ডেস্ক রিপোর্ট :: ৮০০ কোটি টাকা চুরির ঘটনার তদন্ত চলছে নীরবে। অনেকটা ঢিলে হয়ে গেছে তদন্তের কাজ। দিনের পর দিন পার হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কারা এ ঘটনার সাথে জড়িত সে সম্পর্কে এখনো মুখ খুলতে রাজি নয় মামলার তদন্তকারী সংস্থা। তদন্তে চোর সিন্ডিকেটের সদস্যরা শনাক্ত হয়েছে কি না তাও জানা যাচ্ছে না। প্রশ্ন জেগেছে আদৌ কি জানা যাবে, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের অর্থ চুরির সাথে কারা জড়িত? না তারা অধরাই থেকে যাবে? এ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তার দিকে শুরু থেকেই সন্দেহের তীর, তারা এখনো বহাল তবিয়তেই আছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা জানাজানির এক সপ্তাহ পর গত ১৫ মার্চ ঢাকা মেট্রোপলিটনের মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক মো: জোবায়ের বিন হুদা মানি লন্ডারিং আইনে মামলাটি দায়ের করেন। কিন্তু মামলায় আসামি হিসেবে কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫) এর ৪সহ তথ্য ও প্রযুক্তি আইন ২০০৬ এর ৫৪ ধারায় ও ৩৭৯ ধারায় এ মামলা গ্রহণ করা হয়। লোপাট যাওয়া অর্থের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ১০১ মিলিয়ন ডলার। আর ওই দিনই মামলাটির তদন্তভার দেয়া হয় সিআইডিকে।
মামলা দায়েরের পরও দুই সপ্তাহ চলে গেছে। সিআইডি ছাড়াও কয়েকটি সংস্থা এ ঘটনার তদন্ত করে যাচ্ছে। এ ছাড়াও সরকারের তরফ থেকে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির প্রধান করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মো: ফরাস উদ্দিনকে। এ দিকে থানায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডিও অনেকটাই নিশ্চুপ। তদন্তে সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে চাচ্ছেন না। এ দিকে এফবিআই এ ঘটনা তদন্তে সিআইডিকে সহায়তা করতে চাইলেও আদৌ তারা কোনো সহায়তা করছে কি না সে সম্পর্কেও কোনো তথ্য দিচ্ছে না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। ফলে এত বড় অর্থ কেলেঙ্কারির বিষয়টি নিয়ে ক্রমেই রহস্য ছড়িয়ে পড়ছে।
ব্যাংকের অর্থ চুরির ঘটনা ফাঁস হওয়ার পরই কিছু কর্মকর্তার বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। ওই সব কর্মকর্তা এখনো বহাল তবিয়তেই আছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট এবং অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্ট। ফরেক্স বিভাগটিই হলো রিজার্ভের রক্ষক। এ বিভাগই জানে কোন ব্যাংকে কত টাকা রিজার্ভ রাখা আছে। এদের দায়িত্বও গুরুত্বপূর্ণ। তাই ব্যাংকের প্রভাবশালীরাই কেবল এ বিভাগের দায়িত্বে থাকেন। আর অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগটি অনেকটা ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করে থাকে। এ দু’টি বিভাগই অর্থ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একাধিক সূত্র জানায়, এই বিভাগ দু’টির সহায়তা ছাড়া কোনোভাবেই রিজার্ভ চুরি সম্ভব নয়। বছরখানেক ধরেই এই বিভাগ দু’টি থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যক্তিকে বদলি করা হয়েছে। সেখানে বসানো হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্তার অনুগত কিছু লোক। বিনা কারণে ওই বিভাগ থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারী সরিয়ে সেখানে কাদেরকে বসানো হলো এবং কেন ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে সরানো হলো তা এখনো সবার অজানা। ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, অর্থ চুরির পরিকল্পনা থেকেই গুরুত্বপূর্ণ দু’টি বিভাগ থেকে যোগ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরিয়ে সেখানে সিন্ডিকেটের লোকজনকে বসানো হয়। তারা বলেছেন, এ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হলেই অর্থ চুরির সাথে কারা জড়িত তার অনেক কিছুই বেরিয়ে যাবে। আমার দেশ।