রোকন রাইয়ান : কওমি মাদরাসাগুলোকে যে কারণে অনেকে খয়রাতি শিক্ষা বলেন, তার প্রধান হলো জনসাধারণের দান। মূলত মাদরাসাগুলো ব্যাপক জনসম্পৃক্ততা ও তাদের সততার কারণে মানুষ এ প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থাশীল। তাই এখানে সরাসরি আর্থিক সহায়তা করেন তারা। যা কোনো মাধ্যম ছাড়া উপস্থিত হয়। কিন্তু একই প্রশ্নে অভিযুক্ত হয় দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলগুলো? শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুারো’র ২০১১ সালের দেয়া তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক কোটি ৬৯ হাজার ৫৭ হাজার ৮৯৪ জন। অন্যান্য স্তরের মধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত রয়েছে ৭৫ লাখ ১০ হাজার ২১৮ জন শিক্ষার্থী। স্কুলের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরগুলোতে প্রায় দুই কোটি ছাত্র/ছাত্রী ফ্রি পড়ালেখা করছে। তাদের কোনো প্রকার বেতন-ভাতা দিতে হয় না উপরন্তু এদের ঝরে পড়া রোধ করতে সরকারি উদ্যোগে চাল-গম ও উপবৃত্তি চালু রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাবৃত্তি এবং ব্যক্তি ও সামাজিক সংগঠন কেন্দ্রিক শিক্ষা উপকরণসহ আর্থিক সহায়তা প্রদান। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, এই দুই কোটি শিক্ষার্থী ফ্রি পড়ালেখার খরচ দিচ্ছে সরকার, সেই সঙ্গে শিক্ষকদের বেতন ভাতাও, কিন্তু সরকার টাকাটা পাচ্ছে কোথায়? এই টাকাও সাধারণ জনগণের গায়ের ঘাম শুকানো টাকার অংশ। মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় যেসব পণ্য কিনছে সেসব থেকে বড় একটা অংশ কর হিসাবে যাচ্ছে সরকারের কাছে। সেই জনগণের টাকাই বিভিন্ন হাতঘুরে যাচ্ছে স্কুল, বিদ্যালয়গুলোতে। এখানে কোনো রকম বাছ-বিছার না থাকায় আসছে ঘুষ-চুরি ও দুর্নীতির টাকাও। যে কারণে এসব প্রতিষ্ঠানে পড়ে কিছু কিছু ছাত্র বিপথগামীতার দিকেও ধাবিত হচ্ছে। হারাচ্ছে মেধা ও উৎপাদন ক্ষমতা এবং নৈতিকতাবোধ। সমাজে অপরাধমূলক কর্মকা- বাড়ার দায়ও নিতে হচ্ছে এদের অনেককেই।
এ বিষয়ে কথা বললে বিশিষ্ট আলেম গবেষক ও দেশ অধ্যয়ন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী লিখনীকে বলেন, কওমি মাদরাসা সূচনাকালে এমনটা থাকলেও এখন এ কথা বলার সুযোগ নেই। এ ধারায় বর্তমানে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ সম্পৃক্ত। এর চেয়ে বড় বিষয় কওমি মাদরাসায় যে পরিমাণ দান আসে তার চেয়ে বেশি দান যায় স্কুল-আলিয়ায়। তবে সেটা অদৃশ্য হওয়ায় চোখে পড়ে না। আর কওমি মাদরাসায় আসে সাধারণ জনগণের ভেজালমুক্ত উপার্জনের টাকা। যেটা তারা মনের তৃপ্তির জন্য দিয়ে থাকেন। সুতরাং এর জন্য কওমি মাদরাসাকে দরিদ্রবান্ধব বলা অনুচিত ও বোকামি।