যুবাইর ইসহাক: পবিত্র কোরআন শুধু আল্লাহতায়ালার প্রেরিত একটি গ্রন্থ নয়, বরং এটা একটা বড় নির্দশনও বটে। অাল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিম নাজিল করার সঙ্গে সঙ্গে সংরক্ষণ করারও দায়িত্ব নিয়েছেন নিজে।
সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমকে বিভিন্নভাবে সংরক্ষণ করছেন এবং কেয়ামত অবধি তা সংরক্ষণ করবেন। কোরআন সংরক্ষণের অন্যতম একটি মাধ্যম হচ্ছে- মানুষের মাধ্যমে কোরআন মুখস্থ করা। যাকে আমরা হিফজ বলি।
পৃথিবীতে যত ধর্মগ্রন্থ আছে তন্মধ্যে কেবল কোরআনই মুখস্থ করা হয়। তাই পৃথিবীতে অসংখ্য অগণিত কোরআনের হাফেজ বিদ্যমান। আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো- কোরআন হেফজ করার সময়। কেউ এই মহাগ্রন্থ এত অল্প সময়ে মুখস্থ করে ফেলে যে, তার রীতিমতো বিস্ময়ের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এমনি এক বিস্ময় জাগানিয়া কিশোর সাড়ে এগারো বছর বয়সী নাসিম আহমদ।
সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলার ৭নং দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা তরিকত উল্লার ছেলে নাসিম আহমদ ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। তার বাবা একজন দিনমজুর। সেও গর্বিত ছেলের এমন কীর্তিতে।
২০০৫ সালের ২৪ আগস্ট জন্ম নেওয়া নাসিম আহমদ ৫ম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হয় জামেয়া আবু বকর সিদ্দিক (রা.) আগফৌদ নারাইনপুর মাদরাসায়। নাসিম আহমদ ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখার সময় বিভিন্ন শিক্ষা সংগঠনের আয়োজন অনুষ্ঠিত জেলা-উপজেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ১৭টি বৃত্তি লাভ করে।
নারাইনপুর মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার পর ২০১৬ সালের আগস্ট মাস থেকে কোরআন মুখস্থ করা শুরু করে সে। শুরুতে প্রতিদিন ১৬-১৭ পৃষ্ঠা করে কোরআন মুখস্থ করে উস্তাদকে শোনাতে থাকে। পরে তার আগ্রহ দেখে তার উস্তাদ এক পারা করে মুখস্থ করতে থাকে। এভাবে ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসের মধ্যে পুরো কোরআন মুখস্থ করে ফেলে।
তার এই বিরল প্রতিভা দেখে মুগ্ধ সিলেটবাসী। ইতোমধ্যে আল খায়রাত ফাউন্ডেশন রাজাগঞ্জের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনাও দেওয়া হয়েছে।
হাফেজ নাসিমের উস্তাদ হাফেজ মুখলিসুর রহমান এই কিশোরের বিরল প্রতিভা প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে জানান, ‘আমি আমার শিক্ষকতার জীবনের এমন প্রতিভাবান ছেলে আর দেখিনি। এমন ছাত্রকে কোরআন শিখাতে পেরে আমি আনন্দিত। আমি নাসিমের মঙ্গল কামনা করি।’
হাফেজ নাসিম আহমদ বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে জানায়, ‘চার মাসে কোরআন হিফজ সমাপ্ত করতে পেরে সে আনন্দিত।’ নাসিম ভবিষ্যতে কোরআন-হাদিস বিষয়ে পড়াশোনা করতে আগ্রহী।
এ প্রসঙ্গে হাফেজ নাসিমের উস্তাদ হাফেজ মুখলিসুর রহমান বলেন, ‘নাসিম পড়ালেখায় দারুণ মনোযোগী। তাকে সঠিকভাবে গাইডলাইন দিতে পারলে ভবিষ্যতে বড় কিছু হতে পারবে। কিন্তু তার দিনমজুর বাবার পক্ষে কতটা সম্ভব হবে তার পড়ালেখার খরচ জোগানো- সেটাই বড় প্রশ্ন!’