শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১:১২
Home / সৌভাগ্যবতীর সাথে সাত বছর – আদর্শ স্বামী-স্ত্রীর এক উজ্জল নমুনা

সৌভাগ্যবতীর সাথে সাত বছর – আদর্শ স্বামী-স্ত্রীর এক উজ্জল নমুনা

সৈয়দ আনোয়ার আব্দুল্লাহ::
এক.
হাকীম সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ 01আমার গৃহমুখী সংসার জীবনের আজ সাত বছর। প্রিয়তমা স্ত্রীর প্রেমময় উপাখ্যান বা সূখময় জীবনের কথা কালির অক্ষরে লেখা কঠিন। প্রেমাবেগ যেখানে বেশি ভাষা সেখানে বাধাগ্রস্থ।
বভঘুরে বহিরমূখী একজন কবি ও স্বপ্নচারী সমাজকর্মীকে কিভাবে গৃহমুখী করতে হয় ওর সেই প্রেমময় কৌশলের কাছে আমি পরাজিত। বৃষ্টিস্নাত ১৯শে-মে ২০০৯ সালের এমনি এক দিনে আমার গৃহকে আলোকিত করে তার আগমন। চেম্বার ছাড়া যদিও আমি ঘরেই এখন বেশি সময় কাটাই তবুও এই সাত বছরে খুব একটা সময় ওর সূখের পেছনে দিতে পারি নি। আমার একেকটি গ্রন্থ প্রকাশের পেছনে দিন-রাতে তার কতোটা হক আমি নষ্ট করেছি কেবল সেই জানে। হাসি মুখে স্বামীর সব কাজে প্রেরনাদাত্রী হয়ে কাজ ও সহযোগীতা করার নারী বর্তমান সময়ে এজগতে খুব কমই। কেবল একজন লেখকেরর স্ত্রী-ই বলতে পারবে কাগজ- কলমের নেশায় মত্ত সাহিত্যের নেশাখোর মানুষদের সংসার করা কতোটা কষ্টের। হাসিমুখে স্বামীর সকল কল্যানমূখী কাজে স্বামীর পাশে সর্বদা প্রেরনাময়ী হয়ে থাকার মতো এক প্রেমময়ী জীবনসঙ্গিনী আমার জীবনে দয়াময় মহান প্রভুর সবচেয়ে বড় দান।
কোরানের সেই আয়াতের বাস্তব নমুমা সে,
“তিনি তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছি তোমাদের শান্তির জন্য, যাতে তোমরা পারস্পারিক ভালবাসা লাভ করতে পার, যা চিন্তাশীলদের জন্য বহু নির্দেশন।
(সুরা আর-রুম ২১)
.
দুই.
যতোক্ষন বাহিরে থাকি গৃহের শত ব্যস্ততায় সে ফোন করে ঘন্টায় কয়েকবার খোঁজ খবর নিবে। রাত যতো গভীরই হোক না কেন খাবার সাজিয়ে বসে থাকবে। এক সাথে ভাত খাবে। এমন কি একটি ফল বা কোন নাস্তা সেটাও একা খাবে না আমাকে ছাড়া। এই সাত বছরে তার এই প্রেমসিক্ততায় একটুও ভাটা পড়ে নি। হয়তো ইনশাল্লাহ কোনদিন এই মহব্বত কমবেও না। বাসায় যাবার মুহুর্তে ঘড়ি দেখে দরজায় যেন কান লাগিয়ে দাড়িয়ে থাকে। পায়ের আওয়াজ পেলেই দরজা খোলে দেয়। রাতজেগে লেখালেখি করা আমার বদ-অভ্যাসের একটি। কিন্তু কতোরাত সেও কিছু না বুঝেই গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থেকেছে তার ইয়াত্তা নেই। কখনো গরম দুধ, কফি কিংবা চা এনে দিবে। যেন আমার কষ্ট না হয়। আমি যে কোন কাজে সময় দেই এতে ওর কোন আপত্তি, অনুযোগ, অভিযোগ নেই। কারন তার দৃঢ় বিশ্বাস আমার সব কাজই দ্বীনের অংশ।সে স্ত্রী হিসাবে সবরের দ্বারা এসব কাজের একটি অংশের ভাগীদার হবে। এই চিন্তাটি থাকে পুলকিত করে।
.
