কুতায়বা আহসান :
– সিদ্ধান্ত পাশ হবার পর আব্দুল আজিজ আর বারবারদের সুলতান হাফসি উঠে দাঁড়িয়ে জাহাজের বাইরে চলে আসছিলেন। ঠিক এ সময় একটি ছোট্ট কিশতি এসে জাহাজের পাশে ভিরল। কিশতিটা ভিরতেই সেখান থেকে তিনজন লোক লাফিয়ে জাহাজে উঠে আসলেন। এদেরকে দেখে খাইরুদ্দীনের চেহারায় আনন্দের দ্যুতি খেলে গেল। তিনি থেমে গেলেন। তাঁর দেখাদেখি মেহমানদ্বয় সহ তাঁর সকল সালাররাও দাঁড়িয়ে পড়লেন। ওরা দ্রুত এগিয়ে এলো। কাছে এসে কিছু বলার আগেই খাইরুদ্দীন তাদের লক্ষ করে বললেন। তোমরা নিশ্চয় আমাদের জন্য কোনো সুসংবাদ নিয়ে এসেছো?
– জবাবে তাদের একজন বললেন: মুহতারাম আমীর! আমরা সুসংবাদই নিয়ে এসেছি। হিস্পানিয়ার আলবাশারাত ওয়াদিতে অবস্থানরত দুই মুসলিম নেতা কাব বিন আমির এবং সাদ বিন সালামা হিজরত করতে ইচ্ছুক এমন নির্যাতিত ও নিপীড়িত কিছু মুসলমানকে তাঁদের উপকুলে অবস্থিত জেলে পল্লীতে জমায়েত করে রেখেছেন। তারা চান আপনি যথাশীঘ্র এদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসবেন। যদি ওদেরকে সরাতে দেরি হয় তাহলে হয়ত সেখানকার সরকার ব্যাপারটা জেনে যেতে পারে। এতে ভবিষ্যতে ঐ পথ দিয়ে নির্যাতিতদের বের করে নিয়ে আসা কঠিন হয়ে যাবে।
– তাদের কথাটা শুনে খাইরুদ্দীনের চেহারা খুশিতে ঝলমলিয়ে উঠলো। তিনি তখনই হাসান ক্রুসুকে লক্ষ করে বলতে লাগলেন:
– হাসান! আমার প্রিয়তম। খানিক আগে আমরা যে অভিযানের রূপরেখা পূর্ণতায় পৌঁছিয়েছি আমি চাই সেই অভিযান শুরু করার আগেই তুমি কাকাদকে নিয়ে ওখানে চলে যাও এবং দ্রুত তাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে এসো। এ জন্য তোমাদেরকে মুনাসিব জাহাজ দেয়া হবে।
– খাইরুদ্দীন নিঃশ্বাস ফেলার জন্য একটু বিরতি নিয়ে পুনরায় বলতে শুরু করলেন:
– প্রিয় হাসান ও কাকাদ! আমি যা বলছি তা গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনো! একটু পূর্বে আমরা তিউনিশে আক্রমণ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং এর জন্য যে রূপরেখা প্রণয়ন করেছি তা তোমরা জানো। তিউনিশ আক্রমণ হবে আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কাজের একটি। এটি আমাদের জীবন মরণের প্রশ্ন। আল্লাহ চাহেতো আমরা সে অভিযানে সফল হবো। আর সে অভিযানে তোমাদের উভয়কেই আমি পাশে পেতে চাইব।
– অতএব আমি চাই তোমরা উভয় যত দ্রুত সম্ভব স্পেন অভিমুখে বেরিয়ে পড়। আমি চাইব আগামী রাতেই তোমরা আলবাশারাত ওয়াদির সাগর উপকুলে পৌঁছে যাবে আর খুব দ্রুতই আমাদের অসহায় ভাইদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসবে। তিউনিশ আক্রমণের পূর্বে এদেরকে নিয়ে আসতে পারলে আমাদের তিউনিশ আক্রমণটা অনেকখানি সহজ হয়ে যাবে।
– কেননা, নির্যাতিত ঐ মুসলিম দলে অবশ্যই যুদ্ধোপোযোগী জওয়ানরাও থাকবে। ওরা নিশ্চয় গির্জা আর সরকারের নির্যাতনের প্রেক্ষিতে নাসারাদের উপর আগুন হয়ে রয়েছে। একটুখানি সুযোগ পেলে তারা নাসারাদের উপর জ্বলে উঠতে চাইবে। এ ছাড়াও তাদেরকে আমাদের ভবিষ্যত বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করে নিতে পারবো। ওদের বিশ্বস্ততা হবে প্রশ্নাতীত। কারণ এরা হবে পোড় খাওয়া মু’মিন। এদের ঈমানের উত্তাপ হবে আলাদা। অতএব আমি চাই তুমি কাকাদকে নিয়ে এই মুহূর্তে রওয়ানা হয়ে যাও। এবার বল তোমার সিদ্ধান্ত কী? আমি কিন্তু তিউনিশ আক্রমণ তোমাকে এবং কাকাদকে পাশে পেতে চাইব।
– হাসান ক্রুসু কিছুটা অনুযোগ মেশানো কন্ঠে বললেন: মুহতারাম আমীর! আমি দুঃখিত এসব ব্যাপারে আপনি আমার মতামত জানতে চাচ্ছেন। অথচ আমি চাই আপনি কেবল নির্দেশ দেবেন। ওয়াল্লাহি! আপনি যদি আমাকে শত্রুর মোকাবেলায় আগুনের সাগরেও ঝাপ দিতে বলেন আমি মোটেও দ্বিধা করবো না। আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, ইন শা আল্লাহ তিউনিশ আক্রমণের পূর্বেই আমি আর কাকাদ স্পেন থেকে আপনার জন্য শুভ সংবাদ নিয়ে আসবো।