মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান:
আমি এখানে পশু রাজ সিংহকে সিম্বলিক অর্থে এনেছি শক্তির প্রতিক হিসেবে। এই শক্তি পশু শক্তি। এই শক্তি জাগ্রত হলে সবকিছু লন্ডভন্ড করে দেয়। হিতাহিত জ্ঞানশুণ্য হয়ে পড়ে শক্তির ধারক ও বাহকরা। এই পশুশক্তিকে যারা অহেতুক খোঁচাখুঁচি করে জাগিয়ে তোলে পশুশক্তির ধারকের চেয়ে যে এই শক্তিকে খোঁচা দিয়ে জাগ্রত করে ক্ষতি তার বেশী হয়। ইতিহাস তাই বলে। সাতচল্লিশে বাঙালিরা সাতানব্বই শতাংশ ভোট দিয়ে পাকিস্তানের সৃষ্টি করে । খোদ এখন যে পাকিস্তান সেখানের বাসিন্দারাও পাকিস্তানের পক্ষে এতো বিপুল ভোট দেন নাই পাকিস্তানের জন্য। আমরা বাঙালিরা পাকিস্তানের পক্ষে সেই ভোট দিয়েছিলাম। কেন দিয়েছিলাম? কারণ সতের শত তিরানব্বই সালে ভারতের ব্রিটিশ বড়লাট লর্ড কর্ণওয়ালিস চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে যে জমিদারি প্রথা চালু করেছিলেন তার ফলশ্রুতিতে এই বাংলায় বড় ছোট মিলে প্রায় দেড় লাখের মতো জমিদারের সৃষ্টি হয় যার সিংহভাগই ছিল কলকাতার হিন্দু বণিকরা। এই জমিদারদের অত্যাচারে বাংলার মানুষ নিষ্পেষিত হয়। বাংলার সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলমান এই অত্যাচারের কথা মনে রেখে পাকিস্তান সৃষ্টিতে অভূতপূর্ব সাড়া দেয়। কিন্তু পাকিস্তান সৃষ্টির পরে পুর্ব পাকিস্তানের মানুষকে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা কলকাতার জমিদারদের মতো অত্যাচার করতে আরম্ভ করলো। খোঁচায় খোঁচায় নিষ্পেষিত পুর্ব পাকিস্তানের সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ মুক্তির পথ খুঁজতে শুরু করলো। এলো ছয়দফা, এগারো দফা, উনসত্তরের গন বিস্ফোরণে লৌহমানব ফিল্ডমার্শাল আইয়ুব খাঁনের পতন। এলো একত্তরের পঁচিশে মার্চের কালো রাত। শেষ খোঁচায় বাঙালিরর ঘুমন্ত সিংহ জেগে উঠলো। নয়মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে স্বাধীন হলো বাংলাদেশ। এখনও পাকিস্তান বাংলাদেশকে বিভিন্ন ইস্যুতে খোঁচায় কিন্তু তাতেতো ভুমিষ্ট হওয়া সন্তান পুনরায় মাতৃজঠরে ঢুকবেনা। তো এই খোঁচাখুঁচিতে পাকিস্তান পেল কি? পেলো একপা হারা লাঠিতে ভর দেওয়া পঙ্গু পাকিস্তান। কিন্তু মজার ব্যাপার লক্ষ্য করছি স্বাধীন বাংলাদেশে একাত্তরে পাকিস্তানের কিছু সমর্থক গোষ্ঠী স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনাকে অব্যাহতভাবে খোঁচাখুঁচি করছে। আমি তাদের জন্য বলতে চাই এই খোঁচাখুঁচিতে খ্যান্ত দেন । বাঙালির ঘুমন্ত সিংহকে অহেতুক অসময়ে জাগিয়ে তুলে নিজের অমঙ্গল ডেকে আনবেননা। আমি তাদের মহাজের অবাঙালি বিহারিদের থেকে শিক্ষা নিতে বলবো। একাওরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান এদের আমাদের বিরুদ্ধে এজতেমাল করেছে কিন্তু নিজদেশ পাকিস্তানে এই বিহারীদের ঠাঁই দেয় নাই । এই যে সিংহ বা পশু শক্তির কথা বলছি এটা প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই আছে। কোরো পশু শক্তি গভীর ঘুমে, কারোটা হালকা ঘুমে, আবার কারো তন্দ্রাতে । এর উপর ভিত্তি করে মানুষের মন মেজাজের শ্রেণী বিন্যাস হয়। যেমন:
এক। যার পশু শক্তি গভীর ঘুমে সে ব্যক্তি ধৈর্য্যশীল।
দুই । যার পশু শক্তি হালকা ঘুমে সেই ব্যক্তি রাগি হয়ে থাকে।
