মহিউদ্দীন ক্বাসেমী:
একটি দালিক পর্যালোচনা।
আমাদের দেশে ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দুআ করা হয়। একপক্ষ এটাকে সরাসরি বিদআত আখ্যায়িত করছে। অন্যপক্ষ সুন্নত বলছে। এবং লাগাতার দুআ করেই যাচ্ছে। তখনও কি সুন্নত থাকবে? সুন্নাহর আলোকে বিষয়টি পর্যালোচনা করা দরকার। আলোচনাটি একটু দীর্ঘ হয়ে গেছে। ধৈর্যসহ পড়ার অনুরোধ রইল। পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি হওয়ার ভয়ে কিছু হাদিস দিইনি।
দুআর গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য
আল্লাহ তাআর কাছে দুআ করা কুরআন-হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। বান্দা আল্লাহর কাছে দুআ করুকÑ এটা আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় বিষয়। এজন্যে প্রায় ইবাদতের মধ্যে দুআ রয়েছে। বরং ইবাদতের উদ্দেশ্য হচ্ছে দুআ করা। দুআর গুরুত্ব সম্পর্কে দুয়েকটি হাদিস দেখা যেতে পারে :
أنَّ النبي -صلى الله عليه وسلم- قال : ্রالدُّعاءُ مُخُّ العبادةِ
রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : দুআ হচ্ছে ইবাদতের মগজ বা মূল বিষয়। (তিরমিযি, হাদিস নং- ৩৩৭১; কানযুল উম্মাল, হাদিস নং- ৩১১৪)।
عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ ، قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، يَقُولُ عَلَى الْمِنْبَرِ : إِنَّ الدُّعَاءَ هُوَ الْعِبَادَةُ ، ثُمَّ قَرَأَ : ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ
হযরত নোমান ইবনে বাশির রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি : দুআই হচ্ছে ইবাদত। এরপর তিনি আয়াত পড়রেন : ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। (তিরমিযি, হাদিস নং- ২৯৬৯; সুনানে আবি দাউদ, হাদিস নং- ১৪৮১)।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَيْسَ شَيْءٌ أَكْرَمَ عَلَى اللَّهِ مِنْ الدُّعَاءِ
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম বলেন : আল্লাহ তাআলার কাছে দুআর চেয়ে সম্মানিত বিষয় আর কিছু নেই। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং- ৮৭৪৮; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং- ৮৭০)।
ফরজ নামাযের পর সাথে সাথে না উঠা
বসে বসে জিকির, দুআ ও মুনাজাত করা
রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাধারণ নিয়ম ছিল তিনি বাসা থেকে সুন্নত নামায পড়ে মসজিদে এসে সাহাবিদেরকে নিয়ে জামাতের সাথে ফরজ নামায পড়তেন। ফরজের পর বিভিন্ন দুআ ও জিকির-আজকার করতেন। ফরজের পরে সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে যাওয়া বা সুন্নত-নফলে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। কোনো প্রয়োজন থাকলে ভিন্ন কথা। নামাযের পর মুসুল্লি যতক্ষণ স্বীয় স্থানে বসে থাকবেন ততক্ষণ ফেরেশতারা তার জন্যে আল্লাহর কাছে দুআ করে। হাদিসে এসছে :
عَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ قَالَ سَمِعْتُ عَلِيًّا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا جَلَسَ فِي مُصَلَّاهُ بَعْدَ الصَّلَاةِ صَلَّتْ عَلَيْهِ الْمَلَائِكَةُ وَصَلَاتُهُمْ عَلَيْهِ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ وَإِنْ جَلَسَ يَنْتَظِرُ الصَّلَاةَ صَلَّتْ عَلَيْهِ الْمَلَائِكَةُ وَصَلَاتُهُمْ عَلَيْهِ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ
