শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৫:৪৭
Home / অনুসন্ধান / কওমি স্বীকৃতির চলমান প্রক্রিয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা যা বললেন

কওমি স্বীকৃতির চলমান প্রক্রিয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা যা বললেন

মীম সুফিয়ান, ইলিয়াস মশহুদ : স্বীকৃতি নিয়ে আসলে কী ঘটছে, ঘটতে যাচ্ছে? আদৌ স্বীকৃতির ঘোষণা বাস্তবায়িত হবে কি না, হলে সেটা কওমি মাদরাসা সংশ্লিষ্টদের চাহিদা, শর্তাবলী ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির আলোকে হবে কি না, সরকারের এই আমলেই কি হবে, নাকি নির্বাচনের বন্যায় ভেসে গিয়ে বিলম্বিত হবে- সেটা এখনো নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তবে কওমি সংশ্লিষ্ট কয়েকটি অনলাইন নিউজপোর্টালে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে বুঝা যায়, ‘সরকার চাচ্ছে তাদের খুশিমতো কওমি মাদরাসার স্বকীয়তা নষ্ট করে স্বীকৃতি দিতে এবং হাইআতুল উলইয়ার দায়িত্বশীলরা সেই ষড়যন্ত্রকে বাস্তবায়ন করে কওমি মাদরাসার স্বকীয়তাকে জলে ভাসিয়ে দিতে চাচ্ছেন।’
কওমি স্বীকৃতি নিয়ে সৃষ্ট এই জটিলতা, ‘ভুল বোঝাবুঝি’র কারণ জানতে কওমিকণ্ঠ’র পক্ষ থেকে আল হাইআতুল উলইয়া ও বিভিন্ন বোর্ডের দায়িত্বশীলদের সাথে কথা বলে জানা যায়-
গত ০২ অক্টোবর’১৭ ঢাকার পীরজঙ্গী মাদরাসায় ‘সনদের মান বাস্তবায়ন কমিটি’র যে বৈঠক (নং ৬) অনুষ্ঠিত হয়, সে বৈঠকে ‘আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশে’র একটি (খসড়া) গঠনতন্ত্র উপস্থাপিত হয়। এবং তা পাশ হয়েছে বলে, বৈঠকের রেজুলেশনে (ধারা ৭) উল্লেখ করা হয়েছে।
বৈঠকে উত্থাপন ও আলোচনা হলেও বেফাকের দায়িত্বশীল ব্যতীত অন্যান্য বোর্ডের প্রতিনিধিরা গঠনতন্ত্র সম্পর্কে আগ থেকে কিছুই জানতেন না বলে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, সেটা একেবারে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন স্বীকৃতি বাস্তবায়ন কমিটির অন্যতম সদস্য মুফতী নুরুল আমীন।

