(পর্ব-১)
কলিগুলো ফুল হোক, স্বপ্নের চাষ হোক
আগামীর মা’মুখে কথা থাকুক একটাই-
____________বিহী ক্বা-লা হাদ্দাসানা…
লিখেছেন: রশীদ জামীল
অনেক ভেবেও যে ব্যাপারটির কোনো কূল-কিনারা আমি করতে পারিনি, সেটি হল, ‘মাদরাসাতুল বানাত’ যদি, তাহলে বাংলায় কেনো ‘মহিলা মাদরাসা’ বলা হয়? ‘বানাত’ মানে তো মহিলা না। ‘বানাত’ তো ‘বিনতুন’র বহুবচন। ‘বিনতুন’ মানে কি মহিলা?
গার্লস স্কুল না হয় নাই বলা হল, বালিকা মাদরাসা না বলার তো কোনো কারণ ছিল না। নামে খুব কিছু যায় আসে না আবার অনেক কিছুই যায় আসে। কৈশোরিক গন্ধ গা থেকে ঝরে না পড়া পিচ্চি মেয়েগুলোকে মহিলা বানিয়ে ফেলার এই ব্যাপারটি মোটেও ভাল লাগে না আমার। দরকার তো ছিল না।
এই খামখেয়ালী?
হয় আরবি ঠিক করা দরকার, না-হয় বাংলা। ‘মাদরাসাতুল বানাত’ বলতে হলে বাংলায় বলা হোক ‘বালিকা মাদরাসা’। আর ‘মহিলা মাদরাসা’ বলতে হলে আরবি করা হোক ‘মাদরাসাতুন নিসা’। নামে অনেক কিছুই যায় আসে।
দুই
মহিলা(!) মাদরাসার সম্মানিত পুরুষ কর্ণধারগণ!
_______ হালকা কথা বলে উড়িয়ে দিতে চাইলে জানিয়ে রাখি। এভাবেই ছেটে যায় স্বপ্নের ডালপালা। ঢুকরে কেঁদে উঠে প্রত্যাশার পাপড়িগুলো। নিরবে সরব হয় অব্যক্ত হতাশা। জমা হয় মনের অরণ্যে। এমনই হয়ে থাকে। এমনই হয়। যদি হয়, সময়ের আঘাত ধেয়ে আসে। স্বপ্নরা আকাশে ভাসে।স্বেচ্ছাচার কখনো কল্যাণ বয়ে আনেনি। সুন্দরের চাষাবাদে বাঁধা তো নেই কোনো। কেনো তবে পড়ে থাকা সম্মোহক ধূম্রজালে।
আমার জানামতে বাংলাদেশে একটিমাত্র মহিলা(!) মাদরাসাই আছে হান্ডেড পার্সেন্ট মহিলা অধ্যুষিত। শিক্ষকতা করছেন, তো মহিলারাই করছেন। শায়খুল হাদিসও মহিলা। এহতেমামের দায়িত্বে যিনি আছেন, তিনিও মহিলা। ম্যানেজমেন্টেও আছেন মহিলারাই। সেখানে কোনো পোষ্টেই কোনো পুরুষ নেই। বাকীগুলো এখনো পুরুষ নিয়ন্ত্রিত মহিলা মাদরাসা। ‘মহিলা মাদরাসার সম্মানিত পুরুষ কর্ণধারগণ’ বলার এই হল শানে নুজুল।
তিন
আজকের মেয়েগুলোই আগামীতে মা হবে। তাদের একটি বাগান হবে। বাগানের পরিচর্যায় একটুকরো ভালবাসা মুখ তুলে তাকাবে। স্বপ্নের চাষ হবে সেখানে। কষ্টের আনাগোনা, কায়িক পরিবর্তনের হানা, সময়ে-অসময়ে। বড় আনন্দের এই কষ্ট।
তারপর…
… তারপর, কলি হবে। ফুল হবে। ফুলে ফুলে ভরে উঠবে জীবনের মধ্যদুপুর। ছড়িয়ে যাবে সুরভী, দূর দিগন্তের অপারে। গেয়ে উঠবে মানবতা। বইবে আবার বিশুদ্ধ বাতাস। ফিরবে আবার খাইরুল কুরুনের সোনালি সে দিনগুলো। আর এ জন্য আজকের মেয়েগুলোকে তৈরি করতে লাগবে সেভাবেই। সময়ের উপযোগ মাথায় রেখে। দেশের অর্ধেক নারী। নারীকে এভয়েড করে দ্বীনের প্রসার হয় কীভাবে?
