খতিব তাজুল ইসলাম::
আল-যাজীরা মিডিয়া হ্যাক হবার পর হুট করে কাতারের উপর কয়েকটি ভ্রাতৃ প্রতিম দেশের আযাচিত অবরোধ গোটা মুসলিম বিশ্বে একটা হুলস্তুল পড়ে যায়। ঘটনার পিছনের ঘটনা জানতে অনেকে নিজেদের মতো করে বিশ্লেষণ করা শুরু করেন। অনুসন্ধান তথ্য উপাত্য সব মিলিয়ে মোটামুটি বিষয়টা এখন পরিস্কার হয়েগেছে। সৌদিআরবের ফরেন মিনিস্টার তড়িৎ উড়াল দিয়ে ইউরোপে গিয়ে অবরোধের ব্যাখ্যা দিতে শুরু করেন। প্রথম বললেন যে কাতার জংগীবাদে ইন্ধন দিচ্ছে। যখন জার্মান একজন সাংবাদিক পাল্টা প্রশ্ন করলো যে আমাদের কাছে রিপোর্ট আছে রিয়াদ জংগীদের যোগান দিচ্ছে তখন তার মুখ ফেকাসে হয়ে পড়ে। তারপর সুর পাল্টিয়ে বললেন যে, কাতার হামাস ও ব্রাদারহুডের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনকে লালন করছে। মনে হলো ইউরিপিয়রা তাও আমলে নেয়নি। শেষমেষ বললেন যে ট্রাম্প কাকু অবরোধের পরামর্শ দিয়েছেন। তারা ট্রাম্পিয় সমাধান বলে কিছু হাসি ঠাট্টা করে। এই হলো সৌদির ফরেন মিনিস্টারের ব্যাখ্যা নামা।
অপরদিকে আমেরিকায় নিযুক্ত আমিরাতের রাষ্টুদুতের ইমেইল হ্যাক হওয়ার পর বেরিয়ে পড়ে ষড়যন্ত্রের আসল সুত্র। অবরোধের আগ থেকে ইমেইল চালাচালি করছেন আমেরিকান ফরেন মিনিস্টারের সাথে। বলছেন কাতার তুরস্কের বিষয়ে আপত্তিকর কথা। কাতারকে দোজখের মজা চাখতে বলেছেন। মধ্যপ্রাচ্যে কাতারের উপর তথাকথিত অবরোধ আরোপের পর সৌদি আমিরাত আর মিশরের নানান কুকীর্তি বেরিয়ে পড়ছে। আমিরাত তুরস্কের সাথে আগে গা ঘেষাঘেষি করে লজ্জাজনক ভাবে পরাজয় বরণ করে। কিন্তু হাল ছাড়েনি। তলে তলে পিকেকে কুর্দিস সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়। আবার তুরস্কের সর্বশেষ ক্যুতেও নাকি পশ্চিমাদের সাথে আমিরাত জড়িত। প্রশ্ন হলো আমিরাত কি চায় আর কাতারের সাথে তাদের দুরত্ব কেন? সমস্যা বহুমাত্রিক।
কাতার রাজতান্ত্রিক হলেও তারা খুবই উদার নীতির অনুসারি। বিশেষ করে সুন্নি মুসলমানদের উন্নতির জন্য বেশ অবদান রাখছে। তারা গড়ে তুলেছে শক্তিশালী মিডিয়া আল-যাজীরা টিভি। মুসলিম স্কলারদের সম্মান দেয়। এরদোগান আর কাতারের আমীর শেখ তামিমের চিন্তা চেতনা খুব কাছাকাছি। কিন্তু আমিরাত পুরাটাই পশ্চিমা নীতি অনুসরণ করে। তলে তলে ইসরাইলের সাথে আছে ঘনিষ্ট ঘাটছড়া। ইসরাইল মিশর সৌদিআরব আমিরাতকে নিজেদের হাতে নিয়ে ফেলেছে আমেরিকার সহযোগিতায়। ইসরাইলের সমস্যা হামাস আর মিশর সহ আরব জাহানে ছড়িয়ে পড়া ব্রাদারহুড। ব্রাদারহুড সদস্যরা খুব শিক্ষীত এবং সচেতন। তুরস্ক কাতার তাদের পাশে। তারা রাজতন্ত্র বিরোধী একথা সৌদি ও আমিরাত প্রচার করলেও মূলত কাতারের