মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১১:৩০
Home / প্রতিদিন / জঙ্গি, জিহাদ, মসজিদ ও আলেমসমাজ

জঙ্গি, জিহাদ, মসজিদ ও আলেমসমাজ

103373_286

মোশাররফ হোসেন মুসা ::

পশ্চিমারা সব রকম চরমপন্থাকে বোঝাতে এক্সট্রিমিস্ট শব্দটি বেশি ব্যবহার করে থাকে। তবে সেখানে ধর্মীয় উগ্রপন্থাকে বোঝাতে মাঝে মধ্যে মিলিট্যান্ট ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। বর্তমানে তারা ইসলামি উগ্রপন্থাকে বোঝাতে রাজনৈতিক ইসলাম বাক্যটিও ঘন ঘন ব্যবহার করছে। এ দেশের মানুষ বহু আগে থেকেই ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের ‘জঙ্গিবাদী’ এবং উগ্র বামপন্থীদের ‘চরমপন্থী’ নামে অভিহিত করে আসছে। মনে হয়, এ দেশের মূল্যায়নই যথার্থ।

অবিভক্ত ভারতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের শুরু থেকেই অহিংসপন্থী ও সহিংসপন্থী নামে দু’টি ধারা বিদ্যমান ছিল। অহিংসবাদীরা মুরালিজম বা বহুত্ববাদে বিশ্বাসী ছিলেন। এর কারণ হিসেবে তারা বলতেন- ‘ভারতীয়রা উদারমনা হওয়ায় বিভিন্ন মতাদর্শের লোকেরা এখানে জায়গা পেয়েছে। সে জন্য অহিংস কর্মসূচির মাধ্যমেই ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটাতে হবে।’ এর বিপরীতে সহিংসবাদীরা বলতেন- ‘বিদেশীরা এ দেশকে বারবার দখল করেছে অস্ত্রের জোরে। তাই তাদের তাড়াতে হবে অস্ত্রের মাধ্যমেই।’ সহিংসবাদীরা যুগান্তর ও অনুশীলন সংগঠন গঠন করে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করে (ভারতের বিভিন্ন স্থানে বহু সন্ত্রাসী দলের অস্তিত্ব ছিল)। ব্রিটিশ সরকার তাদেরকে রাষ্ট্রদ্রোহী আখ্যা দিয়ে গ্রেফতার এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছিল। পত্রপত্রিকা ও সুশীলসমাজের কাছে তাদের পরিচয় ছিল ‘চরমপন্থী’। কেউ কেউ পরবর্তীকালে চরমপন্থা ছেড়ে সন্ন্যাসব্রত জীবন বেছে নেয় এবং কেউ কেউ কমিউনিস্ট পার্টিতেও যোগ দেয়। যেমন- অরবিন্দ ঘোষ প্রথম জীবনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে কারাভোগ করেন। পরে জেল থেকে বের হয়ে হিন্দুধর্ম প্রচারে ব্রতী হলেন। এখনো এ দেশের মানুষ উগ্র বামপন্থীদের ‘চরমপন্থী’ নামেই চিনে থাকে। অর্থাৎ চরমপন্থী শব্দটি দিয়ে এমন এক গোষ্ঠীকে বোঝানো হয়, যারা নিয়মতান্ত্রিক পন্থাগুলো পরিত্যাগ করেছে।

ফারসি ‘জঙ্গ’ শব্দের অর্থ যুদ্ধ। যেসব কাব্য-গল্প-উপন্যাস ও বক্তৃতায় যুদ্ধের পক্ষে যুক্তি থাকে জঙ্গিবাদীরা সেসবকেই শুধু সঠিক মনে করে। একই কারণে তারা সুফি-দরবেশদের অহিংস কর্মকাণ্ডকে (এমনকি তাবলিগ জামাতের শান্তিপূর্ণ কর্মকাণ্ডকেও) বিভ্রান্তকারী মতাদর্শ হিসেবে দেখে থাকে।
জঙ্গিবাদ সারা বিশ্বে সভ্যতার সঙ্কট নিয়ে এসেছে। খ্রিষ্টান যাজকেরাও এক সময় জঙ্গিবাদের মতো উগ্রপন্থায় বিশ্বাসী ছিলেন। তারা রেনেসাঁর হাত ধরে উগ্রপন্থা ছাড়েন। তাদের রেনেসাঁর মূলে ছিল ক্ষমা, ভুল স্বীকার, যুক্তিবাদী হওয়া এবং আত্মশুদ্ধি লাভ করা। আরবি ‘জিহাদ’ শব্দটির অর্থ কঠোর পরিশ্রম, চেষ্টা, সাধনা, সংগ্রাম করা ইত্যাদি। কিন্তু জঙ্গিবাদীরা ‘জিহাদ’ শব্দটি সঙ্কীর্ণ অর্থে ধর্মযুদ্ধের পক্ষে ব্যবহার করছে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর প্রচার জীবনে জিহাদ শব্দটি ‘আত্মার মঙ্গলের জন্য পরিশ্রম’ বা সৎকাজ করার অর্থে ব্যবহার করতেন। বর্তমান জঙ্গিবাদের উত্থান দেখে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের প্রবেশাধিকার বন্ধের দাবি করেছেন। তার কথার সূত্র ধরে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবোট বলেছেন- ‘বেশির ভাগ মুসলিম সন্ত্রাসবাদকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করে। তবে অনেকেই নাস্তিক বা বিধর্মীদের হত্যার বিষয়টিকে ন্যায্য প্রমাণ করতে ইচ্ছুক।’ (যুগান্তর, ১০ ডিসেম্বর ’১৫)। জঙ্গিবাদীদের জন্ম কিভাবে ঘটছে, কারা তাদের অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে, সেগুলো ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। তার পরও উপরোল্লিখিত অভিযোগগুলো মিথ্যা প্রমাণিত করতে হলে আমাদেরকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। ভারতের আলেমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মত দেয়া শুরু করেছেন। এ দেশেও কিছু আলেম উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে সাহস করে বক্তব্য দেয়া শুরু করেছেন। তবে তাদের বক্তব্য সরকারের আয়োজিত সভা-সেমিনারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আমরা মসজিদগুলোকে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে প্রমাণ করতে পারি মসজিদ শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার জন্য নয়, এই পবিত্র ঘরগুলো মানুষের ইহলৌকিক বহু সমস্যার সমাধানও দিতে পারে।

দৃষ্টান্তস্বরূপ, প্রতিটি উপজেলায় একটি মসজিদকে ‘মডেল মসজিদ’ হিসেবে ঘোষণা দেয়া যেতে পারে। সরকারের এ রকম একটি চিন্তা আছে বলে জানা যায়। সেই মসজিদে (বিশেষ করে জুমার দিনে) আম মুসল্লিরা ইমামের কাছে মনখুলে তাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা, পারিবারিক সমস্যাসহ নানাবিধ ইহলৌকিক সমস্যার কথা বলতে পারবেন। তার আগে মডেল মসজিদগুলোর পাশে স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পাঠাগার, বিশ্রামাগার নির্মাণসহ নারী-পুুরুষের জন্য পৃথক পৃথক পর্যাপ্ত টয়লেট স্থাপন করতে হবে। সেই সাথে আমাদের আলেম ও ইমামগণ যেন সঙ্কীর্ণতামুক্ত থেকে আকর্ষণীয় ভাষায় ইসলামের সুমহান বাণীগুলো প্রচার করেন, সে জন্য তাদের ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি অন্যান্য শিক্ষায়ও পারদর্শী করে গড়ে তুলতে হবে।

লেখক : গবেষক 
musha.pcdc@gmail.com

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...