একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা
সংকলনে : মুফতি জিয়াউর রহমান :
এই মুহূর্তে সারা দুনিয়ার মানুষের দুঃখ-দুর্দশা যদি একদিকে রাখা হয় আর রোহিঙ্গা মুসলিম নারী, শিশু, বৃদ্ধ অসহায় নিপীড়িতদের দুঃখ-দুর্দশা একদিকে রাখা হয়, নিঃসন্দেহে রোহিঙ্গা মুসলিমদের দুর্দশার পাল্লাই ভারী হবে৷ টেকনাফ, উখিয়াসহ সীমান্ত এলাকাগুলোর শুষ্ক মৌসুমের শুকনো মাটি আজ নারী-শিশুর চোখের পানিতে কাঁদামাটিতে রূপ নিয়েছে৷
চিত্র-১. মানবতার কলঙ্ক, দুনিয়ার ইতিহাসের সবচে নির্দয়, নিষ্ঠুর জাতি, বন্য হিংস্র জন্তুর চাইতেও বর্বর প্রজাতি, বৌদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠি জীবন্ত জ্বালিয়ে কয়লা বানিয়ে কিংবা জীবন্ত অবস্থায় হাত-পা কেটে, নাড়ি-ভূড়ি বের করে, ভাষায় প্রকাশে অসম্ভব দুনিয়ার যত নির্মম কায়দায় নির্যাতন করে হত্যা করা যায়, সব রকমের নিপীড়ন কায়দা ব্যবহার করে গ্রামের পর গ্রাম পুরুষশূন্য করে দিয়েছে৷ শতশত অসহায় নারী, শিশু কুদরতীভাবে বেঁচে যাওয়া দু-চারজন পুরুষের অধিনে বাংলাদেশে এসে পাড়ি জমিয়েছে৷ শতশত নারী-শিশুদের মাঝে দু-চারজন পুরুষ হয়ত আছে৷ সবাই অভিভাবকশূন্য হয়ে কোনোরকম প্রাণ বাঁচিয়ে এসেছে৷
চিত্র-২. এমনও নারী আছেন, যাদের তিন সন্তান ছিলো৷ পেছনে মানুষখেকো বৌদ্ধ পশুদের আক্রমণের ভয়, দুর্গম পাহাড়ি অপরিচিত পথ, দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ, কী রাত, কী দিন, দিনের পর দিন যায় পেটে দানাপানি নেই, একরকম বেহুঁশ হতবুদ্ধির মতো হয়ে একটু নিরাপদ আশ্রয়ে এসে দেখে কোলের সন্তান থাকলেও অপর দুই সন্তান নেই৷ হারিয়ে এসেছে জনম-দুঃখী মা৷ হয়ত আর কোনোদিন ফিরে পাবে না কলিজার টুকরো সন্তানদের৷ হয়ত মানবরূপী পশুদের আহার হয়েছে নতুবা বন্য হিংস্র পশুদের আহার হয়েছে৷ কিংবা নাফনদীর জলজ প্রাণীর খাবার হয়েছে৷ এমন সর্বহারা মায়ের আহাজারি কেমন হতে পারে? একটু অনুভব করুন৷
চিত্র-৩. একটি আনসার পরিবার৷ ভাই-বোন দুজনই মাদরাসায় পড়ে৷ বাবা প্রবাসী৷ তাদের একটি মেঝেপাকা ঘরে ২৫ জন মুহাজির নারী-শিশু জায়গা দিয়েছে৷ পাহাড়ি এলাকার কনকনে তীব্র শীত মোকাবেলায় একটি কম্বলও নেই তাদের৷ পরিবার থেকে একটি চাটাই দেয়া হয়েছে৷ পাকা মেঝের উপর চাটাই এর উপর শ্রেষ্ঠ উম্মতের সম্মানিতা নারী ও শিশু সদস্যরা মানবেতরভাবে দিনাতিপাত করছে৷ প্রচণ্ড শীতে হাঁপানি রোগ হয়ে গেছে তাদের৷ উপোস করতে করতে কঙ্কালসার হয়ে যাচ্ছে তরতাজা মানুষগুলো৷ শিশুদের অবস্থা তো আরো করুণ!
চিত্র-৪. কিছু আহত নারী-পুরুষ রয়েছে৷ কারো পা ভাঙা, কারো হাত ভাঙা৷ তারা অপরের কাঁধে ভর করে কোনোরকম প্রাণ বাঁচিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়েছে৷ এখনও পর্যন্ত চিকিৎসার অভাবে হাত-পা ভাঙা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে৷ আর্ত চিৎকারে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে আসছে৷ চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না৷
চিত্র-৫. অন্তিম গর্ভবতী কিছু নারী জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন৷ তাদের স্বামীকে মেরে ফেলা হয়েছে৷ নেই চিকিৎসা কিংবা অন্য কোনো সেবা প্রদানের ব্যবস্থা৷ সামনে অন্ধকার দেখছে তারা৷ সারাক্ষণ দুশ্চিন্তা আর অনিশ্চয়তা তাদের গ্রাস করে আছে৷ অথচ এই সময়ে তাদের দরকার ছিলো একটু দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা৷ প্রাপ্য ছিলো একটু পরিচর্যা৷
বর্তমানে সেখানে অবস্থানরত প্রিয় ভাই মাওলানা আহমাদুর হক উমামার মুখ থেকে সেখানকার অবস্থার মৌখিক বিবরণের কিয়দংশ লিখলাম৷ বিবরণ অনেক দীর্ঘ৷ কিন্তু আর হাত এগুচ্ছে না৷