পরিপুরকতার সূত্রে গাঁথা ব্যাপার যেগুলো, সেগুলো নিয়ে তো সেভাবেই ভাবতে হয়। ‘তুম হামে খুন দো, মে তুমে আযাদী দেউঁঙ্গা’ অথবা ‘ আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শ্রেষ্ট জাতি উপহার দেবো’- কথাগুলো তো ফেলনা নয়।
আজকাল অনেক মাদরাসায় ইলমে ফিক্বহ’র মেয়েলি অধ্যায়গুলো মায়েরাই পড়াতে পারছেন। সবচে’ বড় কথা পর্দার ফরজিয়্যাতের কারণে মেয়েদের সুযোগ ছিল না ছেলেদের সাথে মাদরাসায় ভর্তি হয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের। ধন্যবাদ জানাই আমি তাঁদের, যারা কোনো এক সুন্দর বিকেলে ব্যাপারটি নিয়ে ভেবেছিলেন। ধন্যবাদ তাঁদেরও, যারা স্থানে স্থানে বালিকা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে মেয়েদের সামনে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন বোখারি-মুসলিম।
বাংলাদেশে এখন প্রচুর বালিকা মাদরাসা গড়ে উঠেছে। এক সময় এ দেশে কল্পনাও করা যেত না একটি মেয়ে অনর্গল পড়ে যাচ্ছে হাদিসের এবারত! ওয়া বিহী ক্বালা হাদ্দাসানা…!
এভাবেই, আগামী প্রজন্মের মাঝে দ্বীনিয়াত যদি জিন্দা রাখতে হয়, তখনকার মা’গুলোকে সেভাবেই তৈরি করতে লাগবে। কাজটা শুরু করতে লাগবে এখন থেকেই। আর এ জন্যে এই সময়ে স্থানে স্থানে গড়ে উঠা বালিকা মাদরাসাগুলোকে আমি স্বাগত জানাই।
চার
বালিকা মাদরাসা (তাদের ভাষায় মহিলা মাদরাসা) নিয়ে আমার কৌতূহল ছিল অনেক। পড়ালেখার মান, ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্ত্বা… কীভাবে কী হয়ে থাকছে, একটু খোঁজ নিতে শুরু করলাম। এটি একটি কঠিন কাজ ছিল। সচরাচর আমরা যে কোনো মাদরাসায় গিয়ে হানা দিতে পারি। বলতে পারি, পত্রিকার জন্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করছি। ছাত্রদের সাথে কথা বলা দরকার। কর্তৃপক্ষ সুযোগ করে দেন। না দিলেও সমস্যা ছিল না। ছাত্রদের সাথে ওয়ান টু ওয়ান কন্ট্রাক্ট করে একটু ভুজুং-ভাজুং দিয়ে পেটের ভেতরের অনেক খবর বের করে ফেলা যায়। কিন্তু মহিলা(!) মাদরাসাগুলোর বেলায় এ সুযোগ তো নেই। মেয়েদের সাথে দেখা করে তাদের সুখ-দুঃখের কথাগুলো সামনে নিয়ে এসে কিছু বলা…সুযোগ তো নেই।
