তানজিল আমির:
বেফাকিুল মাদারিসিল আরাবিয়ার সিনিয়র সহ-সভাপতি ও দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় শীর্ষ বরেণ্য আলেম, বয়বৃদ্ধ্য হাদীস বিশারদ, জামিয়া শারইয়্যা মালিবাগের মুহতামিম, শায়খুল হাদীস আল্লামা আশরাফ আলী দা:বা: বলেছেন,
“কওমী মাদরাসাগুলোর স্বকীয়তা রক্ষার জন্যই স্বীকৃতি দরকার। একটি কঠিন বাস্তবতা হলো,আমাদের অনেক মেধাবী ছাত্র আলিয়ায় পরিক্ষা দিয়ে পরবর্তীতে কলেজে ভর্তি হচ্ছে। এভাবে কওমী মাদরাসার মেধাগুলো বাহিরে চলে যাচ্ছে। আমরা তাদের রাখতেও পারিনা, কিছু বলতেও পারিনা। কারণ তাদের তো সার্টিফিকেট দরকার। পাকিস্তানের আলেমসমাজ বহুপূর্বেই স্বীকৃতি প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছেন। পাকিস্তানে মাদরাসার ছাত্ররা সমাজের মূলধারায় কাজ করছে স্বীকৃতির কারণেই। এ দিক দিয়ে আমরা বহু পিছনে রয়েছি।
মাওলানা ইউসুফ বিন্নুরী, মাওলানা সলিমুল্লাহ খানের মতো বড় বড় আলেমরা স্বীকৃতী গ্রহণ করতে পারলে আমাদের অসুবিধা কোথায়? আমরা কি তাদের চেয়ে বেশী বুঝে ফেলেছি?
২০১৩ সনে স্বীকৃতি বিষয়ে হাটহাজারী মাদরাসায় যে মিটিং হয়েছিলো,অসুস্থতার কারণে আমি স্বশরীরে উপস্থিত থাকতে পারিনি। তবে চিঠির মাধ্যমে আমি আমার মত জানিয়েছি। আল্লামা আহমদ শফী দা.বা. কে আমি বলেছি,সরকার যদি আমাদের সকল শর্তপূরণ করে, তাহলে আমার খেয়াল হলো স্বীকৃতি গ্রহণে অস্বীকৃতি না জানানো। ২০১৩ সনে তো সরকার আমাদের সকল দাবী মেনেই নিয়েছিলো,শুধু এতটুকু বলেছে,কমিটিতে পর্যবেক্ষক হিসেবে একজন শুধু সচিব থাকবে,তবে তার সিদ্বান্ত বা মত দেওয়ার কোন অধিকার থাকবেনা। তবু কেন যে তা গ্রহণ করা হলোনা, আমি বুঝিনা। স্বীকৃতি নিলে অনেকে স্বকীয়তা হারানোর আশংকা করে, তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলবো,আমরা কি বিনাশর্তে স্বীকৃতি নিবো? বিয়ে করলে যেমন তালাকও দেওয়া যায়, আমাদের শর্তভঙ্গ হলে আমরাও তা প্রত্যাখান করবো।আমাদের মাদরাসা কমিটিগুলোতে কোন সরকারি লোক থাকতে পারবেনা। আমরা এমপিও ভুক্ত হবোনা। আমার এ সরল কথাকে অনেকে অপব্যাখ্যা করেছে। তারা প্রচার করেছে,অামি নাকি আওয়ামীলীগের লোক।অাল্লাহ সাক্ষী,কওমী মাদরাসার স্বকীয়তা রক্ষার প্রয়োজনেই অামি স্বীকৃতি চাচ্ছি। এই স্বীকৃতির দাবী নিয়ে শাইখুল হাদিস র. তিনদিন মুক্তাঙ্গনে শুয়ে ছিলেন। জামায়াতের ষড়যন্ত্রে তখন তা অালোর মুখ দেখেনি। অামরা কি তার এ কষ্ট ভূলে যাবো? স্বীকৃতির দাবী অামাদের সম্মিলিত পুরোন দাবী। হাটহাজারীর হুজুরও স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তা অামাদের বলেছিলেন।আমি নিজের কানে শোনেছি, হাটহাজারীর হুজুর বলেছিলেন, স্বীকৃতি না থাকায় আমাদের খেদমতের পরিধি খুবই সংক্ষীর্ণ। যদি সরকারী স্বীকৃতি পাওয়া যেত,তাহলে আমাদের খেদমতের পরিধি আরো বিস্তৃত হতো। এমনকি হুজুরকে যখন বেফাকের সভাপতি হওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছিলো,হুজুর রাজি হচ্ছিলেননা। আমি হাটহাজারী গিয়ে হুজুরকে বলেছিলাম, আপনি যে স্বীকৃতির কথা বলেছিলেন, বেফাকের সভাপতি হলে তা বাস্তবায়ন সহজ হবে।
৫/৯/১৬ সোমবার, জামিয়া শ্যরইয়াহ মালিবাগে বোখারীর দরস প্রদানের সময় দাওরায়ে হাদীসের জামাতে ছাত্রদের উদ্দেশ্য কওমী মাদরাসা সনদের সরকারী স্বীকৃতি প্রসঙ্গে হয়রতের মূলবান অভিমত।