হযরত আবু আবদুর রহমান রহ. থেকে বর্ণিত, আমি হযরত আলি রা. -কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কোনো বান্দা যদি নামাযের পরে স্বীয় স্থানে বসে থাকে তাহলে ফেরেশতাগণ দুআ করতে থাকেন ‘হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দাও, তার ওপর দয়া কর। তদ্রƒপ নামাযের জন্যে অপেক্ষা করলেও ফেরেশতার তার জন্যে দুআ করতে থাকে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং- ১২১৯; মুয়াত্তা মালেক, হাদিস নং- ৫৫৬)।
আরেকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে :
عَن أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ ثُمَّ جَلَسَ فِي مُصَلَّاهُ لَمْ تَزَلْ الْمَلَائِكَةُ تَقُولُ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ مَا لَمْ يُحْدِثْ أَوْ يَقُومْ
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, আমি রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন : যদি কেউ নামাযের পর নিজের স্থানে বসে থাকে তাহলে ফেরেশতা তার জন্যে দুআ করতে থাকে ‘হে আল্লাহ! তাকে মাফ করে দাও’ যতক্ষণ না সে অজু নষ্ট করে (কিংবা কথা বলে) অথবা দাঁড়িয়ে না যায়। (সহিহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস নং- ৭৫৬; মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং- ৭৫৫১)।
এমনকি বিশেষ কোনো প্রয়োজন না-থাকলে রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামাযের পর সূর্য উদয়ের আগে মসজিদ থেকে বের হতেন না।
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَلَّى الْفَجْرَ جَلَسَ فِي مُصَلَّاهُ لَمْ يَرْجِعْ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ
হযরত জাবের ইবনে সামুরা রা. হতে বর্ণিত, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামাযের পর সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত স্বীয় স্থান হতে উঠতেন না। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং- ২০৯৪৮; মুসনাদুস সাহাবাহ : ৩৫/৪১)।
ফরজ নামাযের পর দুআ কবুল হয়
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّ الدُّعَاءِ أَسْمَعُ قَالَ جَوْفَ اللَّيْلِ الْآخِرِ وَدُبُرَ الصَّلَوَاتِ الْمَكْتُوبَاتِ
হযরত আবু উমামা রা. হতে বর্ণিত, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হল, কোন্ দুআ সবচেয়ে বেশি কবুল হয়? উত্তরে তিনি বলেন : রাতের শেষ অংশে এবং ফরজ নামাযের পরে। (সুনানে তিরমিযি, হাদিস নং- ৩৪৯৯; সুনানে নাসায়ি, হাদিস নং- ৯৯৩৬)
হাত তুলে দুআ করা
দুআর গুরুত্ব সর্বজনবিদিত। মুমিনের নিদ্রাভঙ্গ থেকে নিদ্রায় যাওয়া পর্যন্ত সব কাজের শুরুতে বা শেষে মাসনুন দুআ রয়েছে। ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার দুআ, খাবারের শুরুতে দুআ, মসজিদে প্রবেশের দুআ, অজু করার দুআ, এমনকি সহবাসের দুআও আছে। এসব দুআ করার সময় হাত উঠানো লাগে না। তবে এসব মাসনুন দুআর বাইরে যে কোনো দুআ করার সময় হাত উঠানো যাবে। এমনকি হাত তুলে দুআ করা দুআর আদবের অন্তর্ভুক্ত। অধিকাংশ হাদিসের কিতাবে ‘হাত তুলে দুআ করা’ নামে পৃথক পরিচ্ছেদ/অনুচ্ছেদ বা শিরোনাম স্থাপন করা হয়েছে। শুধু এর দ্বারা সহজেই অনুমেয় যে, এসব শিরোনামে অধীনে কত হাদিস থাকতে পারে!। আমরা নমুনাস্বরূপ কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করছি :
سُئِلَ أَنَسٌ : هَلْ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَرْفَعُ يَدَيْهِ يَعْنِي فِي الدُّعَاءِ فَقَالَ : نَعَمْ ، شَكَا النَّاسُ إلَيْهِ ذَاتَ جُمُعَةٍ فَقَالُوا : يَا رَسُولَ اللهِ ، قَحَطَ الْمَطَرُ وَأَجْدَبَتِ الأَرْضُ وَهَلَكَ الْمَالُ ،قال: فَرَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى رَأَيْت بَيَاضَ إبْطَيْهِ.
