শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ২:২০
Home / পরামর্শ / সুন্দর কথা সবার প্রিয়

সুন্দর কথা সবার প্রিয়

Fujail_Komashishaফুজায়েল আহমাদ নাজমুল ::

আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে আল্লাহ রাব্বুল  আলামীন আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তিনি আমাদের কথা বলার যোগ্যতা, শক্তি ও সাহস দিয়েছেন বলেই ভাষা সম্পন্ন প্রাণী বলা হয় আমাদের। যেমন করে চাই তেমন করে আমরা বলতে পারি। নিজের মনের কথাগুলোকে সাজিয়ে সাজিয়ে ইচ্ছেমত লিখতে পারি। বক্তৃতার মঞ্চে দাড়ালে শ্রুতাদের সম্মুখে যেভাবে চাই সেভাবে নিজের কথাগুলো উপস্থাপন করতে পারি। কেউ সুন্দর, সোজা আবার কেউ অসুন্দর, প্যাচাল করে বলি ও লিখি। তবে সুন্দর কথা, ভালো কথা, সুবচন সবার প্রিয়। সুন্দর ও ভালো কথার মাঝে একটি আকর্ষণ রয়েছে। প্রভাব রয়েছে। এ আকর্ষণ ও প্রভাব  শুধু বড়দের বেলায় নয়, শিশুদের মন, হৃদয়েও নাড়া দিতে পারে। অবুঝ একটি শিশু যখন সুন্দর কথা শুনে তখন মিটমিটে হাসে। আবার ছোটরাও যখন সুন্দর কথা বলে বড়দের অনেক ভালো লাগে। কুরআনুল কারীমে বিভিন্নভাবে ভালো কথা, সুন্দর কথা, সহানুভুতি ও নম্রভাবে কথা বলার জন্য মানবজাতিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহর বাণী –
“ মানুষের সাথে ভালো কথা বলো, সুন্দর কথা বলো।” – ( ২ : ৮৩)
“ তাদের সাথে দয়া, সহানুভূতি ও নম্রভাবে কথা বলো। “ – ( ১৭ : ২৮ )
“ স্পষ্ট, সোজাসুজি ও সম্মানজনক কথা বলো। “  (৩৩ : ৩২ )
আমাদের মহানবী (স 🙂 মানুষের সাথে সুন্দর ও নম্র ভাষায় কথা বলতেন। তিনি ছিলেন সুভাষী। তিনি যেখানেই কথা বলতেন সেখানেই ফুঠে উঠতো রাশি রাশি ফুলের হাসি। তার কথার ভঙ্গিতে গড়ে উঠতো স্নিগ্ধময় পরিবেশ। মহানবীর কথা শুনলে শ্রোতার মনের কষ্ট দূর হয়ে যেতো। তিনি কখনো মন্দের জবাবে মন্দ বলেননি। মন্দ কথাকে সুন্দর কথা দিয়ে আঘাত করেছেন। কেউ তাকে গালি দিলে তিনি প্রতিশোধ নেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেননি। বরঞ্চ তার হেদায়েতের জন্য মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে দুয়া করতেন। এজন্যই যেকোন মানুষ তার কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে যেতো। তাইতো তিনি ছিলেন সব মানুষের সেরা। সব মানুষের প্রিয়।
সুন্দর কথা মানুষের সেরা গুণ গুলোর মধ্যে অন্যতম বলা যায়। এগুণ যার মাঝে রয়েছে সেই অতি সহজে পরিবার, সমাজ এমনকি রাষ্ট্রেও জনপ্রিয় হয়ে উঠে । সবখানেই তার আলাদা একটা মর্যাদা লক্ষ্য করা যায়। তার প্রশংসা শুনা যায় মানুষের মুখে মুখে। সব মানুষই সুন্দর কথা, সোজা কথা প্রত্যাশা করে অন্যের কাছে। সুন্দর কথায় মানুষের মনোকষ্ট দূর হয়। হতাশা নিরাশা এমনকি দুশ্চিন্তা দূর হয়। মন সচেতন হয়, ঘুমন্ত বিবেক জাগ্রত হয়। শত্রুতা কেটে গিয়ে বন্ধুতে পরিণত হয়। রাগ নিভে গিয়ে সুসম্পর্ক ও সৌহার্দ্য গড়ে উঠে। ঐক্যের বন্ধন গড়ে উঠে। সমাজের যারা ভালো মানুষ তারা সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় কথা বলে। তাইতো তাদেরকে সবাই ভালবাসে।