আবার, হাওয়ায় ভর করে তো লেখাও যায় না। তথ্য-উপাত্ত লাগে। এ জন্য প্রথমে আমাকে আমার চৌদ্দগুষ্টীর মধ্যে কোন কোন মেয়ে মাদরাসায় পড়ালেখা করছে, তাদের একটা তালিকা তৈরি করতে হল। বোন-ভাগ্নির লম্বা একটা তালিকা দাঁড়িয়ে যাবার পর তাদের সাথে কথা বলতে শুরু করলাম আমি। অনেকগুলো মাদরাসার ডাটা সংগ্রহ করা হল। এখন আমি মহিলা মাদরাসাগুলোর ভেতরগত ইতিনেতি অনেক ব্যাপার-স্যাপারই বলে দিতে পারব। বিস্তারিত অন্য কোথাও বলা হবে। আজকে শুধু ইতিবাচক দিকগুলোই নিয়েই কথা বলি।
পাঁচ
একাগ্রতার ব্যাপারটি ছেলেদেরচে’ মেয়েদের মাঝেই বেশি থাকে। অথচ এদেশের মেয়েগুলোকে বঞ্চিতই রাখা হয়েছে, দিনের পর দিন। তাদের ট্যালেন্টকে কাজে লাগানোর ব্যাপারটি আমলেই নেয়া হয়নি দীর্ঘদিন। সিলেটের প্রখ্যাত একজন মুফতি কাম মুহতামিম, নাম বললে সবাই চিনে ফেলবেন-এমন, শহরের একটি মাদরাসায় দারসে বুখারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার পর উনার সামনে, অন্তরাল থেকে একটি মেয়ে যখন বুখারি শরিফের এবারত পড়ল, বিস্মিত হয়ে তিনি বললেন, ‘একটি মেয়ে এভাবে এত চমৎকার করে শুদ্ধভাবে এবারত পড়তে পারে- আমার কল্পনাতেও ছিল না! মহিলা মাদরাসা নিয়ে আমার নেতিবাচক একটা ধারণা ছিল। এই ধারণা এবার পাল্টে ফেলতে হবে।
চিন্তার জগতে সংস্কারের কথা অনেকদিন থেকেই বলে আসা চলছে। চিৎকার করে বলতে বলতে আমরা কিছু মানুষ গলা ভেঙে ফেলছি; মেয়েগুলোকে ইসলাম যে অধিকার দিয়েছে, সেটা তাদের ভোগ করতে দেয়া হোক। আল্লাহপ্রদত্ত সুবিধাদি তাদের থেকে কেড়ে নেয়ার অধিকার কারো নেই। তিনি যতবড় যেই হোন।
ছয়
এই বালিকা মাদরাসাগুলো নিয়ে এখনো অনেকের অসন্তোষ রয়ে গেছে। তাদের কথা, এতে করে ফিতনার আশংকা রয়েছে। তাছাড়া মেয়েদের এত পড়ালেখার দরকার কী! বেহেশতি জেওর আর নিয়ামুল কোরআন পড়তে পারলেই তো হল!
আমি ঠিক বুঝি উঠতে পারি না তাদের চিন্তার প্রসারতা কত ফিট চৌবাচ্চায় আবর্তন করে! আমি আমার বোনকে মেডিক্যাল কলেজে পড়তে দিয়েছি! দোয়া চাইতে গিয়ে মৃদু তিরস্কার ঝুটল কপালে। ‘মেয়েদের অসব পড়িয়ে লাভ কীরে বাবা? ওদেরকে নামাজ-কালাম, মসনূন দোয়া-দুরুদ শিখিয়ে দ্বীনদার ছেলের সাথে বিয়ে দিলেই তো দায়িত্ব আদায় হয়ে গেল। খামোখা ‘ঝামেলা’ করার দরকার কী?
কিন্তু বিস্মিত হই সেই তিনিই যখন উনার আহলিয়া মুহতারামাকে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে মহিলা ঝামেলা(!) তালাশ করেন!! হযরতকে কে বোঝাবে, আমি আমার বোনকে যদি মেডিক্যাল কলেজে পড়তে না দিই, তাহলে উনার ওয়াইফকে চেকাপ করানোর জন্যে মহিলা ডাক্তার তিনি পাবেন কোথায়?