হযরত আনাস রা. -কে জিজ্ঞেস করা হল রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআ করার সময় হাত উঠাতেন কি-না? তিনি বললেন, হ্যাঁ। একবার রাসুলের কাছে লোকজন অভিযোগ করল, হুজুর! বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেছে, জমিন শুষ্ক হয়ে পড়েছে এবং ধনসম্পদ বিনষ্ট হওয়ার উপক্রম। তখন দুআর জন্যে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত উঠালেন, আমি হুজুরের বগলের শুভ্রতা দেখতে পেলাম। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং- ৩০২৯৩)
عَنْ سَلْمَانَ الْفَارِسِىِّ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ :্র إِنَّ اللَّهَ حَيِىٌّ كَرِيمٌ يَسْتَحْيِى إِذَا رَفَعَ الرَّجُلُ إِلَيْهِ يَدَيْهِ أَنْ يَرُدَّهُمَا صِفْرًا خَائِبَتَيْنِ গ্ধ.
হযরত সালমান ফারসি রা. হতে বর্ণিত, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা চিরঞ্জীব ও সম্মানিত; বান্দা যখন তাঁর দরবারে হাত উঠায় তখন তিনি বঞ্চিত ও খালি হাতে ফেরত দিতে লজ্জাবোধ করেন। (তিরমিযি, হাদিস নং- ৩৫৫৬; সুনানে আবি দাউদ, হাদিস নং- ১৪৯০)
عَنْ أَنَسٍ , رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيه وسَلَّم : يَا أَيُّهَا النَّاسُ ، إِنَّ رَبَّكُمْ حَيِيٌّ كَرِيمٌ ، يَسْتَحِي أَنْ يَمُدَّ أَحَدُكُمْ يَدَيه إِلَيْهِ فَيَرُدَّهُما خَائِبَتَيْنِ.
হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. বলেন, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : হে লোকসকল! নিশ্চয় তোমাদের রব চিরঞ্জীব ও সম্মানিত; তোমাদের কেউ যখন তাঁর কাছে হাত তুলে তখন তিনি তাকে বঞ্চিত করতে লজ্জাবোধ করেন। (মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস নং- ৪১০৮)।
عَنْ مَالِكِ بْنِ يَسَارٍ السَّكُونِىِّ ثُمَّ الْعَوْفِىِّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ ্র إِذَا سَأَلْتُمُ اللَّهَ فَاسْأَلُوهُ بِبُطُونِ أَكُفِّكُمْ وَلاَ تَسْأَلُوهُ بِظُهُورِهَا গ্ধ.
হযরত মালেক ইবনে ইয়াসার সাকুনি পরবর্তীতে আউফি রা. হতে বর্ণিত, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : তোমরা যখন আল্লাহর কাছে দুআ করবে তখন হাতের তালু দিয়ে দুআ কর, হাতের পিঠ দিয়ে দুআ কর না। অর্থাৎ হাতের তালু আকাশের দিকে রেখে দুআ করবে, হাত উল্টিয়ে দুআ করবে না। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস নং- ১৪৮৮)।
عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ كَعْبٍ الْقُرَظِىِّ حَدَّثَنِى عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ ্র لاَ تَسْتُرُوا الْجُدُرَ مَنْ نَظَرَ فِى كِتَابِ أَخِيهِ بِغَيْرِ إِذْنِهِ فَإِنَّمَا يَنْظُرُ فِى النَّارِ سَلُوا اللَّهَ بِبُطُونِ أَكُفِّكُمْ وَلاَ تَسْأَلُوهُ بِظُهُورِهَا فَإِذَا فَرَغْتُمْ فَامْسَحُوا بِهَا وُجُوهَكُمْ গ্ধ.
