শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সকাল ৭:০২
Home / অনুসন্ধান / বাংলাদেশে ইসলামি রাজনীতি ব্যর্থ কেনো?

বাংলাদেশে ইসলামি রাজনীতি ব্যর্থ কেনো?

খতিব তাজুল ইসলাম:
14292386_10210854464503405_7983048058426775689_nকোন কিছু টেকসই হতে হলে তার নির্দিষ্ট একটা কাঠামো থাকে। এর বাইরে গেলে টেকসই হয় না। রড-সিমেন্টের দালান আর ব্রিজ তৈরিতে যদি রডের বদলে বাঁশ ব্যবহার করা হয়, তখন টেকসই কাকে বলে তা হয়তো আপনাকে আর বুঝিয়ে বলতে হবে না। ঠিক তেমনি কদম কাঁঠ দিয়ে যখন নৌকা তৈরি করে পানিতে ভাসানো হবে, তখন তার স্থায়িত্ব নিয়ে আশংকা দেখা দিবেই। নিয়ম মেনে সিমেন্ট আর বালির মিশ্রণ না হলে সমস্যা আছে। মোটামুটি যে কোন জিনিস টেকসই হতে হলে ভাল মজবুত জিনিস যেমন থাকতে হবে, তেমনি থাকতে হবে সঠিক এবং মানানসই।
বাংলাদেশের বর্তমান স্কুল শিক্ষাব্যবস্থা পুরোটাই ভঙ্গুর। নৈতিকতা বর্জিত বাস্তবতাহীন জাতির আক্বীদা বিশ্বাসের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ একটি দুর্বল অকার্যকর শিক্ষাব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। ০.১% গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রে ৯৯.৯৯% মানুষের মতামত আশা আকাঙ্খা-বিরোধী এমন শিক্ষাব্যস্থা কখনো সফল হয় না বিশৃংখলা সৃষ্টি ছাড়া। তারই অশুভ পরিণতি আমরা পদে পদে দেখতে পাচ্ছি। সাংসদ থেকে স্থানীয় মেম্বার, শিক্ষক থেকে গবেষক, বিচারক থেকে চিকিৎসক, পুলিশ থেকে র‌্যাব সবখানে সমস্যা।সততা ন্যায় পরাণয়তা যোগ্যতা দেশপ্রেম জাতিপ্রেমের প্রচণ্ড অভাব। স্বাধীনতার চেতনার কথা বলে যদি অহরহ মানুষ খুন আর গুম করা হতে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে এখানে তাদের উদ্দেশ্য অসৎ। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে জনগণের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি মোটেই সুখকর নয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সংখ্যালঘুদেরকে সংখ্যাগুরুর উপর চড়াও হওয়ার পথ সুগম করে দেয়ার মধ্যে ভয়াবহ আগামির ইংগিত বহন করছে।
সচেতন নাগরিক বৃন্দ এবং দেশপ্রেমিক সকলের কাছে আমাদের আহবান থাকবে, যে করেই হউক জাতীয় অখণ্ডতার পক্ষে বিচ্ছিন্নতার বিপক্ষে অবস্থান নিতে হবে। অহেতুক রাজনৈতিক কায়দায় ফায়দা হাসিলের পথ পরিহার করে কমন ইস্যুতে এক্যবদ্ধ হতেহবে। দেশের স্পর্শকাতর বিষয়ে সকলে সংবেদনশীল হতে হবে। দেশ বাঁচলে, জাতি রক্ষাপেলে সময় সুযোগ সবই আসবে। আত্মকলহ আর হানাহানি যদি চলতে থাকে তাহলে একদিন দেখবো কারো পায়ের নিচেই আর মাটি অবশিষ্ট নেই। অতএব ধৈর্য্য এবং হেকমতের সাথে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশের শতকরা ৯৫% শিক্ষার্থী আসে স্কুল কলেজ থেকে। ৩% আলিয়া মাদরাসা থেকে। মাত্র ২% কওমি মাদরাসা থেকে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক রাজনীতিতে জড়িত ৩০-৪০% শিক্ষার্থী। অনেকে রাজনীতি করেন না। আলিয়া মাদরাসার পুরো প্রডাকশনের ৬০% যেতো জামাত শিবিরের দলে। বাকি ৪০% তাদের আসতো স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। অবশ্য বর্তমানে তাদের সেই অবস্থান এখন আর নেই। তাদের সেই জায়গাটা এখন চরমোনাইরা দখল করে নিচ্ছেন। বলা যায় গোটা জাতির ৯৫% শিক্ষার্থীদের মধ্যথেকে ৪০% বর্তমানে আওয়ামীলীগ বিএনপি জাতীয় পার্টির অধীনে।
অপরদিকে গোটা জাতির ২% কওমি মাদরাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আছে ৫০’র কাছাকাছি দল। তবে উল্লেখ্যযোগ্য দল আছে ডজনের মত। মাত্র ২% শিক্ষার্থীর মাঝে মাত্র ৩০-৪০% যারা ইসলামি রাজনীতিতে জড়িত, পুরো জাতির সামনে এই সংখ্যা ০.১% নিচে হবে। এবার ভাবুন কওমিকেন্দ্রিক ইসলামি রাজনীতির অবস্থান কোথায়?
