শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ২:৪২
Home / আকাবির-আসলাফ / প্রথম আকাশে ওড়েন মুসলমান বিজ্ঞানী আব্বাস ইবনে ফিরনাস

প্রথম আকাশে ওড়েন মুসলমান বিজ্ঞানী আব্বাস ইবনে ফিরনাস

abbas-ibn-firnasমানুষ যেদিন থেকে হাঁটতে শেখে ঠিক সেদিন থেকেই তার উড়ে বেড়াবার স্বপ্ন। মানুষের আকাশে উড়া নিয়ে ইতিহাসে অনেক ঘটনা আছে, আছে রূপকথার ছড়াছড়ি । আইকারাসের কথা বলা হয়, যিনি নাকি সূর্যের কাছাকাছি উড়তে থাকেন, কিন্তু তার দেহে লাগানো মোম গলে গিয়ে সেই যে নিম্মমুখে ধাবিত হন, যার পরিণতি নাকি ছিল সলিল সমাধি! ৫ম খ্রীস্টপুর্বের এক চীনা ব্যক্তির কথা ইতিহাসে আছে, যিনি আকাশে ঘুড়ি উড়ানোর সফল প্রয়াস গ্রহন করেছিলেন, কিন্তু মানুষ হিসেবে প্রথম আকাশে উড়ার ইতিহাসসৃষ্টিকারী ব্যক্তি হচ্ছেন স্পেনের কর্ডোভার একজন মুসলমান ব্যক্তি, যার নাম আব্বাস ইবনে ফিরনাস। তিনি ইজন-রান্ড ওন্ডা আল-আন্দালুস ( যা বর্তমানের স্পেনের রোন্ডা) তে জন্মগ্রহণ করেন, কিন্তু তিনি বাস করতেন কর্ডোভাতে, যেটি ছিল তৎকালীন মুসলমানদের জ্ঞান চর্চার পীঠস্থান। তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এক মহতী ব্যক্তি ছিলেন- একাধারে তিনি ছিলেন আবিষ্কারক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, আরবী কবি।

প্রচলিত উপাখ্যান থেকে জানা যায় ইবনে ফিরনাস ৮৫২ সালে আরমেন ফিরম্যানের চিন্তাধারায় প্রভাবিত হন। আরমেন ফিরম্যান বিজ্ঞানী না হয়েও প্রকৃতিকে নিকট থেকে পর্যবেক্ষণ করে কাঠকে ব্যবহার করে রড আকৃতির আড় দিয়ে উপরে রেশমকাপড় জড়িয়ে একটি উড্ড্য়ন যন্ত্র আবিষ্কার করেন। এই যন্ত্র নিয়ে আরমেন ফিরম্যান কর্ডোভার মসজিদের মিনারে উঠে যন্ত্রসংযোজিত হয়ে লাফ দেন। তিনি উড়তে পারেননি, নিচে পড়তে থাকেন, কিন্তু সিল্ক বস্ত্রটি ফুলে ফেপে উঠায় তার অবতরনের গতি কমে যায়, ফলে তিনি সামান্য আঘাত প্রাপ্ত হলেও মৃত্যুবরণ করেননি। এটিই সম্ভবত পৃথিবীর প্রথম প্যারাসুট নিয়ে লাফ দেওয়া।