তিন.
আমার দ্বীনী কাজে সহধর্মীনী হিসাবে এই সাত বছর ধরে কল্যানময়ী হিসাবে সেই প্রধান সহযাত্রী ও প্রেরনাদাত্রী। দাওয়াত ও তাবলীগে সে মাস্তুরাতের মেহনতের সাথী। নিজেও একনিষ্ট একজন দা’য়ী। ফলে বোশেষ করে আমার দাওয়াতের মেহনতের ক্ষেত্রে প্রিয়তমা স্ত্রী-ই আমার প্রধান সহচর। আমার চেয়ে তার ভেতরেই বেশি পেরেশানী ও ফিকির থাকে আজ তোমর দ্বীতিয় গাশত, আজ মাকামী গাশত, আগামী এতো তারিখ তিনদিনের জামাত বের হবে, আজকে তো সবগুজারী, এই সপ্তাহে মাস্তুরাতের জামাত বের হবে, এভাবে প্রতিদিন আমার দাওয়াতের এককটি আমলের কথা বার বার স্মরন করিয়ে দিবে। যেন সদা ব্যস্ত আমি গাফলাতির ধোকায় পরে ভুলে না যাই দ্বীনের এই গুত্বপূর্ণ কাজ। প্রতিদিন ঘরের তালিম, মশক, পরার্মশ আর ঈমানী মোজাকারা রুটিন অনুযায়ী তার উদ্দ্যোগেই হয়ে থাকে। তালিমের সময়মত বাসায় পৌছতে না পারলে ফোনের উপর ফোন করবে। ঘরের মেহনত কোনদিন মিস হলে দ্বীনের স্বার্থে সে অভিমান বা অনুরাগ করবে। দ্বীনী কোন বিষয় ছাড়া দুনিয়াবী কোন স্বার্থে আমি কোনদিন থাকে রাগতে দেখি নি। দুনিয়ার কোন বিষয়ে তার অতি আগ্রহ কখনো নেই। পেল শুকরিয়া না পেলেও সবর আলহামদুলিল্লাহ। হযরত আলী রায়িঃ তাই বলেছেন, “দুনিয়াতে সবচেয়ে সুখি সেই পুরুষ যাকে আল্লাহ পূন্যবতী স্ত্রী দান করেছেন। ”
আমি তাদের একজন।
.
চার.
অন্তিরনে থেকেই দ্বীনী কাজে তার সহযোগীতা কতোটা ব্যাপক যা অনেকেই চিন্তা করতে পারবেন না। উম্মহর প্রতি দরদ আমাকে ওর হাতধরে দ্বীনের জন্য সারা দুনিয়া সফরের স্বপ্ন দেখায়। তার স্বপ্ন সারা পৃথিবীর তৃষ্ণার্ত নারীদের কাছে সে দাওয়াতের মেহনত করবে। মাস্তুরাতের জামাতে সংসার ও ছোট্ট সোনামনিদের নিয়ে এখন খুব বেশি সময় দিতে না পারলেও দাওয়াতের মেহনতের জন্য বিভিন্ন দেশের ভাষা শিখার প্রতি তার আগ্রহ চোখে পরার মতো। দ্বীনী দাওয়াত ও তাবলীগের জন্য তার প্রচেষ্টা আন্তরিকতা, কোরাবানী, সবর ও কষ্ট সহ্য করার তার কাছে স্বাভাবিক বিষয়। পতিবেশি মহিলাদের দ্বীনী ফিকির, তাদের মাহরাম পুরুষদের আল্লাহর রাস্তায় পাঠানো, আত্মিয়দের দ্বীনী মেহনতের ফিকর, মাহরাম পুরুষদের নিচে মেহনত নিয়ে সব সময় ফিকির করে। বিশেষ করে স্বামীর দ্বীনী ও ঈমানী লাইনে অনুপ্রেরনা হয়ে কাজ করা তার জীবনের উদ্দেশ্যের অন্যতম। আল্লাহ পাক কোরআনে এই কথাটিই বলেছেন, “মুমিন পুরুষ মুমিন নারী একে অপরের (দ্বীনী) কাজে সহযোগী, তারা একে অপরকে ভাল কাজের দিকে দাওয়াত দিব, আর মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে, তারা রাসুলের কথা মেনে চলে, তাদের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষণ করবেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহ অতিশয় ক্ষমতাবান ও হেকমতওয়ালা। (তওবাহ -৮১)13220943_1713010595653906_6337978929280658734_n
.