সনদের মান বাস্তবায়ন কমিটি’র বৈঠক নিয়ে বিভ্রান্তি
ঢাকার পীরজঙ্গী মাদরাসায় ‘সনদের মান বাস্তবায়ন কমিটি’র বৈঠক সম্পর্কে ৫ বোর্ডের প্রতিনিধিরা কেনো অবগত ছিলেন না, এ সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আল হাইআর একজন দায়িত্বশীল কওমিকণ্ঠকে বলেন, ‘সনদের মান বাস্তবায়ন কমিটি’র বৈঠক সম্পর্কে বলা হচ্ছে, ৫ বোর্ডের প্রতিনিধিরা নাকি এ সম্পর্কে জানেনই না। বিশেষ করে আযাদ দ্বীনী এদারার মাওলানা যিয়া উদ্দীন সাহেবের নামটি ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে। অথচ গত ২ অক্টোবর পীরজঙ্গী মাদরাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে বেশিরভাগ কথাই হয়েছে গঠনতন্ত্র নিয়ে। সেখানে সিলেট আযাদ দ্বীনী এদারা থেকে ওই বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা আব্দুল বাছির স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন।
যোগাযোগ করা হলে মাওলানা আব্দুল বাছির কওমিকণ্ঠকে বলেন, গত ২ অক্টোবর ঢাকার পীরজঙ্গী মাদরাসায় ‘সনদের মান বাস্তবায়ন কমিটি’র বৈঠক (নং ৬) অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে ‘আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশে’র একটি (খসড়া) গঠনতন্ত্র উত্থাপন করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
মাওলানা যিয়াউদ্দীন যান নি সে মিটিংয়ে। উপস্থিত ছিলেন (মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সাহেবের প্রতিনিধি) মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ, মুফতি মুহাম্মদ আলী, গওহরডাঙ্গার মুফতি রুহুল আমীন ও মাওলানা শামসুল হকসহ সকব বোর্ডের দু’জন করে প্রতিনিধি।
বৈঠকে উপস্থিত না থেকে বৈঠক নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে ‘আমি জানিনা’ বলে কেনো মন্তব্য করলেন, এটা জানতে কথা হয় জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর সিলেটের মুহতামিম মাওলানা যিয়া উদ্দীনের সাথে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি অসুস্থ। এসব বৈঠক সম্পর্কে কিছুই জানিনা।’
মাওলানা যিয়া উদ্দীন কওমিকণ্ঠকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত হাইআতুল উলইয়ার মাত্র একটি বৈঠকে আমি উপস্থিত ছিলাম। আমাদের এদারা থেকে সব সময় একজন প্রতিনিধি সেসব বৈঠকে উপস্থিত থাকেন। গত বৈঠকেও মাওলানা আব্দুল বাছির সাহেব উপস্থিত ছিলেন। তিনিই এ সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে পারবেন। আমি কিছুই জানি না। এদারার মজলিসে আমেলার আগামী বৈঠকে স্বীকৃতির চলমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবো এবং স্বীকৃতি নিয়ে আমাদের বোর্ডের করণীয় নির্ধারণ করবো।’
বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গা বোর্ডের মহাসচিব মাওলানা শামসুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কওমিকণ্ঠকে বলেন, ‘আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। গত বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম না। আমি সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানিনা। তবে বেফাকের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা আশরাফ আলী সাহেব সেসব বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, তারা বিস্তারিত বলতে পারবেন।’
তানযিমুল মাদারিসিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাওলানা আরশাদ রাহমানী এ ববিষয়ে মন্তব্য করতে রাজী হননি।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বেফাকের সহ-সভাপতি মুফতী মুহাম্মদ ওয়াক্কাসের নেতৃত্বে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি এ গঠনতন্ত্র তৈরি করেছে। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, মুফতী নুরুল আমীন, মাওলানা ইসমাইল বরিশালী, মাওলানা অসিউর রহমান।
এ সম্পর্কে মুফতী ওয়াক্কাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে উদ্ভূত এ পরিস্থিতিতে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
কওমি মাদরাসা ‘সনদের মান বাস্তবায়ন কমিটি’ অন্যতম সদস্য, সম্মিলিত কওমি শিক্ষাবোর্ড ও হাইআতুল উলইয়ায় জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড-এর প্রতিনিধি মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ মনে করেন ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটেনি। এ প্রক্রিয়াটিই অগ্রহণযোগ্য। ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে কারিকুলাম ও আইনি কাঠামো তৈরি করার জন্য। অথচ প্রধানমন্ত্রী বলেছিনে, কারিকুলাম তৈরি করবেন আলেমরাই।
তবে কওমি স্বীকৃতি নিয়ে সৃষ্ট এই জটিলতা নিয়ে বেফাকের কয়েকজন দায়িত্বশীলের দিকে অভিযোগ তুলে মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ কওমিকণ্ঠকে বলেন, ‘মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সাহেবকে কৌশলে মাইনাস করার ষড়যন্ত্র চলছে। তাঁর অসুস্থতার সুযোগে স্বীকৃতির মোড় অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা চলছে।’
সনদের মান বাস্তবায়ন কমিটি’র অপর সদস্য মুফতী মোহাম্মদ ওয়াক্কাস একটি সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেছিলেন, “এতে ভুল বোঝার কিছু নেই। কোনো কিছুকে সরকারিভাবে আইনি ভিত্তি দিতে হলে রাষ্ট্রীয় যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, এটি তারই অংশ।”
তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে আন্তরিকতা দেখিয়েছেন এবং যে আশ্বাস দিয়েছেন, তাতে আমরা আস্থা রাখতে চাই। তিনি দেওবন্দের মূলনীতিকে ভিত্তি এবং আল্লামা আহমদ শফীকে মুরব্বি হিসেবে মেনে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সুতরাং আমাদের সংশয় থাকার উচিৎ নয়।’
কওমিকণ্ঠের পক্ষ থেকে তাঁর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ হয়নি।
সনদের মান বাস্তবায়ন কমিটি’র কো-চেয়ারম্যান আল্লামা আশরাফ আলীর নিকট ৯ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটি কাজ ও ক্ষমতার পরিধি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এ কমিটির সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। কওমি মাদরাসার শিক্ষা সনদের মান বিষয়ক প্রজ্ঞাপন-সরকারি নির্দেশনা এখন তাদের হাতে পৌঁছেছে। আমরাও আমাদের (খসড়া) গঠনতন্ত্র ও কারিকুলাম তাদের হাতে দিয়েছি। তারা সবকিছু পর্যালোচনা করে তা সরকারের নিকট উপস্থাপন করবে। আল্লাহ দয়া করলে তারপর তা আইনে পরিণত হবে।”
৯ সদস্যের কমিটিতে আলেম না থাকা ও মানুষের ভয়ের কথা উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘তারা তাদের মনমতো কোনো পরিবর্তন আনবেন না। আলোচনা ব্যতীত কোনো হস্তক্ষেপ আমরা মানবোও না। উভয়পক্ষের আলোচনার পর কারিকুলমা ও আইনি কাঠামো চূড়ান্ত হবে।’ (সূ.আ.ইসলাম)