ইসলামি রাজনীতি যারা করেন, তাদের ০.০১%’র রাষ্ট্রীয় শিক্ষার সাথে কোন সম্পর্ক নেই। এটা হলো একটা মারাত্মক ফারাক। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের কাছে ইসলামী রাজনীতির আবেদন পৌছানোর মতো কোন কেরেশমাটিক দক্ষতা যোগ্যতা বা প্রভাব আছে বলে আমাদের নজরে পড়ছে না। বরং উল্টো প্রভাবিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। কারণ রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের অনেক বিষয়ে তাদের কাছে গিয়ে ধর্ণা দিতে হয়। এভাবে একটা রাজনীতি বা আদর্শকে সফলাতর মুখ দেখানো কিভাবে সম্ভব? বস্তুতঃ ইসলামি রাজনীতির মূল চালিকাশক্তি যোগ্যতা এবং দক্ষতাকে পাশ কাটিয়ে আমরা ইতিহাসের গান গেয়ে পার পেতে চাইছি । কিন্তু তা আদৌ সম্ভব নয়।
ইসলামি রাজনীতির আসল উদ্দেশ্য কি?
ইসলামি রাজনীতির উদ্দেশ্য যদি হয় মাদরাসাগুলোকে টিকিয়ে রাখা, নামাজ রোজার প্রচলন এবং বিস্তার, ইবাদত বন্দেগীর শিক্ষাগুলো আম করা, তাহলে তা ঠিকই চলছে। তবে নির্দিষ্ট একটা বলয়ের ভিতর। যারা দেশকে রুল করে, জাতিকে কান ধরে ঘুরায়, তারা থাকে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। নামাজে মুসল্লিদের অভাব হয় না। তেমনি গানের আসরে জোয়ার আসরে মানুষের কমতি নেই। খুনের উন্মাতালতায় কেউ নাচছে অথচ সত্য কথা বলার কারো সাহস নেই। আদর্শিক বৈকল্য থেকে জাতিকে বের করে আনার মতো পলিসি ইসলামি রাজনীতিতে অনুপস্থিত। পদ ও বৈশ্বিক লোভ পরাজিত মানসিকতা সর্বত্র প্রাধান্য পাচ্ছে। একজন মানুষ যখন তার চারপাশের সামাজে নিজেকে বন্দী হিসাবে আবিষ্কার করে অর্থাৎ সীমাবদ্ধতা যখন দেখতে পায়, তখন অসহায়ত্ব এবং নিরাশা পেয়ে বসে তাকে। এফেক্টিভ রাজনীতি করতে হলে সম-সাময়িক সমাজকে পড়া, অনুধাবন করা এবং তার সমাধান করার মতো যোগ্যতা ও দক্ষতা আগে অর্জন করতে হবে। ৯৫% এর ভিতর ঈমানী চেতনা জাগাতে হলে তাদের সাথে মেলামিশা করার এবং কাছে যাওয়ার মতো পরিবেশ তৈরির বিকল্প নেই।
উন্নত বিশ্বের নোংরামি বেহায়াপনা মদ জোয়াই কেবল আমাদের নজর কাড়ে। আমাদের হাজার হাজার উলামা বুদ্ধীজীবি মুহাদ্দিস মুফাক্কিরগণ হরহামেশা এই দেশগুলো ভিজিট করছেন।কিন্তু তারা কিসের নেশায় কিসের আশায় আসা যাওয়া করেন আমার বোধগম্য নয়।
আল্লামা ইকবাল রহ. বলেন:
‘পাশ্চাত্যের যে উন্নতি-অগ্রগতি ও প্রভাব-প্রতিপত্তি আমরা দেখছি, তা বাদ্যযন্ত্র এবং নগ্ন মহিলাদের নৃত্যের কারণে অর্জিত হয়নি। বরং তারা তা লাভ করেছে জ্ঞান-বিজ্ঞান নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টা তদবিরের মাধ্যমে। জ্ঞান সাধনার আগুনের মাধ্যমেই তাদের উন্নতির প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত হয়েছে। নির্দিষ্ট আকারের পোশাকে (শার্ট-প্যান্ট) জ্ঞান-বিজ্ঞান নেই। জ্ঞান-বিজ্ঞান তো চেষ্টা সাধনা করে অর্জন করার জিনিস। জুব্বা-পাগড়ি আধুনিক জ্ঞান–বিজ্ঞানের পথে প্রতিবন্ধক নয়।’
—————————–