তাঁরা সব সময় দোয়া করেন এভাবে, ”আনেওয়ালা নসল যেনো হেদায়তের আলো-বাতাসের মাঝেই বেড়ে ওঠতে পারে। প্রতিটি পরিবারেই যেনো দ্বীনদারি জারি থাকে”। আবার মেয়েগুলোর উচ্চ দ্বীনিয়াত শিক্ষা দেওয়া, দাওরায়ে হাদিস পাশ করে আলেম হওয়া…স্বীকৃতি দিতে এখনো কুণ্ঠা বোধ করেন।
সাত
আলেমা না বলে ইচ্ছাকরেই আলেম বললাম আমি। ‘আলেমা’ শব্দটি আমি ব্যবহার করতে রাজি হব না। লিখছি বাংলা, আমি বাংলা রীতিই অনুসরণ করবো। এটি আমাদের সংসদীয় সম্ভোধন। সংসদ পরিভাষায় মাননীয়া বা নেত্রী বলে কিছু নেই। সম্ভোধনের ক্ষেত্রে সব সমান।
দ্বিতীয় কথা এবং মূল কথা হল, একটি ছেলে যখন দাওরায়ে হাদিস পাশ করে, তাঁকে আলেম অমুক বলা হয় না! তাঁর জন্যে রয়েছে স্বতন্ত্র একটি পরিশব্দ-মাওলানা। বলাহয় মাওলানা ছলিমুদ্দিন। তাহলে মেয়েদের বেলায় ব্যতিক্রম কেনো? এখানে এত আরবির কায়দা-কানুন ফিট করে আলেম এর স্ত্রী লিঙ্গ হিসেবে ‘আলেমা’ বলার দরকার কী? তাদের নামের পাশে ‘মাওলানা’ জুড়ে দিতে সমস্যা কোথায়?
আর যদি একটি মেয়ে দাওরায়ে হাদিস কমপ্লিট করার পর তাঁর নামের আগে ‘আলেমা’ লিখতে হয়, তাহলে একটি ছেলে দাওরায়ে হাদিস পাশ করার পর তাঁর নামের আগে মাওলানা নয়, ‘আলেম’ লিখা হোক। বৈষম্য তো চলতে পারে না?
আট
একজন নারী। ঠিক নারীও না, কিশোরী-ই বলব আমি। নিতান্তই টিনেজ একটি বালিকা। বাবার বড় আদরের দুলালী। বড় মায়ার এই মেয়েটি তাঁর। সব সময় চোখে চোখে রাখেন। মাঝেমধ্যে অজানা কোনো ভাবনা শংকিত করে ফেলে বাবাকে। তখন তিনি আনমনা হয়ে যান… মেয়েটি একদিন বড় হবে। তুলে দিতে হবে অপরিচিত একটি ছেলের হাতে। সেই ছেলে তাঁর কলিজার টুকরো মেয়েকে কীভাবে রাখবে, কতটুকু ভালবাসা দেবে-কে জানে! মেয়েটি যদি কষ্টে থাকে আর ততদিন তিনি বেঁচে থাকেন, তাহলে দুঃখের আর শেষ থাকবে না। তিনি সেটা সহ্য করতে পারবেন না।
মনের গহিনে একটি আকাঙ্খাও রয়েছে তাঁর। সেটাকে লালন করে চলেছেন তিনি। তিলে তিলে লালিত স্বপ্নটি তাঁর ডানা মেলে সুনীলে। বাগানের মালি তিনি, দুরন্ত এক স্বপ্নচাষা। স্বপ্নের পাঁজর ভাঙার শব্দ তিনি শুনতে চান না কখনো। সময়ের পথ চেয়ে থাকতেও চান না আর। কাল কেমন হবে-কে জানে। অতএব যা হবার আজ হোক। সৌভাগ্য’র জানালা খোলে আছে সামনে। ইচ্ছের পাপড়িগুলো দুলে উঠছে বারবার। সম্মানের মুকুটটি পড়ে আছে নি:শ্বাস দূরত্বে। হাত বাড়ালেই ছোঁয়ে ফেলা যাবে। নিজের করে নেয়া যাবে। তাহলে আর দেরি কেনো? ভালোবাসার ত্রিমুক্তো পাঠ করিয়ে কলিজার টুকরোটিকে পাঠিয়ে দিলেন চন্দ্রপুরিতে। আলোকিত আত্মার আবাহনে মেয়েটি এবার পূর্ণতা পাক।
অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে সংসারি হয়ে গেলেও সাংসারিক পরিপক্ষতা তখনো মেয়েটির মাঝে আসেনি। স্বামীবাড়ি গিয়ে স্ত্রী (ঠালিঘটি) খেলছেন-এমন দৃশ্য এর আগে কেউ আর দেখেনি। অবশ্য ন’বছর বয়স তো খেলাধুলা করারই বয়স।
