(অষ্টম পর্ব) অনেক সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ মাদরাসা শিক্ষার পাঠ্য ও পদ্ধতি এ জন্যে পরিবর্তন ও সংস্কার করতে আগ্রহী যেন মাদরাসাগুলোর সার্টিফিকেট বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাহ্য হয়ে এবং ছাত্ররা সে সব প্রতিষ্ঠানের উচ্চ শিক্ষার্জনের জন্য ভর্তি হবার সুযোগ পায় বা বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরী করার যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। যেহেতু বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় , শিক্ষা পদ্ধতি ও সিলেবাস পরিবর্তন করা ব্যতীত সম্ভব নয় শুধু এজন্যই তারা শিক্ষা সংস্কারের আওয়াজ তুলেন। আমাদের দৃষ্টিতে এ ধরণের চিন্তা ধারাও অযথার্থ। আমরা মনে করি দীনি শিক্ষার পাঠ্য ও পদ্ধতি সংস্কারের জন্য শুধু এ দৃষ্টিকোণ নিয়ে ভাবতে হবে যে, একজন যোগ্য ও পারদর্শী আলেমের প্রকৃত প্রয়োজন কী? এবং তা কিভাবে পূর্ণ হবে? এ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যে সব সংস্কার সাধন প্রয়োজন তা নিঃসন্দেহে গ্রহনযোগ্য। কিন্তু অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সার্টিফিকেট মূল্যায়িত হবে নিছক এজন্য মাদরাসাগুলোর রুচি ও চাহিদার প্রতি আদৌ তোয়াক্কা না করেই শিক্ষা পদ্ধতির আমূল সংস্কার করা এসব দীনি শিক্ষাগুলোর মৌলিক চিন্তা চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের ভিত্তি যে একনিষ্ঠা, পরোপকার ও দীনি খেদমত করার মানসিকতার উপর স্থাপিত, সেদিক বিবেচনায় এসব সার্টিফিকেটের মূল্য বাজারে কেমন? এ পরযালোচনা সম্পূর্ণ অবান্তর। দেওবন্দের অনেক মহান মানুষী এমনও ছিলেন যারা শিক্ষা সমাপ্ত করেছেন অথচ আজীবন সনদ সংগ্রহও করেননি। এক্ষেত্রে গুরুত্বসহ এ বিষয়টিই আলোচিত হওয়া উচিত যে মাদরাসা থেকে শিক্ষা সমাপ্তকারী আলেমগণের দীনি জ্ঞান বিজ্ঞানে উচ্চতর যোগ্যতা, সুন্নতের অনুসরন, খোদাভীতি এবং দীনি খেদমতের অধিক মানসিকতা কিভাবে, কোন পদ্ধতি অনুসরনে সৃষ্টি হতে পারে? আর প্রকৃত পক্ষেই যখন দীনি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ কাঙ্খিত মানদন্ডানুযায়ী কর্মসূচী পরিচালনা করবে এবং যে ধরণের যোগ্যতা সম্পন্ন আলেম প্রয়োজন তা-ও সৃষ্টি হবে, তখন বিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার্জন বা সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিজের সার্টিফিকেট মঞ্জুর করানোর দরখাস্ত নিয়েও আর ঘুরাঘুরির প্রয়োজন থাকবে কোথায়? সুতরাং এসব চিন্তার পরিবর্তে মাদরাসা শিক্ষার মানোন্নয়নে গভীর মননিবেশ করা উচিত। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস- যদি মাদরাসা শিক্ষার কাঙ্খিত মানোন্নয়ন করা যায় তবে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান মাদরাসার সনদ গ্রহণ করতে এমনিতে বাধ্য হবে। আমাদের ধর্মীয় শিক্ষালয়গুলো যে মহান এলমের পবিত্র আমানতবাহক, যে রুচি চাহিদা, চিন্তা- চেতনার উত্তরসূরী অন্ততঃ এদিক থেকেও নিজের যোগ্যতার সাক্ষ্য ও প্রত্যয়নপত্র গ্রহণ করার জন্য অন্যের দ্বারে দ্বারে দরখাস্তের আপীল নিয়ে ধর্ণা দেওয়া বড়ই লজ্জাজনক। তার সমুজ্জল ভাবমূর্তির জন্য মারাত্মক আতংকজনক অতীত এই যে, যে সব শ্রদ্ধস্পদ ব্যক্তিবর্গ এসব প্রতিষ্ঠান থেকেই এলম ও আমলের প্রভূত পরিপূর্ণতা সাধন করতে সক্ষম হয়েছেন। তাদেরকে কখনো কোথাও নিজের সার্টিফিকেট প্রদর্শন করতে হয়নি। তার সান্নিধ্যার্জনে প্রত্যাশী শুধু মাদরাসাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হতে আরম্ভ করে সব সরকারী প্রতিষ্ঠানে তার গুণগ্রাহীর এত প্রচন্ড ভীড় ছিল যে, সার্টিফিকেটের অভাবে তার প্রতি অবজ্ঞা বা অবহেলা জ্ঞাপনের কোন অভিযোগ কখনো তাকে করতে হয়নি। কিন্তু এসব সম্মান ও প্রতিপত্তি ঐ সময়েই অর্জিত হয়েছে, যখন নিজেকে নিষ্ঠার সাথে এলমের মনোরমা অলঙ্কার দিয়ে সুসজ্জিত করে সকলের কাছে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। আর শুধু নামে মাত্র শিক্ষা সমাপ্তকারী হবার পরিবর্তে বাস্তবেই এলমে দীনের জন্য নিজের জীবনকে সঁপে দিয়েছে। তারা পার্থিব মোহে এলমান্বেষণ করেননি। প্রকৃত দীনের খেদমতেই ছিলো তাদের লক্ষ্য ও মিশন। এর শুভ পরিনাম হল যে, দুনিয়াও তাদের পদতলে ঝুঁকে পড়ল বিনম্র হয়ে। আবার আর্থিক দিক দিয়েও তারা সমাজে কারো পিছে পড়ে থাকেনি। সুতরাং শুধু সার্টিফিকেট মূল্যায়ন করানোর জন্য মাদরাসা শিক্ষার পাঠ্য ও পদ্ধতির সংস্কার করা এসব মাদরাসার চিন্তা চেতনাকে ভূলণ্ঠিত করার মানান্তর এবং মাদরাসা শিক্ষার প্রাণ শক্তি ও লক্ষ্য উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ পরিপন্থি।
এটাও পড়তে পারেন
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে জরুরী কিছু কথা!
কমাশিসা ডেস্ক: শুক্রবার ২৫সেপ্টেম্বার ২০২০. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আপনি যখন কওমি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতির ...