শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ২:৪৮
Home / আকাবির-আসলাফ / হাদিস বিশারদ মাওলানা সলিমুল্লাহ খানের সংক্ষিপ্ত জীবনী
শাইখুল হাদিস মাওলানা সলিমুল্লাহ খান- ফাইল ফটো

হাদিস বিশারদ মাওলানা সলিমুল্লাহ খানের সংক্ষিপ্ত জীবনী

আকাবির আসলাফ ৪২

আবু নুমান :

পাকিস্তানের বিশ্বখ্যাত আলেম, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া পাকিস্তানের সভাপতি, জামিয়া ফারুকিয়া করাচির মহাপরিচালক শাইখুল হাদিম মাওলানা সলিমুল্লাহ খান ১৫ জানুয়ারি ২০১৭ ঈসায়ি রবিবার ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন।

নিজের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করাচির জামিয়া ফারুকিয়ায় মঙ্গলবার ১৬ জানুয়ারি ‘১৭ তার জানাযার নামায শেষে প্রিয় প্রতিষ্ঠানেই তাকে দাফন করা হয়।

তিনি ভারত উপমহাদেশের হাজার হাজার উলামার উস্তাদ ছিলেন। সমগ্র বিশ্বের ইলমে দ্বীন শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত তার রচিত সহিহ বুখারির ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘কাশফুল বারি’ থেকে হাদিসের উচ্চতর শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জন করছে।

মাওলানা সলিমুল্লাহ খান রাহ. ২৫ডিসেম্বর ১৯২৫ ঈসায়ীতে ভারতের মুজাফ্ফরনগরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আফ্রিদী পাঠানদের একটি শাখা মালিক দ্বীন খিল বংশের লোক ছিলেন। করাচিতে তিনি অর্ধশতাব্দী যাবত দ্বীনি খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন।

মাওলানা খান তাঁর প্রথমিক শিক্ষা হাকিমুল উম্মত হযরত আশরাফ আলী থানবী রহ.’র প্রসিদ্ধ খলিফা মাওলানা মসিহুল্লাহ খানের নিকট মেফতাহুল উলুম মাদরাসায় অর্জন করেন। অতপর ফেকাহ্, হাদিস ও তাফসীরসহ বিভিন্ন বিষয়াদিতে ১৯৪৭ সনে দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৪৭ সালে বৃটিশদের হাত থেকে দেশ মুক্ত হওয়ার সময় ভারত ভাগ হলে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর রাজ্ কায়েমে এবং মুসলিম জাতিসত্ত্বাবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লাখো লাখো মুসলমানদের সঙ্গে তিনিও হিজরত করে পাকিস্তানে চলে যান। সেখানে তিনি শাইখুল ইসলাম হযরত শাব্বির আহমদ উসমানী রহ.’র প্রতিষ্ঠিত দারুল উলুম সিন্ধু, দারুল উলুম করাচি এবং জামিয়া ইসলামিয়া বিননূরী টাউনে অনেক বছর তফসীর, হাদিস, ফেকাহ, ইতিহাস, দর্শন, ও আরবী সাহিত্যের দরস প্রদানে ব্যপৃত থাকেন। ২৩জানুয়ারী ১৯৬৭ সালে করাচিতে জামিয়া ফারুকিয়া প্রতিষ্ঠা করেন।

পাকিস্তানে দ্বীনি শিক্ষা বিস্তারে মাওলানা খানের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার পুরষ্কার হিসেবে তাকে ১৯৮০ সালে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া পাকিস্তানের মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়। দ্বীনি মাদরাসার সংস্কার ও উন্নয়নে তিনি আরো বেশি সচেষ্ট হয়ে উঠেন। ফলে ১৯৮৯ তাকে বেফাকের প্রধান তথা সভাপতি করা হয়। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি বেফাকের এই পদ অলংকৃত করেছেন।

মাওলানা খান সহিহ বুখারির ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘কাশফুল বারি’ (১২ খণ্ড) এবং মেশকাত শরিফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘নাফহাতুল তানকিহ’ (৩ খণ্ড) লিখেন। যা আলেম উলামা ও তুলাবার কাছে অনেক গ্রহণযোগ্য গ্রন্থ হিসেবে সমাদৃত।

মাওলানা খানের ইন্তেকালে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি মামুন হোসাইন, প্রধানমন্ত্রী মিয়া মুহাম্মদ নওয়াজ শরিফ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নেসার আলী খান, সিন্ধুর মুখ্যমন্ত্রী সাইয়্যেদ মুরাদ শাহ, পাছঞ্জাবের মুখ্য মন্ত্রী মিয়া শাহবাজ শরীফ, খায়বর পাখতুনখার মুখ্যমন্ত্রী পারভেজ ঘটক, তাহরিকে ইনসাফের চেয়ারমেন ইমরান খান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী শুজাআত হোসাইন, জমিয়তের মাওলানা সামিউল হক ও মাওলানা ফজলুর রহমান, বিচাপতি মুফতি তকী উসমানী, মাওলানা মুফতি রফী উসমানী, কারী হানিফ জালান্ধরী, মাওলান আহমদ লুধিয়ানভী প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে তার দ্বীন ও মিল্লাতের খেদমতকে তারা স্মরণ করেন। তার মৃত্যুতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা শত বছরেও পূরণ হওয়ার নয় বলেও তারা মন্তব্য করেন।

আরও পড়ুন : আকাবির আসলাফ- ৪১ : ইলমে ক্বিরাতের বিকাশ সাধনে আল্লামা ফুলতলী রাহ.

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...