যারা অসুন্দর কথা, মন্দ কথা বলে তারা মানুষের কাছে সবসময়ই অপ্রিয়, সমালোচিত। প্যাচাল কথা, অসুন্দর কথা, মন্দ কথা কেউ শুনতে চায় না। অসুন্দর কথা, মন্দ কথা মানুষের জনপ্রিয়তাকে আঘাত করে। পারস্পরিক ঘৃণা বিদ্ধেষ সৃষ্টি করে। অসুন্দর কথা, মন্দ কথায় মানুষ অসুন্তষ্ট হয়, সম্পর্ক ও আত্মীয়তা ছিন্ন হয়। বন্ধুত্ব বিনষ্ট হয়। জবান নষ্ট হয়। ব্যাক্তিত্ব বিলীন হয়। মন ও চরিত্র কলুষিত হয়। ঐক্যে ফাটল ধরে। অশান্তি ও অস্তিরতা সৃষ্টি হয়। এককথায় বলা যায় যে, অসুন্দর কথা, মন্দ কথা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সবকেই ধ্বংস করে ফেলে। একটি মন্দ ও অসুন্দর কথার কারণে একটি সুন্দর ও সুখী পরিবার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ছেলে-মেয়ে, মা-বাবার অবাধ্য সন্তান হয়ে যেতে পারে। একটি অসুন্দর কথার কারণে ভাই – বোনের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যেতে পারে। একজন মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে যেতে পারে। যেকোন সুন্দর একটি পরিবেশ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। একটি অসুন্দর কথার কারণে একটি আন্দোলন মাঝপথে আটকে যেতে পারে। দায়ীত্বশীল মন্ত্রীর একটি অসুন্দর কথায় রাষ্ট্রের অনেক অপুরণীয় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। দায়ীত্বশীলের একটি অসুন্দর কথার কারণে সুন্দর ও সম্ভাবনাময় একটি ফোরাম নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
অসুন্দর কথা থেকে সাহাবায়ে কেরাম কঠোরভাবে আত্মরক্ষা করতেন। সাহাবায়ে কেরাম ও শ্রেষ্ট মনীষী যারাই ছিলেন তারা সুভাষী ছিলেন। সুন্দর কথা দিয়েই তারা বিশ্বজয় করেছিলেন। তারা অসুন্দর ও মন্দ কথাকে সার্বক্ষনিক এড়িয়ে চলতেন। মহানবী ( স 🙂 বলেছেন – মন্দ কথা মানুষকে জাহান্নামে উপুড় করে নিক্ষেপ করবে। – (তিরমিজি ) তিনি আরো বলেছেন – মুসলিম সে, যার ভাষা ও কর্ম থেকে মুসলমানরা নিরাপদ থাকে। –  (সহীহ বুখারি) কটু কথা, কটু বাক্য, কটু ভাষা, কড়া কথা, মুখ ছোটামি, খোটা, পরচর্চা, গালি, অভিশাপ, অশ্লীল কথা, বাকাঁ কথা, কটাক্ষ, ঠাট্টা, বিদ্রুপ, উপহাস, তিরষ্কার, ব্যাঙ্গোক্তি, অবজ্ঞা, ধিক্কার, তাচ্ছিল্য, চেচামেচি এগুলো আমাদের পরিত্যাগ করা জরুরী।
এ অসুন্দর কথাগুলো রোগ জীবাণুর মতো। এগুলো রোগ ছড়ায়। সমাজ ও পরিবেশকে ধংস করে।
মন্দ কথায় কোন লাভ নেই, উপকার নেই। এতে ক্ষতি আছে, পাপ আছে। সুন্দর কথায় কল্যাণ আছে, প্রশংসা আছে, জয় আছে, মুক্তি আছে।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...