শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৪:০২
Home / অনুসন্ধান / স্থানীয় সরকার নির্বাচন : আইনের সঙ্গে থেমে আছে ইসির কাজ।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন : আইনের সঙ্গে থেমে আছে ইসির কাজ।

নির্বাচন কমিশনহারুন আল রশীদ ::

আইনি বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী ডিসেম্বরের মধ্যে পৌরসভা নির্বাচন করতে হবে। এ জন্য সরকার দ্রুত অধ্যাদেশ জারি করে দেবে বললেও তা দেয়নি। এতে করে নির্বাচন কমিশনের ওপর চাপ বাড়ছে। কারণ আইন না থাকায় কমিশনের নির্বাচনী বিধিবিধান প্রণয়ন ও অন্যান্য প্রস্তুতিমূলক কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
বাধ্য হয়েই কমিশন অনেকটা ধারণার ওপর নির্ভর করে নির্বাচন পরিচালনাবিধি ও আচরণবিধি প্রণয়নের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে যাচ্ছে।
স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন অনুযায়ী পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। এই হিসাবে ২৪৫টি পৌরসভার মেয়াদ শেষ হবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে। কমিশন সচিবালয়ে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের মতে, ডিসেম্বরের একেবারে শেষে নির্বাচন করতে হলে অবশ্যই নভেম্বরের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করতে হবে। কারণ, প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার দিন ও ভোট গ্রহণের দিনের মধ্যে ১৫ থেকে ২১ দিন সময় রাখতে হবে। তার আগে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা, মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও বাছাই, মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীদের আপিল নিষ্পত্তি এবং সবশেষে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা তৈরি করার জন্য আরও ১৫ থেকে ২০ দিন সময় দরকার।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক প্রথম আলোকে বলেন, আইন চূড়ান্ত হতে যত বেশি সময় লাগছে, কমিশন ও কমিশন সচিবালয়ের ওপর চাপ তত বাড়ছে। কারণ, হাতে সময় একদমই কম। বিধিবিধান প্রণয়ন করতে গেলে আনুষ্ঠানিকভাবে না হলেও কোনো না-কোনোভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসবে। সে জন্য কমিশনকে আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে। এসব কাজ করার জন্য তফসিল ঘোষণার আগে কমিশন ও কমিশন সচিবালয়কে অন্তত এক মাস সময় দিতে হবে। তা না হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব হবে না।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘নতুন পদ্ধতিতে ভোট হবে। এতে অনেক জটিল হিসাব-নিকাশ আছে। এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনেক কিছু নতুন করে সাজাতে হবে। ভোটাররা আগে কখনো এভাবে ভোট দেননি। তাঁদের প্রশিক্ষণের জন্য মহড়া ভোটের আয়োজন করতে হবে। যে কারণে আমি মনে করি, ডিসেম্বরে পৌর নির্বাচন করার মতো যথেষ্ট সময় কমিশনের হাতে নেই। এ অবস্থায় নির্বাচন হলে সেটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। কমিশনের উচিত হবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া।’
১২ অক্টোবর ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন দলীয় পরিচয় ও প্রতীকে করার প্রস্তাব অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। হাতে সময় কম থাকায় পৌরসভা আইনটি অধ্যাদেশ আকারে জারির সিদ্ধান্ত হয়। খসড়ায় পৌরসভা আইনের ২ ধারা সংশোধন করে বলা হয়েছে, ‘রাজনৈতিক দল’ মানে হলো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। স্বতন্ত্র প্রার্থী বলতে বোঝানো হয়েছে, যে প্রার্থীকে কোনো দল মনোনয়ন দেয়নি। প্রার্থীর যোগ্যতা ও অযোগ্যতা-সম্পর্কিত ১৯ ধারা সংশোধনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রার্থীকে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রার্থী অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হবে।
.কমিশন সচিবালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় সরকার নির্বাচন রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে করার সিদ্ধান্ত হওয়ায় নির্বাচন অনেকাংশেই সংসদ নির্বাচনের আদলে অনুষ্ঠিত হবে। যে কারণে নির্বাচন পরিচালনাবিধি ও আচরণবিধি সংসদ নির্বাচনের অনুকরণে তৈরি করতে হবে। সে ক্ষেত্রে দলীয় প্রার্থীকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার কর্তৃপক্ষ কে হবে, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর ব্যয়ের সীমা কী হবে, চূড়ান্তভাবে মনোনীত কোনো প্রার্থী মারা গেলে সেখানে কীভাবে নির্বাচন হবে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের যোগ্যতা কীভাবে নির্ধারণ করা হবে, সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তি ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে কারা কারা নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন বা পারবেন না ইত্যাদি প্রশ্নের সুরাহা হওয়া দরকার। কিন্তু কাগজে-কলমে এসব কাজের কিছুই এখন পর্যন্ত হয়নি। আইনের কপি হাতে আসার আগ পর্যন্ত এসব বিধিবিধান চূড়ান্ত করা সম্ভব নয়।
কমিশনের তাগিদ থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এখনো অধ্যাদেশ জারির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে পারেনি। জানা যায়, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন কয়েক দিন দেশের বাইরে থাকায় এই বিলম্ব। তবে আইন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, গত বুধবার আইন মন্ত্রণালয় পৌরসভা আইন সংশোধনের খসড়াটি যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত করেছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, অধ্যাদেশ জারির জন্য এ-সংক্রান্ত নথিটি আগামী সোমবার রাষ্ট্রপতির দপ্তরে পাঠানো হতে পারে। তবে তার আগে নিয়ম অনুযায়ী নথিটি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হবে।
কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, সরকার দায়সারাভাবে খসড়া আইনটি অনুমোদন করেছে। দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন কর্তৃপক্ষ, কোনো প্রার্থী মারা গেলে সেখানে নির্বাচন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে, নাকি বাতিল হবে—এ বিষয়গুলো সরাসরি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা যেত। তাতে কমিশনের ওপর চাপ কমে যেত।
কমিশন সচিবালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিধি প্রণয়নের বিষয়ে কমিশনের বৈঠকে মৌখিকভাবে কিছু কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সংসদ নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে থাকেন দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বা সমমর্যাদার কোনো ব্যক্তি। কমিশন এই ক্ষমতা দলীয় প্রধান বা সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত জেলা বা উপজেলা কমিটির কাছে দেওয়ার সুযোগ রাখবে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য শতাংশ হারে ভোটারের সই সংগ্রহের পরিবর্তে ১০০, ২০০ বা ৩০০ ভোটারের সই সংগ্রহের বিধান রাখা হতে পারে। বিদ্যমান পৌর আইনে কোনো প্রার্থী মারা গেলে অবশিষ্ট প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কমিশন এ ধরনের ক্ষেত্রে নতুন করে তফসিল ঘোষণার নিয়ম চালু করতে চায়, যা বর্তমানে সংসদ নির্বাচনে চালু আছে।

প্রথম আলোর সৌজন্যে

About Abul Kalam Azad

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...