আশা ও আশংকার দোলাচলে কওমী স্বীকৃতি; চাই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন

কেরানিগঞ্জের ৩ একর জায়গা নিয়ে ধুম্রজাল : আসল বিষয় কী?
এদিকে হাইআতুল উলয়ার জন্য কেরানীগঞ্জে ৩ একর জমি গ্রহণের খবরটি ছড়িয়ে পড়লে এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই উসূলে হাশতেগানার পরিপন্থী মনে করছেন। যেখানে বলা হয়েছে, ‘সরকার ও সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গের অংশগ্রহণ অত্যাধিক ক্ষতিকর মনে হয়’।
এ সম্পর্কে মাওলানা আব্দুল বাছির কওমিকণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে জমি গ্রহণের প্রশ্নই আসে না। সরকার কাকে দিবে? আমরা তো নিতেই চাই না। আমরা সরকারের কাছ থেকে কোনো ধরনের অনুদান গ্রহণ করবো না। এটা সবার সিদ্ধান্ত।’

আল হাইআতুল উলইয়া ও বেফাকের উর্ধ্বতন ওই দায়িত্বশীল নাম প্রকাশ প্রকাশ না করার শর্তে কওকণ্ঠেকে আরো জানান, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব ব্যক্তিগতভাবে চেয়েছেন হাইআকে ৩ একর জমি অনুদান হিসেবে দিতে। হাইআ এখনো সেটা নেয়নি। তারা বিষয়টি বিবেচনাধীন রেখে মূল্যের বিনিময়ে বরাদ্দ নেবার মনস্ত করেছে। উসুলে হাশতেগানায় মূল্য দিয়ে বরাদ্দ নেয়া যাবে না বলে কোনো ধারায় উল্লেখ নেই। সেখানে সরকারি অংশগ্রহণ ও অনুদান না নেয়ার কথা রয়েছে। এখানে বরাদ্দ দিলে সরকারের অংশগ্রহণ বা অনুদান থাকলো কী করে? দেশে প্রচুর কওমি মাদরাসা এমন আছে, যেগুলো খাস জমি বা বরাদ্দ নেয়া জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। মাদরাসাগুলোর জমি এই প্রক্রিয়ায় নিলে অসুবিধা না হলে হাইআ নিতে সমস্যা কোথায়?

