মুফতি মাওলানা মুখলিছুর রহমান কাসেমী :
আমরা অবশ্যই অবগত আছি যে, বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, হুকুমদাতা, রিজিকদাতা মহান আল্লাহর সামনে নামাজের মাধ্যমে নিজের দুর্বলতা,অক্ষমতা এবং অস্তিত্বহীনতা ভয় ও বিনয়ের সাথে স্বীকার করা হয়। আর নামাজের মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করার তিনটি পদ্ধতি পবিত্র কুরআন শরীফের সূরায়ে আল ইমরান-১৯১নং আয়াতে বলা হয়েছে। প্রথমে- দাঁড়িয়ে। যদি দাঁড়াতে অক্ষম হয়, তাহলে বসে (মাটিতে)। যদি বসতে অক্ষম হয়, সেক্ষেত্রে শুয়ে কাত হয়ে নামাজ আদায় করবে। তাছাড়া বুখারী শরীফের হাদীস হযরত ইমরান ইবনে হোসাইন (রা.) সূত্রে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমার অর্শ্ব রোগ হয়েছিল, তাই নবী করীম (সা.) এর খেদমতে নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। নবী করীম (সা.) বললেন, দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় কর। স্বামর্থ না হলে বসে নামাজ আদায় কর। যদি তাতেও স্বামর্থ না হয়, তবে কাত হয়ে শুয়ে আদায় কর।
বাস্তবতা হচ্ছে, হুজুর (সা.), সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, চার মাযহাবের চার ইমাম, ইমাম বুখারী রহ., ইমাম মুসলিম রহ.সহ পরবর্তী যুগে প্রায় ১৪শত বছর পর্যন্ত চেয়ারে নামাজ আদায়ের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অথচ রাসূল (সা.) থেকে পরবর্তীদের সব যুগেই চেয়ারের অস্তিত্ব ছিল এবং সেই যুগেও মাজুর লোক ছিল। হুজুর (সা.) থেকে পরবর্তী যুগের লোকেরা আমাদের যুগের থেকে কুরআন ও হাদীসে অধিক অভিজ্ঞ ছিলেন। সেই যুগের কোন আলেম চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করেছেন এমন নজীর দেখা যায় না। আল্লাহ পাক আমাদের দ্বীনি বিষয়ে সঠিক বুঝ দান করুন।
বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি, দুই রকমের লোক চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করছেন, এক. সত্যিকারেই মাজুর। হুইল চেয়ার ব্যতিত চলাফেরা করতে পারেন না এবং মাটিতে বসতে পারেন না। বেশিরভাগ সময় হুইল চেয়ারে বসেই কাটাতে হচ্ছে। এমন অপারগ মাজুরদের ব্যাপারে আর কোন বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বর্তমান যুগের ওলামায়ে কেরাম হুইল চেয়ারে বসে মাথার ইশারায় নামাজ আদায়ের সাময়িক অনুমতি আছে বলে মত প্রকাশ করেছেন।
কিন্তু এই সুযোগে কুরআন হাদীস ও বিগত ১৪শত বছরের আমল ও ফতোয়া উপেক্ষা করে অজ্ঞাত ও ধর্মীয় জ্ঞানহীন কিছু ডাক্তার কোমর ও হাটুব্যথা এমন রোগীদেরকে চেয়ারে বসে নামাজ আদায়ের পরামর্শ দেওয়া আরম্ভ করেন। ফলে সুস্থ মানুষ সারাদিন অফিস, চাকরী, ব্যবসা, ক্ষেত-খামারে, হাটে-বাজারে হাঁটা চলা ও কাজ করছে; কিন্তু যখনই মসজিদে আসছে, তখন সে ঐ ডাক্তারের সূত্র ধরে চেয়ারে বসে আল্লাহর সামনে বিনয়ের পরিবর্তে অহংকারের ভাব ধরে নামাজ আদায় করছেন। যা সকল যুগের ওলামায়ে কেরামের মতে নামাজ আদায় হয় না। কারণ দাঁড়ানো একটি ভিন্ন ফরজ। এছাড়া রুকু, সিজদা, দুই জানু হয়ে বসা এই ফরজগুলো লঙ্ঘন করার কারণে নামাজ আদায় হয় না। তাই মানবসেবায় অনন্য আমার ডাক্তার ভাইদের প্রতি বিশেষ অনুরোধÑ চিকিৎসা করাই আপনার দায়িত্ব। শরীয়তবিরোধী পরামর্শ দিয়ে নামাজ নষ্ট করে গুনাহগার হওয়ার কাজটি না করলে ভাল হয়। সেজন্য দেশের সকল অঞ্চলেই ওলামায়ে কেরাম রয়েছেন। তারাই মূলত মাস্আলা সঠিক বলতে পারেন। আর বলার দায়িত্ব তাদেরই।
হুইল চেয়ারে নামাজ আদায়ের নিয়ম :
মুয়াত্তা মালেক কিতাবে ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, কেউ সেজদা করতে স্বামর্থ না হলে শুধু মাথায় ইশারা করবে। তাই রুকু ও সিজদা করতে অক্ষম ব্যক্তি রুকু-সেজদার সময় সামান্য ঝুকবেন। তবে সেজদার সময় রুকু থেকে একটু বেশী ঝুকবেন। এক্ষেত্রে হাত ও অন্যান্য অঙ্গ স্বাভাবিক থাকবে। উল্লেখ্য যে, ইশারায় নামাজ আদায়ের সময় মাথার সাথে হাত বাড়িয়ে দেওয়া এটা শরীয়ত পরিপন্থী কাজ।
কোমর, হাটুব্যাথা এমন লোকদের জন্য মসজিদে চেয়ার রাখার কোন প্রয়োজন নেই। কারণ যিনি প্রকৃত মাজুর তিনি হুইল চেয়ারে করে মসজিদে আসবেন এবং নিজ চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করবেন। মসজিদে চেয়ারের আধিক্য বিজাতিদের উপাসনালয়ের সাদৃশ্য, যা আমাদেরকে নবী করীম (সা.) নিষেধ করেছেন। তাই দয়া করে সকল মসজিদ থেকে চেয়ার বের করে দিন এবং মসজিদকে বিনয় এবং কান্না-কাটির মাধ্যমে আল্লাহর রহমতের বাগান তৈরি করুন। নিজের কষ্টের নামাজ এবং অন্যের কষ্টের নামায হেফাজত করুন। মহান আল্লাহ আমাকে আপনাদের সকলকে কোরআন ও হাদীসের সঠিক জ্ঞান দান করুন। আমিন।
উক্ত বিষয় আপনি সচেতন হোন এবং অপর মুসলিম ভাইদেরকে সচেতন করুন।
ইআম