অনলাইন ডেস্ক :: পবিত্র কোরআনে বহুবিবাহের উল্লেখ থাকলেও এখনকার দিনে ও সময়ে পবিত্র কোরআনের ভুল ব্যাখ্যা করে ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে বহুবিবাহ করা হয়ে থাকে। তাই অভিন্ন দেওয়ানি দণ্ডবিধি তৈরি করে মুসলিম বহুবিবাহ প্রথা বন্ধের পরামর্শ দিয়েছেন ভারতের গুজরাট হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ভারতের মুসলিম সমাজে বহুবিবাহ প্রথাকে ‘চরম জঘন্য পিতৃতান্ত্রিক’ আচরণ হিসেবে অভিহিত করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার একটি মামলার শুনানির সময়ে এই মন্তব্য করেছে গুজরাট হাইকোর্ট।
বিচারক জেবি পারদিওয়ালা বলেন, স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া বহুবিবাহ প্রথা ও একতরফা তালাক ভারতীয় সংবিধানের লঙ্ঘন। সংবিধানের চতুর্থ অধ্যায়ের ৪৪ অনুচ্ছেদের বরাত দিয়ে বিচারক বলেন, দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সারা দেশে অভিন্ন দেওয়ানি দণ্ডবিধির ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।
ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য ও যৌন আকাঙ্ক্ষার জন্য পবিত্র কোরআনে বহুবিবাহ করতে নিষেধ করা হয়েছে—এমনটা উল্লেখ করে বিচারক পারদিওয়ালা বলেন, ‘চরম জঘন্য পিতৃতান্ত্রিক বহুবিবাহ প্রথা যথার্থতা প্রমাণ করতে পবিত্র কোরআনের অপব্যবহার করা হবে না, এটি মৌলভি ও মুসলিম পুরুষদের নিশ্চিত করতে হবে।’
সম্প্রতি এক মহিলা পুলিশে অভিযোগ করেন, তার স্বামী অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করেছেন। এর পরই স্বামী জাফর আদালতের দ্বারস্থ হন। জাফরের দাবি ছিল, কোরআন মতে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ সর্বাধিক চার বার বিবাহ সম্পর্কে আবদ্ধ হতে পারেন। তাই তার বিরুদ্ধে প্রথম পক্ষের স্ত্রীর আনা অভিযোগ খাটে না।
স্ত্রীর আইনজীবীর বক্তব্য ছিল, কোরআনে বহুবিবাহের উল্লেখ মাত্র একবারই রয়েছে। কিন্তু তাও ক্ষেত্র বিশেষে। স্ত্রীর অজ্ঞাতসারে স্বামী যদি অন্য মহিলার সঙ্গে সম্পর্কে আবদ্ধ হয় কিংবা নিজের ইচ্ছা মতো স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেয়, তা খুবই যন্ত্রণাদায়ক।
দু’পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে বিচারপতি বলেন, জাফরের কথা অনুযায়ী তিনি কোরআন মতে কাজ করেছেন। কিন্তু জাফর জানেন না তিনি কোরআন মতেও বেআইনি কাজ করেছেন। অনেক সময়ই নিজেদের ‘স্বার্থে’র জন্য মানুষ কোরআনের ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে, যা হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।
ইতিহাসের উদ্ধৃতি দিয়ে বিচারক পারদিওয়ালা আরও বলেন, ‘একটি শোষণমূলক সমাজে এতিম শিশু ও তাদের মায়েদের রক্ষা করতে পবিত্র কোরআনে শর্তসাপেক্ষে বহুবিবাহের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনকার দিনে নিজ স্বার্থের জন্য মানুষ এ রীতিকে ব্যবহার করছে।’
তবে জাফরের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের নির্দেশই দেন বিচারপতি।