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা বাড়ির দেওয়াল ঢাকবে না (প্রয়োজন হলে ঢাকাতে কোনো সমস্যা নেই); কারো অনুমিত ব্যতীত তার চিঠিপত্রে দৃষ্টি দিবে না। কারণ, এর দ্বারা সে জাহান্নাম দেখবে। (অর্থাৎ খেয়ানত করার কারণে তাকে জাহান্নামে যেতে হবে)। তোমরা আল্লাহর কাছে হাতের তালু দিয়ে দুআ কর, হাতের পিঠ দিয়ে দুআ করবে না। দুআ শেষ হলে হাত মুখে বুলিয়ে দাও। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস নং- ১৪৮৭)।
عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- كَانَ إِذَا دَعَا فَرَفَعَ يَدَيْهِ مَسَحَ وَجْهَهُ بِيَدَيْهِ.
হযরত সায়েব ইবনে ইয়াযিদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআ করার সময় উভয় হাত উঠাতেন এবং দুআ শেষে চেহারায় হাত মুছতেন। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস নং- ১৪৯৪)।
মুসলিম শরিফের একটি দীর্ঘ হাদিসে এসেছে :
يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ وَغُذِىَ بِالْحَرَامِ فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ গ্ধ.
একব্যক্তি দুই হাত আকাশের দিকে উঠিয়ে দুআ করতে থাকে হে রব! হে রব! অথচ তার খাবার হারাম, তার পানীয় হারাম, তার কাপড় হারাম এবং তার দেহ হারাম বস্তু দ্বারা পালিতÑ তাহলে তার দুআ কীভাবে কবুল করা হবে। (হাদিস নং- ২৩৯৩; মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং- ৮৩৪৮)।
উপরের হাদিসের ব্যাখ্যায় الأربعون النووية بتعليقات الشيخ ابن عثيمين رحمه الله নামক কিতাবে বিধৃত হয়েছে :
أنه يمد يديه إلى السماء ومد اليدين إلى السماء من أسباب الإجابة ، فإن الله سبحانه وتعالى يستحي من عبده إذا رفع إليه يديه أن يردهما صفرا .
উভয় হাত আকাশের দিকে উঠানো দুআ কবুলের উপকরণ ও সহায়ক। কারণ, বান্দা যখন আল্লাহ কাছে হাত উঠায় তখন তাকে খালি হাতে ফেরত দিতে আল্লাহ তাআলা লজ্জাবোধ করেন। (খ.১, পৃ. ২৩)।
আল্লামা জালাল উদ্দিন সুয়ুতি রহ. হাত তুলে দুআ করার ব্যাপারে স্বতন্ত্র পুস্তিকা রচনা করেছেন। নাম : فض الوعاء في أحاديث رفع اليدين في الدعاء
সম্মিলিত দুআ করা
সম্মিলিতভাবে দুআ করা অর্থাৎ একজনে দুআ করবে আর বাকিরা আমি আমিন বলবেÑ এটা জায়েয। একটি হাদিস দ্বারাও এর প্রমাণ পাওয়া যায় : لا يجتمع ملأ فيدعو بعضهم و يؤمن البعض إلا أجابهم الله
অর্থ : কিছু মানুষ একত্রিত হয়ে যদি তাদের কেউ দুআ করে এবং অন্যরা আমিন বলে, তাহলে আল্লাহ তাদের দুআ কবুল করেন। (আল-মুজামুল কাবির, হাদিস নং- ৩৫৩৬; জামেউল আহাদিস, হাদিস নং- ১৭৫০০; কানযুল উম্মাল, হাদিস নং- ৩৩৬৭)।
নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দুআ করা
ফরজ নামাযের পর দুআ কবুলের মুহূর্ত হওয়া সত্ত্বেও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারা জীবনে কয়বার সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দুআ করেছেন?
