জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) নির্মূল অভিযানে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে সমন্বয় চায় রাশিয়া। একই সঙ্গে দেশটি চায় সিরিয়ায় ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের প্রতি সমর্থন রেখেই এই অভিযান পরিচালিত হোক। আমেরিকার সিবিএস টিভি চ্যানেলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনকে সামনে রেখে বর্তমানে আমেরিকার নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, আসাদের প্রতি আপাত সমর্থন ও আইএসবিরোধী অভিযানে রাশিয়ার শক্ত অবস্থান দুটি আদায়ই তার এই সফরের মূল উদ্দেশ্য। সংবাদসূত্র : বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস
পুতিন বলেন, ‘সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ যেহেতু সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, সে কারণে তিনি আন্তর্জাতিক সমর্থন পাওয়ার অধিকার রাখেন। আসাদের প্রতি রাশিয়ার সমর্থন মূলত জাতিসংঘ সনদ মেনেই; কারণ আমরা শুধুমাত্র সিরিয়ার বৈধ সরকারকে সমর্থন দিচ্ছি।’ পুতিন জানান, সিরিয়া সরকারকে অস্ত্র সরবরাহ, সামরিক সদস্যদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ এবং জনগণের জন্য মানবিক ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে মস্কো। আইএস জঙ্গি নির্মূলের ব্যাপারে তার পরিকল্পনা নিয়ে পুতিন বলেন, ‘আমরা এই অঞ্চলের দেশগুলোর সহায়তা নিয়ে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা এক ধরনের সমন্বিত কাঠামো তৈরির চেষ্টা করছি।’ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামষ্টিক তৎপরতার জন্য একটি সাধারণ মঞ্চকে স্বাগত জানাই।’ পুতিনের মতে, তিনি ব্যক্তিগতভাবে সৌদি আরব ও জর্ডানের বাদশাহর সঙ্গে তার পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন এবং বিষয়টি তিনি আমেরিকাকেও অবহিত করেছেন। এ ছাড়া আইএসবিরোধী অভিযানে দ্রুত সক্রিয়তা বাড়ালেও তার তথ্য, সিরিয়ায় মস্কোর স্থল অভিযান চালানোর কোনো পরিকল্পনা ‘এখনই’ নেই। একই সঙ্গে আমেরিকা সিরিয়ার বিদ্রোহীদের যে সমর্থন দিচ্ছে, সেটা অবৈধ এবং অকার্যকর বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমার মতে, অবৈধ কোনো সংগঠনকে সামরিক সমর্থন দেয়া আধুনিক আন্তর্জাতিক আইনের নীতিমালা এবং জাতিসংঘ সনদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’ ঠিক একই দিন আমেরিকার সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, ‘আইএস জঙ্গিদের পরাজিত করতে হলে দামেস্কর (আসাদ) সরকারকে দুর্বল করা যাবে না।’
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে পুতিন বর্তমানে নিউইয়র্কে রয়েছেন। ১০ বছর পর তিনি সোমবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দিয়েছেন। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে বক্তৃতা দেয়ার পর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে তার বৈঠকে বসার কথাও রয়েছে। সিরিয়া ইস্যুই বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয় হবে বলে ক্রেমলিনের প্রেস সেক্রেটারি জানিয়েছেন। তবে সময় হলে কেবলমাত্র ইউক্রেন নিয়ে আলাচনা হবে।
এদিকে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও জাতিসংঘের ভাষণে আসাদের বিষয়ে নমনীয় মনোভাব দেখাবেন বলে ধারণা দিয়েছে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো। রোববার নিউইয়র্কে নেমেই তিনি জানিয়েছেন, ‘ক্রান্তিকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে আসাদ এখন দায়িত্ব পালন করতে পারেন।’ তার দলে রয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোঁয়া ওঁলাদও। এর আগে চলতি সপ্তাহের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপও ঠিক একই মন্তব্য করেন। তবে তারা প্রত্যেকে দাবি করেছেন, যদি সিরিয়ায় বিবদমান দুইপক্ষের মধ্যে কোনো শান্তিচুক্তি হয়, তবে আসাদের ক্ষমতাচ্যুতির শর্ত সেখানে থাকতে হবে। উল্লেখ্য, মস্কো সম্প্রতি সিরিয়ায় তাদের সামরিক উপস্থিতি আরো জোরদার করেছে। তারা ট্যাঙ্ক ও যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে। তারা সেখানে আইএস ও অন্যান্য বিদোহী গ্রুপের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে, আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার বরাতে এমন খবর বেরিয়েছে।
সিরিয়ায় ইসরাইলের বিমান হামলা
সিরিয়ার অন্তত দুটি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। ইসরাইলের দখলকৃত গোলান মালভূমিতে সিরিয়া থেকে আসা রকেট হামলার জবাবে ওই হামলা পরিচালনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র পিটার লার্নার টুইটার বার্তায় বলেছেন, সিরিয়া থেকে গত শনিবার ও রোববার সন্ধ্যায় যথাক্রমে দু্টি রকেট ছোড়া হয়। তবে এতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বিবৃতিতে সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে এই হামলার জন্য দায়ী করে বলা হয়েছে, ‘ইসরাইলি অঞ্চলে যে কোনো হামলার সমুচিত জবাব দেয়া হবে।’
গোলানের কুইনেত্রা এলাকায় আসাদ সরকারের অনুগত সিরিয়ান রেভুলিউশনারি কমান্ড কাউন্সিল (আরসিসি) সশস্ত্র কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। সংগঠনটির এক মুখপাত্র আবু আলি আল-জাওলানি জানান, সিরীয় সরকারের অনুগত সেনা স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। গত বছর আল-কায়েদার প্রতি অনুগত আল-নুসরা ফ্রন্ট ইসরাইল সীমান্ত থেকে আসাদ বাহিনীকে হটিয়ে দেয়। সম্প্রতি ওই এলাকা পুনর্দখল করতে অভিযান জোরদার করেছে সিরিয়ার সেনাবাহিনী।
সুত্র: যায়যায়দিন