মুফতি মুহাম্মাদ মুনজুর হোসাইন : আল্লাহ তায়ালা মানুষকে পরস্পরের মুখাপেক্ষী করে সৃষ্টি করেছেন। একজনকে ধনী তো আরেকজনকে গরিব। একজন সহায় তো আরেকজনকে অসহায়। আল্লাহ তায়ালা ধনী ও সহায় বান্দাকে বলে দিয়েছেন গরিব অসহায় বান্দাকে সাহায্য করো। আর এভাবেই আল্লাহ বান্দাকে পরীক্ষা করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তিনি বড়ই মহান ও শ্রেষ্ঠ যাঁর হাতে রয়েছে (সৃষ্টিলোকের) রাজত্ব। আর তিনি প্রতিটি জিনিসের ওপর শক্তিমান। তিনি জীবন ও মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমাদের পরীক্ষা করতে পারেন যে, তোমাদের মধ্যে আমলের দিক দিয়ে কে বেশি ভালো। তিনি মহা শক্তিশালী ও ক্ষমাশীল।’ (সূরা আল মুলক, ৬৭:১-২)।
আমাদের চারপাশে যে অসহায় সৃষ্টি রয়েছে, তাদের সাহায্য করা আমাদের একান্ত কর্তব্য। অন্যকে সাহায্য করার প্রতিদান সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের দানের দৃষ্টান্ত হলো যেমন একটি শস্য বীজ বপন করা হলো এবং তা থেকে সাতটি শিষ উৎপন্ন হয়েছে আর প্রত্যেক শিষে রয়েছে ১০০টি শস্যকণা। এমনিভাবে আল্লাহ যাকে চান তাকে প্রাচুর্য দান করেন। তিনি মুক্তহস্ত ও সর্বজ্ঞ।’ (সূরা বাকারাহ : ২:২৬১)। জলিলে কদর সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘বান্দা যতক্ষণ তার ভাইকে সাহায্যে করবে, আল্লাহ ততক্ষণ তাকে সাহায্য করতে থাকবেন।’ সাহয্য বলতে অনেকে শুধু টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করা বুঝেন। সাহায্য অনেকভাবেই হতে পারে। কথা দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে, শ্রম দিয়ে, সঙ্গে থেকেও সাহায্য করা যায়। সবচেয়ে বড় সাহায্য হলো মানবসেবা। মানবসেবার চেয়ে বড় কোনো সাহায্য নেই। সাধ্য মতো মানবসেবায় নিজেকে উৎসর্গ করা ধর্ম ও মানবিকতার দৃষ্টিতে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ কাজ। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানবসেবায় তার ভাইয়ের সঙ্গে চলে, ওই কাজ না করা পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা ৭৫ হাজার ফেরেশতা দিয়ে তাকে ছায়া দান করেন। তারা তার জন্য রহমত ও মাগফেরাতের দোয়া করতে থাকে। তার প্রত্যেক কদমে একটি গোনাহ মাফ হয় এবং একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।’ (আত তারগিব)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের সেবা ও উপকারের জন্য আল্লাহ কিছু নিবেদিতপ্রাণ সৃষ্টি করেছেন। মানুষ বিপদে পড়লে তাদের শরণাপন্ন হয়। এসব রহম দিল ব্যক্তি আল্লাহর শাস্তি থেকে নিরাপদ থাকবে।’ (তাবরানি, আত তারগিব)। হজরত আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি দয়া করো। আকাশের মালিক আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (মুসতাদরাক আলাস সহিহাইন ও মুসান্নিফ আবি শায়বাহ)। হজরত উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই! আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন, যে তার বান্দাদের প্রতি দয়া করে।’ (বোখারি ও মুসলিম)।
হে আল্লাহর বান্দা নবীর উম্মত! আল্লাহ তায়ালা আপনাকে শ্রেষ্ঠ জাতির সম্মান দিয়েছেন মানুষের উপকার করার জন্য। আল্লাহ বলেন, ‘কুনতুম খায়রা উম্মাতিন’ তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত, ‘উখরিজাত লিন্নাস’ তোমাদের বের করা হয়েছে মানুষের কল্যাণ ও সংস্কারের জন্য। ‘তামুরুনা বিল মারুফ’ তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে, ‘ওয়া তানহাওনা আনিল মুনকার’ অসৎ কাজের নিষেধ করবে। ‘ওয়া তুমিনুনা বিল্লাহ’ এবং আল্লাহর ওপর ঈমান রাখবে। (সূরা আলে ইমরান : ৩ : ১১০)। আপনি মানুষকে অসহায় বিপদগ্রস্ত দেখে পাশ কেটে চলে যাবেন না। হজরত জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহও তার প্রতি দয়া করেন না।’ (বোখারি ও মুসলিম)। তিনি (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে দয়া করে না, সে দয়া পায় না।’ (বোখারি)।
বক্তা : খতিব, বায়তুত দাউদ জামে মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা
সূত্র : আলোকিত বাংলাদেশ