অন্ন বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা এবং চিকিৎসা; এই পাচঁটি মৌলিক মানবাধিকার প্রথমে তারা প্রতিষ্ঠা করছে নিজেদের সামাজিক জীবনে। অনেকে ভাবেন ‘ইউরোপ-আমেরিকায় যা মন চায় তাই করা যায়!’ কথাটা সম্পুর্ণ ভুল। তারা যেভাবে রাষ্ট্রীয় কাঠামো গড়ে তুলেছে এর বাইরে যাওয়ার কোন শক্তি কারো নেই। সামান্য গাড়ি পার্কিং-এর জন্য যে রুল রেগুলেশন রয়েছে তা দেখলে এশিয়ার দেশগুলো পাগল হয়ে যাবে। ফ্রান্সের রাস্তা পারাপারে পথচারিরা আইন লঙ্গন করলে জরিমানা গুনতে হয় অন দ্য স্পট। থুথু ফেলা থেকে শুরু করে ময়লা ফেলার বিষয়ে রয়েছে কঠোর আইন। বাসে ট্রেনে সাইকেল চালনায় নিয়ম কানুন আর আইন দেখে আপনি হয়রান হবেন। প্রতিটি মানুষ আইনের ভিতর হাত পা বাঁধা। যা কিছু করা হয়েছে জনস্বার্থে নাগরিকের সুবিধার্থে।
এখানে কোন গডফাদার বা লোকাল মাস্তান নেই। সকলই আইনের চোখে সমান। চাঁদাবাজি সামাজিক গুণ্ডামি কী জিনিস, ইউরোপ-আমেরিকার লোকগুলোর অজানা। স্কুল শিশুদের ছোট বয়সে হাতে কলমে রাস্তার নিয়ম কানুন শিখিয়ে তুলে। অফিস আদালতে স্কুলে ঘরে বাইরে কে কী আচরণ করবে, সবই তারা শিখিয়ে দেয়। আমাদের চোখে পড়ে কেবল গলির কোণায় কোণায় মদের বারগুলো। কিন্তু দেখি না সযত্বে দাঁড়িয়ে থাকা লাইব্রেরী, কমিউনিটি সার্ভিসের অফিসগুলো। প্রতিটি জনপদের গাছ গাছালি স্থানীয় কাউন্সিলের খাতায় লিস্টেড। নিজের ঘরের সামনের পিছনের গাছ কাটা তো দূরে থাক, ডাল কাটতে হলে আগাম পারমিশন নিয়ে আসতে হয়। ইচ্ছামতো বাড়ি করবেন অন্যকে খাটো করে, তার কল্পনাই কেউ করতে পারে না।
প্রতিটি জিনিস সুবিন্যস্ত সুশৃংখল। ঘরের বাহিরে সাউন্ড যেতে হলেও আইন আছে। গাড়ির হর্ন কী জিনিস মনেই থাকে না। হর্ন বাজানো একধরনের লজ্জা। কোনটা ছেড়ে কোটা ধরবো আর বলবো। তারা কি এমনিতেই উন্নত হয়েগেছ; বাতাসের চাপে আগুনের উত্তাপে? ইউরোপের সামাজিক আইন কানুন দেখলে এশিয়ার মানুষগুলো বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষগুলো হার্ট এটাক হয়ে মারা যাবে মনে হয়। আইনের কথা উঠলেই লোকগুলো লাফিয়ে উঠে। যার আইন করে তারাও জনবান্ধব নয়। মতলব বা্ন্ধব আইন করে। যাতে তার নির্দিষ্ট স্বার্থ হাসিল হয়।
শত আফসোস আমাদের ইসলামি রাজনীতিবিদদের গতিবিধি নিয়ে। নেতৃত্ব লাভের সখ আছে লোভ আছে আখাংকা আছে কিন্তু নেই শিখার ইচ্ছা, মানার মানসিকতা। এভাবে চলে? এভাবে কিছু অর্জন হয়? আমরা ইসলাম যায় ইসলাম যায় বলে চিৎকার করছি। কিন্তু সারা দেশে মানুষ গাড়ি এক্সিডেন্ট করে মারা গেলে বা পঙ্গু হলে আমাদের ইসলামের কিছু যায় আসে না! এটা কোন ইসলাম? এটা কি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর সেই ইসলাম, যা মানবতার জন্য কাঁদতো?
আমরা কবে আর সামাজিক রাজনীতিতে ফিরে আসবো? কখন মানুষের মানবিক অধিকারের জন্য লড়াই শুরু করে তা কায়েম করবো, তারই প্রতীক্ষায় আছে নীরিহ উম্মাহ! আর এমন যদি হয়, তখনই কেবল বলা যাবে, ইসলামি রাজনীতি বাংলাদেশে সফল হতে চলেছে। তার আগেতো ব্যর্থতার গ্লানি বয়ে বেড়ানো ছাড়া আর কিছুই করার আছে বলে আমার অন্তত মনে হচ্ছে না!

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...