চাহে তো এই বইয়ের বিস্তারিত জবাব লিখবো ইনশা আল্লাহ!) ওই বইয়ের মধ্যে আবার ওই দাবির স্বপক্ষে বেশ কিছু টুনকো দলীল দেওয়ারও চেষ্টা করছেন, যারমধ্যে একটি হচ্ছে- হযরত হোসাইন রাযি. ও ইয়াজিদের লড়াই ছিলো ‘দুই রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় যুদ্ধ’!
আচ্ছা যদি হযরত হোসাইন রাযি.’র বাহিনীকে রাষ্ট্রের বাহিনী বলা হয় তাহলে বর্তমানে জেএমবিসহ সব জিহাদি দলকে রাষ্ট্রের বাহিনী বলতে হবে! কারণ একটি রাষ্ট্রের প্রধান উপাদান হচ্ছে তিনটি, আইনবিভাগ, বিচার বিভাগ এবং প্রশাসন। আর বর্তমানে সব জিহাদি দলের মধ্যে এই তিনটি উপাদান আছে, আর প্রত্যেকের অধীনে সামান্য হলেও কিছু ভূ-খন্ড আছে, তাদের সদস্য সংখ্যাও হযরত হোসাইন রাযি. থেকেও কম নয়, বরং বেশি। সে হিসেবে আলোচনা এখানেই খতম। প্রশ্নের জবাব এতেই হয়ে যায়। তারপরেও কেনো এ অভিযোগ?
কারণ যারা সত্য গ্রহণ করার মন-মানসিকতা নিয়ে উপস্থিত হয় তাদের জন্যে এত দলীল নয়, একটি দলীলই যথেষ্ট। কিন্তু যাদের উদ্দেশ্য সত্যকে গ্রহণ করা নয়, বরং ক্যাচাল করা, তাদেরকে আপনি যতই দলীল দেন না কেনো, তার পেট ভরবে না অহেতুক তর্কে জড়াবে।
এসির নিচে বসে, বোতলের পানি খেয়ে, ফেসিয়াল টিস্যু দিয়ে হাত মুছতে মুছতে ময়দানের জিহাদ সম্পর্কে কোনো জ্ঞান না রেখে জিহাদের সংজ্ঞা দেওয়া নতুন কিছু নয়, বরং এরপুর্বে একদল নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিহাদ শিখিয়ে ছিলো, ওহুদ যুদ্ধের পুর্বে মুনাফিক সরদার আব্দুল্লাহ বিন উবাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ্য করে বলে ছিলো, ‘লাও না’লামু জিহাদান লাত্তাবা’নাকুম’ (যদি আমরা এটাকে জিহাদ জানতাম তাহলে আমরা অবশ্যই তোমাদের অনুসরণ করতাম)!
যদি এদের পুর্বসূরীরা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিহাদ শেখাতে পারে তাহলে কেনো এরা মুজাহিদদেরকে জিহাদ শেখাবে না? কারণ জিহাদ হচ্ছে মুমিন-মুনাফিকের মধ্যে পার্থক্যের মাধ্যম।
পুর্বেই উল্লেখ করেছি, রাশিয়াবিরোধী আফগান জিহাদ ছিলো মূলতঃ নাস্তিক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কয়েকটি সংগঠনের জিহাদ। কিন্তু আফগান থেকে রাশিয়া বিতাড়নের পর এই সংগঠনের জিহাদ সন্ত্রাস ও লুটতরাজে রূপ নেয়, আর মুজাহিদদের কিছু অংশ ডাকাত ও ছিনতাইকারীতে বদলে যায়, সমগ্র আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে, তখন আল্লাহর ইচ্ছায় উত্থান হয় প্রকৃত মুজাহিদদের, তারা এই লুটতরাজকে স্থিতিশীলতায় রূপ দেন, ডাকাতদেরকে তাদের পাওনা বুঝিয়ে দেন, মাত্র অল্প দিনে ৯৫ ভাগ আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণ করে উসমানি খেলাফতের পতনের পর নবুওতের আদলে একটি শরীয়াহ শাসন উপহার দেন। আজও তারা আফগানদের হৃদয়ের মণিকোঠা দখল করে আছেন, যার প্রমাণ সমগ্র তাগুত-ক্রুসেডারদের মস্তক পদানত করে পুরো আফগানের অধিকাংশ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা।
এখানে একটি বিষয় দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন, যে, যদি সরাসরি অস্ত্রের জিহাদে অংশগ্রহণ করার পরেও একদল ডাকাত-ছিনতাইকারীতে বদলে যেতে পারে তাহলে জিহাদ-মুজাহিদদের উপাখ্যান নিয়ে যদি একদল কালো কালির ব্যবসায়ীরা মুজাহিদদের সমালোচনা করে, তাদের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করে আর স্রোতের তালে পাল তুলতে থাকেন তাহলে তো অবাক হওয়ার কিছু দেখি না।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...