বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৫:২৬
Home / প্রতিদিন / কওমী সনদের সরকারী স্বীকৃতি- গৌরবময় শিক্ষার সংকটকাল : আমাদের করণীয়

কওমী সনদের সরকারী স্বীকৃতি- গৌরবময় শিক্ষার সংকটকাল : আমাদের করণীয়

আমিন মুনশি :

কওমী শিক্ষাব্যবস্থা এদেশের একটি প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থা। এর রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা। বহুমাত্রিক চড়াই-উতরাই পাড়ি দিয়ে চলছে জন্মলগ্ন থেকে। আটটি বিশেষ মূলনীতির উপর এই শিক্ষাব্যবস্থাটি প্রতিষ্ঠিত। উল্লেখযোগ্য একটি হলো, কওমী শিক্ষাধারা সরকারী প্রভাব ও বলয়মুক্ত থাকতে হবে। বাতিলের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে দ্বীনের সুমহান বাণী সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌঁছাতে পারাটা এই শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। শাসকগোষ্ঠীর সাথে কোনরকম সমন্বয় সাধন ব্যতীত একটি শিক্ষাব্যবস্থা নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারাটাই তাদের স্বচ্ছতা ও নিষ্ঠার পরিচয় বহন করে। এই ধারার শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিগণ যুগে যুগে তাদের মেধা-মনন দিয়ে জাতিকে মানবতার শিক্ষাদানের পাশাপাশি সমাজ উন্নয়নে অবদান রেখে ইতিহাসে ভাস্বর হয়ে আছেন।

এই শিক্ষাধারাটি গণমানুষের যেমন আস্থা ও ভালোবাসা কুড়িয়েছে তেমনি একশ্রেণির জ্ঞানপাপীদের চক্ষুশূলেও পতিত হয়েছে। কালের আবর্তে, বিজ্ঞানের উত্কর্ষে কওমী শিক্ষাব্যবস্থা আজ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। চারদিকে যখন পরিবর্তনের ঢেউ তখন এই শিক্ষাব্যবস্থার সিলেবাসে প্রয়োজন আরো যুগোপযোগী, গঠণমূলক বিষয়ের সংযোজন। নয়তো এ ধারার শিক্ষার্থীরা হীনমন্যতার শিকার হবে। ষড়যন্ত্রকারীরা যখন ছিদ্রান্বেষণে ব্যস্ত তখন কওমী শিক্ষাব্যবস্থার ধারক-বাহকদের আরো সচেতন হওয়ার প্রয়োজন নয় কি? আমাদের দুর্বলতার সুযোগে ছোট-খাটো ব্যাপার নিয়ে ওরা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়।

উপরন্তু আলেমদের মাঝে রয়েছে হাজারো মতবিরোধ এবং দলীয় বিভাজন। কেউ চান কওমী শিক্ষার সরকারী স্বীকৃতি। কেউ করেন বিরোধিতা। কেউ বলেন, এটা আমাদের জাতিসত্ত্বার জন্য বিরাট হুমকি। আকাবির-আসলাফের পথ থেকে সরে দাঁড়ালে এর পরিণাম শুভ হতে পারে না। আবার নবীন আলেমরা অনেকে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, এতে দ্বীনি খেদমত সবক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হবে। ইসলামের আদর্শ ও মহীয়ান বার্তা ব্যাপকহারে প্রচার করা সম্ভব হবে। এমন নাজুক ও সংকটময় মুহূর্তে কওমী সিলেবাসভুক্ত ‘দেওবন্দ আন্দোলনঃ ইতিহাস ঐতিহ্য অবদান’ বইয়ে পেয়ে গেলাম একটি যুত্সই প্রবন্ধ। পাঠকদের জন্য কিঞ্চিত তুলে ধরা সঙ্গত মনে হলো- “আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা যে, ঐ সকল  নীতিমালা (কওমী মাদরাসার মূলনীতি অষ্টক) পরাধীনতার অক্টোপাশে বন্দিদশার শিকার হয়ে অর্থনৈতিক দৈন্য ও এক চরম  অসহায় পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে রচনা করা হয়েছিল। কালের প্রেক্ষিতে তার তাত্পর্য যত গভীরই হোক এবং তার ফলাফল যত ব্যাপক ও বিস্তৃতই হোক; সর্বকালেই যে সেগুলো তেমনি আবেদনশীল থাকবে তা নাও হতে পারে। পরাধীনতার আতঙ্কময় পরিস্থিতিতে যা নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে, স্বাধীন-মুক্ত জীবনেও তা অপরিবর্তনীয়রূপে আঁকড়ে থাকতেই হবে এমন কোন কথা নয়। সুতরাং আজকের পরিবেশ পরিস্থিতির আলোকে সেগুলো পুনমূল্যায়ণ করে দেখতে দোষ কি?”

আরেক স্থানে বলা হয়েছে, “এদেশে বহু স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান সরকারের অর্থানুকূল্যে পরিচালিত হচ্ছে। এমনকি ইউনিভার্সিটিগুলোও। অথচ স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে আমরা কেন পাবো না অর্থনৈতিক এই সুবিধা ? সরকার তার মত চাপিয়ে দেবে এই ভেবে আমরা আমাদের প্রাপ্য নাগরিক অধিকারটুকুর দাবি জানাতেও নারাজ। কেন? ইউনিভার্সিটির শিক্ষা সিলেবাস ও তার প্রশাসনিক নীতিতে কি সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে? আমরা হয়তো তাও জানিনা”।

আমাদের বড়রা পারস্পরিক মতানৈক্যের কারণে ভবিষ্যত প্রজন্মের বিরাট অর্জন ব্যাহত হোক এমন চিন্তা যদি না করে থাকেন তাহলে কওমী সনদের সরকারী স্বীকৃতির বিষয়টি বারবার আলোচনায় এসেও আবার গুটিয়ে যায় কেন? মনে রাখা দরকার, আগেকার মানুষ যতটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডোনেশন করতো বর্তমানে সেই অবস্থা আর নেই; বরং ডোনার ধরতে গিয়ে আলেমসমাজকে এখন অনেক লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়।

অতএব, উলামায়ে কেরামের মাঝে বৃহত্তর ঐক্যের সেতুবন্ধন সৃষ্টি হওয়াই এখন সময়ের অপরিহার্য দাবি। তবেই তারা গৌরবময় এই শিক্ষার চলমান সংকট থেকে ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষা করতে পারবেন। নতুবা এই গুরু দায়িত্বে অবহেলার কারণে গোটা আলেমসমাজকেই শিক্ষার মূলস্রষ্টা আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হতে পারে।

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...