তিন । যেই ব্যক্তির পশু শক্তি তন্দ্রাতে আছে তাকে আমরা সাধারণতঃ রগচটা বলি।
অতএব এইসব লোকের সাথে ডিল করার সময় এই বিশেষ বিষয়ে সজাগ থাকলে ভুল বোঝাবুঝির অবতারণা হয় না। কিন্তু ঐযে খোঁচাখুঁচি ওটা কখনও কখনও অভ্যন্তরীণ আবার কখনও কখনও বিদেশী শক্তির দ্বারাও সংঘঠিত হতে পারে। আমরা দেখলাম দেশ স্বাধীনের পরে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি বাহিনীর জন্ম হল বিদেশী শক্তির মদদে বাংলাদেশকে খোঁচা দিয়ে রক্তক্ষরণ ঘটাতে। একটা কথা বলে রাখা ভালো যাদের আমরা শান্তি বাহিনী বলি এরা আসলে ” ষ্টাফ ব্যাটলার” বা ( এস বি ) । পরে এই (এস বি ) শান্তি বাহিনীতে রুপান্তরিত হয়। তো এই বিদেশী খোঁচায় পার্বত্য চট্টগ্রামে ত্রিশ বছরের উপরে হলো একটা অশান্তির পরিবেশ বিরাজমান। বাইপ্রোডাক্ট হিসাবে লক্ষ লক্ষ বাঙালি পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতি স্হাপন করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে দেশী, বিদেশী এইযে খোঁচাখুঁচি তাতে আখরেতো বাঙালিদেরই লাভ হলো। যতইযা বলেন টুথপেষ্ট একবার বেরহলে যেমন আর ঢোকানো যায় না তেমনি বাঙালিও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সমতলে ফিরবেনা। এই বাস্তবতা পাহাড়ের ভাইবোনেরা যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারেন ততই মঙ্গল। আমি গভীরভাবে আশাকরি উনিশ শত সাতানব্বই সালে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে চুক্তি পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী পাহাড়ী ভাইবোনদের সাথে সরকারের তথা আমাদের হয়েছে তার সফল বাস্তবায়নের দ্বারা তাঁরা শান্তি ও উন্নয়নের পথে অগ্রসর হবেন এবং খোঁচাখুঁচিওয়ালাদের বর্জন করবেন।
এবারে দেশের অভ্যন্তরে একটা বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠির কিছু চিহ্নিত মানুষ বিভিন্ন ভাবে সংখ্যা গরিষ্ঠর মুসলমানদের খোঁচানোর অপচেষ্টা করছে। তা নিজের জোরে হউক কিংবা ঠাকুরের বলে হউক খোঁচাখুঁচি হচ্ছে। আমি অতি বিনয়ের সাথে তাঁদের নেপাল এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে শিক্ষা নিতে বলবো। আমি আশাকরবো জ্ঞানিদের জন্য ইশারা যথেষ্ট। তবে আমি তাঁদের জন্য একটা গল্প বলতে চাই:
গল্পটা হলো তিন ভাই। রড় ভাই স্কুল শিক্ষক। তিনি স্কুল থেকে ফিরে সন্ধ্যায় দহলিজে আরাম কেদারায় বসে গ্রামের মানুষের সাথে খোশগল্প করেন। তাঁর দশ/ বার বছরের একটি ছেলে সন্তান আছে। তিনি সংসারের কোনো কাজ দেখননা। ছোটভাই কলেজে পড়ে। কলেজ ছুটি হলে গ্রামের বাড়িতে আসে। সেও সংসারের সাতপাঁচে নাই। মেজভাই লেখাপড়া সামান্যই করছে। বিবাহিত। কোনো সন্তান নাই। সেই সংসারের যাবতীয় দেখাশোনার কাজ করে। তো একদিন মেজভাই এর স্ত্রী তাকে রাতে বিছানায় শুয়ে বলছে আপনি সংসারের সব কাজ করেন। বড়ভাই স্কুল থেকে ফিরে দহলিজে আরাম কেদারায় বসে গ্রামের মানুষের সাথে খোশগল্প করেন। ছোটভাই কলেজে পড়ার নামে সেও সংসার দেখেনা। আপনি সবার জন্য এতো কষ্ট কেন করবেন? স্ত্রীর কথা শুনে মেজভাই স্ত্রীকে বললো বড়ভাই সম্মানী মানুষ উনি সংসারের কাজ কেন করবেন? ছোটভাই কলেজে পড়ছে ওরতো সংসার দেখার প্রশ্ন আসেনা । আমি মূখ্যসূখ্য মানুষ লেখাপড়া করিনাই আমিইতো সংসার দেখবো। স্ত্রী