পাঁচ.
সেই প্রথম যেদিন নববধু হয়ে আমাদের গৃহে প্রবেশ করেছিল, সেদিন থেকে পুরো সংসারের চাবী তার হাতের মোটোতে মা তুলে দেন। এরপর থেকে পুরো পরিবারের কটিন বুঝা তার উপর। বাবা (শশুর) কে ঔষধ খাবার কথা মনে করিয়ে দেয়া। উনার মন মতো খাবর রান্না করে দেয়া। কোথাও যাবার সময় ব্যাগ কাগজ পত্র ঘুচিয়ে দেয়া, আব্বার সংগহশালা ও গ্রন্থাগারটি পরিস্কার ও অঘোচালো লেখক শশুরে বই কাগজ কলমকে পরিপাটি করে দেয়া। মায়ের মতো পরম যতনে সব গভীর মমতায় করবে। আম্মার আব্বা সবাইকে প্রায়ই বলেন, আমি শৈশবে মাকে হারিয়েছি, মায়ের আদর আল্লাদের স্বাদটুকো বুড়ো বয়েসে এসে পাচ্ছি। কামরুন আমার পুত্রবধু নয় সে বুড়ো খোকা খোকির মাই (আম্মা)। সে বাবার বাড়ি নাইওর গেলে আব্বা কদিন পরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কারন তিনি তার এই মায়ের হাতের খাবার ছাড়া খেতে পারেন না।আব্বা আম্মা দুজনই আদর করে থাকে মাই বলে ডাকেন। আম্মার সামান্য অসুখ হলেই সে ভাত মুখে তুলিয়ে খাওয়ানোর বায়না ধরবে। তেমনি ভাবে আম্মাও থাকে মেয়ের মতোই ভালবাসেন।মায়ের কোন মেয়ে না থাকায় তার সেই অভাব পূরন করেছেন তাকে দিয়ে। ওর কখন কি লাগবে, কখন কি প্রয়োজন, কি দরকার সব কিছুর খোজ রাখেন আম্মা। তিনিই সব আনিয়ে দিবেন।
এই যে পারিবারিক জান্নাতি এই সুখের আবহ এটা সেই হাদীসের বাস্তব প্রতিফলন, ” দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম বস্তু হলো নেক স্ত্রী।
.
ছয়.
