বৃহস্পতিবার, ২রা মে, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৪:০৬
Home / প্রতিদিন / প্রলয়ংকরী দুর্ঘটনার পর কী পরিস্থিতি আজ পবিত্র হারামের ?

প্রলয়ংকরী দুর্ঘটনার পর কী পরিস্থিতি আজ পবিত্র হারামের ?

mamunul haqueমুহাম্মাদ মামুনুল হক, হারাম শরিফ থেকে:
গতকাল স্থানীয় বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে ঘটে যাওয়া স্মরণকালের ভয়াবহ দুর্ঘটনার একদিন পর আজ পবিত্র হারামের অবস্থা বাহ্যিকভাবে স্বাভাবিক মনে হলেও সর্বত্রই গভির বেদনা ও থমথমে শোকের আবহ বিরাজমান ৷ গতকালের মাগরিব নামাজে ইমামতী করেছেন হারাম শরীফের বর্তমান সবচেয়ে সুমধুর তেলাওয়াতকারী শায়খ বালীল ৷ কিন্তু তার তেলাওয়াতেও ছিলনা সেই মোহনীয় ভঙ্গী ৷ এশার ইমামতী করলেন শায়খ ফাহ্দ আলগামেদী ৷ সূরা যিলযাল আর ক্বারিআ তেলাওয়াত করলেন ৷ তেলাওয়াতের মাধ্যমে ভেসে আসছিল মহা প্রলয়ের আভাস ৷ প্রচন্ড ভূ-কম্পনের বিভীষিকা আর পাহাড়গুলো ছিন্নভিন্ন হওয়ার প্রলয়ংকরী বিবরণ রাব্বুল আলামীন দিয়েছেন পবিত্র কুরআনের ৷ হারামের বিশ্বসেরা ব্যবস্থাপনা লন্ড- ভন্ড হওয়ার ভয়াল পরিস্থিতি যেন সেই কেয়ামতের বিভীষিকাময় পরিস্থিতিকেই স্মরণ করিয়ে দিয়েছে ৷ ড, ফাহ্দ আলগামেদীর কন্ঠে ছিল সেই তাযকেরাতুসসাআহর ভয়াতুর সুর ৷ গত সপ্তাহ খানেক যাবৎ ফজরের ইমামতী করছেন এক নওজোয়ান শায়খ ৷ বেশ দীর্ঘ তেলাওয়াত চলছিল ফজরে ৷ দুই রাকাতে তিন চার এমনকি পাঁচ পৃষ্ঠাও তেলাওয়াত হয় ৷ তেলাওয়াতের জান্নাতী লহরে দুলতে থাকে গোটা হারামে মক্কী ৷ কিন্তু আজ ফজরে তেলাওয়াত হলো শুধু ওয়াশ্শাম্স এবং ওয়াল্লাইল ৷ আর জোহরের নামাযে তো শায়খ বালীলের কন্ঠের আওয়াজই সরছিল না ৷ গতকাল সকাল থেকে দুর্ঘটনার আধা ঘন্টা আগ পর্যন্ত আমি আর আমার স্ত্রী ঐ দুর্ঘটনাস্থলের অনতিদূরেই ছিলাম ৷ সে ছিল মহিলাদের জন্য নামাযের সংরক্ষিত স্থানে ৷ আর আমি তো জুমার নামায আদায় করেছি ঠিক দুর্ঘটনাস্থলেই ৷ আসরের আগেই গাজী সানাউল্লাহ ফোন করেছিল, উম্মুল কোরার কোনো এক শায়খের সাথে সাক্ষাতের প্রোগ্রামের অফার দিয়ে ৷ সে মতে আসর পড়েই আমরা ঐ স্থান ত্যাগ করে চলে আসি ৷ রাহবারের আগমনের কালবিলম্ব দেখে মুক্তাগাছার মুহতারাম মাসুদ ভাই নিয়ে গেলেন জাবালে উমারের নিউ হিল্টনে বিকালের নাশ্তা করাবেন বলে ৷ আমরা সেখানে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই চারিদিক অন্ধকার করে শুরু হয় প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়া কিছুক্ষণ পর যোগ হয় মুষলধারায় বৃষ্টি ৷ আমরা বিশাল মার্কেটের চার তলার গ্লাস দিয়ে ভয়াবহ ঝড় উপভোগ করেছি ৷ কিন্তু তখনো বুঝতে পারিনি এই ঝড় কত বড় বিপদের বার্তা নিয়ে এসেছে ৷ দুর্ঘটনার পর থেকে মাতাফে নতুন কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছিল না ৷ ভিতরে যারা ছিল তারাই কেবল তাওয়াফ করে যাচ্ছিল ৷ এশার নামাযের বেশ কিছুক্ষণ পর মাতাফে ঢুকতে দেয়া হলে আমরা ঢুকে পড়ি ৷ হাটতে হাটতে দুর্ঘটনাস্থলের কাছাকাছি পৌঁছে দেখি যেখানটায় আমি জুমার নামায আদায় করেছি সেখানেই ঘটেছে এই দুর্ঘটনা ৷ বাইতুল্লাহর পূর্ব-উত্তর কোণার দিকে মারওয়ার পেছনে ছিল লাল রঙ্গের সব চেয়ে বড় ক্রেনটা ৷ এদিকে সাফা- মারওয়ার পুরো এলাকা জুড়েই আরো অনেকগুলো ক্রেন আছে ৷ ঘুর্ণি ঝড়ে গোড়া থেকেই কাত হয়ে ক্রেনটা গিয়ে আছড়ে পড়ে সাফা-মারওয়ার সাঈর যায়গার ছাদের উপর ৷ আর কিছু অংশ আঘাত হানে নব নির্মিত তিনতলা