হাদিসের কিতাবগুলো এ ব্যাপারে নিরব। তবে সর্বোচ্চ দুয়েকবার করেছেন বলে উল্লেখ পাওয়া যায় :
عَنِ الْفَضْلِ بْنِ الْعَبَّاسِ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : الصَّلاةُ مَثْنَى مَثْنَى ، تَشَهَّدْ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ ، وَتَضَرَّعْ ، وَتَخَشَّعْ ، وَتَمَسْكَنْ ، ثُمَّ تُقْنِعْ يَدَيْكَ ، يَقُولُ : تَرْفَعْهُمَا إِلَى رَبِّكَ مُسْتَقْبِلا بِبُطُونِهِمَا وَجْهَكَ ، وَتَقُولُ : يَا رَبِّ ، فَمَنْ لَمْ يَفْعَلَ ذَلِكَ فَهِيَ خِدَاجٌ
হযরত ফজল ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : নামায দুই রাকাত দুই রাকাত করে, প্রত্যেক দুই রাকাতে তাশাহ্হুদ পড়বে, বিনীত হবে, খুশু-খুজু অবলম্বন করবে, দীনতা-হীনতা প্রকাশ করবে; এরপর দুই হাত তোমার রবের দিকে তুলে দুআ করবে, তখন দুই হাতের পেট তোমার চেহারার দিকে থাকেব আর বলতে থাকবে হে রব! হে রব! যে ব্যক্তি তা করবে না তার নামায অসম্পূর্ণ। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস নং- ১২৯৮; মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং- ১৭১২৫)।
এই হাদিসে নামাযের পর হাত তুলে দুআ করার কথা রয়েছে; তবে স্পষ্টত তা নফল নামায। কেননা, প্রত্যেক দুই রাকাত করে পড়তে বলা হয়েছে। দ্বিতীয়ত হাদিসটি জঈফ হওয়ার ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই।
أن عبد الله بن الزبير رأى رجلا رافعا يديه يدعو قبل أن يفرغ من صلاته فلما فرغ منها قال إن رسول الله صلى الله عليه و سلم لم يكن يرفع يديه حتى يفرغ من صلاته
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রা. একব্যক্তিকে দেখলেন যে, সে নামায শেষ করার পূর্বেই দুই হাত উত্থিত করে রেখেছে। নামায শেষ হওয়ার পর তাকে বললেন, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শেষ করার আগে দুই হাত তুলতেন না। (মাযমাউয যাওয়ায়েদ : ১০/১৬৯; তাবরানি)।
এই হাদিসের সনদ বিশুদ্ধ। তুহফাতুল আহওয়াজির লেখক বলেছেন : অর্থাৎ এই হাদিসের সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য। (খ.২, পৃ. ১৭১)।
এই হাদিস দ্বারা বুঝা যায় রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত নামাযের পর হাত তুলে দুআ করতেন। তবে এখানে ফরজ বা নফলের কথা উল্লেখ নেই।
عن أبي هريرة أن رسول الله صلى الله عليه و سلم رفع يديه بعد ما سلم وهو مستقبل القبلة فقال اللهم خلص الوليد بن الوليد
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফেরানোর পর কেবলার দিকে মুখ করা অবস্থায়ই তাঁর দুনো হাত উত্থিত করে দুআ করলেন, হে আল্লাহ! ওয়ালিদ ইবনে ওয়ালিদকে মুক্তি দাও…। (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৩/১৭২; তুহফাতুল আহওয়াজি : ২/১৭০)।
এই হাদিসের মাত্র একজন বর্ণনাকারী সমালোচিত। বাকি সবাই নির্ভরযোগ্য।
عن أنس عن النبي صلى الله عليه و سلم أنه قال ما من عبد بسط كفيه في دبر كل صلاة ثم يقول اللهم إلهي وإله إبراهيم وإسحاق ويعقوب وإله جبريل وميكائيل وإسرافيل أسألك أن تستجيب دعوتي فإني مضطر وتعصمني في ديني فإني مبتلي وتنالني برحمتك فإني مذنب وتنفي عني الفقر فإني متمسكن إلا كان حقا على الله عز و جل أن لا يرد يديه خائبتين
হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : যে কোনো বান্দা নামাযের পর এই দুআ করবে, হে আমার প্রভু! ইবরাহিম, ইসহাক, ইয়াকুবের প্রভু! জিবরাইল, মিকাইল, ইসরাফিলের প্রভু! তোমার কাছে আমার দুআ কবুলের প্রার্থনা করিছ, কারণ আমি অক্ষম। তুমি আমার দীন হেফাজত কর, কেননা আমি মুসিবতগ্রস্ত। আমাকে তোমার রহমত দাও, কারণ আমি পাপী। আমার দারিদ্র্য দূর করে দাও, কারণ আমি মিসকিনÑ তাহলে ওই ব্যক্তির দুআ আল্লাহ অবশ্যই কবুল করেন, তার হাত খালি ফিরিয়ে দেন না।
হাদিসটি সনেদর বিচারে জঈফ। (তুহফাতুল আহওয়াজি : ২/১৭১)।
الأسود العامري عن أبيه قال صليت مع رسول الله صلى الله عليه و سلم الفجر فما سلم انحرف ورفع يديه ودعا
আসওয়াদ আমেরি স্বীয় পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, আমি রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ফজরের নামায পড়লাম, তখন তিনি সালাম ফেরানোর পর হাত তুলে দুআ করেছেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/২৬৯, ২/৭৫; সহিহ ইবনে খুযাইমা : ৩/৬৭)।
এই হাদিসটি ইবনে আবি শায়বা স্বীয় কিতাবে সনদবিহীন বর্ণনা করেছেন, তাই তা সহিহ না জঈফ কিছুই জানা যায় না। মোটকথা এই হাদিসের ওপর নির্ভর করা যাবে না।
উপরের হাদিসগুলো দ্বারা আমরা বুঝতে পারি :
১. হাত তুলে দুআ করা জায়েয এবং দুআ কবুলে সহায়ক, মুস্তাহাব।
২. ফরজ নামাযের পর দুআ কবুল হয়।
৩. সম্মিলিতভাবেও দুআ করা যায়।
৪. ফরজ বা নফল উভয় নামাযের পর রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত তুলে দুআ করেছেন। তবে সর্বদায় নামাযের পর হাত তুলে দুআ করতেন না। এ সকল হাদিস সামনে রাখলে আমরা ধারণা করতে পারি যে, তিনি সম্ভবত মাঝে মাঝে ফরজ এবং নফল নামাযের পরে হাত তুলে দুআ করতেন।
কিন্তু ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দুআ করার কথা স্পষ্টভাবে কোনো কিতাবে বিধৃত না থাকলেও মূলনীতির আলোকে তা নাজায়েয হবে না। তবে মনে রাখতে হবে এই জায়েযকে জায়েযের পর্যায়ে রাখতে হবে। কারণ, সম্মিলিতভাবে দুআ করাকে আবশ্যক বা ওয়াজিব মনে করলে বিদআত হয়ে যাবে। তাই মাঝে-মধ্যে দুআ ছেড়ে দিতে হবে। কারণ, পূর্ববর্তী ইমামগণ বলেছেন : রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কাজ করেছেন তা করা যেমন সুন্নত; তদ্রƒপ যে কাজ তিনি মাঝে-মধ্যে ছেড়ে দিয়েছেন তা মাঝে মাঝে ছেড়ে দেওয়াও সুন্নত।
কারণ, প্রথমত ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে দুআ করার ব্যাপারে স্পষ্ট, দ্ব্যর্থবোধক হাদিস নেই। ফরজ নামাযের পর দুআ কবুলের হাদিস দ্বারা আমরা এটাকে জায়েয বলতেছি।
দ্বিতীয়ত যে আমল রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় করেছেন সেটাও গুরুত্বের সঙ্গে সবসময় করা যাবে না, করলে বিদআত হয়ে যাবে। একটা উদাহরণ নেওয়া যেতে পারে :
عَنْ أُبَىِّ بْنِ كَعْبٍ قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يُوتِرُ بِثَلاَثٍ يَقْرَأُ فِيهَا بِ ( سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى) وَ (قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ) وَ (قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ) وَكَانَ يَقْنُتُ قَبْلَ الرُّكُوعِ
