খতীব তাজুল ইসলাম::
বার্ষিক সভা সম্মেলন মাহফিল যাই বলি একটি গুরুত্বপুর্ণ গণজমায়েত।প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি ও অর্জন তুলে ধরার মোক্ষম সময়। বহুমাত্রিক কার্যক্রম জড়িত একটি প্রগ্রামকে ঘিরে। গনসংযোগের সাথে আর্থিক উন্নতিও কর্মসুচির গুরুত্বপুর্ণ অংশ।খুব যত্নসহকারে দেশের স্বনামধন্য উলামাদের আগমন ঘটে। যাদের বাগ্মিতা আছে কদর একটু বেশী।কয়েক দশক ধরে চলেআসা গৎবাধা শিশুশিক্ষা প্রর্দশনী হামদ নাত আর তেলাওয়াততো আছেই।সাথে দান-খয়রাতের তাকীদ।
বিদেশী মেহমান হলে কদর থাকে আলাদা। মাইকিং প্রিন্ট ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় দেশী-বিদেশীদের নিয়ে থাকে বাহারি প্রচার !
কাংখিত দিনে সেই একই ধারাবাহিকতা।
প্রগ্রাম হয় যে প্রতিষ্ঠানের তা নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা নেই। ৫ম শ্রেণীর মক্তবের ওয়াজের যে ম্যানু বাংলার দারুল উলুম দেওবন্দগুলোর সমান হাল-হক্বীক্বত। একেরপর এক ওয়াজের পালাবদল। কেউ নরম কেউ গরম কেউ কান্দাইয়া কেউ হাসাইয়া কেউ নাচাইয়া কেউ লাপাইয়া বয়ান দেন।গন্ডায় গন্ডায় গরু জবাই করে চলে শিরনী বিতরণ।আমি যদি বলি রাসুল সাহাবাগণের আমল কি তাই ছিলো দ্বীন প্রচারের জন্য ?
তখন বত্রিশ দাঁতের কামড় ধেয়ে আসবে ? আমি হলফ করে বলতে পারি এই সমস্ত রামধুম প্রগ্রাম করে কর্তৃপক্ষ নিজের দুর্বলতাকে ঢেকে রাখার প্রয়াশ মাত্র। জনগণ জানতে চায়…
লেখাপড়া কেমন হলো ?
বিগত দিনের অর্জন ?
ছাত্র উস্তাজের মেধার স্বাক্ষর ?
কর্তৃপক্ষের সুশৃংখল পরিচালনা ?
আগামি দিনের পরিকল্পনা ?
শিক্ষার গুনগত মান যাচাই ?
এগুলোকে ছাইচাপা দিয়ে রাখতেই
ওয়াজ ওয়াজ ওয়াজ নাকি আওয়াজের আয়োজন !!!???
বাহিরের বক্তা এসে সারাদিন সারা রাত ওয়াজ করে তক্তা বানালে তাতে প্রতিষ্ঠানের গুনগতমান কিভাবে বাড়বে বা যাচাই হবে ?!
উনি উড়ে এসে জুড়ে বসে কিছু বাহবা দিয়ে ভিতর আর বাহিরের শুধরানোর পথ কিভাবে বাতলিয়ে দিবেন ?!
জনসাধারণের জন্য একটি আম মাহফিল আর প্রতিষ্ঠানের একটি মাহফিল বরাবর হয় কেমনে জানি ?!
আসলে এসব কেবল ফানি, ফানি আর ফানি মনে হয় ?! বাস্তবতায় হক্বীক্বতে কবে যে আমরা উপনীত হবো আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন!
বার্ষিক সম্মেলন বা ওয়াজ মাহফিলকে কেন্দ্র করে আমরা যা করতে পারতাম!
