বৃহস্পতিবার, ১০ই অক্টোবর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ দুপুর ১:২৮
Home / কবিতা-গল্প / একটি গল্প শোনো

একটি গল্প শোনো

কতবতদকফাহীম মুহাম্মদ আতাউল্লাহ ::

এক। একজন বাদশাহ তার উজিরের সাথে কোথাও সফরের উদ্দেশ্যে বের হলেন। চলতে চলতে বাদশাহ উজিরকে জিজ্ঞেস করলেন, উজির সাহেব!! মানুষ যে বলে “মনের সাথে মনের মিল হয়ে থাকে” এই কথাটার মর্ম কী? উজির ছিলেন অত্যন্ত চালাক ও বুদ্ধিমান। বললেন, মহামান্য!! এই কথাটা আমি বাস্তবতার আলোকে আপনাকে বোঝাতে চাই। যদি আপনি রাজী থাকেন।

বাদশাহ রাজী হলেন। এবার উজির বললেন, তাহলে আপনি কিছু সময়ের জন্য আমার সাথে সাধারণ পোষাকে বের হোন। বাদশাহ উজিরের কথামতো শাহী পোষাক ও রাজ মুকুট খুলে সাধারণ বেশে উজিরের সাথে মহলের বাইরে বেরিয়ে এলেন।

পথে চলতে চলতে উজির একজন লোককে আসতে দেখে বাদশাহকে জিজ্ঞেস করলেন, মহাশয়!! লোকটি সম্পর্কে আপনার ধারণা কী? জবাবে বাদশাহ বললেন, মনে হচ্ছে সে একজন নির্বোধ ও মূর্খ। তার কোনো কাণ্ডজ্ঞান নেই। উজির বললো, ঠিক আছে তাহলে একটু যাচাই করে নেই।

উজির এবার লোকটির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, দোস্তো!! বলতো দেখি আমাদের বর্তমান বাদশাহ সম্পর্কে তোমার ধারণা কী? তিনি কেমন লোক??? সে বলতে লাগলো, বুঝতে পারছি না কোথাকার কোন বেয়াকুফ দেশের বাদশা হয়ে বসে আছে। তার তো কাণ্ডজ্ঞান বলতে একেবারেই নেই। সে কোনো ভাবেই বাদশা হবার যোগ্য নয়। বাদশার মতোই ছিলো তার জবাব।

এবার উজির বাদশাহকে নিয়ে আরো কিছু পথ হেঁটে গেলেন। পথে আরেকজন যুবককে দেখতে পেলেন তারা। উজির পূর্বের ন্যায় তার ব্যাপারেও বাদশাহকে জিজ্ঞেস করলেন। এবার বাদশাহ বললেন, তাকে দেখে খুব ভদ্র মনে হচ্ছে। চলার মাঝে কেমন একটা অার্ট আছে। মনে হচ্ছে বেশ ভালো ঘরের সন্তান।

উজির বললেন, চলুন মহামান্য তাকেও একটু যাচাই করে নেই। উজির সামনে গিয়ে যুবককে জিজ্ঞেস করলো, বলো তো ভাই, আমাদের বাদশাহ কেমন? যুবক বললো, দোস্তো!! আমাদের বাদশাহ তো অনেক বুদ্ধিমান। প্রজারা সবাই তার প্রতি সন্তুষ্ট। আমরা ভাগ্যগুণেই এমন একজন বাদশার প্রজা হবার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। তিনি সাক্ষাত ফেরেশতা।

এবার উজির বাদশাহকে বললেন, মহামান্য! দেখুন! অন্যের সম্পর্কে আপনার ধারণা যেমন ছিলো, তার ধারণাটাও আপনার ব্যাপারে ছিলো অভিন্ন। এটাই হলো “মনের সাথে মনের মিল হওয়ার” তাৎপর্য।

দুই। ইদানিং আমরা বেশ নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিতে শুরু করেছি। যার তার ব্যাপারে যাচ্ছেতাই ধারণা পোষণ করেও যাচ্ছি অহরহ। আর মনে মনে খেয়ালি পোলাউ পাকিয়ে যাচ্ছি যে, আমার পোলাউটাই সবচে‘ সুস্বাদু। বাকি সবারগুলোই পঁচা। ফলে বাকিরাও আমার ব্যাপারে অভিন্ন ধারণা নিয়েই বসে আছে।

আমি একজনের বাবাকে গালি দিলে সেতো আমার বাবাকে গালি দিবেই। মৌচাকে ঢিল ছুঁড়লেও কামড় খেতেই হবে এটাই স্বাভাবিক। ইটের বিনিময়েও পাটকেল। তিলকা বিতিলকা। সমানে সমান।

আমি অপরের ব্যাপারে যেমন ধারণা করবো হুবহু ধারণাই সে আমার ব্যাপারে করবে। আমি বন্ধু মনে করলে সেও বন্ধু মনে করবে। আর আমি শত্রু মনে করলে সেও শত্রু মনে করবে। ফলে বাড়বে দূরত্ব। বিভেদ। ভাঙন।

বন্ধু! আমরা সকলেই ঐক্য প্রত্যাশি। ঐক্যের গান গাই। কিন্তু ঐক্য হচ্ছে না। হবেও না। কারণ, আমরা মনের দিক থেকে যোজন যোজন দূরে। একে অপরের ছায়াটা পর্যন্ত মাড়াতে চাই না। আমরা যে পথে চলছি তা ঐক্যের পথ নয়। এপথ ভাঙনের। এপথ বিভেদের। দূরত্বের।

সকলকে এক ছাতার নিচে দেখার প্রত্যাশায়। এক হতভাগ্য দরদী।।
হবে কি কোনো দিন??
[অ’অতাসিমূ বিহাবলিল্লাহি জামী’আওঁ অলা তাফাররাকূ]

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...