বুধবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৫:২৪
Home / ইতিহাস ঐতিহ্য / ভারতের ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক করতে চায় আরএসএস

ভারতের ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক করতে চায় আরএসএস

ভারতের রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) নেতা ইন্দ্রেশ কুমার বলেছেন, ‘আজ তাজমহল, বাবর এবং এ ধরণের আরো অন্য বিষয় ঘটছে কিন্তু ভারতের ইতিহাস এসব কিছুর চেয়ে অনেক পুরোনো। বিদেশি আক্রমণকারীদের ইতিহাসই ভারতের প্রকৃত হতিহাস নয়। এ নিয়ে বিতর্ক হওয়া উচিত।’

রবিবার ভারতের গণমাধ্যমে ইন্দ্রেশ কুমারের ওই মন্তব্য প্রকাশিত হয়েছে।

এর আগে আরএসএসের ইতিহাস শাখা ‘অখিল ভারতীয় ইতিহাস সংকলন সমিতি ভারতে বিশ্বখ্যাত ঐতিহাসিক তাজমহল চত্বরে জুমা নামাজ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে। আরএসএসের অখিল ভারতীয় ইতিহাস সংকলন সমিতির সচিব ড. বালমুকুন্দ পাণ্ডে বলেছেন, ‘তাজমহল হল একটি জাতীয় ঐতিহ্য। কেন সেটিকে মুসলিমদের ধর্মীয় ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হবে? আগ্রার তাজমহলে নামাজ পড়ার অনুমোদন প্রত্যাহার করে নেয়া উচিত।’

বিতর্ক আরো উসকে দিতে তিনি বলেছেন, ‘তাজমহলে নমাজ পড়া হলে, শিবের পুজাও করতে দিতে হবে।’

পাণ্ডের দাবি, ‘এমন অনেক প্রমাণ রয়েছে যে তাজমহল একটা শিবমন্দির ছিল। আর এটি তৈরি করেছিলেন এক হিন্দু রাজা। তাজমহল মোটেই ভালোবাসার প্রতীক নয়। সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী মমতাজ মহলের মৃত্যুর চার মাসের মধ্যেই ফের বিয়ে করেছিলেন। আমরা সমস্ত তথ্য-প্রমাণ জোগার করছি। খুব শিগগিরই সব জড়ো করতে পারব।’

সংগঠনটির জাতীয় সম্পাদক বালমুকুন্দ পাণ্ডে বলেন, তাদের সংগঠন সমস্ত প্রাচীন স্থাপনার তালিকা তৈরি করছে যেসব স্থাপনা মুসলিম শাসকরা ভেঙে মসজিদ অথবা অন্য কোনো ভবন নির্মাণ করেছিল।

সম্প্রতি হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার মুঘল শাসকদের নামাঙ্কিত বেশ কয়েকটি সড়কের নাম পরিবর্তন করে দিয়েছে। কিছুদিন আগে প্রাচীন মুঘলসরাই রেল স্টেশনের নাম দীনদয়াল উপাধ্যায়ের নামে পরিবর্তন করে দিয়েছে।

এর আগে দিল্লিতে আওরঙ্গজেব রোডের নাম পরিবর্তন করে এ পি জে আব্দুল কালামের নামে করা হয়েছে। বিজেপি নেতা-মন্ত্রীদের অনেকেই ইতিহাস পরিবর্তন করার কথা বলেছেন।

সম্প্রতি বিজেপি নেতা ও বিধায়ক সঙ্গীত সোম তাজমহলকে ভারতীয় সংস্কৃতির কলঙ্ক এবং তা বিশ্বাসঘাতকদের তৈরি বলে মন্তব্য করেন। তিনি মুঘল সম্রাট বাবর, আকবর, আওরঙ্গজেবকে বিশ্বাসঘাতক বলে অভিহিত করেন। তার ওই মন্তব্যে বিভিন্ন মহলে তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

সঙ্গীত সোমের বিতর্কিত মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (এআইএমআইএম) প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি।

