বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১০:১৩
Home / ইতিহাস ঐতিহ্য / প্রত্যেক নবীর ওপর ওহি এসেছে মাতৃভাষায়

প্রত্যেক নবীর ওপর ওহি এসেছে মাতৃভাষায়

94935_147

ফিরোজ আহমাদ :: হযরত মুহাম্মাদ সা: আরবে জন্মেছেন। তাঁর মাতৃভাষা ছিল আরবি। আরবি সৌদি আরবের মাতৃভাষা। আরবের লোকেরা আরবি ভাষায় কথা বলেন। হযরত মুহাম্মাদ সা.’র প্রথম ওহি হয় ‘ইকরা’। ইকরা আরবি ভাষা, যার অর্থ পড়ো। হযরত রাসূল সা. সহজে যেন তাঁর মনের ভাব মানুষের কাছে প্রকাশ করতে পারেন, আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত ওহিগুলো বর্ণনা করতে পারেন, মনের ভাব প্রকাশ করতে গিয়ে যেন রাসূল সা.’র কোনো কষ্ট না হয় এবং আরবের লোকজনও যেন সহজে রাসূল সা.’র ভাষা বুঝতে পারে সেজন্যে আল্লাহ আরবি ভাষায় কুরআন নাজিল করেছেন। পৃথিবীর জমিনে এক লাখ চব্বিশ হাজার নবী ও রাসূল এসেছেন। তারা নিজ নিজ ভাষায় দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন এবং উম্মতদের বুঝিয়েছেন। আল্লাহ প্রত্যেক নবীর কাছে নবীর নিজস্ব ভাষায় ওহি পাঠিয়েছেন। যেন ওহির ভাষা বুঝতে নবীর কষ্ট না হয়। সূরা ইব্রাহিমের চার নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আমি কোনো নবীই এমন পাঠাইনি, যে (নবী) তাঁর জাতির (মাতৃ) ভাষায় (আমার বাণী তাদের কাছে পৌঁছায়নি), যাতে করে সে তাদের কাছে (আমার আয়াত) পরিষ্কার করে বুঝিয়ে বলতে পারে।’ সূরা হা-মীম আস সাজদাহর ৪৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আমি যদি এ কুরআন (আরবি ভাষার বদলে) আজমী (অনারব ভাষায়) বানাতাম, তাহলে এরা বলত, কেন এর আয়াতগুলো (আমাদের ভাষায়) পরিষ্কার করে বর্ণনা করা হলো না; কুরআন আজমী ভাষায় অথচ এর বাহক আরবি ভাষার লোক।’ সূরা আশ শুরার সাত নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘এভাবেই (হে নবী!) আরবি কুরআন আমি আপনার ওপর অবতীর্ণ করেছি, যাতে করে আপনি (এর দ্বারা) মক্কাবাসীর ও তার আশপাশে যারা বসবাস করে তাদের সতর্ক করে দিতে পারেন।’

ভাষার ওপর অনেক আয়াত আল্লাহ কুরআনে ওহি আকারে পাঠিয়েছেন। কুরআনে মাতৃভাষা ব্যবহারের ওপর অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন। এ ছাড়া ভাষা একটি জাতির পৃথক পরিচয় ও মর্যাদা বহন করে। যার একটি ভাষা আছে সে জাতি হিসেবে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র। আল্লাহ সুবহানুতায়ালা প্রত্যেক জাতিকে একটি নিজস্ব ভাষা উপহার দিয়েছেন। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা। এই ভাষাতে আমরা কথা বলতে স্বাছন্দ্যবোধ করি। বাংলা ভাষার জন্য আমরা গর্ববোধ করি। আল্লাহ কুরআনে মাতৃভাষার স্বীকৃতি দিয়েছেন। আমাদের প্রিয় ভাষার ওপর পাকিস্তানিরা আঘাত হেনেছিল। আমার মায়ের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল। সেদিন বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে পাকিস্তানিদের অন্যায় আচরণ রুখে দিয়েছিল। বাংলার তরুণ ছাত্র জনতার লড়াই সংগ্রামে মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পাশাপাশি সেদিনের লড়াই সংগ্রাম কুরআনে মাতৃভাষার চর্চার গুরুত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছিল।
ভাষা সংস্কৃতির বাহন। কোনো জাতিকে ধ্বংস করতে হলে তার সংস্কৃতিকে আগে ধ্বংস করতে হয়। এই বিবেচনা সামনে রেখে পাকিস্তানিরা বাংলা ভাষার ওপর আঘাত হানে। বাঙালিদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে। বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজ সংস্কৃতি। আল কুরআনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ভিন্ন ভাষায় যতটা বুঝতে পারব, এর চেয়ে শত ভাগ বেশি বুঝতে পারব বাংলা ভাষায়। অর্থাৎ আমাদের নিজস্ব ভাষায়। আল্লাহ সুবহানুতায়ালা নিজেই তাঁর ওহি বোঝার জন্য মাতৃভাষাকে নির্বাচন করেছেন। প্রত্যেক নবী ও রাসূলের কাছে স্বজাতির ভাষায় ওহি পাঠিয়ে আল্লাহ সুবহানুতায়ালার পক্ষ থেকে নিজ নিজ জাতিকে সম্মানিত করা হয়েছে। আল কুরআনের আয়াতগুলোর মাধ্যমে বোঝা যায় মাতৃভাষা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। অথচ আজকাল আমরা ভিন্ন ভাষার প্রতি অনেক বেশি আগ্রহী। অন্য ভাষায় কথা বলতে পারাকে আধুনিকতা বলি। ছোট ছোট কোমলমতি শিশুদের বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়ে পড়াতে চাই না। বাংলা ভাষার চেয়ে শিশুরা কতটা ইংরেজি পড়তে বলতে লিখতে পারে; এসব নিয়ে অভিভাবকেরা ব্যস্ত।
মা শব্দ কতটা মধুর। যে মায়েরা মা ডাক শুনেছেন তারা শুধু বলতে পারবেন। মা ডাকের সাথে কত আবেগ কত মমতা কত ভালোবাসা জড়িত। এটা কলমে লিখে বুঝানো সম্ভব হবে না। কুরআনে মাতৃভাষা চর্চার প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বাংলা ভাষার প্রতিও আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। এর মাধ্যমে বাংলা ভাষার চর্চা বৃদ্ধি পাবে। বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ হবে। জাতি হিসেবে আমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। কুরআনের প্রতিও যথাযথ সম্মান জানানো হবে।
লেখক : নিবন্ধকার

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...