শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ২:৫৯
Home / মাসিক কিশোর স্বপ্ন সম্পাদক ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভীর ঈমানদীপ্ত লেখা

মাসিক কিশোর স্বপ্ন সম্পাদক ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভীর ঈমানদীপ্ত লেখা

ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী::

দেশ-বিদেশের পরিস্থিতি ক্রমেই হতাশা ছড়াতে শুরু করেছে। গত সংখ্যায় বলেছিলাম হাসতে পারছি না। এবার কী বলবো জানি না। শুধু কান্না আসছে। চারদিকে কেনো এতো অন্যায়? জুলুম? শোষণ? কালো আধিপত্য? অপরদিকে বীরের জাতি মুসলমানরা অচেতন ঘুমে বিভোর হয়ে আছে। এক অঙ্গ ব্যথিত হলে এখন আর সারা অঙ্গে ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে না! আজম আক্রান্ত হলে আরব জ্বলে ওঠে না। কোনো নারীর আর্তনাতে কোনো মু‘তাসিমের সাড়া মিলে না!
এ কী স্নায়ুরোগ পেয়ে বসলো আমাদেরকে?
আন্দালুস আমাদের ছিলো, হারিয়ে গেছে। উসমানিয়া সালতানাতও আমাদের ছিলো, হারিয়ে গেছে। হিন্দুস্তান আমরা শাসন করেছি হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে। মদীনার শাসনের নজির পেশ করেছি। বাদশা আলমগীরের সোনার শাসনে খেলাফতে রাশেদার ছায়া দেখে ইতিহাস তাঁকে বলে— ‘ষষ্ঠ খলীফায়ে রাশেদ’!। সেই হিন্দুস্তানও আমরা ধরে রাখতে পারি নি। ইংরেজরা আমাদেরকে প্রতারিত করেছে। শাসন-বিচ্ছিন্ন করেছে। রাজ্যহারা করেছে। উদ্বাস্তুতে পরিণত করেছে। জুলুমের চাবুকে চাবুকে আমাদের সবুজ মানচিত্র লাল করে দিয়েছে। প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন সুলতান টিপু, তাঁকেও হারিয়েছি। প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন নবাব সিরাজুদ্দৌলা, তাঁকেও হারাতে হয়েছে। গাদ্দারদের হাত ধরে এভাবেই হিন্দুস্তানে অনুপ্রবেশ করেছিলো দুষ্ট জীবাণু—ইংরেজ শাসন। প্রায় ২০০ বছরে কতো জুলুম হয়েছে। গাছে গাছে কতো আলেমকে ফাঁসিতে ঝুলতে হয়েছে। কতো দীনি মাদরাসা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একেবারেই নিকট অতীতের ছবি।
এভাবে আমরা একের পর এক কেবল হারিয়েছি। এখনো কি হারাতে থাকবো? ‘প্রাতকালিন মক্তব’ প্রায় বিলীন হওয়ার পথে। আযানের সুরে আর পাখির কলরবে শিশুরা জেগে ওঠে না। উঠলেও ‘কিন্ডারগার্টেন’ ও ‘ইংলিশ মিডিয়াম’ ওদেরকে ছুঁ মেরে নিয়ে যায়! কী হলো আমাদের? পূর্বসুরীদের সব অর্জনকে এভাবে দুশমনের কাছে বিলিয়ে দেয়ার অর্থ কী?
আমরা কাপুরুষ হয়ে গেছি! আমাদের ঈমানের তেজ কমে গেছে! প্রিয় নবীর প্রতি আমাদের ভালোবাসা কমে গেছে!
আরব বসন্তের পর কী অর্জিত হলো? মিসরে মুবারক অস্ত গেলো বটে কিন্তু সেই কালো ছায়া নিয়ে ‘উদিত’ হলো আবার মুবারকময় সিসি। আহা, সিরিয়া কী শান্তির দেশ ছিলো। বরকতঘেরা সিরিয়া এখন জ্বলছে। ঐতিহ্যবাহী আলেপ্পো জ্বলছে। শিশু-নারী একটু আশ্রয়ের জন্যে কী কষ্ট করছে!
আমরা গর্ব করে বলি, বাংলাদেশে আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। বলতে ভালোই লাগে। শুনতেও বেশ তৃপ্তি লাগে। কখনো বলি— ৯৫ ভাগ। ৯০ ভাগ। কখনো ৮৫ ভাগ।13119817_1720283118214743_7858070241676591735_o
কিন্তু আসলে আমরা কমছি না বাড়ছি?! পরিসংখ্যান কী বলে?
আমরা যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতায় এতোই বেশি, তাহলে সমাজ জীবনে ইসলামের প্রতিফলন এতো কম কেনো?
বাড়ছে মুসলিম নামসর্বস্ব বেনামাযি মুসলমানের সংখ্যাও। অবাধে চলছে হারাম সুদের রমরমা বাজার। সুদ খাওয়ার জন্কাযে মানুষ প্লোরতিযোগিতা করছে। ভাবি, একি জাহান্নামের দিকে ছুটে যাওয়ার প্রতিযোগিতা নয়? কে ঠেকাবে এদের? যেখানে চারদিকে এদেরকে এ জঘন্য গোনাহর কাজে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হচ্ছে?
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ফরজ পর্দা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। হিজাব পড়ার কারণে ছাত্রীরা লাঞ্ছিত হচ্ছে। বহিস্কৃত হচ্ছে। সর্বশেষ ঢাবি’র ঘটনা আমাদেরকে কী বার্তা দিয়ে গেলো?
এদিকে বর্তমান শিক্ষানীতিও ঈমান-আকিদার সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। পাঠ্যপুস্তকে কোমলমতি শিশু কিশোরদের মানসিকতাকে কলুষিত করার জন্যে চলছে নানা অপকৌশল। যখন মুসলিম হিসাবে ওদের ঈমান-আক্বিদাসহ ধর্মীয় মূল্যবোধে গড়ে ওঠার কথা, তখন অবাধ যোৗনতার পাঠ শেখানো হচ্ছে ওদেরকে— কার ইশারায়?
আমরা আসলে কোথায় যাচ্ছি?
নতুন কোনো স্পেনের দিকে?
আতাতুর্কীয় খিলাফত বিধ্বংসী অপশাসনের দিকে?
পাশ্চাত্য সভ্যতার নোংরা পরিবেশের গহীনে?
আল্লাহ! আমাদেরকে রক্ষা করো!
পাঠাও কোনো সাহায্যকারী অভিভাবক!
বাড়িয়ে দাও আমাদের ঈমান আমল মনোবল!
ধুলোয় উড়িয়ে দাও ধর্মের চিরন্তন আদর্শের বিরুদ্ধে সকল চক্রান্ত ও নীলনক্সা!
তুমিই আমাদের একমাত্র ভরসা!

::মাসিক কিশোর স্বপ্ন সম্পাদক
ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভীর ঈমানদীপ্ত লেখা

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...