আল্লাহপাকের অসংখ্য-অগণিত মাখলুকের মধ্যে মানুষ হলো সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলুক। মানুষ অন্যান্য প্রাণী থেকে শ্রেষ্ঠত্বের গুণে গুণান্বিত হওয়ার অন্যতম একটি হলো উন্নত চরিত্রের অধিকারী হওয়া।আমাদের জানা দরকার, কিসে নৈতিক চরিত্র জাগ্রত হয়, তখনই সে মানুষ ফেরেশতার চেয়েও মর্যাদাবান হয়ে যায়। আর যখন কুপ্রবৃত্তি কোনো ব্যক্তিকে আচ্ছন্ন করে ফেলে, তখন সে শয়তানের দাস হয়ে পশুতুল্য বা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট জীবে পরিণত হবে।
এখন আমাদের ভাবতে হবে কুপ্রবৃত্তিগুলো কিসে জাগ্রত হয়। সমাজে শিক্ষিত-অশিক্ষিত প্রায় সবাই জানে বা বোঝে যে, উলঙ্গ ছায়াছবি বা যুবক-যুবতীদের অবাধ মেলামেশাসম্পন্ন গল্প-উপন্যাস, নগ্ন পত্র-পত্রিকা, সর্বোপরি উদোম শরীরে শিল্পী নামের বাইজীদের নৃত্যকলা মানুষের কুপ্রবৃত্তিগুলোকে উত্তেজিত করছে। পক্ষান্তরে মানুষের সুপ্রবৃত্তিগুলোকে জাগ্রত করতে বা সত্ চরিত্রের উন্মেষ ঘটাতে যে বস্তুটি সবচেয়ে বেশি কাজ করে সেটা হলো ভয়। যদি কোনো নাগরিক জানে যে, অবৈধ যৌন সম্পর্ক বা পরকীয়ার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড আর এটা শুধু কিতাবে নয়, বরং কার্যে পরিণত করা হচ্ছে, তখন সে তাতে জড়াতে অবশ্যই দুঃসাহস করবে না।
এজন্যই ইসলামের আইনে জিনা, হত্যাকাণ্ড, মদপান, চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাস প্রভৃতিতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান রয়েছে। এতে সমাজে অপরাধকর্ম উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেতে বাধ্য। এর পেছনে কারণ হচ্ছে ভয়। অবশ্য এ ভয় প্রদর্শনের পাশাপাশি এর অনুকূল পরিবেশ তৈরি করাও সরকারের দায়িত্ব। তাই দণ্ড আইন প্রবর্তন ও প্রয়োগের পাশাপাশি অপরাধের ছিদ্রপথ বন্ধ করার স্বার্থে অশ্লীল ও নগ্ন চিত্রের সিনেমা, পত্র-পত্রিকা, বই-পুস্তক ধ্বংস করে ফেলতে হবে এবং তা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করতে হবে। পাশ্চাত্যের ধাঁচে গড়া শিক্ষা মানব চরিত্র বিধ্বংসী সহশিক্ষা পদ্ধতি বাতিল করে ইসলামী সুশিক্ষা ভিত্তিক সিলেবাস প্রণয়ন করতে হবে প্রকাশ্য রাস্তায়, মাঠে-ঘাটে, পার্কে যুবক-যুবতীদের নির্লজ্জ অবাধ বিচরণের অসামাজিক কাজ বন্ধ করতে হবে।
যখন কোনো সমাজ বা জাতিতে এই আইনের প্রতি যথাযথ আমল না থাকে, তখনই সেখানে নেমে আসে প্রাকৃতিক গজব, দুর্ভিক্ষ, মহামারী, বন্যা, প্লাবন, টর্নেডো, এইডস ইত্যাদি। আর পরকালে এর জন্য রয়েছে চরম শাস্তি, কঠোর আজাব। এ অকাট্য বিশ্বাস অন্তরে পোষণ করে চললে সব অন্যায় ও অপরাধ থেকে মানুষ বেঁচে থাকতে পারে। মুমিনদের জন্য সচ্চরিত্রবান হওয়া একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। তাই মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন : ‘হে মুমিন! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় কর এবং তোমরা প্রকৃত মুসলমান না হয়ে মরো না।’
বলাবাহুল্য, আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় আইনের পাশাপাশি যে ভয় মানুষের মধ্যে শুদ্ধতা আনয়নে সার্বক্ষণিক কাজ করবে, সেটা হলো পারলৌকিক জীবনে বিচারের ভয় বা আল্লাহভীতি। এই আল্লাহভীতি মানুষের মধ্যে সদা জাগ্রত থাকলে সে কোনো ধরনের দুর্নীতি বা পাপ কাজে লিপ্ত হতে পারে না। মানুষের মনে তথা সমাজে এই আল্লহভীতি প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেই সমাজকে অপরাধমুক্ত সুন্দর সমাজ রূপে গড়ে তোলা সম্ভব।
মহান আল্লাহ ও আখেরাতের ভয় মানুষের মনে জাগ্রত করার জন্য মানুষকে দ্বীন পালনে অভ্যস্ত করে তোলা অপরিহার্য। দ্বীনদার ইসলামী জ্ঞানবান মুসলমানই আল্লাহভীরু ও মুত্তাকি হয়ে থাকে। সে জন্য দ্বীনি শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার ঘটানো জরুরি। যদি আমরা উন্নত চরিত্রবান আদর্শ সমাজ চাই তাহলে আমাদের এছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। তাই সমাজে উন্নত চরিত্র প্রতিষ্ঠায় ইসলামের বিধি-বিধানের প্রতিপালনে ও খোদাভীরুতার শিক্ষার সর্বত্র প্রসার ঘটানো আমাদের কর্তব্য।
লেখক : সাংবাদিক, তরুণ আলেম