শামসুল আদনান :
১। প্রকাশ করা হয়েছিলো ২০১৩ সালের পাঠ্যপুস্তকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে মুসলমানদের শেষ নবী সাঃ সংশ্লিষ্ট ‘সবাই মিলে করি কাজ’ পাঠ্য, তৃতীয় শ্রেণীতে ‘খলিফা হযরত আবুবকর’ শিরোনামে পাঠ্য এবং চতুর্থ শ্রেণীতে খলিফা হযরত ওমর রাঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনীবাদ দেওয়া হয়েছিলো। পরির্বতন করে ২০১৭ সালের নতুন সিলেবাসে তিনটি পাঠ্যই ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
২। পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা বইয়ের বহুদিন ধরে নাস্তিক হুমায়ুন আজাদের ‘বই’ কবিতাটি নিয়ে বিতর্ক চলছিলো। কবিতাটিতে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থকে কৌশলে ব্যঙ্গ করা হয়। আরো বিতর্ক চলছিলো শাহবাগী ভণ্ড মুসা ইব্রাহীমের ভুয়া এভারেস্ট জয়ের গল্প নিয়ে ২০১৭ সালে নতুন পাঠ্যপুস্তকে ২টি পাঠ্যই বাদ দেয়া হয়েছে এবং তার বদলে কবি কাজী কাদের নেওয়াজের লেখা বাদশাহ আলমগীরের মহত্ত্ব প্রকাশ করে ‘শিক্ষা গুরুর মর্যাদা’ নামক কবিতাটি ফিরিয়ে আনা হয়েছে । এছাড়া ফিরিয়ে আনা হয়েছে মুসলমানদের শেষ নবী সংশ্লিষ্ট ‘বিদায় হজ’ এবং মুসলিম যোদ্ধা মীর তীতুমীরের জীবন কাহিনী।
৩। ষষ্ঠশ্রেণীর বাংলা বইয়ে গো-মাতাবাদী লেখকের‘ লালগরুটা’ নামক গল্প নিয়ে বহু সমালোচনা হয়েছে৷ ২০১৭ সালে গল্পটি বাদ দেওয়া হয়েছে। এর বদলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে ধর্মীয় শিক্ষণীয় ঘটনা ‘সততার পুরস্কার’ নামক ঘটনাটি। এছাড়া ভারতের হিন্দুদের তীর্থস্থানের বর্ণনা দেওয়া ‘রাচী ভ্রমণ’ নিয়ে সমালোচনা ওঠায় সেটিও বাদ দেয়া হয়েছে। তার বদলে মুসলিম দেশ মিশর ভ্রমণকাহিনী ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ পাঠ্যটি ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
৪। সপ্তম শ্রেণীর বইতে দেবী দূর্গার প্রশংসা করে রবীন্দ্রনাথের ‘বাংলাদেশের হৃদয়’ নামক কবিতাটি নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে নতুন পাঠ্যপুস্তকে তা বাদ দেওয়া হয়েছে। যদিও তার বদলে রবীন্দ্রনাথের আরেকটি কবিতা ‘নতুনদেশ’ প্রবেশ করা হয়েছে। পাশাপাশি ৭ম শ্রেণীর বইয়ে মুসলমানদের শেষ নবীর সংক্ষিপ্ত জীবনী ‘মরু ভাস্কর’ প্রবন্ধটি ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
৫। ৮ম শ্রেণীর বইয়ে দুইজন মুসলিম লেখকের কবিতা ‘প্রার্থনা’ ও ‘বাবরের মহত্ত্ব’ বাদ দেওয়ায় ব্যাপক সমালোচনা হয়। ২০১৭ সালে নতুন সিলেবাসে দুটো কবিতাই ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
৬, নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা বইয়ে বেশকিছু পরিবর্তন আছে ৷ (ক) রাধা-কৃষ্ণের কীর্তণ ‘সুখের লাগিয়া’ নিয়ে প্রতিবাদ হওয়ায় ২০১৭ সালে তা বাদ দেওয়া হয়েছে।
তার বদলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে শাহ মুহাম্মদ সগীরের লেখা ইসলামী ভাবাপন্ন ‘বন্দনা’ কবিতাটি।
.
(খ) ভারতচন্দ্রের লেখা দেবী অন্নপূর্ণার কাছে প্রার্থনা করে লেখা ‘আমার সন্তান’ বিতাটি নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি হয়৷ তার পরিপ্রেক্ষিতে কবিতাটি বাদ দেওয়া হয়েছে। এর বদলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে মহাকবি আলাওলের লেখা ‘হামদ’ নামক কবিতাটি।
.
(গ) বিকৃতরুচি আর ভ্রান্ত মস্তিষ্কের লালন শাহের লেখা ‘সময় গেলে সাধন হবে হবে না’ কবিতাটির গোমর ফাঁস করায় সেটিও বাদ দেয়া হয়েছে। তার বদলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে কবি আব্দুল হাকীমের লেখা বঙ্গবাণী কবিতাটি।
.
(ঘ) রঙ্গলাল বন্দোপাধ্যায়ের লেখা চরম ইসলাম বিদ্বেষী কবিতা ‘স্বাধীনতা’ নিয়ে লেখালেখির পর সেটিও বাদ দেয়া হয়েছে। তার বদলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে কবি গোলাম মোস্তফার লেখা ‘জীবন বিনিময়’ কবিতাটি।
.
(ঙ) অখণ্ড ভারত তত্ত্বকে প্রমোট করে সুনীলের লেখা ‘সাঁকোটা দুলছে’ কবিতাটি নিয়ে লেখালেখির পর সেটাও বাদ দেয়া হয়। এর বদলে কাজী নজরুল ইসলামের ‘উমর ফারুক’ কবিতাটি ২০১৭ সালের পাঠ্যবইয়ে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
.
(চ) ভারতীয় ভ্রমণকাহিনী ‘পালামৌ’ নিয়ে সমালোচনা ওঠায় সেটিও বাদ দেওয়া হয়েছে। যদিও এর বদলে ইসলাম বিদ্বেষীদের গুরু বঙ্কিমের লেখা ‘ফুলের বিবাহ’
নামক গল্প প্রবেশ করানো হয়েছে।
এই সব পরিবর্তন প্রসঙ্গে উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ ষড়যন্ত্রকারীদের নগ্ন ষড়যন্ত্র ধরিয়ে দেয়ায় তারা সাময়িক ভোল পাল্টেছে মাত্র, কিন্তু পুরো ষড়যন্ত্র থেকে এখনও সরে আসেনি। তাই সিলেবাস নিয়ে ইসলামপন্থীদের লেখালেখি ও রাজপথের
আন্দোলন থামিয়ে রাখা চলবে না, বরং জোরদার করতে হবে।
তারপরেও যতোটুকু পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংযোজন, বিয়োজন হয়েছে সেজন্যে সংশ্লিষ্ট মহলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং প্রচেষ্টায় হয়েছে তাদেরকেও অজস্র ধন্যবাদ জানাচ্ছি।