শিক্ষা কারিকুলাম তৈরির জন্য ইউজিসি কমিটি কেন?
তাঁদের অভিযোগ, ‘শিক্ষা কারিকুলাম তৈরির জন্য ইউজিসি কমিটি কেন? এটা আবার কী? এই কমিটি ও তার বাইরের সদস্যদের মাঝে কোনো আলেম নেই কেন? ইফা ডিজি সামীম আফজাল এতে সম্পৃক্ত হলেন কীভাবে?’
বাস্তবতা হচ্ছে- আলোচিত ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি রাষ্ট্রীয় প্রক্রিয়ার একটি অংশ। এটা রেজুলেটেড ও স্থায়ী কোনো কমিটি নয়। শিক্ষা কারিকুলাম তৈরি করে দিয়েছে হাইআ। ইউজিসির ৬ জনসহ ৯ জনের এ কমিটিকে হাইআর কারিকুলাম ও গঠনতন্ত্র পর্যবেক্ষণ করে মতামত প্রদান এবং সংশ্লিষ্ট আইনি কাঠামো প্রণয়ন করার জন্য গঠন করা হয়েছে। শিক্ষা কারিকুলাম তৈরি করার জন্য এ কমিটি নয়- যেমনটি প্রচার করা হচ্ছে।

কাকে কমিটিতে রাখা হলো কাকে রাখা হলো না
এই প্রশ্ন এখানে অবান্তর। সরকার তার অধীনস্থ কর্মকর্তাদেরকেই এখানে রেখেছে, বাইরের কাউকে নয়। সেই কমিটিতে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাব্যবস্থার পর্যবেক্ষকদের পাশাপাশি রাখা হয়েছে ৩ গুরুত্বপূর্ণ ইসলামি প্রতিষ্ঠান প্রধানকে। তারই অংশ হিসেবে সামীম আফজালকে রাখা হয়েছে কমিটিতে। যেহেতু সরকারের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার জন্য এ কমিটি, সেখানে সরকার তার লোকই রাখবে, এটাই স্বাভাবিক বিবেচ্য বিষয়। এ কমিটি যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা রাখেও, তথাপি হাইআতুল উলইয়াকে সেটা মানতে হবে, তেমন কোনো কথা নেই।
অভিযোগ তোলা হচ্ছে, ‘ইউজিসি হলো উচ্চশিক্ষা নিয়ন্ত্রক একটি কমিটি। সেটা নিয়ে নিচ্ছে কওমি শিক্ষা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব।’
ইউজিসিকে এ দায়িত্ব দিলো কে? ইউজিসি তো পর্যবেক্ষণের জন্য সাময়িকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত। আর ইউজিসি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও সেটা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা মেনে নেবেন বলে এমন কোনো আভাস পাওয়া যায়নি।

এদিকে বেফাক মহাসচিব, হাইআর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে একটি ব্যক্তিগত বৈঠকে বসেছিলেন। যেটাকে পরবর্তীতে ‘ষড়যন্ত্র’ আখ্যা দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইআতুল উলইয়া ও বেফাকের একজন উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীল।
তিনি বলেন, ‘বেফাক মহাসচিব রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের জন্য সরকারি সহযোগিতা পেতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন, এটাকে কেনো ভিন্ন প্রবাহে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে?’
অপরদিকে ইফা ডিজি সামীম আফজালের সাথে বৈঠক নিয়েও ছড়ানো হচ্ছে বিভ্রান্তি। বলা হচ্ছে, সে বৈঠক ছিলো গোপনে ও মাওলানা আব্দুল কুদ্দুসের একক সিদ্ধান্তের বৈঠক।
বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গেছে, ইফা ডিজি সামীম আফজালের সাথে উক্ত বৈঠকে হাইআর কো-চেয়ারম্যান শাইখুল হাদীস আল্লামা আশরাফ আলীও উপস্থিত ছিলেন। অথচ সেটা গোপন রাখা হচ্ছে।

ইউজিসির হাতে কেমন আছে কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতি?

