সোমবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ দুপুর ১:০৩
Home / আকাবির-আসলাফ / তাবলিগের জামাতের প্রবর্তক মাওলানা ইলিয়াস (রহ.)

তাবলিগের জামাতের প্রবর্তক মাওলানা ইলিয়াস (রহ.)

Eliasমুফতি এনায়েতুল্লাহ : তাবলিগ জামাতের প্রবর্তক মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস (রহ.) ভারতের উত্তর প্রদেশের কান্ধলাহ শহরের মাতুলালয়ে ১৮৮৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুহাম্মদ ইসমাঈল একজন ইমাম ও ধর্মীয় শিক্ষক ছিলেন। পারিবারিক পরিবেশে মক্তবের মাধ্যমে তার পড়াশোনা শুরু হয়। পিতার তত্ত্বাবধানে পবিত্র কোরানে কারিম হিফজ শেষে নিজামুদ্দিনের মুহাম্মদ আবরারের সান্নিধ্যে তিনি আরবি-ফারসির মৌলিক জ্ঞান লাভ করেন। ১৮৯৬-৯৭ সালে তিনি মাওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি (রহ.)-এর সান্নিধ্যে উচ্চতর জ্ঞান অর্জন করেন।
মাওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি শায়খুল হাদিস মাওলানা জাকারিয়া (রহ.)-এর সাহচার্য লাভ করেন। ১৯০৮ সালে মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) দারুল উলুম দেওবন্দে চলে আসেন। এখানেই তিনি কোরান, হাদিস, ফিকাহ ইত্যাদি শাস্ত্রে প্রাজ্ঞতা অর্জন করেন। তিনি মাওলানা আশরাফ আলী থানভি (রহ.), মাওলানা শাহ আবদুর রহিম (রহ.), মাওলানা মাহমুদুল হাসান (রহ.), মাওলানা খলিল আহমদ সাহরানপুরী (রহ.) প্রমুখ আলেমের সান্নিধ্য পেয়েছেন। মাওলানা ইলিয়াস (রহ.)-এর মধ্যে কোমলতা ও ভক্তিময়তায় সাহাবিদের অতুলনীয় গুণের অপূর্ব বিচ্ছুরণ পরিলক্ষিত হতো। তিনি ছিলেন ‘সাহবিদের সুবাস ও চলন্ত প্রতিভু।’ ১৯২০ সালে তিনি অন্যরকম এই তাবলিগ আন্দোলনের মাধ্যমে ইসলামের পুনর্জাগরণ ঘটান।
প্রথম দিকে মাওলানা ইলিয়াস (রহ.)-এর ধর্ম প্রচার প্রচেষ্টা ও আন্দোলনের কোনো নাম ছিল না; বরং আন্দোলনের বৈশিষ্ট্যগত কারণে এটা ছিল ‘তেহরিক-ই-ইমান’ বা ইমান রক্ষা সংগ্রাম। মাওলানা ইলিয়াস (রহ.)-এর সময়কালে দরিদ্র মুসলিম সমাজ ছিল অশিক্ষা, কুশিক্ষা, অপশিক্ষা ও কুসংস্কারে নিমজ্জিত। দিল্লির দক্ষিণের এক জনবিরল অঞ্চল ‘মেওয়াতে’ দাওয়াতে তাবলিগের মেহনতের দ্বারা মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) বিশ্ব তাবলিগের নবযাত্রার সূচনা করেন। ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস, পূর্ণাঙ্গ অনুশীলন, কালেমার দাওয়াত ও মর্ম শিক্ষা এবং বিভ্রান্তির কবল থেকে মানুষের ইমান হেফাজতের লক্ষ্যে এভাবেই মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) এগিয়ে যান। ১৩৪৫ হিজরি সনে হজ থেকে ফিরে মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) ‘তাবলিগি গাশত’ ও ‘কালেমা-নামাজ’-এর দাওয়াতি কাজ শুরু করেন। এ জন্য দল (জামাত) তৈরি করে বিভিন্ন এলাকায় প্রেরণ করতে থাকেন। ১৩৫২ হিজরি সনে তৃতীয় হজের পর মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) উপলব্ধি করলেন ‘মেওয়াত’ বা অন্য এলাকার সাধারণ চাষা-ভুষা, দরিদ্র মানুষের পক্ষে দ্বীন শেখার সময়-সুযোগ করা প্রায় অসম্ভব। তাই তিনি তাদের ছোট ছোট দলে একত্র হয়ে বিভিন্ন মারকাজ বা ধর্মচর্চা কেন্দে  সময় কাটানোর জন্য অনুপ্রাণিত করতে লাগলেন। এসব মারকাজে আলোচনার মাধ্যমে মুসলিম জীবনের রীতি-নীতি বুঝিয়ে দেয়া হতো। মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) জীবনভর পথহারা মানুষকে সত্য-ন্যায় তথা ইমান-আমলের পথ দেখান। ক্রমেই তার তাবলিগি মেহনত বিপুল জনপ্রিয়তা, জনসংশ্লিষ্টতা ও সমর্থন অর্জন করতে সক্ষম হয়। টঙ্গীর তুরাগপাড়ে আজ সম্মিলন না বিশ্ব ইজতেমা নামে পরিচিত এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ধর্মীয় অনুভূতি। নির্বিঘেœ সম্পন্ন হয় হোক এই আয়োজন।
আল্লাহ তায়ালার দেয়া জান-মাল আল্লাহর রাস্তায় খরচের মাধ্যমে ১. কালেমা, ২. নামাজ, ৩. ইলম ও জিকির, ৪. ইকরামুল মুসলিমিন (মুসলমানের সম্মান-সহমর্মিতা), ৫. সহিহ নিয়ত (কর্মের পরিশুদ্ধতা) ও ৬. তাবলিগ (ধর্মের প্রচার) এ ‘ছয় উসুল’-এর (মূলনীতি) ভিত্তিতে মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) তাবলিগের কাজের মাধ্যমে ইসলামি পুনর্জাগরণ এবং এর শিক্ষাকে সর্বজনীনতা দান করেন। মুসলিম ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের বিশাল সৌধ নির্মাণের মহান কারিগর মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস (রহ.) ১৯৪৪ সালের ১৩ জুলাই মাত্র ৫৯ বছর বয়সে বর্ণাঢ্য জীবনের অবসান ঘটিয়ে কোটি কোটি ভক্তকে শোক সাগরে ভাসিয়ে মহাপ্রভুর ডাকে সাড়া দেন। আল্লাহ তার কবরকে জান্নাতের বাগানে পরিণত করুন।

সৌজন্যে : মানবকণ্ঠ

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

বিকৃত যৌনতায় দিশেহারা জাতি: সমাধান কোন পথে?

শাইখ মিজানুর রাহমান আজহারী: বাংলাদেশে প্রায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ধর্ষণ হচ্ছে। নারীকে বিবস্ত্র করা ...