সাথে সুসম্পর্ক তা প্রমাণ করেনা। হামাসের জিহাদী মনোভাব এবং স্বাধীন ফিলিস্তিনের অপ্রতিরোধ্য সংগ্রাম ইসরাইল রুখতে অক্ষম। তাই হাত করেছে মুসলমানদের সাথে। তার মূল হোতা আমিরাত। আমিরাত ও সৌদির আয়েশী শাসন বিলাসী জীবন হামাস ও ব্রাদারহুডকে বিপদজনক মনে করে। যদিও চাইলে সৌদি তাদের ম্যানেজ করে নিতে পারতো। কাতার পারে তারা পারবেনা কেন? কিন্তু সমস্যা অন্যখানে। ইসরাইলের স্বার্থ। আমেরিকা আমিরাত ও সৌদির মাধ্যমে ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইছে। তাই তারা আদাজল খেয়ে নেমেছে।
একদিকে শিয়া সুন্নি লড়াই। অপরদিকে ইসরাইল বনাম মুসলিম লড়াই। অপরদিকে রাজন্যদের প্রভাব প্রতিপত্তির লড়াই। কে কাকে কার বগলের নীচে রাখবে। মক্কা মদীনার কারণে সবাই সৌদিআরবকে সম্মানের চোখে দেখে। রাষ্ট্র যেমন বড় তেমনি দৌলতও আছে। আমেরিকার ঘনিষ্ট বন্ধু হলো সৌদিআরব। এই বন্ধুত্ব এখন মুসলিম নিধনের দিকে মোড় নিচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারনা। সৌদির আমেরিকা ও ইসরাইলী স্বার্থের অনুকুলে অপরিণামদর্শি সিদ্ধান্ত গুলো এখন প্রায় পরিস্কার হয়ে নগ্ন ভাবে ফুটে উঠছে।
সৌদির কি মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা রাখে?
সৌদির বর্তমান কলাকৌশল ও ফরেন নীতি দেখলে হতাশা ছাড়া আর কিছুই নজরে আসেনা। ইসরাইল ও আমেরিকার পতানো ফাদ থেকে আমিরাত ও সৌদি বেরিয়ে আসার কোনো লক্ষণ নেই। সাদ্দাম তিনি নিজে ষড়যন্ত্রের ফাদে পা দিয়ে আর বের হয়ে আসতে পারেননি। সৌদিও তখন সেই ফাদে আটকে যায়। কিন্তু সেই ঘা শুকিয়ে যায়নি এখনো সৌদির নেতৃত্বে অস্তিত্ব ঠিকিয়ে রাখার তাকিদে গড়া হলো মুসলিম মেলেটারি এলায়েন্স। ৪০টি মুসলিম দেশের সমন্বয়ে গঠিত এই এলায়েন্স এখনো বিশেষ কোনো ভুমিকা রাখেনি বা শক্তি প্রদর্শন করেনি। শুধু ঘোষণা এবং সামান্য প্রক্রিয়াধীন থাকাবস্থায় গুটির চাল শুরু হয়ে যায়। বলা হচ্ছে জংগীবাদ ও ইরানী আগ্রাসন থেকে বাঁচতে এই এলায়েন্স। এতে ইরান তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। কিন্তু তাতে ইসরাইল ও আমেরিকা খুশি হয়নি। মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সৈন্য থাকতে এখানে অন্য কোনো শক্তি আমেরিকা ভাল চোখে দেখবেনা। শুরু হলো পর্দার আড়ালে খেলা। কারণ আমেরিকা জানে এমন একদিন আসবে যেদিন এই এলায়েন্স হয়তো ইসরাইল ও আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ করে বসতে পারে। তাই আগাম ক্যু। তুরস্ককে ধংস করতে ব্যর্থ হওয়ায় আরব ফাটল এখন মোক্ষম সুযোগ। তাই বানানো হলো কাতারকে বলির পাঠা।
