বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৩:১১
Home / প্রতিদিন / ওয়াজ বনাম আওয়াজ মাহফিল সমাচার

ওয়াজ বনাম আওয়াজ মাহফিল সমাচার

মোরশেদ আলম :

একটি আসন তৈরী করা হলো। জনগণ টাকা দিল। জনগণ টাকা উঠালো। খাবারের ব্যবস্থা, থাকার ব্যবস্থা, যাতায়াত ব্যবস্থা সবকিছুর মহাব্যবস্থা শেষে একজন আলেমকে বসিয়ে দেয়া হলো কাঙ্ক্ষিত আসনে। আমাদের উদ্দেশ্যে বলুন। বলুন জীবন ও জগতের রহস্য সম্পর্কে। বলুন, জীবনের পরিণতি সম্পর্কে। এক ঘণ্টা দুই ঘণ্টা তিন ঘণ্ট অর্ধরাত সারারাত বসে থাকল মানুষ। আপনি বলতে থাকুন। পৃথীবির কোনো সংসদে জনগণের উদ্দেশ্যে এতো কথা বলার সুযোগ হয় না। কোন জনপ্রতিনিধির সামনে স্পিকার দিয়ে জনগণ এতো সময় বসে থাকে না। কোন সমাজবিজ্ঞানী এতোটা সময় পায় না সমাজের চিত্র তুলে ধরার। ভাষাবিদ-সাহিত্যিকেরা নির্বাক দর্শক হয়ে থাকে একজন আলেমের সামাজিক অবস্থান দেখে! দীর্ঘ ছয় মাস মানুষ আলেমদের সামনে বসে থাকে।

সম্মানিত আলেম! আপনি বলুন। বলুন, মানুষের সাথে সমাজের সম্পর্ক কী? সমাজ-সভ্যতার সূত্র কি? সফলতার মন্ত্র কি? কিন্তু আমাদের আলেম সমাজ! তাঁরা কি তুলে ধরতে পারছে সমাজ- সভ্যতার সফলতার সূত্র? রাতের পর রাত চলছে বিদ্বেষের চর্চা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলছে কল্পিত কিচ্ছা-কাহিনীর বিবরণ। মাইলের পর মাইল শব্দ তরঙ্গ সৃষ্টি করে ফয়সালা করা হচ্ছে মক্কার দাম বেশী নাকি মদিনার!

এদিকে একের পর এক বিরান হচ্ছে ইসলামী সভ্যতার সোনালি শহর! প্রতি মুহূর্তে মুসলিম বিশ্বের মানচিত্রে পরিবর্তন হচ্ছে। সাংস্কৃতিক আগ্রাসন গ্রাস করছে শহুরে শিক্ষিত তরুণদের থেকে গ্রাম্য সরলমনা তরুণী পর্যন্ত। দারিদ্র্য বাড়ছে। বেকারত্ব বাড়ছে। আগ্রাসন বাড়ছে। শহুরে সন্তানেরা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে খোদ স্রষ্টার অস্ত্বিত্বের প্রতি! নাটকে, সিনেমায়, পুস্তকে, গল্পে, বন্ধুত্বে, আড্ডায় সবখানে ধর্ম আজ অপ্রতিহত অতচ অযৌক্তিক প্রশ্নের সম্মুখীন। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যুক্তিবাদী ছেলেমেয়েরা আজ কমিউনিজমের মেকানিজমে আবদ্ধ। আগ্রাসনবাদী তরুণেরা পুঁজিবাদের তরবারি হাতে দুর্দান্ত প্রতাপে লিপ্ত। অর্থনৈতিক মুক্তিকামীরা একান্ত অনিচ্ছাস্বত্তেও বামপন্থাকে স্বাগত জানাচ্ছে। এদেশের ইসলামী পরিবেশে বেড়ে উঠা, ইসলামী বা বাবার কষ্টার্জিত অর্থে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেটা নিজেকে মুসলিম বলে পরিচয় দিতে লজ্জা করছে! সে দেখছে তার পেছনে অন্ধকার। সামনে অন্ধকার। সে মনে করছে বিশ্ব সভ্যতায় তরবারি আর কিছু যুদ্ধ ছাড়া ইসলামের আর কোনো অবদান নেই। বর্তমান বিশ্বের জটিল সমাজ বাস্তবতার সাথে ইসলামের কাল্পনিক দর্শনের কোন মিল নেই! সে না এ বিষয়ে কোন কথা শুনেছে। আর না কোনো চরিত্র দেখেছে।

যে চরিত্র তাকে বলে দিতে পারতো ইসলাম এমন একটি দর্শন যা সত্যিই বাস্তবায়ন যোগ্য! তবে এই ওয়াজ মাহফিলগুলোতে ছয়মাসব্যাপী কিসের মহড়া হচ্ছে? একজন সমাজবিজ্ঞানীর চেয়ে হাজার গুণ মর্যাদা পাওয়া শতশত আলেমের সম্মিলিত প্রয়াস মিলেও একজন সমাজবিজ্ঞানীর সমান প্রভাব পড়ছে না। মানুষ এখনো বুঝতে পারছে না ইসলাম আসলে সামাজিক দর্শন, নাকি রাজনৈতিক? নাকি এর সমষ্টি। ইসলাম কি ধর্ম-মতাদর্শ নির্বিশেষে সব মানুষের কল্যাণ করবে, নাকি এর মধ্যে বিদ্যমান মসলকগুলো পরস্পরকে খতম করবে? ওয়াজের আওয়াজগুলো শুনলে কি এই প্রশ্নের নিশ্চিত কোন উত্তর পেতে পারে জনগণ? তবে কেন এতো আয়োজন? এতো ব্যয়, এতো উল্লাস, এতো আস্ফালন? ওয়াজ মাহফিল কি তবে আওয়াজ মাহফিলের অপর নাম?

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...