হযরত উবাই ইবনে কা’ব রা. হতে বর্ণিত, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিতর পড়তেন। প্রথম রাকাতে সূরা আ’লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন ও তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়তেন। এবং তিনি রুকুর পূর্বে কুনুত পড়তেন। (সুনানে দারেমি : ২/৩১; সুনানে কুবরা লিন নাসায়ি, হাদিস নং- ১৪৩২; মুসনাদুস সাহাবাহ : ৪৩/৩৯)।
রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের তিন রাকাতে উপর্যুক্ত তিন সূরা অধিকাংশ সময় পড়তেন। তিরমিযি, আবু দাউদ-সহ সিহাহ সিত্তার বিভিন্ন কিতাবে উচ্চাঙ্গীন সহিহ হাদিস দ্বারা বিষয়টি প্রমাণিত। তা সত্ত্বেও ইমাম আযম আবু হানিফা রহ. বলেছেন : মাঝে মাঝে এই তিনটি সূরা বাদ দিয়ে অন্য সূরা পড়া উচিত। (ফাতহুল কাদির : ১/৩৪৩-৩৪৪)
বাহ্যত আমাদের কাছে মনে হতে পারে তিনি সুন্নতবিরোধী মত দিয়েছেন। তিনি মাঝে-মধ্যে সুন্নত ত্যাগ করতে উৎসাহ দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে আমরা তার এই মত থেকে বুঝতে পারি, তিনি সুন্নতকে কত গভীর ও পরিষ্কারভাবে বুঝেছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো কাজ মাঝে মাঝে করলে তা মাঝে মাঝেই করা সুন্নত, সর্বদায় করা খেলাফে সুন্নত। কোনো কাজ তিনি দুয়েকবার করলে দুয়েকবার করাই সুন্নত, সর্বোচ্চ জায়েয হতে পারেÑ সর্বদায় করলে খেলাফে সুন্নত হবে। এ কারণেই ইমাম আবু হানিফা রহ. বিতর নামাযে এই তিনটি সূরা পড়ার ব্যাপারে হাদিস থাকা সত্ত্বেও তিনি মাঝে মাঝে অন্য সূরা পড়তে বলেছেন। কারণ, বিতর নামাযে রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম মাঝে মাঝে অন্য সূরা পাঠ করেছেন বলেও হাদিস রয়েছে।
তাই আমরা সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, বিতর নামাযে অধিকাংশ সময় উপরের তিন সূরা পাঠ করা এবং মাঝে মাঝে অন্য সূরা পাঠ করা প্রকৃত সুন্নত। আর সর্বদায় এ সূরাগুলো পাঠ করা খেলাফে সুন্নত।
প্রসঙ্গত, সহিহ বুখারি শরিফের সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিবের ফরজের পূর্বে দুই রাকাত সুন্নত/নফল আদায় করেছেন।
এই সহিহ হাদিস থাকা সত্ত্বেও আমরা বলতেছি, সেটা বয়ানে জাওয়াযের জন্যে ছিল, সুন্নত নয়। তাহলে ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করা কোন্ পর্যায়ের সুন্নত হবে?
সর্বোচ্চ জায়েয, মুস্তাহাব এমনকি সুন্নতও বলা যেতে পারে। কিন্তু জরুরি মনে করা যাবে না। জরুরি মনে না করা কর্মগতভাবেও প্রকাশ করতে হবে। অর্থাৎ মাঝে মাঝে মোনাজাত ছেড়ে দিতে হবে।
মনে রাখা দরকার, আমাদের সমাজে প্রচলিত ফরজ নামাযের পর প্রচলিত মোনাজাতকে অনেকেই বিদআত বলছেন। কারণ, অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় আমরা এটাকে জায়েয-মুস্তাহাবের স্তর থেকে ওয়াজিবের পর্যায়ে নিয়ে গেছি। অন্যথায় মাঝে মাঝে মোনাজাত ছেড়ে দিলে মুসুল্লিগণ ক্ষেপে যান কেন? মনে করেন নামায পূর্ণাঙ্গ হয়নি। অথচ মোনাজাত নামাযের অংশ নয়।
সংক্ষেপে বলা যায়, ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দুআ করা জায়েয, সর্বোচ্চ মুস্তাহাব বা সুন্নত। কিন্তু ওয়াজিব মনে করলে কিংবা লাগাতার করলে বিদআত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
বিষয়টি নিয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে। যোগ্য লোকরাই এর উপযুক্ত।