নাছোড় বান্দা। শেষে মেজভাই বিরক্ত হয়ে বললো তাহলে আমি কিকরবো? স্ত্রী বললো আমরা পৃথক হবো। মেজভাই এর চোখ চড়কগাছ। বলোকি আমরা পৃথক হবো? হ্যাঁ হবো স্ত্রী জোর দিয়ে বললো। শেষে স্ত্রীর জেদের কাছে হার মেনে সহজসরল মেজভাই বললো পৃথক হবার কথা আমি বড়ভাইকে বলতে পারবোনা । স্ত্রী বললো সব আমি করবো। আপনি শুধু আমি যেভাবে বলবো সেইভাবে কাজ করবেন । বর্ষাকাল জমিতে ধানের চারা রোপনের জন্য অনেক চারা স্তুপ করা হয়েছে। সকালে কামলারা কাজে এসেছে কিন্তু মেজভাই নাই। সব কামলা ফিরে গেল । জমিণে ধানের চারা রোপন করা হলনা।কারণ মেজভাই অসুস্থ। সন্ধ্যায় বড়ভাই সবশুনে তার স্ত্রীকে বললো মেজকে বলো ওযেন ঘরের বের না হয়। ধানের চারা নষ্ট হয় হোক। মেজকেতো ভালো হতে হবে। স্ত্রী বললো এতো ধানের চারা নষ্ট হলো? তাতেকি? মানুষ আর ধানের চারা কি এক হলো? মেজভাই তিনদিন বিছানায় শুয়ে আছে। স্ত্রীকে ডেকে বললো আরতো শুয়ে থাকা যায় না। সে কাজে গেলো। এবারে পরিকল্পনা ভেস্তে গেলো। এর কিছুদিন পরে আবার তার স্ত্রী মেজভাইকে কানমন্ত্র দিলো। বললো আমাদের বড় সুপারির বাগানটার সব গাছ কেটে বিক্রি করে ফেলো। এটা করলে বড়ভাই সহ্য করতে পারবেনা। আপনাকে বকাবকি করবে। ঐসময় আমরা পৃথক হবার কথা বলবো। যেমন বুদ্ধি তেমন কাজ। সুপারির বাগান সাফ হয়ে গেলো। সন্ধ্যায় বড়ভাই দহলিজে বসে আছেন। মেজভাই পাশে স্ত্রী দহলিজের এক কোনায় বসে অছে শুনার জন্য বড়ভাই কিবলেন? তো বড়ভাই গ্রামের লোকদের বলছে দেখোহে আমি সংসারের কি বুঝি বলো? এইযে আমার মেজভাই আমাদের সুপারির বাগানের সবগাছ কেটে বিক্রি করে কত ভালো কাজ করলো দেখো । অর্ধেক সুপারি বাদুড়ের পেটে যেতো আর বাকিটা চোর ছ্যেঁচোড়ে নিয়ে যেতো। তো এই সুপারির গাছ বেচে কেমন দেখ অনেক টাকা একসাথে হাতে এলো। এটা ভালো না? মেজভাই ভাই নিরাশ হয়ে স্ত্রীকে ডেকে বললো আর আমাকে পৃথক হবার জন্য কোনোকিছু করতে বলবেনা বলেদিলাম। রাতের খাবারের পরে বড়ভাই মেজভাই আর তার স্ত্রীকে ডেকে পাঠালো। উভয়ে ভয়ে ভয়ে বড়ভাই এর কাছে এসে বসলো। বড়ভাই উভয়কে বললো তোমরা পৃথক হতে চাও তা আমাকে বললেই পারতে ? সংসারের এতো ক্ষতিকরে কি লাভ হলো? তো আমি আমাদের দেশের ঐ বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠির চিহ্নিত লোকদের বলতে চাই যারা মেজভাই এর মতো অন্যের কানমন্ত্র শুনে দেশের ক্ষতি করতে এবং সরকারকে বিপদে ফেলতে দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলমানদের খোঁচাখুঁচি করছেন যদি আপনাদের খোঁচা খেয়ে অতিষ্ট হয়ে একবার যদি সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলমানদের ঘুমন্ত সিংহ জেগে ওঠে তবে বড়ভাই স্কুল শিক্ষকের মতো আপনাদের প্রতি ধৈর্য্যর পরিচয় নাও দিতে পারে? কি হিন্দু কি বৌদ্ধ কি মুসলমান কি খৃষ্টান কি পাহাড়ী কি বাঙালি কি বিহারী কি বাংলাদেশের স্বাধীনতায় অবিশ্বাসী আমাদের সবার আশ্রয়স্হল ও ঠিকানা আমাদের প্রাণপ্রিয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ । আসুন আমরা ভেদাভেদ ভুলে একসাথে কাঁধেকাঁধ মিলিয়ে বাংলাদেশকে একটি শান্তি ও উন্নতির স্বর্ণক্ষনিতে পরিনত করি। এটাই হোউক এই রমজানে আমাদের সবার চাওয়া।
মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান ।
প্রাক্তন মহাপরিচালক বিডিআর ।