গাদ্দাফিকে সরিয়ে লিবিয়ার জনগণ কি সুখে আছে তাদের জিজ্ঞেস করে জেনে নিতে পারেন। সাদ্দামকে সরিয়ে ইরাকের কি হাশর গুজরে যাচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। মিশরের মুর্সিকে সরিয়ে ইসরাইল সুখ নিঃশ্বাস নিচ্ছে। সায় দিছে আমিরাত ও সৌদি। মিশরের অর্থনীতি আজ মুখ থুবড়ে পড়েছে। থমকে আছে সামাজিক উন্নতি। ভীতিই হলো মিশরের জনগণের জীবনের অনুষঙ্গ। সৌদি দাবী করে আমেরিকা তাদের প্রাণের বন্ধু! তাহলে ইয়ামানে কেন হুতিদের বিরুদ্ধে আমেরিকা তাকে সাহায্য করেনা? সিরিয়ায় আমেরিকার ভুমিকা কি? উল্টো আইএস নামক নরপিশাচ তৈরি করে আমেরিকা আরেক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করিয়ে ছিলো। সৌদি সিরিয়ায় তুরস্কের সাথে মিলে মিশে কাজ করছে ঠিকই কিন্তু রিজাল্ট কি? আমেরিকা কুর্দিদের কুলে রেখে আরেক বিষফোড়া খাড়া করার চেষ্টা করছে। আমেরিকার নগ্ন ষড়যন্ত্রের কবলে সৌদিআরব। দুর্ভাগ্য হলো সৌদিআরব তা অনুধাবন করতে অক্ষম। আমিরাত সৌদি সহ মধ্যপ্রাচ্যের সবকটি দেশ যেন মেরুদন্ডহীন। তাদের নিজেদের দেশকে রক্ষা করার মতো যোগ্যতা ক্ষমতা নেই। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্রের বিনিয়োগ কেবল আমেরিকার পকেট ভারি করা ছাড়া তাদের একপয়সার কাজে আসেনা। আমেরিকা পকেটও ভারি করছে দাদাগিরীও করছে আবার মুসলমানদের অস্তিত্ব বিনাশি কাজে লিপ্ত। যারা কিছুটা বুঝে তাদের থামিয়ে দেয়। যেমন তুরস্ককে থামিয়ে দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেছে। এখন কাতারকে শিক্ষা দিতে চায়। কাতার আল-যাজীরার মাধ্যমে তাদের নোংরা খেলা প্রকাশ করে দেয় এটাই হলো আসল সমস্যা। নতুবা নিয়ত সহীহ হলে তারা কাতারকে ডেকে এনে একান্তে বসে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা করতে পারতো। কোন প্রকার আগাম সতর্ক বাণী ছাড়া বাজ পড়ার মতো এমন আচরণ গোটা মুসলিম জাহানে চলছে সীমাহীন জল্পনা কল্পনা যে আসলে পর্দার আড়ালে কি ঘটছে তা দেখতে সবাই উদ্গ্রীব। বস্তুত তুরস্ক এই চাল বুঝতে পেরে কাতারের পাশে এসে দাড়িয়েছে। সৌদি এখন মাঝপথে। কাতারের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ হালে পানি না ধরায় তারা এখন ঝিম মেরেছে। আমিরাত তো আইন করে ফেলেছে যে কেউ কাতারের প্রতি সামান্যতম দরদ দেখালে জেল জরিমানা।
অনেকে বলেন যে মধ্যপ্রাচ্যের পতিতালয় আমিরাত তার নষ্টামির শেষ সীমায় এখন উপনীত। শয়তানের দালালি করতে করতে এখন মুসলমানদের ধংসের মিছিলে প্রথম সারিতে আছে। আশা করা যায় তুরস্ক পাকিস্তান ও আজার বাইজান মালেশিয়া সহ কিছু মেরুদন্ডদারী দেশ আগাইয়া আসলে এইসব খচ্চর গুলো কিছুটা হলেও পিছনে হটবে।