ইবনে ফিরনাস তখন ভিড়ের মধ্যে এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করছিলেন এবং এই ফলাফলে মুগ্ধ হয়েছিলেন। যদিও এই প্রয়াস ছিল অনেকটা স্থুলবুদ্ধিজাত এবং ঠিক নিখাদ বিজ্ঞানসম্মত নয়, কিন্তু এটি ছিল ধারণার একটি রত্ন, যা নিয়ে পরবর্তীতে আরও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এই ধারণা থেকেই ইবনে ফিরনাস এর মধ্যে উড্ডয়ণ এর কৌশলটি আরও পোক্ত হতে থাকে। আরমেন ফিরনাসের প্রয়াসের ২৩ বছর পর ৮৭৫ খ্রীস্টাব্দে, ইবনে ফিরনাস প্রকৃতির উপর গভীর অধ্যায়ন করে নিজস্ব ডিজাইনের একটি উড্ডয়ন যন্ত্র আবিষ্কার করেন, তিনি এক জোড়া কাঠ আর রেশম কাপড় নিয়ে সেগুলো সুই সুতা দিয়ে সেলাই করে পাখা তৈরী করেন। পরে তিনি জাবাল আল-আরস পর্বতের শৃঙ্গ থেকে ঝাঁপ দেন এবং বেশ কিছু সময় উড়তে থাকেন, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ননা মতে তিনি ১০ মিনিট উড়তে পেরেছিলেন। ইবনে ফারনিস উড্ডয়নের কৌশলের দিকেই বেশি মনোযোগ নিবদ্ধ করেন, কিন্তু অবরনের কৌশলের দিকে তার মনোযোগ ছিল না। তিনি পৃথিবীর দিকে অবতরণ করতে থাকলেও গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি এবং প্রবল গতিতে নামতে গিয়ে ভ’পৃষ্ঠের সাথে প্রবলভাবে আঘাত প্রাপ্ত হন। এই ঘটনার পরও ইবনে ফিরনাস আরও ১২ বছর জীবিত ছিলেন। সেই সময়ে তার নকশায় ঠিক কী ভুল হয়েছিল তা সনাক্তকরণে তিনি মনোযোগ নিবদ্ধ করেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন তার নকশায় অবতরণের সময় গতি কমানোর কোন যান্ত্রিক পদ্ধতি সংযুক্ত ছিল না। একটি পাখি লেজ এবং ডানাগুলোকে সমন্বিতভাবে কার্যক্ষম রাখে, ফলে এটি ভূমি স্পর্শ করার আগে আকাশে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে থাকে। ইবনে ফিরনাস উপলব্ধি করলেন যে, তিনি তার উড্ডয়ন যন্ত্রে কোন লেজ রাখেননি।

ইবনে ফিরনাস তার জীবদ্দশায় আর আকাশ ভ্রমন করতে পারেননি। তবে এই ঘটনার কয়েক শতক পর ১৬৩০ – ১৬৩২ সালের দিকে এক অটোম্যান তুর্ক আকাশে উড়ার আরেকটি চেষ্টা নেন এবং বসফরাস এর উপর দিয়ে উড়তে থাকেন।

যাহোক ইবনে ফিরনাস কেবল আকাশে উড়ার স্বপ্নই দেখেননি এবং তা রুপায়নে সচেষ্ট হননি, তিনি ঘূর্ণনক্ষম গ্রহ নিয়ে যান্ত্রিক প্লানেটেরিয়ামও তৈরী করেন। এর বাইরে তিনি যান্ত্রিক বস্তু, সময় যন্ত্র নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। রতœ, স্ফটিক নিয়েও তার কৌতুহল ছিল, বালি গলিয়ে আন্দালুসিয়ার বিশেষ পানীয় গ্লাস তিনি উপহার দেন। গ্লাস থেকে ম্যাগনিয়াইং গ্লাস ও লেন্স নিয়েও তিনি তার পরীক্ষা ইতিহাসে অমর হয়ে আছে।

Working Group for Planetary System Nomenclature (IAU/WGPSN) ১৯৭৬ সালে ইবনে ফিরনাসের অসামান্য বৈজ্ঞানিক গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ চন্দ্রের একটি ক্রেট বা গর্তের নামকরণ করে ইবনে ফারনেস।

উপসংহারে এই কথা বলা যায়, আধুনিক বিমান যুগে যখন মানুষ দুর থেকে দুরান্তে যাচ্ছ, তখন বলতে হয় ইবনে ফিরনাসের ক্ষুদ্র প্রয়াসের একটি ধারবাহকিতার ফলেই তা সম্ভব হচ্ছে।

সহস্র বছর আগের সেই মহতী মানুষকে আজ উচিত সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করা।

( মুহাম্মদ শামীম আখতার অনুদিত)

সৌজন্যে : বাংলাদেশ মুভস.কম

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...