কর্মব্যস্ত স্বামী মধ্যদুপুরে অথবা শেষ বিকেলে ঘরে ফিরে দেখছেন স্ত্রী হাত পা ছড়িয়ে মেঝেয় বসে কৃত্রিম বাসন-কোসন নিয়ে খেলাধুলায় মশগুল! প্রশ্রয়ী একটা হাসি দিয়ে তিনি নিজেই খেলাধুলার যোগাড়যন্ত্র এগিয়ে দিচ্ছেন। বয়সের এই কমতি পুষিয়ে দেয়া হচ্ছে পরিশুদ্ধ ভালোবাসায়।
যে মেয়েটির তখন হেসেখেলে সময় কাটানোর কথা, দেখা গেলো অই মেয়েটিই হাজার হাজার বিশুদ্ধ হাদিসের বিশ্বস্থ ঠিকানা হয়ে আছে। আমি আমার মায়ের কথাই বলছি। হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবায়ে কেরামের যে তালিকা রয়েছে, সেখানে জ্বলজ্বল করতে থাকা একটি নাম হল আমার মায়ের, হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহার।
বয়সের ক্যাটাগরিতে তলানির কাছাকাছি থাকা একটি মেয়ে, সাহাবায়ে কেরামের হয়ে উঠলেন মধ্যমনি। বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র বিশ্বস্থ সঙ্গিনী ছিলেন বলে নবীকে শুধু দেখেনইনি, অনুভবও করতে পেরেছিলেন তিনি। একজন স্ত্রীই পারেন স্বামীকে পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা করতে। আয়েশা সেটা করেও ছিলেন। আজ হাদিসের পরতে পরতে উম্মত জননীর বিচরণ। আর আয়েশা থেকে বর্ণনা মানেই অথেনটিসিটির প্রশ্নে প্রশ্নাতীত।
নয়
আজকের দিনে, স্থানে স্থানে গড়ে ওঠা বালিকা মাদরাসাগুলো আমাকে আন্দোলিত করে। এই মাদরাসাগুলোকে নিয়ে, এই মেয়েগুলোকে নিয়ে চমৎকার একটি স্বপ্ন দেখি আমি। এদের চেহারায়, এদের কল্পিত চেহারায় আমি হযরত আয়েশার অবয়ব দেখতে পাই। আমি আশা করি এদের মধ্য হতেই একজন কেউ তৈরি হবে যামানার মুজাদ্দিদ হিসেবে। এদের ভেতর থেকেই বেরিয়ে আসবে যুগের সংস্কারক। অন্তত মেয়ে মহলে, আমাদের মা মহলে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য এর কোনো বিকল্প নেই।
মনে রাখতে হবে নারীর পরিচয় চারটি,
সে কারো মা হবে
সে কারো স্ত্রী হবে
সে কারো বোন হবে
সে কারো কন্যা হবে।
সবগুলোর সাথেই জুড়ে আছে আবেগ আর ভালোবাসা। সব থেকে বড় পরিচয়, সে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ। নারীকে শ্রদ্ধা করতে হবে নারী নয়, মানুষ ভেবে। ভালোবাসতে হবে আপন জেনে। সবচে’ বড় ভালোবাসা হচ্ছে তাদেরকে তাদের অধিকার দেয়া। শিক্ষার অধিকার তো বঠেই। এ ক্ষেত্রে সংকীর্ণ মানসিকতা ঝেড়ে ফেলতে হবে। আবেগ থাকবে আবেগের জায়গায়, বিবেক চলবে বিবেকের মতো।
দশ
আবেগের সাথে হোক বিবেকের সন্ধি, কৃত্রিম আবরণে ঢেকে থাকা বোধগুলো জেগে যাক। জেগে ওঠো মেয়ে! যুক্ত হও মুক্তচিন্তার মিছিলে। এ তোমার অধিকার। তোমার প্রতি করুণা নয়?
_________ দু’হাজার দশ। সিলেট শহরে অবস্থিত মাদরাসাতুল
হাসানাইনের ছাত্রী সংসদ ”আন-নাদী আস সাক্বাফী”র বার্ষিক ম্যাগাজিনের জন্য লেখানো।