তিনি বলেন, তাজমহল ‌যদি ‘দেশদ্রোহীদের’ তৈরি হয় তাহলে স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী কি এবার লালকেল্লা থেকে জাতীয় পতাকা তোলা বন্ধ করবেন? কারণ লালকেল্লাও একজন ‘দেশদ্রোহীর’ তৈরি।

উত্তরপ্রদেশের মীরাট জেলার সিসোলি গ্রামে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)’র জনসভায় সঙ্গীত সোম মোঘল ইতিহাসকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘দেশদ্রোহীরা তাজমহল বানিয়েছে। এই সৌধ ভারতীয় সংস্কৃতির কলঙ্ক। তাজমহল বানিয়েছিলেন শাহজাহান। শাহজাহান দেশ থেকে হিন্দুদের মুছে ফেলতে চেয়েছিলেন। বাবর, আকবর, আওরঙ্গজেব-সবাই দেশদ্রোহী।’

মুজাফফরনগর দাঙ্গায় অভি‌যুক্ত সঙ্গীত সোমের ওই মন্তব্যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এ নিয়েই পাল্টা মন্তব্য করলেন ওয়াইসি। এআইএমআইএম প্রধানের আরো প্রশ্ন, দেশদ্রোহীদের তৈরি স্থাপত্য ‌যদি ভারতীয় সংস্কৃতির কলঙ্ক হয় তা হলে কি এবার বিদেশি অতিথিরা রাজধানীর হায়দরাবাদ হাউসে না উঠে অন্য কোথাও উঠবেন? কারণ হায়দরাবাদ হাউসও সঙ্গীত সোমের মতে কোনো এক ‘দেশদ্রোহীর’ তৈরি।

শেষ নিজাম ওসমান আলি খান ব্রিটিশদের দেয়া জমিতে হায়দরাবাদ হাউস তৈরি করেছিলেন।

সঙ্গীত সোমের মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন আরো অনেকে। জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা ট্যুইট করেছেন, প্রধানমন্ত্রী এবার স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ লালকেল্লা থেকে দিচ্ছেন না। তাহলে হয়তো নেহরু স্টেডিয়াম থেকে বক্তব্য রাখবেন।

উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকারের পর্যটন সংক্রান্ত পুস্তিকায় তাজমহলকে রাখা হয়নি – এমন খবরের পর থেকেই বিতর্ক শুরু হয়। সেই বিতর্ক আরো উস্কে দিয়ে সোম বলেন, ‘উত্তরপ্রদেশ সরকারের পর্যটন পুস্তিকা থেকে তাজমহলকে বাদ দেয়ায় অনেকেই ব্যথিত। এটা কী ধরনের ইতিহাস? যে ব্যক্তি তাজমহল তৈরি করেছিলেন তিনি তার বাবাকে বন্দি করেছিলেন। আপনারা কি বলবেন যে এটা ইতিহাস যিনি তাজমহল তৈরি করেছিলেন তিনি উত্তরপ্রদেশ ও হিন্দুস্তানে হিন্দুদের নিশানা করেছিলেন।’

তবে সঙ্গীত সোমের বক্তব্যকে সমর্থন করেনি বিজেপি। দলের মুখপাত্র অনিলা সিং জানিয়েছেন, সঙ্গীত সোমের বক্তব্য দল সমর্থন করে না। তার ওই মন্তব্য একেবারেই ব্যক্তিগত।

অন্যদিকে কংগ্রেস অভিযোগ তুলছে যে, ভোট যত এগিয়ে আসছে বিজেপি ততই ধর্মীয় মেরুকরণ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। আর এখন তাজমহলকে ব্যবহার করা হচ্ছে মেরুকরণের রাজনীতির জন্য। #সূত্র. আনন্দবাজার পত্রিকা, আরটিএনএন

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

‘দেওবন্দের মূলনীতির ওপর ভিত্তি করেই স্বীকৃতি বাস্তবায়ন হচ্ছে’

কমাশিসা ডেস্ক: বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সহকারী মহাসচিব ও জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসার শাইখুল হাদিস মাওলানা ...