শরীয়তের যে কোন বিষয়ে তার পাবন্দি আর গোনাহ থেকে বাচার ব্যকুলতা আমি এযামানায় তা চেয়ে বেশি দ্বীতিয় কোন নারীকে দেখিনি। সুন্নতের প্রতি এশক আর তাকওয়ার প্রতি তার চুম্বকায়িত টান বিস্ময়কর। সুন্নতের খেলাফ সামান্য কাজও তার মেজাজর উল্টো। বড় হওয়ার পরে কোনদিন কোন মাহরাম পুরিষ তার চেহারা দেখেনি। শরীয়া পর্দা তার কাছে সবচেয়ে বড় আমল। ফলে আল্লাহর ফজলে আমাদের পরিবারের ও আত্মীয় স্বজনদের ভেতর পুরুষদের মধ্য কেবল আব্বাই তাকে দেখেছেন। আর কেউ দেখতে পারে নি। বাচ্ছাদের তরবিয়তের ক্ষেত্রে সে এতোটাই সচেতন, আমার প্রথম সন্তান পেটে থাকা অবস্থা থেকে দেখে আসছি কেবল কবিরা নয় ছগিরা (ছোট) গোনাহ থেকে সে নিজেকে বাচিয়ে রেখেছে। বিশেষ করে গীবত শুনার ক্ষেত্রেও সে সর্তকতা অবলম্বন করে। বাচ্ছাদের পোশাক পরিচ্ছেদ, দোয়া কেলাম, আদব আখলাক শেখানোর ক্ষেত্রে তার প্রচেষ্ট অবাক হওয়ার মতো। “তুমি আমাকে একজন নেককার মা দাও, আমি নেককার পৃথিবী দিব।
সংসার, ঘর দোয়ার পরিপাটি করে রাখা, (পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতি ওর একটা বিশেষ ঝোক রয়েছে) বাচ্চাদের লালন পালন, দাওয়াতের মেহনত, তালিম, সবকিছুর ভেতর দিয়েও নফলিয়াত নামাজ তেলাওয়াত, সকাল- বিকাল তাসবিহাতের আমাকেও ঈষান্নিত করে। তার চোখের পানি আর দোয়া -মোনাজাতেই আমি গোনাহগার দুনিয়ার বুকে এতো সুখে ও ইজ্জতের সাথে আছি। তার জীবনে আমলের যে বরকত এটা দেখে অনেকেই বিস্মৃত হন, কোরআন পাকের সেই আয়াত আমাকে মনে করিয়ে দেয়, “মুমিন নারী হোক বা পুরুষ হোক, তারা যদি নেক আমল করে আমি তাদের পবিত্র (বরকতময়) জীবন দান করব।

সাত.
দুনিয়ার সুখ ক্ষনস্থায়ী আখেরাতের সুখ চিরস্থায়ী। ওর জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য যা আমাকে কোনদিন স্মরন করিয়ে দিতে ভূলে না। যে জান্নাত আমাদের আসল ঠিকানা। আমাদের এই প্রেমময়তা, এই ভালবাসা যেন হয় জান্নাতে সুখের জন্য। না হলে মুহর্তে সব ছাড়খার হয়ে যাবে। পরিবার প্রিয়জন ভাল খাবার খাওয়ানো, ভাল গৃহে রাখা, সুন্দর দামী পোষাক পড়ানো মূল জিম্মাদারী নয়,বরং জীবনে তাদের সবচেয়ে বড় হক তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচিয়ে জান্নাতি বানানোর ফিকির করা। তখনই এই সূখ স্থায়িত্ব লাভ করবে। দুনিয়ার ক্ষনস্থায়ী জীবনের সূখ আসল সূখ নয়, দুনিয়ার দুঃখ আসল দুঃখ নয়। আখেরাতের অনন্ত জীবনের চিরস্থায়ি সূখ আসল সুখ, আখেরাতের কষ্ট আসল কষ্ট। সেজন্য প্রস্তুতি নেয়াই প্রেমময় জীবনের একমাত্র টার্গেট। আল্লাহ তায়ালার এরশাদ, “ধনসম্পদ ও সন্তান -সন্ততি তো ক্ষনস্থায়ী জীবনের সৌন্দর্য্য মাত্র। ( সুরা কাহাফ ৪৬)
হে আল্লাহর তেমার ইচ্ছায়- ই, আমাদের এই গভীর ভালবাসার বন্ধন। তুমি আমাদেরকে দুনিয়া আখেরাতে সুখময় জীবন দান কর।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...