সাধারণ ওয়াজ মাহফিল কিংবা কোন মক্তব মাদরাসার ওয়াজের কথা বলবোনা। বলবো বড় বড় মাদরাসার বার্ষিক জলসা নিয়ে…
একটা মাহফিল বা সম্মেলনকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করতে পারি।
১- নতুন বছরের বাজেট বাস্তবায়ন।
২- প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি ও অর্জন ওআগামির পরিকল্পনা।
৩- আম খাস ওয়াজ ও নসীহাহ।
ক- সাধারণতঃ বার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্রকরে প্রতিষ্ঠানের নতুন বছরের বাজেট পরিকল্না ও বাস্তবায়ন উদ্দেশ্য থাকে। আর ইহা স্বাভাবিক। পুরো বৎসর শান্তিতে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হলে আর্থিক যোগান খুবই জরুরী। সে ক্ষেত্রে পুরো বাজেট সম্ভব না হলেও বাজেটের বৃহত্ত অংশ আহরণের পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক। ছাত্র উস্তাজ মুহতামিম সবাই মিলে ঝাপিয়ে পড়লে মাস দেড়েক ব্যাপী পরিশ্রমে ভাল ফলাফল আসবে।
কিন্তু বাস্তবে দেখি আমরা ভিন্ন চিত্র । মাহফিলকে কেন্দ্র করে শামিয়ানা মাইক চাটাই লাইটিং ডোকোরেশন ফার্ণিচার বেনার পোস্টার শিরনি ও মেহমানদের হাদিয়া ইত্যাদি বাবদ সকল খরছ কুলিয়ে উঠতে আয়োজক বা কর্তৃপক্ষ হিমশীম খান। সম্মেলনপর প্রতিষ্ঠান বাজেট পুরণের বদলে কর্জের ভার আরো বাড়ে।
এই বাজেট প্রনয়ন ও বাস্তবায়ন কিভাবে হবে বিস্তর আলোচনা অন্য সময়।
খ- যেহেতু মাহফিল বা সম্মেলন এই প্রতিষ্ঠানের। তাই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষারিপোর্ট বিগত দিনের অর্জন আগামি দিনের পরিকল্পনা পেশ চাই। ছাত্র সংসদের পক্ষথেকে সুন্দর রিপোর্ট ও জ্ঞানগর্ব বক্তব্য। আর্ত ও সমাজিক রাজনৈতিক ও বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মহর চ্যালেঞ্জ নিয়ে গবেষণা ধর্মী বক্তব্য। যারা টাইটেল পাশ করছেন তাদের পক্ষথেকে সুন্দর বিদায়ী উপস্থাপনা। প্রতিষ্ঠানের সাংস্কৃতিক বিভাগ থেকে কোরআন হাদিসের উপর বিশেষ নাটক। নাশীদ সংগীত। সুন্দর তেলাওয়াত অর্থসহ। শিশু কিশোরদের বিশেষ প্রগ্রাম। ইফতা বিভাগের বিশেষ প্রতিবেধন। শিক্ষাসচিবের পক্ষথেকে বিশেষ বক্তব্য ও শিক্ষারিপোর্ট পেশ। আর্ট ও লিখনির প্রদর্শনী। বিশেষ কোন যোগ্যতার উপস্থাপনা…ইত্যাদি।
অভিভাবকদের পক্ষথেকেও তাদের আলোচনা শোনা উচিত। আর তা এক সাথে উপস্থাপন না করে ভাগ ভাগ করে উপস্থাপন করা। কখন কি হবে তা আগে লিখিত ভাবে সময় বন্টন করে দেয়া।
কিন্তু বাস্তবে কি আমরা তা পাই? কয়জন পাশ করলেন কয়জন হাফিজ আর আলেম হলেন। আর আয় ব্যায়ের হিসবা কষে দান খয়রাতের তাকীদ !
জা্তি আশা করে এই প্রতিষ্ঠান কি করছে কি মেধা বিতরণ করছে কি যোগ্যতা নিয়ে আলেমরা মাঠে নামছেন তা সম্যক হলেও উপস্থাপন করা।
আলোচনা গবেষণা পর্যালোচনা এবং জবাবদিহিতা ও উপস্থাপনের প্রয়োজনীয়তা বোধ না থাকলে মেধার বিকাশ হবেনা। কাজে গতি আসবেনা। অর্জনের গুনগত মান বাড়বেনা।
গ- আম খাস নসীহাহ ওয়াজ ইত্যাদি শুধু একদিনের জন্য খাস না করে সারা বছর ব্যাপী ছোট ছোট প্রগ্রামের মাধ্যমে চলানো উচিত। এখানে একদিনে এতো ওয়াজ এতো কিসিমের কথা কারো পক্ষে কি মানা আর মনে রাখা সম্ভব? একবছরের কোর্স কয়েক ঘন্টায় তা কি করে হয়?
তাই সময়ে সময়ে বিশেষ মেহমানদের আগমন এবং নসীহা চলতে পারে। প্রতিষ্ঠানের বিশাল হলরুম বা কন্ফারেন্স হল থাকা আবশ্যক।
এখানে সমবেত লোক কার কেরেশমা দেখেত এসেছে? আগত মেহমানের বয়ানের কেরেশমা নাকি এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার কেরেশমা?
অবশ্যই এ বিষয়ে আমাদের ভাবতে হবে যে একদিনে বা দুইদিনের দিন-রাত ব্যাপী সম্মেলন কি উপকার বয়ে নিয়ে আসছে? অনেক নামী দামী ওয়াইজ আসেন। আর্থিক অবস্থাও ভাল। ছেলেপুলে লন্ডন আমেরিকায়, ব্যবসা বাণিজ্য ও আছে। তবু গরীব প্রতিষ্ঠানের পক্ষেথেক পকেট ভর্তি হাদিয়া চাই? কেন উনারা কিছু ওয়াজ করে আর কিছু চাঁদা দান খয়রাত করলে অসুবিধা কি? না উনারা দান খয়রাত করবেননা। উনারা বর্ষাইয়া বখশাইয়া পকেট গরম করিয়া নিতে আনন্দ পান! একটি বারের জন্য জানতে চাননা উস্তাজরা ঠিকমতো বেতন পান কিনা। ছাত্র শিক্ষকরা কোন কষ্টে আছে কিনা? মায়া মমতা ভালবাসা উদারতা কোথায় যে উধাও হয়ে গেল?
তাই বলছি বাস্তবতায় ফিরে আসুন। হক্কীক্বত নিয়ে ভাবুন। কে কি করছে তা না দেখে আমার কি করণীয় সে কথা বিবেচনায় নিয়ে কাজ করুন।