পূর্ণ নাম: ইয়মিনউদ্দৌলা আবুল কাসিম মাহমুদ ইবনে সবুক্তগীন। জন্ম: ২ নভেম্বর ৯৭১ ইংরেজী। মৃত্যু: ৩০ এপ্রিল ১০৩০ ইংরেজী। ইসলামী ইতিহাসে তিনি-ই প্রথম যাঁর নামের সাথে “সুলতান” শব্দ ব্যবহার করা হয়। তিনি-ই প্রথম মুসলিম সেনাপতি যিনি একাধারে ১৭ বার হিন্দুস্থানে আক্রমণ করেছিলেন, সে সময় তাঁর বয়স মাত্র ১৭ বছর ছিলো। তাঁর ঘোড়ার পদধ্বনিতে হিন্দুস্থানের মূর্তিও কেপে উঠতো। যিনি জীবনের বেশীরভাগ সময় ঘোড়ার পিঠে চড়ে কাটিয়েছেন। যিনি ৯৯৭ ইংরেজী থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত গজনী শাসন করেছেন।
সুলতান মাহমুদ গজনভী রাহ. যেমন ন্যায়পরায়ন শাসক ছিলেন, তেমনি অনেক জ্ঞানের অধিকারীও ছিলেন। তাঁর কাছে জ্ঞানীদেরও বেশ ক্বদর ছিলো। বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ “শাহনামা”র লেখক ফারসি কবি ফেরদাউসি ও বিখ্যাত বিজ্ঞানি আল-বিরুনী’র সাথে ছিলো তাঁর বিশেষ সম্পর্ক।
২ । সোমনাথ বিজয়ের পর সুলতান মাহমুদ রাহ. সোমনাথের বিখ্যাত মন্দিরে প্রবেশ করলেন। বিশাল মন্দির। ব্রাক্ষণ ও পূজারী ছাড়াও যেখানে পাঁচশত নর্তকী এবং তিনশত গায়ক ছিলো। মন্দিরে প্রবেশের পূর্বে ভক্তদের মাথা মুণ্ডনের জন্যও ছিলো তিনশত নাপিত।
সুলতান মন্দিরে প্রবেশ করেই প্রথমেই এক আঘাতে পাঁচ গজ দীর্ঘ সোমনাথের মূর্তির নাক ভেঙ্গে দিলেন। তারপর যখন মূর্তিটি সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দিতে উদ্যত হলেন, তখন-ই ব্রাক্ষণরা সুলতানের কাছে প্রস্তাব দিলো, মূর্তিটি ধ্বংস না করলে তারা সুলতানকে প্রচুর স্বর্ণ উপহার দেবে। ব্রাক্ষণদের প্রস্তাব শোনে সুলতানের কয়েক কর্মচারীও বুঝাতে লাগলো, মূর্তি ভেঙ্গে কী লাভ। তারচে’ স্বর্ণ গ্রহণ করে অসহায়দের মধ্যে দান করে দিলে আনেক পূণ্য পাওয়া যাবে।
সুলতান মুহমুদ গজনভী রাহ. তাদের প্রস্তাব শোনে মুচকি হাসলেন। তারপর গম্ভীর কন্ঠে বললেন, “সুলতান মাহমুদ মূর্তি বিক্রেতা নয়, মূর্তি ধ্বংসকারী।” মূর্তি ভাঙ্গা হলো। বিশাল মূর্তির ভিতর থেকে বেরিয়ে এলো প্রচুর হিরা, মণি, মুক্তা। যা ব্রাক্ষণদের প্রতিশ্রুত উপহারের চে’ অনেক বেশী ছিলো।
এই মহাবীরের অসংখ্য ঘটনার মধ্যে এ ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ হলো, অনেক বিজ্ঞজন বলেন- সুলতান মাহমুদ রাহ.-র ভারত অভিযানের পিছনে নাকি সম্পদের লোভ কাজ করছিলো। অথচ এসব ঘটনা তাদের চোখে পড়ে না!
৩। ১৯৭৪ ইংরেজীতে গজনী শহরে মারাত্মক ভূমিকম্প হয়। যার কারনে সুলতান মাহমুদ গজনভী রাহ.-র কবর ফেটে যায়। আফগানিস্থানের তৎকালিন শাসক “জহীর শাহ্” তাঁর কবর মেরামত করার প্রস্তুতি নিলেন। মেরামতের সময় সেখানে অবস্থানরত লোকেরা দেখতে পেলো যে, কবরের কাঠ এখনো সেই আগের মতই আছে। “জহীর শাহ্”র কাছে এই সংবাদ পৌঁছলে তিনি সম্পূর্ণ কবর খোলতে নির্দেশ দিলেন। কবর খোলার পর দেখা গেলো সুলতান মাহমুদে রাহ. যেনো ঘুমিয়ে আছেন। তাঁর ডান হাত বুকের উপর আর বাম হাত শরীরের পাশে রাখা; যেভাবে সাধারণত আমরা ঘুমাই।
হাজার বছর পূর্বে মৃত্যুবরণ কারলেও তাঁর চেহারা দেখে মনে হচ্ছে যেনো মাত্র কিছুক্ষণ পূর্বে তাঁকে কবরে রাখা হয়েছে। সুবাহানাল্লাহ! এটা আল্লাহর এক মহান কুদরত। তাঁর লাশ যেনো এ কথার প্রমাণ করছে যে, যে আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় নবী সা.-র গোলাম বনে যায় সে সর্বাবস্থায় আমীরের হালতেই থাকে। আল্লাহু আকবার।
৪। গতকাল (২ নভেম্বর) এইদিনে এ মহানবীর পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন। আমরা ‘চে গুয়েবার’ ‘লেনিন’ ‘স্টালিন’ সহ দুনিয়ার সবার জন্ম/মৃত্যুতে কত সুন্দর সুন্দর তত্বপূর্ণ লেখা পড়ি/লিখি, সে সব তারিখ আমাদের স্মরণ থাকে। কিন্তু আমরা আমাদের মহানবীরদের জন্ম/মৃত্যুর খবর রাখি না!
মানছি, ইসলাম কারো জন্ম/মৃত্যু পালন করার কোনো রেওয়াজ পছন্দ করে না। কিন্তু আমরাতো বছর যায় তবুও তাঁদের ইতিহাস পড়ি না, তাঁদের স্মরণ করি না। অন্তত এই বিশেষ দিনে তাঁদের সম্পর্কে কিছু পড়তে পারি, কিছু লিখলে যারা জানে না তারা কিছু জানতে পারবে।
মহান আল্লাহ তাঁর এই প্রিয় বান্দাকে জান্নাতে উচ্ছ মাক্বাম দান করুন। এবং আমাদেরকেও তাঁর মতো জীবন চালনোর তাওফিক দিন। আমীন।