কেনো ছিলো সেই বৈঠক? কী ছিলো সেই বৈঠকে? কারা ছিলেন?
ইফাবা ডিজি সামীম আফজালের কাছে সরকারের কাছ থেকে চিঠি এলো ইউজিসির মিটিংয়ে যাওয়ার জন্য। চিঠি পেয়ে সামীম আফজাল উদ্যোগী হলেন স্বীকৃতির স্বরূপ, কওমি মাদরাসা ও হাইআর চাহিদা এবং এতদসংক্রান্ত সার্বিক বিষয়ে জানতে ও বুঝতে। তাই সে চিঠিসহ একজন লোক তিনি পাঠিয়ে দিলেন ফরিদাবাদে বেফাক মহাসচিব মাওলানা আব্দুল কুদ্দুসের কাছে। তিনি ডিজির দূতকে বলে দিলেন, কো-চেয়ারম্যান আল্লামা আশরাফ আলী সাহেবের সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করার জন্য। দূত তখন আশরাফ আলীর কাছে গিয়ে সামীম আফজালের সাক্ষাতের আগ্রহ ও আমন্ত্রণ পেশ করলে আল্লামা আশরাফ আলী মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস ও মুফতি নূরুল আমীনকে নিয়ে ইফাবা ডিজির সাথে সাক্ষাতে মিলিত হন। এটা কোনো গোপন বৈঠক নয়।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে দূরে সরে গেছে স্বীকৃতির ভবিষ্যত…
‘কওমি আলেমদের অনৈক্য ও কয়েকজন ব্যক্তির হীন স্বার্থের কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল গণভবনে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, সে বক্তব্য থেকে দূরে সরে গেছে কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতির ভবিষ্যত। স্পষ্ট অনুমেয় যে, স্বীকৃতি সম্পূর্ণভাবে স্বকীয়তা হারিয়েছে।’ এমন অভিযোগ অনেকের।
স্বীকৃতি তো এখনো আসেই নি। তাহলে ‘স্বীকৃতি সম্পূর্ণভাবে স্বকীয়তা’ হারালো কীরূপে?

ভুল বোঝাবোঝি
স্বীকৃতির চলমান এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে কথা হয় লিয়াজোঁ কমিটি’র অন্যতম সদস্য মাওলানা মাজহারুল ইসলামের সাথে। তিনি কওমিকণ্ঠকে বলেন, স্বীকৃতি স্বকীয়তা হারায়নি। ঠিক মতোই চলছে সবকিছু। তবে আমাদেও মুরব্বিদেও মাঝে সামান্য ভুল বোঝাবোঝির সৃষ্টি হয়েছে। সেটা কোনো ব্যাপার না। বৃহৎ ও সম্মিলিত কোনো কাজে এমনটা হতেই পারে। আশা করছি, শীঘ্রই সেটা সমাধান হয়ে যাবে।
মাওলানা মাজহার আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি প্রসঙ্গে খুবই আন্তরিক। তিনি মন থেকেই চান- কওমি শিক্ষাব্যবস্থার স্বীকৃতি ও উন্নতি।

তবে আহাক, বেফাকসহ সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, এসব অভিযোগ-প্রচারণার মাধ্যমে কওমি স্বীকৃতি চূড়ান্ত প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করছে। মূল বিষয় বা সত্য ঘটনা কেউ জানেন না। উড়ো খবরের ওপর ভিত্তি করে স্বীকৃতির সার্বিক অবস্থাকে বিতর্কিত করা হচ্ছে।
আল হাইআতুল উলইয়া, বেফাক, এদারাসহ অন্যান্য বোর্ডের দায়িত্বশীলদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যারা অভিযোগ তুলে হাইআ ও তৎসংশ্লিষ্ট বুযুর্গদেরকে কলুষিত করতে চাচ্ছেন, তারা হাইআর নীতিনির্ধারকদের সাথে যোগাযোগ না করেই এসব অপপ্রচার করেছেন।

তবে শেষ কথা হচ্ছে, সরকার আদৌ স্বীকৃতি দেবে কি না, দিলে কোন রূপরেখার আলোকে দেবে, এতে কওমির চাহিদার ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটবে কি না- সেটা কেউই নিশ্চিত নন। তবে হাইআর নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে জানা গেছে, হাইআ কোনো অবস্থাতেই কওমির স্বকীয়তা, স্বাতন্ত্র ও বৈশিষ্ট ভুলুণ্ঠিত হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না। এমন কি, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সনদ প্রদানের যে প্রচারণা দেখা যাচ্ছে, তাও হাইআ মেনে নেবে না।

উৎস. কওমিকণ্ঠ ডটকম

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...