মসজিদে হারামের তিন তলার ছাদের উপর ৷ এতে তৃতীয় তলার ছাদ ভেঙ্গে ক্রেনের ঐ অংশটুকু ঢুকে যায় ভিতরে ৷ তবে এখানে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কম ৷ কেন না ঐ দিকটায় মুসল্লীদের উপস্থিতি কম থাকে ৷ আর ক্রেনের মাথার অংশ তিন তলার ছাদের রেলিংয়ে বাড়ি লেগে ছিটকে নিচে পড়ে যায় ৷ অনেকটা মুলতাযাম বরাবর মাতাফে পড়ে ৷ ঐ যায়গাটায় তখন খুব বেশি মানুষ ছিল না ৷ প্রলয়ংকরী ঝড়ে সবাই মসজিদের ভিতরে চলে গিয়েছিল ৷ কিন্তু যারা তওয়াফরত ছিল তারা তো ছিলই ৷ তাদেরও বড় একটা অংশ অস্থায়ী তওয়াফের জন্য নির্মিত রিংয়ের নিচ দিয়ে তওয়াফ করছিল ৷ ক্রেনের ভেঙ্গে পড়া মাথার অংশ টুকু বিকট আওয়াজে মাটিতে পড়েই সোজা স্লিপ কেটে ভিতরের দিকে ঢুকে পড়ে ৷ এতেই রিংয়ের নিচ দিয়ে তওযাফরত বহু মানুষ হতাহত হয় ৷ আর এটা ভেঙ্গে পড়ার সময় এর আঘাতে ছাদের উপর থেকে একটা গ্রিল ছিটকে নিচে পড়ে গেলেও অনেক ক্ষতি হয় ৷ এখানকার স্থানীয় পত্রিকায় ৮৭জনের মৃত্যুর খবর লিখেছে ৷ আর সৌদি মন্ত্রণালয়ের বরাতে বাংলাদেশের সর্বশেষ নিউজ হলো নিহতের সংখ্যা ১০৭এ পৌঁছেছে ৷ গতকাল যখন রাতে আমরা মসজিদে হারাম থেকে ঘরে ফিরেছি, পথে পথে দেখেছি ঘুর্ণিঝড়ের তান্ডবের চিত্র ৷ গত তিন চার দিন আগেই মক্কা সিটি কর্পোরেশন মোবাইল মেসেজ দিয়ে মৌসুমি ঝড়ের ব্যপারে সতর্ক করে দিয়েছিল ৷ কেননা গত সপ্তাহেও দুই দিন ঝড়ো বাতাস বয়েছে ৷ ঝড় চলে গিয়েছে ৷ সব পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হয়ে এসেছে ৷ আজও বাইতুল্লাহর মাতাফে প্রচন্ড ভীড় ৷ মসজিদে হারামে নেই তিল ধারনের ঠাই ৷ বাহিরের চত্বর লোকে লোকারণ্য ৷ সব স্বাভাবিক বলে মনে হলেও অনুসন্ধানী আর সুক্ষ্ম দৃষ্টির অধিকারীরা উপলব্ধি করতে পারছে, শোক দুঃখ আর বেদনার ক্ষত কতটা তীব্র ও গভীর ৷
haram sharifপৃথিবীর প্রতিটি প্রান্ত থেকে লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইকের সুরে সুরে মানুষের তৈরি ভৌগলিক সীমানা পেরিয়ে আসা সাদা- কালো আর মধ্যম বর্ণের মানুষগুলো আল্লাহর ঘরে এক নিবীড় ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আটকা পড়ে ৷ আর ঈমানী ভ্রাতৃত্বের নাড়ীতে বন্ধিত বন্ধনে যখন বিরহের আঘাত লাগে তখন যাতনার তীব্রতা অনুভব করা যায়, বুঝানো যায় না ৷ গাজী সানাউল্লাহ লিখেছেন বটে “সব স্বাভাবিক ” ৷ কিন্তু শায়খ বালীল ও ফহ্দ আলগামেদীদের ভেজা কন্ঠের তেলাওয়াত আর মক্কার পথেপথে বেদনাবিধুর পর্যালোচনা শুনলে হৃদয়ের গভীর থেকে বারবার হাহাকার করে উঠছে অব্যক্ত সকল বেদনাগুলো ৷ দেড়শ কোটি উদ্বিগ্ন ঈমানদার মানুষ যখন গতকাল একযোগে মসজিদে হারামের পরিস্থিতি জানতে চাইছিল, তাদের সেই উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার বিবরণ কোনো ভাষার শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা সম্ভব নয়! শহীদদের দেহ থেকে গড়িয়ে পড়া রক্তের ছোপছোপ দাগগুলে ধুয়ে ফেলা হয়েছে মাতাফের শুভ্র সফেদ শেত পাথর থেকে ৷ কিন্তু যখনই আমি মসজিদে হারামের বেলকনি দিয়ে চোখ মেলে তাকাই মাকামে ইবরাহীমের পেছনের চত্বরে, কিংবা তওয়াফ করতে করতে হাজরে আসওয়াদে ইসতিলাম করে এগিয়ে যাই শহীদগাহের পাশ দিয়ে তখন হৃদয়ের যে রক্তক্ষরণ হয় তা কি ধুয়ে ফেলেছে কেউ? কিংবা পারবে কি মুছে দিতে কেউ সহসাই…? মসজিদে হারাম থেকে
শাইখ মুহাম্মদ মামুনুল হক্ব- বিশিষ্ট্য ইসলামি চিন্তাবিদ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...